পুস্তক : অর্ঘ্য
কবি :  শিমুল শুভ্র
প্রকাশ : ফয়সল আরেফিন দীপন
প্রকাশকালঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫


            "আমি মানুষের কথা বলি চল হাত ধরে চলি,
             চলতে চলতে বলি, ধর্মজাতি কিসের ব্যবধান!
             যে শিরায় তোমার লাল রক্ত, ভেদাভেদ অভিশপ্ত
             হিন্দু বৌদ্ধ কি রাখেনি জগতে কোন অবদান?"


         উদ্যমী কবি শিমুল শুভ্র তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "অর্ঘ্য" সাজিয়েছেন অসামান্য, অসাধারন কবিতায়। সাত ফর্মার এই বইটাতে কী নেই! উদ্যমীকবি শিমুল শুভ্র যেমন দরদী কবি তেমনই তার উদারতার ছাপ রেখেছেন কবিতার ছত্রে ছত্রে। "প্রেমের ঊষ্ণতা"তে কবি টের পেয়েছেন 'দেহ জগত যেন সোনার খনি, ' যা নাকি  'ঐ বিধাতার কেরামতি'। কাব্য প্রেমে তিনি উপলব্ধি করে বলেছেন  " বলা হলো না তারে" তাই তিনি পরক্ষনেই বলেছেন "আসছি ফিরে সহসা"। কাল বিলম্ব না করেই  "পবিত্র প্রেমের জয়" গান গেয়েছেন  "স্বপ্নে আসা সেই ললনা"র নামে । তার তীব্র আকুতি


                 ' আমি কবে পাবো তারে বধূর বেশে
                      ফুলে ফুলে ভরে যাবে সুবাস,'


        কবি হৃদয় কেঁদে উঠেছে সাধারণ মানুষের জন্য-" কেন এই ভেদাভেদ" "অনাকাঙ্ক্ষিত সত্য" এর মুখোমুখি " সেই যৌবনা এই বুড়ি"র চিন্তনে  বুঝেছেন "অস্তাচলে দাঁড়িয়ে বুড়ি ভাবছে কি করেছে ভুল" ।  তাই তিনি বলেছেন "যতনে রাখো নিজেকে" যতই  তোমার "কষ্টে বুক ভাসে রে" "বেদনায় নীল কণ্ঠ" হয়ে বলেছেন "অনিতা অনিত্য তুমি" এসো "তোমার চুলগুলো বেঁধে দিই"। তবুও যখন "অভিমানী আবদার" রেখেছেন তার "যৌবনে যুবক-যুবতী" তখন "প্রেম পরশ" বুলিয়ে কম্পিত কাতর বুকে "কন্যা বিদায়" দিয়েছেন। কবি এক বারও ভোলেননি তার " স্ত্রীর দায়িত্ব"। রূপ যৌবনের মধ্য গগনে তিনি  "রূপে মুগ্ধ সমীরণ" ছড়িয়ে বলেছেন"মল্লিকা তুমি" আমার "বৈশাখে রূম্পা"।


           তার "চোখের মনি" "অর্ঘ্য সোনা চাঁদের কণা"র পুত্র স্নেহে সিক্ত হয়ে "দেবী মায়ের প্রতি" প্রার্থনা করে বলেছেন, মা গো তোমায় "আরতি করি" ,।


            কবির দেশাত্ম বোধের এক অসাধারন ছাপ রেখেছেন তার কবিতায়। " মরণ কামড়" দিয়ে আগলে রেখেছেন "বৃদ্ধের ভিটা বাড়ি ঘর"। তার ছোট থেকে "বেড়ে ওঠা সেই বোয়ালিয়া গ্রাম" ,তার "জীবন বোধ্‌  "আষাড়ে ভেজা সেই মেয়েটি" কাউওকে ভোলেননি কবি। তাই তো কবি বলেছেন  "হে বসুমতি তোমায় প্রনাম"


           কবির জীবন দর্শনে এত টুমু ঘাটতি নেই, তাই বলেছেন  "যখন আমার যাবার সময় হবে" 'পড়ে রবে লাশ দুর্গন্ধ বাতাস' তখন|ও কি 'মরণের পরেও শান্তি দিবি না কবরে বাস'? তার উপলব্ধি থেমে থাকেনি -
                   "নিত্য দেখি কত বিভীষিকা
                  মোদের ঘরে জ্বলে রঙিন শিখা
শোকাতুরা শীতের বাঁকল       কাঁপছে ওই দেহের আঁচল
                 উত্তরায়নে বহে বরফ বাতাস
                 লোম খাড়া দিয়ে বড়ই উদাস"


            চরম সত্য সামনে এনে বলেছেন "সাড়ে তিন হাত জায়গা কিনে রেখো"। "প্রতিজ্ঞা" করে বলেছেন-
              যেদিন আবার আসিবো আবার লিখিবো
              জন্ম-জন্মান্তরে বলিয়া যাইবো কথামালা,
              সদা শীতের চাদর হইয়া ভুবন জড়াইবো
              সুদর্শন উড়াইবো সাঁঝের পবনে সন্ধ্যাবেলা।"


          কি নেই কবির এই ভালোবাসার "অর্ঘ্য"তে! ঝকঝকে পরিষ্কার ছাপা অক্ষর। সুদৃশ্য মোটা শুভ্র কাগজে সযত্নে বর্ণ স্থাপন করেছেন দি ঢাকা প্রিণ্টার্স, ।বইটি প্রকাশ করেছেন ফয়সল আরেফিন দীপন, জাগৃতি প্রকাশনি। আরো একটি মনোমুগ্ধকর কাব্যিক অলঙ্কার যা সুদক্ষ হাতে করেছেন এই বইয়ের প্রচ্ছদে। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়তেই হবে এমনই এক প্রচ্ছদ করেছে রিদাত ফারহান ।


            কবি শিমুল শুভ্রের এই "অর্ঘ্য" হাতে নিলে কাব্যিক হৃদয় পরিপূর্ণ হবেই।