। একটি হত্যার গল্প।


রাজপথ থেকে ঠিক যেখানটায় পথটা গোত্তা খায় পাড়াটার দিকে,
সেইখানে সে ছিলো দাঁড়িয়ে।কম সময় নয়, সাঁইতিরিশ বছর ধরে,
মোড় ঘুরলেই তার ঝাঁকড়ানো সবুজের দেখা পাওয়া যেতো।
বসন্ত আসন্ন হলে  চিরকেলে অকালপক্কতায় সে লালে সেজে নিতো,
চঞ্চল প্রেমিককে বাঁধবার আয়োজন ছিলো সব ডালে।
সেসময় , গোটা পাড়া জুড়ে  উৎসব উৎসব ভাব এসে যেতো।
টিউবকলের পাশে বস্তিবাসীর খিলখিল কিছু বেশি হতো খিস্তির চেয়ে,
অফিসগামী মুখগুলোতে ঝুলতো চিলতে তৃপ্তির হাসি,
লাল ফুল বিছানো মাটির কার্পেটে বসে
সলজ্জ কিশোরীর  হাতচিরকুটে হাসি দেখে বোঝা যেতো,
‘বসন্ত এসে গেছে’।


সময় এগিয়ে গেছে তিনটে দশক, মুঠোফোনীরাজ ক্রমে কায়েম হয়েছে দেশে।
বস্তি কবেই ভেঙে প্রোমোটারী ফ্ল্যাটবাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে  কংক্রীট কারাগার সেজে,
পুরোনোরা রয়ে গেছে দুচারটে ঘর, বাকি সব নতুন মালিক,
পড়শীর সাথে দেখা তো দূরের কথা, চেনাটাও রয়ে গেছে বাকি।
সে তবু সবুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠায়, সাথে কিছু বাদুড় আর বংশানুক্রম ধরে বশংবদ পাখি।
তার সবুজ ঝাঁকড়া মাথা নিচুঘাড়ে দেখবে কে আর,
তবু বসন্তসমাগমে লাল অভিসারী সাজে কোনো বদল ঘটেনি।
এই যন্ত্রের যুগেও সেসময় তার শোভা অগ্রাহ্য করে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
ফেসবুকে নানান পাতায়, দিব্যি হয়েছে ঠাঁই নানান ছবির,
হেডফোনী যুগলের ঝকঝকে সেলফিতে গাঢ় প্রেক্ষাপটে আজও বোঝা যায়,
‘ বসন্ত এসে গেছে।’


এসে গেছে আরেকজন, বসন্ত ঋতু নয়, নিপাহ ভাইরাস।
যদিও এসেছে সে সুদূর কেরলে কোনো প্রত্যন্ত স্থানে,
তবু হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক কল্যাণে তার কথা প্রতি কোণে দেশবাসী জানে।
গুজব ছড়াতে থাকে দাবানল হয়ে,
একশো তিরিশ কোটির দেশে তেরোটি মৃত্যুর দূত যেন পৌঁছে গিয়েছে  ঘরে ঘরে।
আম জাম কাঁঠাল কলা ও লিচু, মারকবাহণ বলে  লম্বা তালিকাতে কেউ বাদ নেই।
ড্রাকুলার পর থেকে বাদুড়ে এত ভয় পায়নি মানুষ,
ছবি দেখলেও যেন নিপাহ এসে কামড়িয়ে দেবে।


তার গায়ে বাদুড়ের বাস, প্রজন্মে প্রজন্মে বহুযুগ হলো।
তার পাড়াতেও ঢোকে নিপাহ’র বাতাস, আসতে বা যেতে লোকে দূর দিয়ে যায়।
  গুজবের সংক্রমণ তাবত ভাইরাসের চেয়ে বহুগুণ বেশি,
তার গায়ে খুনী ছাপ পড়ে যেতে সময় লাগে না।


অবশেষে কুঠারের ঘায়ে, নির্মূল হয়ে গেলো ঝাঁকড়া সবুজমাথা কৃষ্ণচূড়া।
অসময়ে কোকিলের আর্তনাদ, বাতাসে জানিয়ে দিলো,
বসন্ত কোনোদিন আসবে না আর।


আর্যতীর্থ