মা দিবস নিয়ে আমরা অনেকেই অনেক কথা বলি। কিন্তু কত জনই বা এই দিবসটি সম্পর্কে বিশদ জানি? প্রশ্ন থেকে যায়। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে মা কিংবা বাবার মধ্যে গুরুত্ব কার বেশি এ ধরণের এক প্রশ্নের জবাবে প্রথম তিনবারই মার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তারপর বাবার কথা বলেন। দশ মাস দশ দিন যে তার নাড়ীতে আমাদের স্থান দেন তার সম্পর্কে যতই বলা হউক না কেন তা যথেষ্ট নয়। তিনি তার অবস্থানে অতুলনীয়। সৃষ্টি কর্তার পরেই তার অবস্থান।
কিছু কিছু সুত্রমতে- প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে মাকে সন্মান জানানোর জন্যে পালন করা হত একটি উৎসব। আমাদের উপমহাদেশে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই মাতৃ উৎসবটি পালিত হত। অন্য এক মতে, প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর নামে উৎসর্গ করা আরো একটি ছুটির দিন ছিল, যদিও সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত। মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে বেছে নেওয়া হত। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও 'প্রধান গির্জার' সম্মানে। প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতিকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো মা ভিন্ন বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে।
জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত 'মাদার্স ডে প্রক্লামেশন' বা 'মা দিবসের ঘোষণাপত্র' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। এই ঘোষণাপত্রটি সেসময় বেশ সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। অর্থাত মা দিবস পালনের জন্যে কোন দিন ধার্য্য করা যায় নি। অতঃপর জুলিয়ার আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯১২ সালে আনা জার্ভিস স্থাপন করেন মাদার'স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন্ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) ; যাতে তিনি উল্লেখ করেন প্রতি বছরের  'মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার' মা দিবস হিসেবে পালিত হবে। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনগ্রেস দিনটিকে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। আইন প্রণয়ন করে এই বিলটি পাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন।
মা দিবস পালন নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন এখনও বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বের একেক দেশে একেক সময় দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলো ২১ শে মার্চকে মা দিবস হিসেবে পালন করে। বৃহত্তর রাশিয়া সহ পাশ্ববর্তী দেশগুলো ৮ই মার্চের আন্তর্জাতিক নারী দিবসকেই মা দিবস হিসেবে পালন করে।