। দ্বিধাদ্বন্দ্ব।


মাহেন্দ্রক্ষণ আগত, আর কিছুক্ষণ পরে যুদ্ধ শুরু হবে
সমগ্র ভারত দ্বিধাবিভক্ত কৌরব পান্ডবে।
তিনি দুপক্ষেরই জ্ঞাতি, তবে আছেন পান্ডবশিবিরে
অস্ত্র ধরবেন না, অথচ অদ্ভুত উন্মাদনা সেই তাঁকেই ঘিরে।
যুগাবতার যদুপতি এতে অভ্যস্ত,  তবে স্তুতি বা নিন্দায় তিনি সমান অবিচল
তা ছাড়া পরিনাম তো তাঁর নখদর্পণে,তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে লেখা যত কর্মফল।
রাত্রি প্রায় অবসানে, ব্রাহ্মমুহুর্তে যদুপতি একাকী  
দাঁড়ালেন ভাগীরথীর তীরে,
আকাশে অনন্তনক্ষত্রমন্ডলীর মাঝে, একবার ডুব দিয়ে মনের গভীরে,
দেখলেন পিছু ফিরে; সন্তর্পনে বের করলেন বাঁশি,
নিশ্চুপ অন্ধকার ছিন্ন করে বেজে উঠল সুর,
সহসা থেমে গেলেন; কান পাতলেন, যেন শুনবেন এক্ষুনি সেই আকুল নূপুর,
বাঁশির সুরের শিহরনে যার পদযুগল আন্দোলিত হত, ঝুলনের রাতে
মথুরানরেশ নন, পান্ডবসুহৃদ নন, বিরহী কানাই যেন ফেরেন বাঁশী হাতে
মনে পড়ে যায় সব; যমুনার কুলুকুল, রাস মহোৎসব, সেই উন্মাদ প্রেম রাইকিশোরীর;
কেমন আছে সে এখন, একাকী, বৃন্দাবনে? বহুকাল ভুলে গেছেন,  যদুপতি বীর।
সামান্যা নারী, তার অসামান্য প্রেম দিয়ে রচেছিল যে সুখের স্বর্গ,  সে তো ক্ষণিকের;
বাসুদেব যে এতকাল বাদে তার নাম মনে রেখেছেন, সেটাই তো ঢের!
তবু, কেন আজ স্মৃতিতে বারবার ফিরে ফিরে আসে তার রাগ অভিমান,  অনাবিল হাসি
সামাজিক বা বৈষয়িক কোনো প্রতিদান বিনা অক্লেশে বলে দেওয়া ভালবাসি...
যদুপতি কিঞ্চিৎ ম্রিয়মাণ হলেন, তারপর সজোরে সপাটে  ভেঙে ফেললেন বাঁশি
তবু ভাগীরথী হঠাৎ যমুনা হয়ে সহস্র ঢেউএ নিরন্তর বলে চলে, ভালোবাসি,  ভালোবাসি..
হঠাৎ নিস্তব্ধতা চূর্ণ করে মন্দ্রস্বরে বেজে উঠল ভেরী, যুদ্ধ শুরু হবে,
মিলিয়ে গেল রাইকিশোরী, মেলায় বৃন্দাবন, মিলিয়ে গেল যমুনার তীর হাজার কলরবে।


আর্যতীর্থ