। বানান।


দেশটা শুরু হওয়ার সময়,
কর্তারা দেখলেন চারপাশ বড় এবড়োখেবড়ো।
কেউ বসে আছে এত উঁচুতে,
যে বাকি মানুষদের নাগরিকের বদলে পোকামাকড় বলে মনে হয়।
কেউ আবার এতটা খাদের ভেতরে,
যে অন্ধকারে হাতড়ে হোঁচট খাওয়াটা অভ্যেস হয়ে গেছে।
কোথাও মস্ত পাথুরে দেওয়াল প্রতিবেশীদের আলাদা করে রেখেছে,
কোথাও আবার যোগাযোগের পথ এত বন্ধুর,
যে বন্ধুত্ব হওয়া প্রায় অসম্ভব।
কর্তারা বুঝলেন,একটা কোদাল চাই।


সব ফাটল ভরিয়ে,
জমি সমান করে,
সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা একটা হাসিখুশি ভরা দেশের জন্য,
একটা কোদাল তৈরি করলেন তাঁরা।
নাম দিলেন, সংবিধান।


কোদাল কথাটা লেখার সময়, কারা যেন ‘কোদ’ অবধি লিখে ,
আকার আর ল’টাকে অস্পষ্ট রেখেছিলো,
ইচ্ছাকৃত না অনবধানবশত,
সেকথা এতদিন পরে কারো মনে নেই।
তবে সবাই জানতো বলে মনে মনে ওটা ভরে নিতে অসুবিধা হতো না,
কোদালই যে লেখা ,
তাই নিয়ে কোথাও কোনো সংশয়ও ছিলো না।


মুশকিল হলো তারপরে ওই কোদালটার বেঠিক ব্যবহারে।
কখনো খাদের চারদিকে পরিখা খুঁড়ে সেটাকে সংস্কার বলে চালানো হলো,
কখনো আবার পাহাড়গুলো  আরো উঁচু করা বলো সংস্কৃতির অছিলায়।
দেওয়াল আর ভাঙলো কই,
বরং এদিক সেদিক মাটি কেটে
আরো বেশ কিছু পাঁচিল তোলা হলো,
কালেভদ্রে যে কটা গেট তৈরি হয়েছে ,
তার প্রত্যেকটাতেই কারো না কারো প্রবেশ নিষেধ লেখা আছে।


তারপরে ঘটলো সেই কাণ্ডটা।
কারা যেন দাবী করে বসলো
কোদ’এর পরে আকার ল নয়,
আসলে ণ’য় ডয় লেখা ছিলো।
ওটা কোদণ্ড হবে , মানে ধনুক।
কর্তারা আসলে সকলকে যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে বলেছেন।


প্রথমে অল্প হলেও,
ক্রমে ক্রমে বেশি লোক বিশ্বাস করতে শুরু করে দিলো ধনুকতত্ত্ব,
কিছুলোক তো প্রমাণও করে দিলো,
ভালো করে তাকালেই বোঝা যায়
ওটা প্রথম থেকেই কোদণ্ড লেখা,
কোদাল ভাবাটাই ভুল হয়ে গেছে।


সেই থেকে দেশটাতে
পাহাড় থেকে,
খাদের থেকে,
পাঁচিলের ওপর আর
ঝোপের আড়াল থেকে,
নাগরিকেরা পরস্পরের উদ্দেশ্যে সাঁই সাঁই করে  
চালিয়েই চলেছে তীক্ষ্ণ সব বাণ।


আজকাল ইতিহাসবিদেরও ধন্দ লাগে,
কোদাল না কোদণ্ড,
কি বানান লিখেছিলো সেই সংবিধান।


আর্যতীর্থ