। এক মায়ের ছেলের গল্প।


‘বল না মা! আমার বাপটো কুথা গেলো বট্যে?’
পাথরে কোঁদা কালো দৈত্যটা অনুনয় করে মা’ কে,
‘ কি করবি বাপ জেন্যে, সে মানুষটো ক্যে, কুথায় থাকে,
আম্যি তো আছি নাকি, সিটাই যথেষ্ট লয় রে, ঘটে?’


‘তুই তো আছ্যিসই। বড় করল্যি, যুদ্ধ সিখালি, নিজ্যে হাত্যে করে,
এখুন সব্বাই আমাকে ভয় পায়। যুদ্ধে হারাবে কোন বাপের ব্যেটা?
তবু বাপটো কে আমার? মনের মধ্যে ছুবোল মারে সে কেউটেটা,
বল না মা! জিগেস্ করছ্যি তো তোকে এতগুলান বছর ধরে!’


‘ তবে সুন বেটা। হুঁই যে হস্তিনাপুর, তার রাজার ব্যাটা, পাহাড়ের মত্যো ,
গাজোয়ারিতে হাজার হাত্থি হার মানে, যার নাম ভীম, জান্যিস?’
‘ হঁ মা, মামাকে তো উই মারেছিল্যো। হঠাৎ আজকে সে সত্তুরের কেন্যে লাম লিস?
‘ অমন বল্যিস নে বেটা, পাপ হব্যে তোর, উ লোকটাই তোর বাপ তো!’


‘ আম্যি ভীমের ব্যাটা! তাই মা আম্যার এত্ত গায়ের বল, পাহাড়সমান গা!
তাই আম্যি হাত্থি তুলে আছাড় মারতে পারি, দৌড়ে ধরত্যে পারি বনের হরিণ!
বল্যিস নি কেনে মা তুই? বাপের কাছে লিয়েও যাসনি কুনোদিন,
জানল্যে উঁর কাছ্যে কুস্তি সিখতোম, গদা সিখতোম, বল্যিস নাই কেনে, মা?’


‘বেটা তুকে তো জাদু সিখাইছি, মুকুরে দেইখ্যে যা না কেনে বাপের কাছ্যে’
‘উঁ মা, উয়ারা কষ্ট্যে আছ্যে, বুনেজঙ্গলে ঘুরছ্যে, কিন্তু সাথ্যে মেয়েমানুষটো কে?’
‘ উঁটো, পাঞ্চালী বেটা, আমার সতীন, সুব কুথা কি বলা যায় তুকে?’
‘ ঠিক আছ্যে মা, আমি চললোম, বাপ কে জানাই , উঁয়ার একটা বেটা আছ্যে!’


পথশ্রমে ক্লান্ত পান্ডব, যাজ্ঞসেনী ঝিমিয়ে পড়েছেন , অক্লান্ত ভীমসেন একা।
অকস্মাৎ তার সামনে পাহাড়ের মতো এক ন্যাড়ামাথা দৈত্য নতজানু,
দুজনে দুজনকে দেখেন। অতীতে ফেরেন ভীম, কার মুখচ্ছবি দেখে ভাবনারা স্থাণু?
সহসাই বুঝে নেন মধ্যম পাণ্ডব, অবশেষে পেয়েছেন ভুলে যাওয়া পুত্রের দেখা।


‘পুত্র আমার! জন্মের পর থেকে দেখিই নি তোকে, কত বড় হয়েছিস দেখি আয়!
বড় সংকটে আছি, বিমাতা ও পিতৃব্যরা ক্লান্তিতে ভূমিতে শয়ান!’
শরীর বাড়িয়ে নিয়ে মহাবলী ঘটোৎকচ সকলকে কাঁধে নিয়ে দিলেন উড়ান,
পিতার বিপদ হলে , বরাবরই পুত্রের কাঁধে তার মোচনের দায় বর্তায়।


‘উঁ মা, বাপের লগ্যে দিখা হয়েছ্যে বটে, উয়াদের লামায়ে এসেছি পাহাড় থিকে’
‘ ভাল্যো কইরেছিস ব্যেটা ,সুবসময় সাড়া দিবি বাপের ডাকে’
ভাগ্য এবং মহাকালও কেমন করে  শুনেছিলেন এই কথাকে,
যুদ্ধ হবে কুরুক্ষেত্রে ভয়ংকর সে খবর ছড়ায় দিকে দিকে।


‘ মা গো, বাপটো যুইদ্ধ করব্যে, পাশ্যে দাঁড়াতে হব্যে, আমি যাই? ‘
‘ যাব্যি তো , তব্যে মনটো কু ডাকছে বড়, আমার রাজা ব্যেটা যদি না ফেরে আর?’
‘ব্যাস মুনিটোও ল্যিখতে ল্যিখতে ল্যিখতে থকে যাব্যে মা, এমনি করব্য শত্তুর ছারখার
ফেরা তো ভাগ্য রে মা, এমন লড়াই করবো কুনো যুগে যা কেউ দেখ্যেক নাই।’


তারপরে কি হলো , ব্যাসদেব কল্যাণে সে কাহিনী জানে সকলে,
অর্জুনের জন্য রাখা অস্ত্রতে কৌশলে প্রাণ গেলো তাঁর,
কতটা চোখের জলে হিড়িম্বা ভাসলেন সে ব্যাপারে লেখা নেই আর,
বাপের যুদ্ধ লড়ে অকারণে এভাবেই চলে গেলো মায়ের ছেলে।


আর্যতীর্থ