। আগমনী।


অবশেষে সেই দিন এলো।


এক তমসাচ্ছন্ন আগামীতে,
যেখানে অন্যায় প্রহসনই সঠিক বিচারের মর্যাদা পায়,
তামসিক শক্তিরা প্রত্যহ শোষনের ক্ষমতা আরেকটু বাড়ায়,
প্রতিটি পরিবার অন্তত একজন ধর্ষিতাকে চেনে,
প্রতিটি পাড়াতে ন্যুনতম একজন নি-খবর নিষেধ না মেনে,
বেকারত্বও একধরনের কাজ কিনা তাই নিয়ে সংসদ আলোচনারত,
প্রতিটি মানুষের গায়ে খোসপাঁচড়ার মতো ধর্মের ক্ষত,
যখন নিজস্ব মতামত লুকিয়ে না রাখলে তাকে দ্রোহী বলা হয়,
খাবার ও পোশাকের স্বাধীনতা চাহিদায় জাগে বিস্ময়,
ঘুমে বা বাথরুমে কে কোন কথা বলে সব সিংহাসন জানে,
বিরোধী শব্দটি আইন মোতাবেক আর নেই অভিধানে,
যে সময়ে সব লোক ভয়ে থাকে এই বুঝি নাগরিক সংজ্ঞা পেরোলো,
সে অনতি আগামীতে, অগ্ন্যৎপাত হয়ে অবশেষে সেই দিন এলো..


প্রজারা ক্রুদ্ধ হলো ভীষণরকম।
ক্রুদ্ধ হলো ধর্ষিতা মেয়েটি,
ক্ষোভে ফুঁসে উঠলো এতদিন মাথা নামানো তার পরিবার।
রেগে উঠলো ফলিডল হাতে ধরা কৃষক,
ছাটাই স্লিপ হাতে পাওয়া শ্রমিক,
কোনো কাজ হাতে না পাওয়া বেকার,
জ্বলে উঠলো সংরক্ষণে আটকে যাওয়া মেধা,
অচ্ছ্যুৎ বলে ছিটকে যাওয়া দলিত,
বিধর্মী বলে প্রত্যাখ্যাত প্রেমিক,
গর্জন করে উঠলো ধর্মে বিভাজিত পড়শি,
মর্মে মরে থাকা বিদ্বান,
আলো ভেবে অন্ধগলিতে ঢুকে যাওয়া ভ্রান্তপথিক,


আর প্রতিটি না পাওয়া ক্ষোভের থেকে,
নথির তঞ্চকতায় অধিকারের বঞ্চনা থেকে,
প্রত্যেক বিচার না পাওয়া নির্যাতন,
প্রবলের অন্যায়ের অবমাননা থেকে,
এক একটি পুঞ্জীভূত শক্তি বেড়িয়ে মেঘের মতো জড়ো হতে থাকলো চারপাশে
ক্রমেই তা রূপ নিলো এক অলোকসামান্যা নারীর,
যার মুখ দেখলে মা’য়ের কথা মনে আসে,
তাঁর গায়ের রঙ বর্ষার মেঘের মতো,
মাথায় মাটির মুকুট,
পরনের কবচ সেজেছে গভীর অরণ্যের সবুজে,
ঝলসে উঠেছে তিমিরবিনাশী আয়ুধ তাঁর একশো তিরিশ কোটি ভূজে।
দেবী গর্জন করলেন,
আসমুদ্রহিমাচলে অন্ধকারের বশংবদরা ভয়ে কেঁপে উঠলো
দেবী শঙ্খে ফুঁ দিলেন,
তাবত  যন্ত্রণাদগ্ধ মানুষ
চোখের জল মুছে আসন্ন শেষ সংগ্রামের প্রস্তুতি নিলো,
নরকের কবজা থেকে পৃথিবী মুক্ত করার যুদ্ধ হলো শুরু।


অবশেষে, সেই দিন এলো,
আরো একবার বেজে উঠলো অসুরের বিনাশ ডম্বরু।


আর্যতীর্থ