প্রিতুলা,
রোজ সকালে তুই যেতিস স্কুলে
আর আমি বেড়িয়ে পরতাম কাঁধে দুধ নিয়ে ফেরি করতে
তুই আমায় রস করে জিগ্যেস করতিস
‘কিগো গোয়ালা, দুধ খাঁটি তো?’
আমিও একটু স্বভাবসুলভ রস করতাম
আমি তখন তোর প্রেমে হাবুডুবু...


তুই আমায় রোজ বলতিস
তুমি ভালো কিছু একটা কর
এই ধর বাজারে একটা মুদি মনোহরির দোকান
গঞ্জের হাটে ছোট্ট একটা কাপড়ের দোকান
যদি পারো, কিছু কবুতর পোষ
ওতে দ্বিগুণ লাভ
খুব মিহি কণ্ঠে বারবার বলতিস
তুমি একটা ভালো কিছু করো...


আমি তোর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম  
সেই থেকে কতবার একটু স্বাবলম্বী হতে চেয়েছি
কিন্তু আর হয়ে ওঠেনি
মাতৃহীন বড় অভাবের সংসার
অসুস্থ বাবা, স্কুল পড়ুয়া ছোট বোন
একার উপার্জনে কায়ক্লেশের সংসার
এর মধ্যে রাতের স্কুলে পড়তেও যেতাম
তাই দুধের কলস আর ঘাড় থেকে নামেনি।


তোর মেধা বুদ্ধি ছিল অসাধারণ
নির্বিঘ্নে একটার একটার পর একটা ক্লাস টপকাতে লাগলি
জানতাম তুই একদিন অনেক বড় হবি।


একদিন বাড়ি ফিরে শুনি তোর বিয়ে
বিশ্বাস কর, খুব একটা অবাক হইনি
কারণ আমি জানতাম
আমাদের এই স্যাঁতসেঁতে বাড়ির উঠোন
খড়ের ছাউনি ঘর, গোবরলেপা বেড়া
আর এই খেয়ে না খেয়ে থাকা সংসারে
তুই বড্ড বেমানান
ঘাড় থেকে দুধের কলসটা নামিয়ে
ধীর পায়ে তোদের বাড়ি পৌঁছলাম
আমি তো অবাক!
তোর বিয়েতে এতো আয়োজন!
শুনেছি তোর বর নাকি বিলেত প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার
একা একা পাগলের মত
সেদিন হাসতে হাসতে আমি বাড়ি ফিরেছিলাম...


শুনেছি এখন তোর অঢেল সুখ
বিলেতে মোজাইক করা পাকা বাড়ি, দামি গাড়ি
স্বামী আর দুটো ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে সুখের সংসার
এই গোয়ালার কথা তোর ঘুণাক্ষরেও মনে পড়বে না
এটা খুব স্বাভাবিক
আমিও সুখী, দুধ বিক্রি ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই
গঞ্জের হাটে একটা ওষুধের দোকান করেছি
আর তিনজনের সংসারে এখন আমি একা


জানিস প্রিতু, একটা কথা খুব মনে পড়ে
ওই যে, তোর সহপাঠীরা তোকে গোয়ালিনী বলে ডাকতো
আর তুই রাগতিস না, প্রতিবাদ করতিস না


ইতি
রমেশ মিত্র (গোয়ালা)