। ভাগ।


ওরা ভাগ করে দেবে তোমাদের।
নমাজকে বলবে ওই দেখো, ওরা পুতুল পুজো করে।
পুজোকে বলবে, ইস, ওরা গোমাংসভোজী।
পুবকে বলবে ছিঃ, ওরা পশ্চিম অভিমুখী।
পশ্চিমকে বলবে, দেখেছো, ওরা পুবদিকে প্রার্থনা করে।
আর তোমরা, স্রেফ উপাসনার তফাতে,
ভুলে যাবে দুজনেই নিপাট সংসারী, বাপ মা বেটা বেটি নিয়ে।
ভুলে যাবে দুজনেরই খিদে পায়, বেঁচে যেতে গেলে দুজনেরই ভালোবাসা লাগে।
ভুলে যাবে মার খেলে, ব্যথা পেলে যে রক্ত বেরোয়, সেই রক্তের রঙ লাল,
মৃত্যুর পরে শোক অনির্বচনীয় কালো।
তোমরা বেড়াকে পাঁচিল বানাবে, নালাকে পরিখা বানাবে,
আর কোথাও আড়াল থেকে হো হো করে নোংরা হাসি হেসে উঠবে কিছু লোক।


ওরা ভাগ করে দেবে তোমাদের।
উচ্চবর্ণকে বলবে ওরা ছোটলোক।
নিম্নবর্ণকে বলবে, তোমরা ওদের পদানত।
পৈতেকে বলবে দেখো , ওদের ভাগে সমস্ত কোটা,
যাবতীয় সুযোগ সুবিধা সব ওদেরই জন্য এ দেশে।
বিনা পৈতেকে বলবে, ওদের হাতে সমস্ত জমিজিরেত,
আজও দেশের মাথা ওরাই, তোমাদের ওরা অচ্ছুৎ করে রেখেছে।
আর তোমরা, স্রেফ পৈতের পার্থক্যে ঘর জ্বালিয়ে দেবে,
অসবর্ণ প্রেমকে খুন করবে, ছাত্রের আত্মহত্যা নিয়ে তরজা করবে।
ভুলে যাবে, দেশের এক অংশ অন্ধকার হলে অন্য অংশে ঝাড়বাতি নিরর্থক,
ভুলে যাবে সৈনিক এককাট্টা নাহলে যুদ্ধ জেতা যায় না,
দারিদ্র্য আর অশিক্ষাই জিততে থাকে।
তোমরা নিজেদের গণ্ডীগুলো আরো ছোটো করে নেবে,
নিজেদের থালা, আচার ,বেড়ে ওঠা  প্রেম বিবাহ আলাদা করবে,
আর ঠিক ততটা আড়ালে না থেকে , কিছু লোক নোটের গদীতে বসে ভোট ভোট খেলা খেলবে।


ওরা ভাগ করে দেবে তোমাদের।
শিক্ষিত কে বলবে তোমরা চাকরী পাচ্ছো না অশিক্ষিতকে অনুদান দিতে।
অশিক্ষিতকে বলবে তোমরা শিক্ষা পাচ্ছো না শিক্ষিতদের শিক্ষাখাতে ব্যয় সামলাতে।
ওরা মধ্যবিত্তকে বলবে উচ্চবিত্ত চোর, নিম্নবিত্ত সুবিধাভোগী।
ওরা নিম্নবিত্তকে বলবে মধ্যবিত্ত অর্থলোভী, উচ্চবিত্ত শোষক।
আর উচ্চবিত্তকে বলবে, বখরা দাও, বাকিদের কথা না ভেবে বাঁটোয়ারা করো।
আর তোমরা ,নিজেদের দায়িত্বে সোনার দেশটাকে টুকরো টুকরো করে ওদের হাতে তুলে দেবে।


কবে বুঝবে, তোমরা সবাই মিলেই দেশ, এখানে কেউ ' ওরা' নেই,
তুমি , আমি, আপনি ও সে , সক্কলে মিলে আছে শুধু ' আমরা'?
কবে বুঝবে?


আর্যতীর্থ