। দেবতা।


আদিম পৃথিবী। চারদিকে ঘন জঙ্গল, হিংস্র প্রাণী।
বক্রদন্তী বাঘ, মস্ত ভাল্লুক, উলি ম্যামথদের দৌরাত্ম্য চারপাশে আদিম মানবের নিত্যদিন বস্তুত প্রাণ  নিয়ে টানাটানি,
যতজন শিকারে বেরোয় বা ফলমূল খোঁজে, অর্ধেক লোক বেঁচে বাড়ি ফিরে আসে।


বাড়ি? ঘরবাড়ি তখন তো সুদূর ভবিষ্যতের জঠরে ঘুমিয়ে। বাড়ি নয়, আস্তানা, গুহা খুঁজে নিয়ে কোনো অরণ্য গহীনে।
কাঠকুটো জড়ো করে সন্ত্রস্ত টিঁকে থাকা আড়ালে লুকিয়ে।
আগুন জানেনা কেউ বানাতে তখনো, কে জানে ফিরতো তারা কিভাবে সে বনপথ চিনে।


আগুন। বাকি পশুদের মতো মানুষ তখন তাকে বড় ভয় পায়
দাবানলে জ্বলে সব, চেনা গাছেদের বন, ভাল্লুক বাঘ  ও ম্যামথও,
শীতের সম্বল জ্বলে, জমানো মাংস ফল ছাই হয়ে যায়,
ভয় ও ভক্তি ছুঁয়ে জন্মায় প্রবাদকাহিনীরা, আগুন ঈশ্বর হন তাই স্বভাবত।


ঈশ্বর। জীবন ও মরণের প্রভু, যার ইচ্ছেতে ঘোরে চন্দ্র সূর্য তারা।
আগুন মারতে পারে , পোড়া মাংস দিয়ে বাঁচাতেও পারে কোনো মৃতপ্রায় প্রাণ,
এবং দৈবের মতো হঠাৎ আবির্ভাবে  ইহলোক মুহূর্তে করে দিশাহারা,
সুতরাং দেবতা তিনি। তাবত আদিম মন আগুনের নামে  গায় বন্দনাগান।


মন। কল্পনা ,যুক্তি, বিশ্বাস ও তর্কের পাশাপাশি বেড়ে ওঠা চারণের মাঠ,
একজন অকস্মাৎ করে আবিষ্কার, পাথরে পাথর ঠুকে শিখা জ্বলে ওঠে।
পোষ মানে এতদিন ক্ষমতাশীর্ষে থাকা ধ্বংসকে ডেকে আনা দেবসম্রাট,
রোজকার যাপনে  তারপর থেকে শুধু ভৃত্য আগুন, এককোণে পড়ে থাকা যার ভাগ্যে জোটে।


ইতিহাস জানে, কাউকে আগুন ভেবে তার পায়ে দিয়ে গেছে লোকে অঞ্জলি,
অন্তে ফেলেছে বুঝে, ভয়ে ঢেকেছিলো চোখ, আসলে সে দেবতার মুখোশ কেবলই।


আর্যতীর্থ