চুলোয় ভাত
ধোঁয়া উড়ছে
হঠাৎ হইহই শব্দ
দূরে বাচ্চারা খেলছে হয়তো
না না হইহই না, হট্টগোল
আবার ভাংচুর, আবার গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া
আবার মানুষ হত্যা, আবার রক্তগঙ্গা


তোতা, চল আমরা পালাই
নয়তো ওরা তোর সামনেই আমার করবে সর্বনাশ
আর তোকে করবে হত্যা
সর্বনাশ নাহয় হোক
তোকে হত্যা কী করে মানি!
চল বেরিয়ে পড়ি


মাস দুয়েকের ছেলেকে নিয়ে তোতার মা ছুটছে
সঙ্গে কিছু টাকা, একজোড়া রূপার নূপুর,
একটা নাকফুল, কিছু শুকনো খাবার
তোতার মা ছুটছে
পেছন ফিরে তাকাচ্ছে,
এখানে ছোট্টঘর, একফালি উঠোন
গোরস্তান, সামনে বড় পুকুর
পূর্বপুরুষের গড়ে তোলা মসজিদ
ছেড়ে যেতে হচ্ছে ভিটেমাটি
নাড়িতে লাগছে টান
বাড়ির পেছনের বনজঙ্গল, তারপর আলপথ
কিছুটা পথ গাড়িতে, দীর্ঘপথ পায় হাঁটা
কিছুটাসময় জিরোয় তারপর আবার...


তোতার মা ছুটছে
ছেলেটা ঘুমাচ্ছে কাঁধে
মাথার উপর বৃষ্টি
পা দেবে যাচ্ছে কাদায়
বোরকাটা আটকে যাচ্ছে পায়ে
মাঝে মাঝে ছেলেকে চুমু খাচ্ছে
হাঁপাচ্ছে আর দ্রুত হাঁটছে তোতার মা


এরপর নদী
সঙ্গে থাকা গয়নার বিনিময় নদী পাড়
তারপর...
এপারে শরণার্থী শিবির
লক্ষ লক্ষ মানুষ
কেউ সামান্য তাবুর নীচে, কেউ খোলা আকাশে
কেউ অঝরে কাঁদছে,
কোন কোন নারী মাথা নিচু বসে আছে
এপারে আসতে আসতে
কারো কারো বৃদ্ধ মা মরে গেছে
কারো বুকের শিশু নদীতে ভেসে গেছে
লক্ষ লক্ষ মানুষ
লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু মানুষ


তোতার মা এপারে পৌঁছতে পৌঁছতে
প্রায় আধমরা
আর কাঁধের উপরে ঘুমিয়ে থাকা তোতা একেবারে
একেবারে...
‘মা তার কাঁদে,
ছেলেটি মরে গেছে’