। অপ্রেমিক।


আটপৌরে একটা আকাশ, গোটা দুয়েক গাছ,
আর একটা পুকুরের কিঞ্চিৎ ভগ্নাংশ ; ব্যস!
ওইটুকুনই প্রকৃতির ছিটেফোঁটা পড়ে,
বাকি সবই গ্রাস করেছে শহুরে অভ্যাস।
সত্যি বলতে, এদের ভালোবাসতে বয়েই গেছে,
আশেপাশে নানানরঙের ঝাঁ চকচকে বাড়ি,
নিয়নলাইট মালায় সাজা সুন্দরী রাস্তা,
পাশ দিয়ে যায় ব্যস্ত বাইক, গা ছুঁই ছুঁই গাড়ি।
এসব নিয়েই কাটছে জীবন, নজর নিজের দিকে,
গাছ আকাশ আর পুকুর নিয়ে ভাবার সময় কই?
প্রকৃতিপ্রেম? ওসব নিয়ে কবিরা সব ভাবুন,
ছাতে গিয়ে আকাশ দেখার বান্দা আমি নই।
সেদিন যখন পুকুরপাড়ে এমনি  বসে ছিলাম,
খাপছাড়া এক মাছারাঙা ঠিক আমার মতোই বসে,
শেষ বিকেলের রোদ মেখে নেয়, পুকুর জরিপ করে,
তিরের মতো হঠাৎ দেখি জলে ঝাঁপালো সে।
আমি এমন অবাক হলাম, চ্যাট ট্যাট সব ভুলে,
দেখতে থাকি জলের সাথে পাখির ভালোবাসা,
পড়ন্ত রোদ,  পুকুরজলে আলোছায়ার খেলা,
মনে হলো,  এই জন্যই বিকেলবেলায় আসা।
তাই বলে কেউ ভেবোনা হে প্রেমিক টেমিক কোনো,
টিভিতে শুধু সিনেমাই দেখি, জিওগ্রাফিক নয়,
শহুরে হাওয়ায় ভালোই আছি, বিলকুল বিনদাস,
এক আধটা দিন অমন হয়তো সবার মনে হয়।
কালকে দেখি এক প্রোমোটার যন্ত্র নিয়ে হাজির,
ভাবে বুঝি  দুটো গাছে এবার পড়বে কোপ
ছোটোবেলার গন্ধ মাখা চেনা স্মারক দুজন,
হঠাৎ কেন ভিজছে দুচোখ, হৃদয়ে বিক্ষোভ?
চেঁচিয়ে উঠি হঠাৎ করে, প্রবল এক আক্রোশে,
এ কোন অচিন বুনোমানুষ লুকিয়ে ভেতরে?
থামাও এসব জুলুমবাজি,  তারস্বরে বলি,
গাছের সামনে গিয়ে দাঁড়াই কুঠার আড়াল করে।
অবাক কান্ড, আমার সাথে আরো অনেক মানুষ,
বাইকচালক, দোকানদার আর কিছু খুচরো পথিক
সবাই আসে, রুখে দাঁড়ায়, গাছ দুটোকে ঘেরে,
ছা পোষা সব দাঁড়িয়ে গেলো, অকম্প, নির্ভীক।
গাছ বাঁচিয়ে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছিলাম একা,
বাকি সবাই নিজের কাজে কখন গেছে চলে,
ঝাপসা চোখে গাছের গায়ে বাকলে হাত বোলাই,
আমায় কিন্তু নেচারলাভার ভেবো না তাই বলে।


আর্যতীর্থ