আর্যতীর্থ-এর কবিতাwww.bangla-kobita.com ওয়েবসাইটে আর্যতীর্থ-এর প্রকাশিত কবিতাসমূহ।uuid:2782cc4c-711d-4403-b8f7-50c47540831c;id=11692024-03-28T23:06:41Zhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/prothom-kobita/প্রথম কবিতা2024-03-21T15:27:03-04:002024-03-21T16:06:48-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। প্রথম কবিতা।</p>
<br /><p>পৃথিবীর প্রথম মানুষের দলে, একটা খাপছাড়া মানুষ ছিলো।<br />বাকিরা যখন বুনো শুওর বা অ্যান্টিলোপ মারতে ব্যস্ত,<br />তখন সেই হিংস্র কোলাহলেও<br /> তার চোখে পড়ে যেতো<br />বনে ফোটা থোকা বুনো ফুল,<br />পরাজিত প্রাণীটার লাশ বয়ে নিয়ে যেতে যেতে,<br />গাছের বাকল-পোশাকে সে গুঁজে রাখতো লতা দিয়ে সযত্নে বাঁধা গোছাটিকে।<br />বাকিরা অবাক হয়ে দেখতো মেয়েটির দিকে, <br />খাওয়া যায় না, <br />পরা যায় না, <br />অস্ত্র বানাতে কাজে লাগে না,<br />থেঁতো করে প্রলেপ বানানো যায় না,<br />স্রেফ একটু ভালো গন্ধ আর রূপের জন্য এমন বোকার মতো কেউ বয়ে নিয়ে যায়?</p>
<br /><p>মেয়েটা সে অধুনাবিস্মৃত ভাষায় ঠেস কথা কানে নিতো না।<br />ছাল ছাড়িয়ে মাংসের টুকরোগুলো ঝলসে ভাগ করার কাজ শেষ হলে, <br />আকাশের ছড়িয়ে থাকা এত এত জ্বলন্ত ফুলকির মাঝে<br />সাদাপানা যে গোলাটা রোজ কমে বাড়ে, <br />তারই আলোয় ,<br />গুহা থেকে কিছুদূরে তিরতিরে নদীটার পাড়ে বসে মেয়েটা সে ফুলগুলো দিতো এক আদিম যুবকের হাতে।<br />যুবকটি হেসে ফেলে প্রশ্ন শুধাতো, <br />খাওয়া যায় না, <br />পাথর বাঁধা যায় না,<br />এই বেকার ফুলগুলি আমায় দিচ্ছিস কেন ?<br />মেয়েটা সেই আকাশের ফুলকিগুলোর দিকে তাকিয়ে উদাস স্বরে জবাব দিতো ‘ এমনি’। </p>
<br /><p>একদিন, ছেলেটা শিকারে গিয়ে আর ফিরলো না।<br />খাঁড়াদাঁত বাঘে খেলো নাকি মারা গেলো কোনো ম্যামথের শুঁড়ে, সেটা অবান্তর।<br />মেয়েটা কয়েকটা দিন গুম হয়ে বসে রইলো,<br />তারপর একরাতে, <br />আকাশের সাদা আলোর গোলাটা যখন সকালের লাল গোলাটার মতো পুরো গোল,<br />দিনের মতো সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে<br /> গুহা থেকে নদীতীর অবধি সব কটা গাছ ও পাথর,<br />সেসময়, <br />নিভু নিভু আগুনের শিখার দিকে তাকিয়ে মেয়েটা<br />মায়াবী স্বরে ছেলেটার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো আশ্চর্য কিছু কথা,<br />যা শুনে তার সঙ্গী সাথীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো,<br />সকলের চোখ কেন যেন ভরে গেলো স্মৃতির অশ্রুতে।</p>
<br /><p>মেয়েটা থামলে বুড়ি সর্দারনি বললো ‘ আবার বল’<br />মেয়েটা বলেই চললো ,<br />বুনো ফুলেদের কথা, <br />আকাশের সাদা গোলা আর ধীরে বওয়া নদীটির কথা, <br />শিকার আর ঝলসানো মাংস খাওয়ার কথা,<br />আর সবকটা কথার পুঁতি নিহত সাথীর বিরহের সুতোয় জুড়ে তৈরি করলো এক নিটোল মালা,<br />এর আগে এই পৃথিবীতে কখনো শোনা যায়নি তা।</p>
<br /><p>সর্দারনি মায়াচ্ছন্ন গলায় বললো, <br />‘ আমি এর নাম দিলাম কবিতা।’</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/sab-pero-na/সব পেরো না2024-03-06T11:47:59-05:002024-03-06T11:47:59-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। সব পেরো না। </p>
<br /><p>‘আমি নারী। আমি সব পারি।’<br />দাঁড়াও দাঁড়াও, একথা ফেলো না বলে এত তাড়াতাড়ি।<br />সব মানে কী শুনি? নারী হবে এত গুণী<br />একা হাতে সামলাবে ঘর আর বাড়ি, বলছো কি তাই?<br />তাহলে দরজা খোলা, মানে মানে পথ দেখো ভাই,<br />মেয়েদেরও দুটো হাত, দুটো পা আর ঘাড়ে একটাই মাথা,<br />‘সব’ পারবার মতো আলাদা ক্ষমতা ভরে পাঠান না প্রকৃতি-বিধাতা ,<br />আর যদি পাঠাতেনও, তাহলেই বা সে সব করে যাবে নাকি?<br />নারী নয় যারা, তাদের জীবন তবে শূন্যের আরামের ফাঁকি?</p>
<br /><p>সবটা পেরো না নারী। পারলেও কিছু বাকি রাখো।<br />ওরা চায় ঠিকঠাক চিনি দেবে চা’য়, <br />সকালে টিফিন বানানো, বিকেলে স্কুল থেকে বাচ্চাকে আনো,<br />‘ঘরের লক্ষ্মী’ হয়ে গোটা ঘর সামলিয়ে রাখো, তারপরে..<br />তারপরে হবে বিজ্ঞানী, ডাক্তার, উকিল , শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার,<br />‘ আমি নারী , আমি সব পারি’ .. ব্যাস, বার খেয়ে কাজে লাগো ডিয়ার! </p>
<br /><p>অভিধান থেকে যতদিন না<br /> মেয়েলি ও পুরুষালি কথা দুটো যাবে, নিস্তার নেই । <br />পুরুষ ছিটকে উঠে বলবেই, ‘ আমি না, রান্না পারি না..’<br />না পারা দোষের নয়, <br />যদি সে স্বীকারোক্তি আফশোষের হয়,<br />যদি তার পরে আরেকটু শোনে সাথী হতে চাওয়া নারী<br />‘ তবে, রাতের বাসনগুলো মেজে দিতে পারি।’<br />দাঁড়ি যদি পড়ে যায় রান্না পারি না’র পরে,<br />তাহলে পরিস্থিতি ভারী নড়বড়ে,<br />‘ আমি সব পারি’ যেন বোলো না গো ভুল করে মেয়ে, <br />সব কাজ ঘাড়ে ফেলে তখন দেখবে সে শুধু চেয়ে চেয়ে। </p>
<br /><p>সব কেন পারতেই হবে? ঘরকন্নার কাজ কেন জ্ঞাতব্য হবে সব কন্যারই<br />যে শেখার শিখে নিক প্রয়োজনমতো, <br />পুরুষ বা নারী। <br />সব কাজ কেউ পারে না , এক শুধু সিনেমাতে যায় দেখা পাওয়া <br />তুমি নারী, তুমি পারো সব,<br />এ কেবল ভুল দিকে ঠেলে দিতে পালে দেওয়া হাওয়া।</p>
<br /><p>ও শুনে ভুলো না নারী। ওটা পুরুষালি সুরে বাঁধা গত গাওয়া। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/guru-laghur-anko/গুরু লঘুর অংক2024-03-05T03:41:30-05:002024-03-27T21:54:56-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। গুরু লঘুর অংক। </p>
<br /><p>অবশেষে একদিন ইউ এন ভাঙলো। <br />নেশনেরা বুঝলেন,<br />কাঁটাতারই যুগের ফ্যাশন,<br />ইউনিটি থেকে ইউনিটই হয়ে থাকা ভালো,<br />গ্লোবালাইজেশন একটি গ্লোবাল লাই। <br />সকলে ‘ হিজ হিজ হুজ হুজ’ চুজ করলেন,<br />ভারত রাশিয়া চীন আমেরিকা ব্রাজিল থেকে <br />লুক্সেমবার্গ, এরিট্রিয়া বুরকিনা ফাসো আর ফিজি আইল্যান্ডও ঘোষণা করে দিলো , <br />দেশ আগে , বিশ্ব চুলোতে,<br />কেউ আর যাবে না অন্য কারো পেছনে চিমটি কাটতে <br />বা ছদ্ম মাথায় হাত বুলোতে,<br />যে যার মতন থাকবে। </p>
<br /><p>সুতরাং সব দেশে শুরু হয়ে গেলো লঘুদের <br />আরো লঘু করে ক্রমশ বিলীন করার প্রক্রিয়া।<br />কেউ বললো, এত বছরের পরে যারা এসছে তারাই লঘু,<br />কেউ বাছলো ধর্মকে, <br />কেউ ভাষা, <br />কেউ রাজনৈতিক মতবাদ<br />কেউ শাসকের প্রতি আনুগত্যকে,<br />কেউ আবার স্রেফ গায়ের রঙকে। <br />যে ভাবেই ভাগ হোক, <br />ব্যাপারটা মোটামুটি সত্তর-তিরিশে দাঁড়ালো,<br />জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে। <br />চিহ্নিতকরণ ও নিধনের পরে,<br />পৃথিবীর জনসংখ্যা তিনশো কোটি কমে গেলো,<br />যদিও কোনো দেশ অন্য কোনো দেশ নিয়ে মন্তব্য করলো না,<br />ওই এখন যেমন<br /> ইজরায়েলিদের ফিলিস্তিনিসংহারে <br />অন্ধ মূক ও বধির থাকা সভ্য বিশ্বের চাহিদা, ঠিক সেরকম।<br />প্রবল দেশপ্রেমে সবাই ভাবলো, <br />এতদিনে দুশো চারখানা শুদ্ধ দেশ পাওয়া গেলো। </p>
<br /><p>কোথায় কী! <br />যেখানে ধর্ম নিয়ে ভাগ হলো, সেখানে ভাষা নিয়ে ঝগড়া শুরু হলো,<br />একভাষাভাষী দেশে আবার গায়ের রঙ নিয়ে প্রবল বিবাদ,<br />একরঙা দেশে ঝগড়া বাঁধলো ধর্ম নিয়ে।<br />এখানেও নতুন গুরুরা সমূলে বিনাশ করলো নতুন লঘুদের,<br />মোটামুটি ওই সত্তর তিরিশ হিসেবে। <br />কোনো দেশ অন্য দেশে নাক গলালো না,<br />পৃথিবীর জনসংখ্যা কমে হলো, সাড়ে তিনশো কোটি।<br />লোকে মাথা নেড়ে বললো, এবারে শান্তি আসতে বাধ্য।</p>
<br /><p>ধ্যাত্তেরি! <br />আবার শুরু হয়ে গেলো পার্থক্য নিয়ে টানাটানি।<br />ধর্ম এক হলেও উপাসনা পদ্ধতি নিয়ে গোলমাল,<br />ভাষা এক হলেও উচ্চারণবিধি নিয়ে গোলমাল,<br />গায়ের রঙ এক হলেও চুল আর চোখের রঙ নিয়ে গোলমাল,<br />আর সবকিছু এক হলেও কে সে দেশে আগে এসছে তাই নিয়ে গোলমাল..<br />গুরু-লঘু, গুরু-লঘু করতে করতে করতে,<br />শেষ অবধি টিকে গেলো দুশো চারখানা মানুষ,<br />প্রতি দেশ প্রতি একজন। </p>
<br /><p>মানুষগুলো এবারে সীমান্তের বাইরে তাকালো। <br />কারো ধর্মের সাথে মিল, কারো ভাষার সাথে,<br />কারো গায়ের রঙের সাথে।<br />সেই মতো আবার লঘু-গুরু, গুরু-লঘু , লঘু-গুরু..<br />এইবারে ‘আন্তর্জাতিক’ স্তরে,<br />একটা বিভাজন থামলেই আরেকটা শুরু।<br />এই করতে করতে করতে শেষ অবধি বেঁচে ছিলো যে দুইজন,<br />তারাও পরস্পরের অমিল খুঁজে বের করে যুদ্ধ করতে করতে শেষে একদিন দুজনেই মরে গেলো।</p>
<br /><p>তখন সবুজ গাছেরা এসে সব দেশ-সীমানা মুছে দিলো,<br />পাখিরা এদেশের খেয়ে ওদেশে বাসা বেঁধে সে দেশে বেড়াতে যেতে লাগলো,<br />পশুরা যে যার ইচ্ছেমতো জঙ্গলে আস্তানা খুঁজে নিলো।</p>
<br /><p>গ্রহান্তরের একদল জীব, <br />পৃথিবীতে ক্ষণিক তাদের রকেট থামিয়ে চারদিক জরিপ করে <br />অবাক চোখে বলে উঠলো, <br />আরিব্বাস, একটা বিভাজনহীন বিশ্ব! <br />এখানকার প্রাণীরা কি সাংঘাতিক বুদ্ধিমান!</p>
<br /><p>তারপর.. অনেক সেলফি নিয়ে, হুউশ করে উড়ে গেলো অন্তরীক্ষযান। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/kar-dike/কার দিকে2024-03-02T16:44:40-05:002024-03-05T03:42:35-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। কার দিকে। </p>
<br /><p>‘কার দিকে তুমি গুলি ছুঁড়ছো হে, এখানে সবাই মানুষ!’</p>
<br /><p>সুনীল গাঙ্গুলীর এই লাইনটারই কোনো ভাষ্য মুখে নিয়ে বন্দুকবাজের সামনে যে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালো,<br />তার মাতৃভাষা বাংলা নয়, <br />হলেও সে সুনীলের কবিতা পড়েনি।</p>
<br /><p>সে হয়তো মায়ানমারে <br />সামরিক প্রভুদের সামনে দাঁড়ানো <br />ফসলে অসফল সাতদিন খিদেপেট বার্মিজ চাষী,</p>
<br /><p>অথবা সীমান্তে সন্তান হারানো <br />ইউক্রেনীয় দোকানদার,<br />উদ্দেশ্য সামনের সদ্য কুড়ি পেরনো রাশিয়ান যোদ্ধাটি,</p>
<br /><p>অথবা অসংখ্যবার ধর্ষণের পরে কন্যা ফেরত পাওয়া নাইজেরিয়ান প্রৌঢ়া,<br />বোকো হারামের ‘ আল্লা হু আকবর’ হুংকারিত যুবকের রাইফেল তার দিকে তাক করা,</p>
<br /><p>অথবা নিতান্ত কাছের মণিপুরে মেইতেই বা কুকি কলেজপড়ুয়া,<br />ঠিক বিপরীত উপজাতিটির ওরই বয়েসী যুবকটি উল্টোদিকে,<br />হাতে পুলিশের থেকে চুরি যাওয়া বন্দুক,</p>
<br /><p>অথবা হামাস জঙ্গীর সামনে দাঁড়িয়ে তরুণ ইজরায়েলি বেহালাবাদক ,<br />অথবা ইজরায়েলি সেনার সামনে দাঁড়ানো প্যালেস্তিনি অধুনা বেকার রুটিনির্মাতা<br />অথবা আমেরিকান কিন্ডারগার্টেনে ঢোকা খুনে বন্দুকবাজের প্রতি এ উক্তি কোনো প্রাইমারি শিক্ষিকার..</p>
<br /><p>অথবা<br />অথবা<br />অথবা..</p>
<br /><p>আরো হাজার একটা পরিস্থিতি দুশো চারখানা দেশ জুড়ে,<br />প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হচ্ছে,<br />একদিকে বন্দুকধারী , অন্যদিকে নিরস্ত্র নাগরিক,<br />সবাক বা নির্বাক প্রশ্ন ছুটে আসছে<br />‘ কার দিকে তুমি গুলি ছুঁড়ছো হে, এখানে সবাই মানুষ!’</p>
<br /><p>আর সব ক্ষেত্রেই<br />বন্দুকধারীটি মাথা বা বুক তাক করে হেসে বলছে <br />‘ ঠিক তাই। সেই জন্যই তো’</p>
<br /><p>তারপর ‘গুড়ুম!’ লাশের দিকে না তাকিয়ে সে হেঁটে চলে যাচ্ছে আগামী শবের সন্ধানে।</p>
<br /><p>এই বন্দুকধারীটি কি মানুষ?</p>
<br /><p>উত্তর ‘ না’ হলে , এই নামানুষ প্রজাতিটির সংজ্ঞা কী?</p>
<br /><p>আর যদি ‘ হ্যাঁ’ হয়, দরজার দিকে দেখতে থাকো।<br />আজ হোক কাল হোক, একদিন সে তোমার দোরে আসবেই।</p>
<br /><p>মনে রেখো, সুনীল গাঙ্গুলি কেন, সে কারোরই কবিতা পড়েনি।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/kancha-maal/কাঁচা মাল2024-03-01T10:35:38-05:002024-03-01T10:35:38-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। কাঁচামাল। </p>
<br /><p>আজ অবধি যত প্রাণী আয়ু শোধ হলে মরে গেছে,<br />তাদের সে দেহগুলো গিয়েছে কোথায়? </p>
<br /><p>আইনস্টাইনের সূত্র ই ইকুয়াল টু এম সি স্কোয়ার ধরলে,<br />তারা শক্তি হলে পৃথিবী এতদিনে হাজার তারার সমান জ্যোতিপূর্ণ হতো।<br />তা যখন হয়নি, <br />সূর্যের তিননম্বর গ্রহটি আজও যখন তারই সৃষ্টিনক্ষত্রের আলো-প্রত্যাশী,<br />সুতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে আজকের জৈব অনুতে <br />সেইসব গতায়ু প্রাণীদের ডি এন এ <br />নতুন অবতারে মিশে আছে অযুত জীবিত কোষে কোষে,<br />অতীতের প্রোটোপ্লাজম <br />বর্তমানের বাতাস জল মাটিতে পুষ্টি জোগাচ্ছে আগামীর চারাদের, <br />অজৈব’র হাত ঘুরে আবার <br />একই কার্বন, হাইড্রোজেন অক্সিজেন নাইট্রোজেন<br />ঢুকে পড়ছে নতুন জীবনের ধারায়।</p>
<br /><p>তার মানে এই যে আপনি অমুক চন্দ্র তমুক<br />অথবা অমুকা রাণী তমুকা,<br />আপনাদের শরীরের প্রতিটি কোষের কাঁচামাল<br /> পৃথিবীর প্রথম এককোষী প্রাণীটির থেকে ধার নেওয়া।<br />আপনার মধ্যে ঠিক কতটা গাছ <br />আর কতটা ডাইনোসর,<br />আদিম শ্যাওলা ও অনতি-অতীতে লুপ্ত হওয়া ম্যামথের অনুপাত কত,<br />কেউ জানে না। </p>
<br /><p>হতে পারে আপনি যে ধর্মকে গালাগালি দেন, <br />সে ধর্মের প্রবর্তকের কিছু জৈব অনু <br />আপনার মগজের কোষে,<br />আপনি যে দেশের নাগরিককে শত্রু ভাবেন, <br />তার সাথে আপনার শরীর ভাগ করে নিয়েছে <br />ধূসর অতীতে হারানো কোনো প্রাগৈতিহাসিক অরণ্যচরের জৈব-অংশ,<br />যার দেহাংশ আজ অবধি আবিষ্কার হয়নি।</p>
<br /><p>মোটকথা, আপনি যিনিই হোন, <br />যেখানেই থাকুন আর যাই কাজ করুন,<br />আপনি তৈরি স্রেফ কৃমি থেকে তিমিমাছ, <br />অধুনা-লুপ্ত শত গাছ, <br />পোকা, পাখি, হরিণ, শুয়োর, গরু , ছাগল .. <br />এমন লক্ষ লক্ষ মৃতদেহের মিশ্রণে,<br />আপনার উপাদানের পুরোটাই ধার করা অতীতের থেকে,<br />আবার আপনিও <br />আগামী জীবনের কাঁচামাল ছাড়া আর কিছু নন।</p>
<br /><p>তার পরেও আপনি দেশ, জাতি, ধর্ম, ভাষা.. <br />আরো না জানি কত খোপে মানুষজনকে বেঁটে চলেছেন রোজ!</p>
<br /><p>ছোঃ! কাঁচামাল নিয়ে এত কেউ করে নাকি খোঁজ?</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/shekol/শেকল2024-02-29T06:13:17-05:002024-03-01T10:34:51-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। শেকল। </p>
<br /><p>কে বেশি ভ্রমণে সক্ষম ?<br />তোমার আদিম পূর্বজ, বল্কল-সজ্জিত পাথুরে অস্ত্রজীবী গুহার মানুষ<br />নাকি তুমি, ফোনে যার মেক মাই ট্রিপ , উবের আর ওলা,<br />হুট বললেই চলে যেতে পারো হুউশ?</p>
<br /><p>প্রশ্নটা বোকার মতো মনে হচ্ছে?<br />চাকা আবিষ্কারের আগের সময় বনাম জেট-যুগের<br />তুলনাই তো ভুল ! <br />পকেটে পয়সা আর মনে যদি থাকে সেই ইচ্ছে,<br />এখন ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ডিনার তিনটে আলাদা মহাদেশে করা সম্ভব। <br />কোথায় আমরা , <br />আর কোথায় সেই ফলপাকুড় খোঁজা ম্যামথের তাড়া খাওয়া জরদগব! </p>
<br /><p>দাঁড়াও, জি পে আর মেক মাই ট্রিপ নিয়ে ঘোরা পথিকবর।<br />তিষ্ঠ ক্ষণকাল.. ভালো করে বলো দেখি ভেবে,<br />শেষ কবে ‘ মনে হলো , চলে গেলাম’ বলে গিয়েছো কোনখানে? <br />সংখ্যায় নগন্য হিসেবে, <br />গেলেও ব্যবস্থা করে যেতে হয় স্থায়ী আস্তানাটার,<br />পড়শিকে চাবি দিয়ে বলে যেতে হবে গাছে কবে জল দরকার,<br />কাজ হলে ছুটি নিতে হবে .. সি এল ই এল ইত্যাদি করা অ্যাপ্লাই.<br />ব্যবসায় আরো চিত্তির, সেখানে তো দিন খাই দিন সাপ্লাই,<br />ক্লায়েন্ট না চটে যেন, মাল যেন না দিয়ে যায় ভেন্ডর..<br />এরকম কত না থাকে জীবনের দাবী..<br />মোটকথা, যেইখানে যাও, <br />তোমার কোমরে গোঁজা ঘর বলে ভাবা এক ঠিকানার চাবি।</p>
<br /><p>আর সেই আদিম মানব? তার ঘর অরণ্য গিরি কন্দর,<br />সাগরের বেলাভূমি, নদীদের তীর <br />সংক্ষেপে ,মালিক সে গোটা পৃথিবীর।<br />তল্পিতল্পা কিছু নেই। রোজ ভোরে উঠে সে ইচ্ছে মতন হাঁটে যেই দিকে দুচোখ তার যায়,<br />ফেরার ভাবনা নেই, সামনে এগোনো শুধু, কাউকে বলবারও নেই কোনো দায়,<br />সঙ্গীরা চলমান তার সাথে সাথে, যাত্রা ও বসত সব ইচ্ছানুসারী,<br />দরকারে বাড়ি ভাবা জায়গাকে স্থায়ীভাবে ছেড়ে, হুট করে দিতে পারে পাড়ি।</p>
<br /><p>ওহে মেক-মাই- ট্রিপ-ধারী, যাওয়ার উপায় আছে বলে,<br />সত্যি কি যেতে পারো? <br />বাঁধা তুমি ‘বাড়ি’ বলে ভাবা এক ভ্রমের শেকলে। </p>
<br /><p>‘হাজার বছর আমি পথ হাঁটিতেছি’..<br />কোনো আধুনিক কবি নয়,<br />এ পংক্তি-রচয়িতা অনেক প্রজন্ম আগে পূর্বজ যাযাবর কেউ আসলে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/chabigochha/চাবিগোছা2024-02-28T02:15:54-05:002024-02-29T06:14:08-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। চাবিগোছা। </p>
<br /><p>বুড়ো বটগাছ এইবারে রাখবেন দেহ। পাতায় পাতায় তাঁর ক্ষয় চিহ্নিত,<br />হৃদ-ধুকপুক বড় অনিয়মিত, ক্রমশ ওষুধের নিয়ন্ত্রণহীন,<br />ডালে ডালে ফাটা বল্কল, <br />সোডিয়াম ওঠে নামে, বৃক্কে ফাটল, <br />একদা আশ্রয় হওয়া আকাশমাফিক বুকে <br />ফুসফুস ঠেলে ঠুলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে পারছে না আর,<br />রাইলস টিউব দিয়ে কত আর পৌঁছাবে শেকড়ে খাবার,<br />সপ্তাহ , দিন কমে আয়ুর এখন স্থিতি ঘন্টা হিসেবে,<br />মনিটার গ্রাফগুলো এই বুঝি নেভে।</p>
<br /><p>গাছের নিয়ম মেনে এই গাছে বেশকটা ঝুরি। <br />গাছ-ব্যাকরণ ভেঙে অবশ্য তারা কেউ <br />আশেপাশে নেই ছায়া বেঁটে নিতে,<br />সকলেই ভিন্ন শহরে, দুইজন চলে গেছে দেশের সীমানা ভেঙে প্রবাসী মাটিতে,<br /> পরিমিত সার জলে পুষ্টি যথেষ্ট জমে তারা আজ পরিচিত বৃক্ষ হয়েছে প্রদেশে বিদেশে,<br />পরের ঝুরিরা ক্রমে পাতা ডাল পালা বের করে, আলগা শেকড়ে কোন ভুঁইয়ে যাবে ভেসে ,<br />সেসব আগামী জানে,<br />আপাতত সব ঝুরি আসন্ন বিয়োগের শোকে জুটেছে যে পুরনো ভিটেতে,<br />ফিরি সেইখানে। </p>
<br /><p>এখানে প্রপার্টি নিয়ে মারামারি নেই, সকলে তৃপ্ত বেশ নিজেদের নিয়ে,<br />ছোটোবেলা কৈশোর কিছুদূর যৌবন স্মৃতিরা দিচ্ছে ফিরিয়ে,<br />অচিরেই এসে গেলো শোকসংবাদ,<br />বটগাছ থেকে ঝরে গেছে শেষ পাতা, বাসা ছেড়ে উড়ে চলে গেছে শেষ পাখি,<br />সময়ের রোলকলে একজন বাদ।<br />সকলেই জানুক যতই, তবুও বিষাদ আসে সুনামির মতো,<br />আগে থেকে টের পেলে ক্ষয়ক্ষতি কম করা সম্ভব না তো,<br />থমকানো কান্নারা থমথমে পরিবেশ <br />আরো যেন করে রাখে ভারী।</p>
<br /><p>সব কাজ শেষ হলে, বটগাছ-চারাগুলো একদিন খুলে দেখে তাঁর আলমারি,<br />সেখানে সাজানো আছে ছোটোবেলা থেকে পাওয়া কত সব ভুলে যাওয়া মণি,<br />প্রাইমারি মার্কশিট, চামচ-গুলির রেসে থার্ড প্রাইজ ঝাপসা মেডেল,<br />স্কুলের ডিবেট আর পাড়ার আবৃ্ত্তিতে পাওয়া বই.. সবই আগলে ছিলো সে স্নেহের খনি,<br />ছোটোবেলা-প্রহরীর থেকে শেষ উপহার পায় সকলে এক এক করে,<br />বহুদিন আগে যারা স্মৃতি থেকে মোছা।<br />হঠাৎই নজর পড়ে, দেরাজের এক কোণে ছোট এক ব্যাগে ভরা মোটা চাবিগোছা।</p>
<br /><p>কী কী খোলে চাবিগুলো দিয়ে? সেটা কারো জানা নেই, <br />বহুদিন সে চারারা আসেনি বাড়িতে,<br />যিনি নেই, তিনি শুধু পারতেন সমাধান দিতে। <br />কাজেই সকলে মিলে এক একটা ঘরে যায়, কোনোখানে আলমারি, কোথাও তোরঙ্গ খোলে,<br />ছোটো হয়ে যাওয়া ফ্রক আর হাফ প্যান্ট, লাট্টু লাটাই আর মার্বেল গুলি কোনোখানে মেলে,<br />কোথাও মায়ের শাড়ি, সাদাকালো অ্যালবাম, ম্যাড়ম্যাড়ে পোস্টকার্ড.. শ্রীচরণেষু বাবা দিয়ে শুরু লেখা সবই,<br />ছোটোবেলা ফিরে যেতে কম্পাস-কাঁটা যেন দিক বলে দেয়,<br />ক্রমশই রঙ পড়ে গাঢ়, আরো গাঢ় হয় ছবি, <br />আলগা সুতোর এই আধুনিক পৃথিবীতে ঝুরিগুলো ঘেঁষে আসে পরস্পরের দিকে আরো বেশি করে, <br />‘ বেঁধে বেঁধে থাকবি বাছারা, নয়তো শেকড় হবে খুব নড়বড়ে’<br />সকলে শুনতে পায় নিজেদের মনের ভেতরে। </p>
<br /><p>সদ্য বাঁধানো ফটো হাসিমুখে দেখে। হাওয়া নেই, তাও যেন মালা ওঠে নড়ে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/jao-na-dekhi/যাও না দেখি2024-02-21T08:43:24-05:002024-02-21T08:43:24-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। যাও না দেখি। </p>
<br /><p>বাঙালির বাছা, ভাষা শিখে নাও বাংলাকে ছেড়ে অন্য<br />যে যত শিখবে সামাজিকে তত আরো উঁচু হবে গণ্য,<br />শেখো ইংরেজি, হিন্দি স্প্যানিশ তামিল কিংবা জাপানি,<br />যত ভাষা শেখো ততই তো ভালো, এতে কেন এত লাফানি<br />এমন শিখবে , কথ্যতে যেন মনে হয় ভাষা মাতৃ, <br />পৃথিবীর সব ভাষা জেনে রেখো অসীম জ্ঞানের ধাত্রী,<br />তামিলের কাছে এক ধন পাবে, হিন্দির কাছে ভিন্ন, <br />এইটুকু আয়ু , এত সম্পদ, এত সভ্যতা-চিহ্ন, <br />শিখে নাও বাছা যতখানি পারো , হরিনাথ দে’র দিব্যি,<br />সব ভাষা কোল পেতে বসে ডাকে, আয় রে আমায় শিখবি।</p>
<br /><p>মাতৃভাষার ভাবনা কোরো না, সে নদী বইবে ধীরে,<br />তোমাকে নাহয় নাই দেখা গেলো ঘাটে স্নান করা ভিড়ে,<br />তার মানে লোক কম দেয় ডুব, ব্যাপার এমন না তো,<br />কোটি কোটি জিভে রোজ সংলাপ সদ্যবাংলা-জাত,<br />শোনা যাবে ঠিক, তুমি নেই বলে ঝুলি মোটে নয় খালি,<br />আপাতসভ্য সাহিত্য-ভাষে মিশবে চলতি গালি, <br />রোজের আলাপে আমাদের মতো কোটি কোটি ‘বং-গাই<br />বাংলায় হাসি ,কাঁদি, রাগ করি , ভালোবাসি, ধমকাই । <br />বাঙালীর বাছা, যাও তুমি হও কুশলী ভিন্নভাষাতে<br />আলিবাবা-গুহা পেয়ে যাবে খুঁজে, সে ভাষাও ভালোবাসাতে।</p>
<br /><p>তবুও কি জানো, সে ভাষার ভাষী তোমাকে দেখবে টেরিয়ে,<br />তার মা-ভাষাকে তুমি ভালোবাসো নিজের জননী এড়িয়ে,<br />সেই কথা তুলে মস্করা ছলে মারবেই তির ব্যঙ্গে,<br />তুমি বেচারি তো জানোনা কী আছে ‘ বিবিধ রতন’ বঙ্গে,<br />সুতরাং তার বিপরীত বাণে দিতে পারবে না উত্তর,<br />অবশেষে ঠিক কোনো একদিন বাংলায় বলে ‘ ধুত্তোর!’<br />ফেরত আসবে বাংলার কাছে, ভাষা বদলাবে ফেসবুক,<br />সিলেবাসে পড়া কবিতা গল্প, রয়ে গেছে যার রেশটুক,<br />আবার ফিরবে, পথ দেখাবেন কথার আলোরা এসে,<br />তাদের ম্যাজিকে ফেলে যাওয়া মা’কে ফেলবেই ভালোবেসে।<br />শুনবে মায়ের স্নেহের সে ডাক, আয় রে আমায় শিখবি,<br />বিদেশি যা ধন এসেছিস নিয়ে, চল বাংলাতে লিখবি।</p>
<br /><p>বাঙালীর বাছা, যাও খেলে নাও ভিন-ভাষা নিয়ে ফ্রিসবি,<br />খেলাশেষে ফিরে আসবেই ঘরে, বাংলা ভাষার দিব্যি।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/thakurer-photo/ঠাকুরের ফটো2023-12-19T16:30:57-05:002024-02-18T12:52:38-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ঠাকুরের ফটো। </p>
<br /><p>হঠাৎ করে ফটোয় সেজে এলেন ঠাকুর আমার বাড়ি,<br />রাখবো তাঁকে ঠিক যে কোথায় , বিবেচনায় বিপদ ভারি।<br />তোমরা ভাবো হায় রে আপদ, রাখবি ঠাকুরঘরের তাকে<br />দুগ্গা কালী লক্ষ্মী গণেশ কৃষ্ণ শিবের ছবির ঝাঁকে, <br />এমন ভাবেই আসেন তাঁরা, নানান লোকের হাত ধরে যে,<br />তার পরে তো মন্ত্রে পূজায় সব ভগবান ওঠেন সেজে,<br />ঠাকুর এলো তোর বাড়ি আজ, সময় এখন পুণ্যতোয়া,<br />পুজোর ঘরে রাখ আদরে, দিস প্রতিদিন ফুলের ছোঁয়া।</p>
<br /><p>কিন্তু আমার ঠাকুর আবার চান না অমন ভক্তিপূজন,<br />সবার সাথে থাকেন মিশে, তেঁতুলপাতায় যেমন সুজন।<br />সিংহাসনে রাখলে তাঁকে পাপ হবে খুব সবাই জানে,<br />ধুলোমাটির সঙ্গ ছেড়ে বদলে দিলে ভগবানে,<br />তাঁর বাণীরা ঠোকর খেয়ে হারিয়ে যাবে চার দেওয়ালে<br />ঠাকুরঘরে রাখলে তাঁকে তাল দেবো ঠিক সেই বেচালে।</p>
<br /><p>পড়শি বলেন, কি মনোহর, সাজাও ফটো বসার ঘরে <br />এমন ভাবে রাখতে হবে, সবার যেন নজর পড়ে। <br />অতিথি যে আসবে তারা জানবে সবাই ভক্তি তোমার,<br />ঢুকলে পরেই স্পর্শ পাবে সাংস্কৃতিক সেই সুষমার,<br />তেমন হলে বাণী বুনে পর্দা করে জানলা ঢাকো,<br />দুচারখানা বই সাজিয়ে রাখতে পারো কাঠের তাকও,<br />মোটের ওপর পাওয়া ফটো ইউজ করো এমন ভাবে,<br />ড্রয়িং রুমের চেহারাটাই পালটে যাবে সেই হিসাবে।</p>
<br /><p>কিন্তু আমার ঠাকুর যদি ফটোতে হন সজ্জা গৃহে,<br />গাইবে কে আর বাউলসাজে হৃদয়পুরের রাস্তা দিয়ে?<br />যেই বাড়ি তাঁর বইয়ের পাতার রোজ মুড়ে যায় ওপর-কোণা,<br />দখিন হাওয়ার মতো যে তাঁর সেসব ঘরেই আনাগোনা,<br />একটা দুটো ছিঁড়লে পাতা দস্যি খুদে পড়তে গিয়ে,<br />তিনি তখন রোদের মতন মারেন উঁকি জানলা দিয়ে,<br />কোনো পাতার মাঝে যদি আলতো দেখো হলুদ ছিটে,<br />তার মানে তাঁর পুজো ছিলো রান্নাঘরের সাধনপীঠে।<br />পড়শি আমায় যতই বলুন তাঁর ফটোতে ঘর সাজাতে,<br />তিনি যে রোজ খেলতে আসেন আমার তোমার, সবার সাথে।</p>
<br /><p>অনেক ভেবে শোয়ার ঘরেই লাগিয়ে দিলাম ফটোটাকে,<br />ঘুম ভেঙে আর ঘুমে যেতে ভোর আর রাতে দেখি তাঁকে।<br />মাঝের সময় ঝড়ঝাপটের আভাস পেলেই বাড়াই দুহাত,<br />অমনি হেসে সামনে দাঁড়ান, আঁধার চিরে আলো হঠাৎ।</p>
<br /><p>একলা চলার পথ বেছেছি, যায় বিপরীত জন-প্রপাত,<br />প্রথম আলোয় ভরসা জোগান শোয়ার ঘরের রবীন্দ্রনাথ।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/letter2/চিঠি ২2023-11-24T16:26:01-05:002023-11-26T12:00:14-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। চিঠি। </p>
<br /><p>তোমাকে বলবো বলে যা সব আড়ালে ছিলো ব্যস্ততা অজুহাত চাপা,<br />আজ সেই চিরকুটগুলো ধুলো ঝেড়ে বের করে দেখি,<br />এত তারা ঝুরঝুরে, তোমার পড়ার আগে ঝরে পড়ে যাবে সব খুললে লেফাফা,<br />সময়ে বলবো বলে তামাদি গিয়েছে হয়ে সে দামী আবেগ,<br />ঠুঁটো কলমে ঝুটো কিছু লেখালেখি। </p>
<br /><p>সুতরাং, নতুন এক সাদা পাতা এনে, খোলা চিঠি দেবো ভাবলাম,<br />এবার আর কোনো রাখঢাক রাখবো না, উপুড় করবো মন,<br />সেই ভেবে কলম বাগিয়ে বসে তো গেলাম, কিন্তু সম্বোধনে প্রিয়তমাসু লিখি নাকি নাম,<br />সেটা ভেবে বেলা বয়ে যায়। ভাবো দেখি কি জ্বালাতন! </p>
<br /><p>আজকাল ইনস্টা’র যুগে চিঠিফিঠি কেউ লেখে, বলো! হুট পৌঁছায় হ্যাশট্যাগে,<br />বলবার ধরণও বদলে গিয়েছে, অর্ধেক ইমোজিতে, বাকি আধা অক্ষরে আধো-সংকেত,<br />লেফাফা, ডাকটিকিট অচেনা এ যুগে। মেঘেরা জমে না আর পিওনের ব্যাগে,<br />ডি ডি এল জে দেখে কেউ কি এখনো নিজেকে শাহরুখ ভাবে?<br />লংশটে কাজল আর ধু ধু গমক্ষেত.. </p>
<br /><p>যাক’গে সে সব কথা। প্রতি প্রজন্মে প্রেম নবজন্ম পায়, আসে নবকলেবর ধরে,<br />যারা বুড়ো তারা দেখে গজগজ করে। একালের মতো যদি হতো,<br />তবে এই চিঠিখানা বেকার ঠিকানা খুঁজতো না। কে পত্র দেয় বাবা ঘরের ভেতরে,<br />মনের খবর জেনে এবাড়ি ওবাড়ি ঠিক কথারা এগোতো।</p>
<br /><p>কতগুলো বছর পেরোলো? সুনীলের তেত্রিশ পেরিয়ে গিয়েছে নাকি,<br />হিসেব করলে বোঝা যাবে। সম্বোধন উহ্য থাক চিঠিতে নাহয়,<br />প্রিয়তমা খুবই সেকেলে, আমাদের থেকেও প্রাচীন। কবে আর নাম ধরে ডাকি,<br />সুতরাং সরাসরি বিষয়েই আসা যাক। সাদা খাতা জমা দেওয়া ভালো কথা নয়।</p>
<br /><p>কী লিখি, লিখি কী বলো তো! রোজনামচার যত প্রৌঢ় কাঁদুনি, <br />তোমাকে বলতে গেলে ফোপড়া শোনাবে। বালিশ সাক্ষ্য রেখে রাত্রির কথাবার্তাকে,<br />যদিও লিখতে পারি, পড়লে সেসব মাথার ডাক্তার দেখাতে বলবে তখুনি,<br />রিস্ক নিয়ে লাভ নেই। বরঞ্চ সব কথা একটা বাক্যে ফেলে খামটা বন্ধ করি, <br />কালকেই দেওয়া যাবে ডাকে।</p>
<br /><p>চিঠিটা যে পেয়েছিলো, <br />নেপথ্য কথাগুলো তার জানা নয় ।<br />তেত্রিশ বছর পরে তবু সে ফেরত গেলো অতীতের বাঁকে।</p>
<br /><p>একটা লাইন শুধু , <br />যথারীতি সম্বোধনহীন, নিচে কোনো সইটইও নেই,<br />সে তবু মোমের মতো গললো তাতেই।</p>
<br /><p>লেখা ছিলো গোটা গোটা অক্ষরে স্রেফ <br />‘ যত দেরি হোক, কেউ কেউ ঠিক কথা রাখে’।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/do-not-say-naked/ন্যাংটো বোলো না2023-09-13T07:38:21-04:002023-11-11T07:58:21-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ন্যাংটো বোলো না। </p>
<br /><p>রাজাকে ন্যাংটো বোলো না। <br /> বলে দিতে পারে তাঁর পারিষদগণ, দেখো হে মূর্খ জনগণ,<br />লুকানোর কিছু নেই ধন, <br />তাই রাজা ন্যাংটো এমন,<br />তোমরাও কপি করে পোশাক-টোশাক খোলো না!</p>
<br /><p>গপ্পোটা বহু পুরাতন, জন্ম বোধহয় চীনদেশে,<br />হ্যান্স অ্যান্ডার্সন থেকে নানা থান ঘুরে ঘুরে<br /> সব কানে পড়েছে সে এসে, <br />বোকা সম্রাট আর ঠগের কাহিনী কমবেশি জানে প্রত্যেকে,<br />একটি বালক শুধু বলেছিলো নগ্ন সে নৃপতিকে দেখে,<br />এমা রাজা ন্যাংটো!<br />পরে কী ঘটেছিলো, <br />ছেলেটির পরিবার ছিলো নাকি জ্যান্ত,<br />সে ব্যাপারে কাহিনী নীরব।<br />শুধু আন্দাজ করা যেতে পারে, <br />জনমন-গুঞ্জন শেষ অবধি <br />হয়তো হয়নি কলরব,<br />রাজাদের ভুল ধরা বস্তুত অশ্বজ অণ্ড প্রসব, <br />ইতিহাস সাক্ষী তার, বারবার। <br />শিশুটিও নির্ঘাত সুযোগ পায়নি আর কিশোর হবার।</p>
<br /><p>তাই দেখো, রূপকথা-জন্মের এত এত শতাব্দী পরে,<br />নানা ভাষা অনুদিত নানা অক্ষরে, <br />বদল হয়নি সেই শিশুটির স্বরে,<br />কোত্থাও কোনো বড় জিভের জড়তা ভেঙে চেঁচিয়ে ওঠেনি<br />‘ রাজা তুই ন্যাংটো যে রেএএ! ‘</p>
<br /><p>রাজাধিরাজরাও গল্পটি শোনেননি, তা তো নয়!<br />যত বয়ে গিয়েছে সময়, <br />তত তাঁরা বুঝেছেন, উলঙ্গতায় নেই লজ্জা বা ভয়,<br />ক্রমে ক্রমে রটে গেছে বিশ্বমাঝারে, <br />রাজা মানে ন্যাংটোই হয়।</p>
<br /><p>আরো এক ধাপ এগিয়ে, <br />ক্ষমতার নিলাজ নগ্নরূপ দাবী করেছে ঈশ্বরের মর্যাদা, <br />অতি দামী পেইন্ট বলে চালানো হয়েছে যত কাদা,<br />বাধা দেওয়া জিভ সব বাধ্যত বাঁধা, <br />নজর রাখতে সব মোড়ে মোড়ে বসেছে পেয়াদা , <br />পোশাকের ছদ্মতে অলীক তন্তু বেচা <br />সে ঠগের দলই আজ রাজ-ভূমিকায়,<br />দেশের সেবার নামে ইচ্ছেমাফিক যারা ভিত-ভূমি খায়,<br />সোনার আগামী আঁকা কল্প-প্রকল্প কত করতালি পায়,<br />ন্যাংটোই নিয়ম যেখানে <br />সেই দেশে পোশাকের দাবী তোলা <br />স্বভাবত ঘোর অন্যায়।</p>
<br /><p>রাজাকে ন্যাংটো বোলো না। <br />পোশাকই নিষিদ্ধ হবে , <br />কানাঘুষো যায় শোনা তার আলোচনা,<br />নিজের ভালোটা বোঝো, লক্ষ্মীটি সোনা,<br />তুমি বুড়োধাড়ি আজ, <br />খেয়ালে চেঁচিয়ে ওঠা শিশুটি তো না!</p>
<br /><p>নেহাতই চেঁচাও যদি, সে দায় রাজার নয় বাছা।<br />কি ছবিতে মালা চাও, জানাতে ভুলো না।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/ghat/ঘাট2023-08-22T01:57:00-04:002023-09-13T07:38:50-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ঘাট। </p>
<br /><p>নিজেকে ঘাটের মতো করে ফেলেছি। <br />নৌকোরা সাময়িক দাঁড়ায় শিয়রে<br />তারপর চলে যায় নিজের সফরে, <br />কেউ ফিরে হেসে বলে ফের এসে গেছি, <br />কেউ আবার একবারই পাড়ি-কালে ছোঁয়,<br />ছলাৎ ছলাৎ করে বৈঠার থেকে কিছু ঢেউ পৌঁছয়। <br />আমি স্থির, ওরা ভাসমান, <br />শ্যাওলা-বিধুর এই আমার সোপান, <br />মাঝে মাঝে মাঝি এসে পায়ে ছুঁয়ে ঘরপানে যায়,<br />কেউ বা কাছেই তীরে উনুন বানিয়ে তার রান্না চাপায়,<br />দুটোতেই আমার কিছু না, পাড় অথবা পাড়ি কেউ আমার পিছু না,<br />নৌকারা চলে গেলে আমার শরীর জুড়ে জল খেলা করে,<br />দু-একটা মাছ খেলে যায়, খলবলে স্মৃতি নড়ে রোদের ভেতরে,<br />কিন্তু সে কার কাহিনী রোমন্থন? নৌকার? মাঝিদের?<br />নাকি সব মিলন আর বিচ্ছেদ গল্পরা আমার নিজের? </p>
<br /><p>বুঝি না। আসা আর যাওয়াদের কারণ খুঁজি না।<br />এরকমই প্রাচীন এক ঘাট ছিলো যমুনার বুকে,<br />অশ্রুরা ঢেউ হতো প্রতিদিন রাধার অ-সুখে,<br />ছলাৎ ছলাৎ করা ভরা অভিমান-গাগরীটি, <br />চলকানো জল দিয়ে হয়তো বা লিখে যেতো ভালোবাসা-চিঠি,<br />যা পড়ার পাঠক ছিলো না, <br />দয়িতটি রাধিকাতে আটক ছিলো না, নদীর জলের মতো বয়ে গেছে সামনের দিকে,<br />অথবা নৌকা হয়ে। দুটোরই তো এক মানে ঘাটের নিরিখে।</p>
<br /><p>সেরকমই ঘাট হতে , দেখো না ফেলেছি আমি শিখে। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/prayer-to-time/সময়ের কাছে প্রার্থনা2023-08-20T05:36:07-04:002023-08-20T08:30:50-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। সময়ের কাছে প্রার্থনা। </p>
<br /><p>দুঃখ দিও , কষ্ট দিও, <br />ব্যর্থ সময় নষ্ট দিও,<br />মাঝে মাঝে কাজের ফেল-এ লালকালিটা স্পষ্ট দিও,<br />তিরন্দাজির আন্দাজিতে শেষ মিনিটে ভ্রষ্ট দিও,<br />কিন্তু সময়, লক্ষ্যবিহীন আয়ু দিও না,<br />আর যেটুকু জীবন আছে ,<br />দাম থাকা চাই কারো কাছে,<br />ক্যালেন্ডারে যখন আমি কারোর প্রিয় না,<br />তখন যেন আর না থাকি, <br />স্মৃতির ফাঁকে নামকে রাখি,<br />লক্ষ্যবিহীন ভুল জীবনে শরীর নিও না। </p>
<br /><p>একটা কিছু সামনে থাকুক, <br />সবুর-মেওয়া আস্তে পাকুক,<br />ঘুমের থেকে ওঠার পরে না ফুরনো কর্ম ডাকুক,<br />যুদ্ধ নতুন করতে শুরু বৃদ্ধ শরীর বর্ম ঢাকুক,<br />একটা কিছু, একটা কিছু, <br />রুটিন ভেঙে যেটার পিছু<br />নিতেই হবে, শেষ যে কবে, <br />সেটা ভেবে কাজের মাঝে দম বেরোবে,<br />কিন্তু আছে ভালোই জানা, <br />শেষ মানে নয় দাঁড়ি টানা,<br />আবার নতুন লক্ষ্য খুঁজে জীবন নতুন বাজি রাখুক,<br />দেখুক সবাই, সময় জবাই <br />থোড়াই করে বয়েসকালে,<br />দেখুক সবাই পক্ককেশেও ভাসছে ডিঙি নতুন পালে,<br />হৃৎপিণ্ড থামার আগে বাঁচুক হৃদয় রাজার হালে, <br />ফালতু অলস দিন কাটানো জীবন স্বীয় না,<br />লক্ষ্য যদি না থাকে আর, <br />বাঁচাই তখন হবে বেকার, <br />সময় তবে আর আমাকে আয়ু দিও না। </p>
<br /><p>ত্রুটি দিও, চ্যুতি দিও, <br />মুক্তো ভ্রমে পুঁতি দিও,<br />কষ্টে খেটে করা কাজে নাহয় হাজার খুঁতই দিও, <br />ভাবীকালে হাতড়ে স্মৃতি জিভ কাটবার ভূতই দিয়ো,<br />কিন্তু আমার ভাবনা মোটে আর দ্বিতীয় না,<br />দুলিয়ে দিও, ভুলিয়ে দিও, <br />কক্ষপথে গুলিয়ে দিও,<br />অলপ্পেয়ে দুর্ঘটনায় আচমকা কান মুলিয়ে দিও,<br />দোহাই আমার সফরনদীর ঢেউ থিতিয়ো না। </p>
<br /><p>দুঃখ শোকে জ্বলতে রাজি, <br />পথের শ্রমে টলতে রাজি,<br />কিন্তু সময় , লক্ষ্যবিহীন আয়ু দিও না।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/jodi-2/যদি ২2023-08-16T06:03:14-04:002023-08-20T05:40:21-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। যদি। </p>
<br /><p>যদি স্বাধীন দেশের একজন নাগরিককে দেখে,<br />আরেকজন স্বাধীন নাগরিক ভয়ে পেছোতে থাকে দূরে তার থেকে, <br />সেটা ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ, জাত, রাজনীতি, যা কিছু কারণেই হোক,<br />তাহলে সেই দেশে ‘স্বাধীনতা’ ভুল এক সংজ্ঞাজ্ঞাপক। <br />আর যদি সেই ভয় নিশ্চিন্তে রাষ্ট্রকে সে না বলতে পারে,<br />স্বাধীনতা ছেড়ে দাও, আসলে সে দেশ ভেবে থাকে কারাগারে। </p>
<br /><p>যদি গরীব পুরোহিতের মেধাবী ছেলেটিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট লুকিয়ে ফেলতে হয় <br />যাতে সে স্কুলের ঘন্টাবাদকের চাকরিটা পাবে,<br />যদি দুলে বাগদির ইস্কুলে ফার্স্ট মেয়েটারও ডাক্তারিতে না ঠাঁই হয়,<br />দামী টিউশনি আর অনলাইন কোর্সগুলো করার অভাবে,<br />আর এদের বদলে সুদূর রাজস্থানে কোটা’য় ভর্তি হওয়া ধনীর সন্তান <br />হাসতে হাসতে পায় নিচু -জাত-কোটা, <br />তাহলে সেই দেশে স্বাধীনতা শুধু ধনীদের। <br />গরীবের কাজ শুধু জাতীয় সঙ্গীত হলে বসা থেকে ওঠা। </p>
<br /><p>যদি ধর্মে মুসলমান হলে কোনো স্বাধীন নাগরিকের বাড়িভাড়া পেতে অসুবিধা হয়,<br />যদি হিন্দি মাতৃভাষা বলে, দাক্ষিণাত্যে কোনো স্বাধীন পরিযায়ী শ্রমিকের মনে জেগে থাকে জীবিকা হারানোর ভয়,<br />যদি দলিত আর ব্রাহ্মণ স্বাধীন নাগরিকের আলাদা হয় মন্দিরে প্রবেশের অধিকার,<br />যদি ঐতিহ্য ও কুপ্রথাকে ইচ্ছে করে গুলিয়ে ধর্ম ও জাতের বিভাজন হয় হয় ভোটে জেতার হাতিয়ার,<br />যদি মেধার থেকে জন্ম অগ্রাধিকার পায় শিক্ষা চাকরি আর বাকি সব কিছু ব্যবস্থাপনায়,<br />যদি গণতন্ত্রটি ক্রমে শাসকের দিকে ঝুঁকে, নিশিদিন মেতে থাকে তাঁর ভজনায়,<br />যদি বিরোধিতা করা মানে দেশদ্রোহিতা হয়, শাসকের নিন্দাতে ঘর ভেঙে দিয়ে যায় বুলডোজারে,<br />যদি বিচার বধির হয় গরীবের আর্জিতে, ধনীরা উকিল দিয়ে অনায়াসে গরিমসি কিনে নিতে পারে…</p>
<br /><p>তাহলে স্বাধীনতা বলে অভিধানে যেই মানে লেখা আছে ,<br />কবেই গিয়েছে হয়ে সেটা বিকৃত।</p>
<br /><p>দাঁড়াও , দাঁড়াও! শেষের শব্দটাতে ভুল কিছু হলো? ‘বিকৃত’ ,নাকি ওটা হবে ‘বিক্রীত’?</p>
<br /><p>‘ নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি পিতঃ’ , ভুল স্বপ্নের থেকে করো জাগরিত।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/cinemar-mato-noy/সিনেমার মতো নয়2023-08-13T04:36:37-04:002023-08-13T07:41:00-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। সিনেমার মতো নয়। </p>
<br /><p>বাংলা হিন্দি তামিল ওড়িয়া ভোজপুরি গুজরাটি..<br />যে ভাষার সিনেমার মেনস্ট্রিম বাছো, এক মূল ঘটনাটি,<br />ভিলেনের ক্ষমতার মুখে সাধারণ মানুষেরা খুব অসহায়,<br />( এইখানে হিরোর বাবার বাড়ি দখল বা দিদির ধর্ষণ দেখা যায়)<br />এর মধ্যেই এক সৎ পুলিশ অফিসারের বেইজ্জতি থাকে,<br />হয় জেলযাপন, নয় ভিলেনের লোক এসে মেরে ফেলে তাঁকে,<br />চারদিকে যখন ভিলেনের জয়, অন্ধকার ছিনিয়ে নিচ্ছে আলোর হক,<br />ঠিক তখনই হল জুড়ে হোওও করে চিৎকার.. পর্দা জুড়ে একটাই মুখ ..ছবির নায়ক। </p>
<br /><p>নায়ক। যার এক ঘুষিতে মাধ্যাকর্ষণকে ফুঃ করে চারিদিকে উড়ে যায় খলের দল,<br />গোটা পঞ্চাশেক গাড়িভর্তি সশস্ত্র গুন্ডা শায়েস্তা করতে স্রেফ হাত-সম্বল।</p>
<br /><p>নায়ক। যে হিরোইনকে ধর্ষণের ঠিক আগে পৌঁছে যায, বাবা মা বন্ধুকে বাঁচায় মৃত্যুফাঁদ থেকে,<br />একা হাতে ফাঁস করে দিতে থাকে দুষ্টুলোকগুলোর চাল, যারা ধরা পড়ে বা মরে প্রত্যেকে।</p>
<br /><p>নায়ক। প্রবল প্রতাপান্বিত নেতা, সারা দেশে ছড়ানো মাফিয়া ও হাজার ভাড়াটে খুনীকে তুড়িতে উড়িয়ে,<br />একটা আদ্যোপান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম যে একা ভেঙে দিতে পারে গুঁড়িয়ে। </p>
<br /><p>নায়ক। যার কোমর জড়িয়ে গান করে ওঠে হিরোইন, দেখলেই খলবল করে হেসে ওঠে বস্তির শিশুরা,<br />যে একা এক বাহিনী, যে যত কুচেষ্টা করুক, সমস্ত ব্যর্থ করে সামিট করতে পারে সফলতা চূড়া।</p>
<br /><p>আর ঠিক এইখানে বন্ধুরা, এইখানেই হয়ে যায় গোলমাল যত,<br />আমরা মিলিয়ে দেখি, কমবেশি সকলেই নীরবে ভোগা ওই পার্শ্বচরিত্রগুলোর মতো,<br />পিষে যাচ্ছি , আমাদের সমস্ত অধিকার ছিনানো ভিলেনেরা কুর্নিশ করতে বাধ্য করছে তাদেরই পা’য়,<br />আমাদের কথা বলবার কেউ নেই, শুনবারও, আমরা হেরোর দলে সব জায়গায়,<br />অজান্তেই আমরা ভেবে বসি , এইবারে ঠিক কোনো নায়ক এসে যাবে, বদলাবে অবস্থান,<br />একজন এমন কেউ, যে বর্মের মতো রক্ষা করবে আমাদের,<br />ঘামেরা ফেরত পাবে হৃত সম্মান,<br />শিক্ষা মর্যাদা ফিরে পাবে, সততার আব্রু ধরে ভরা সভায় টানবে না কোনো ক্ষমতা-দুঃশাসন,<br />আমরা হৈ হৈ করে বলবো, ওই দেখো, সে এসে গেছে, যার অপেক্ষায় যুগ ছিলো এতক্ষণ। </p>
<br /><p>আসে না ।কেউ আসে না। কখনো দু একজন নির্ভীক বিচারক বা আমলা জ্বলে ওঠেন বটে, <br />কখনো বিপরীতে চিৎকার করেন কোনো লেখক বা কবি।<br />তারপর, যা ঘটার ছিলো সেটাই ঘটে,<br />মশালেরা নিভে যায়, নিভিয়ে দেওয়া হয়, অর্থ পদক , পদোন্নতি বা স্রেফ শাসানি দিয়ে,<br />কিংবা তাঁরা বরুণ বিশ্বাস হয়ে যান, ক্ষমতাবানের দল গণতন্ত্রের মুখে করে দেয় ইয়ে। <br />আমরা মুখ আঁধার করে অন্ধকারে লজ্জা লুকিয়ে পপকর্ন খেতে খেতে চেঁচিয়ে উঠি গুরুউউউউ..<br />কারণ পর্দায় নায়কের প্রবেশ ঘটেছে। যার প্রতিটা ঢিসুমের সাথে আমাদেরও নিজস্ব ভিলেন মারা শুরু। </p>
<br /><p>আসল ভিলেনরা খুব নিশ্চিন্তে তোফা ঘুম যায় । প্রতিবাদহীন পথে পায়ের চিহ্নহীন জমে থাকে ধুলো পুরু।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/bikeler-protibedan/বিকেলের প্রতিবেদন2023-05-18T15:09:08-04:002023-08-13T04:38:11-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। বিকেলের প্রতিবেদন। </p>
<br /><p>আশ্রম বোলো না, ওতে বড্ড সন্ন্যাসের গন্ধ। <br />আবাস বোলো না, আমাদের কারোর বাড়ি এটা না। <br />জীবনের সন্ধ্যায় এসে তল্পিতল্পা গুটিয়ে এখানে উঠেছি,<br />অসহায় বলে নই, <br />কিছুটা সহায়সম্বল আছে বলেই।<br />নইলে ফেলে আসা বাড়ির এককোণে বাতিল আসবাবের মতো পড়ে থাকা,<br />নয়তো স্মৃতির গোলকধাঁধায় <br />কোনো রাস্তায় বা স্টেশনে বসে আকুল ডাকা <br />‘ আমায় ঘরে নিয়ে যাবি না রে?’<br />যাকে ডাকা, তার জানা কোথায় ছেড়ে দিয়ে গেছে বাবা অথবা মা’কে,<br />যতটা পারে , যেমন করে পারে, <br />সেই জায়গা থেকে সে দূরে থাকে।</p>
<br /><p>আমাদের ভাগ্য অতটা খারাপ নয় । <br />ব্যাঙ্কে কিঞ্চিৎ লক্ষ্মী না থাকলে সায়াহ্নে অন্নসংস্থান পরমুখাপেক্ষী, <br />আপণের ঝাঁপ ফেলে দিলে আপন আর পায়ে ঝাঁপ দেয় না,<br />সঞ্চিত ধনই বার্ধক্যের রক্ষী, <br />এই আপ্তবাক্য ভুলে গেছে যারা যৌবনে, <br />সূর্য পশ্চিমে গেলে অভাবের ছায়া পড়ে তাদের উঠোনে,<br />বিকেলবেলায় নামে রাতের আঁধার, <br />বুড়ো হওয়া সৌভাগ্য না দুর্ভোগ হবে, <br />যুবাকাল করে ফেলে নির্মাণ তার। </p>
<br /><p>কখনো ভেবেছো, <br />বাড়িতে দুমুঠো দিয়ে এককোণে ফেলে রাখা <br />কত বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার নিয়ত নিয়তি?<br />আমরা ভালোই আছি সেই তুলনায়, <br />বিকেলে বারান্দা থেকে দেখি,<br />সামনেই রাস্তায় যুগ বয়ে চলে যায় অস্থিরমতি, <br />রোজ নাগরিক জীবনে সমস্যা বেড়ে চলে, <br />টের পাই সাঁঝে টিভি দেখে,<br />বিশ্বাস করো, এই বুড়ো মানুষেরা প্রায়শই বলাবলি করি, বেঁচে গেছি আজ দূরে থেকে।</p>
<br /><p>তোমরা ভেবেই নাও সন্ততি চায় না আমাদের, <br />মনে মনে এঁকে নাও রুষ্ট পুত্রবধূ , <br />বেজার মুখ পুত্র , <br />শ্বশুরবাড়িতে থিতু হয়ে হাত উল্টে বলা আত্মজা<br />‘ আমার পক্ষে সম্ভব না খেয়াল রাখা এত দূর থেকে!’<br />সারসংক্ষেপে , ভয়ানক করুণা হয় আমাদের দেখে,<br />তাই না? <br />আমি যদি বলি ওরা ডাকে, তবুও আমি থাকতে যাই না, <br />যদি বলি আমার পাশের ঘরের ভদ্রমহিলার বসতবাড়ি ভাড়া দেওয়া এই শহরেই,<br />যদি বলি তিনটে ঘর পরে চুরাশি বছরের বুড়োটি এখনো নিয়মিত শেয়ার মার্কেটে লগ্নী করেন,<br />অবিশ্বাস্য ঠেকবে? </p>
<br /><p>ব্যাপারটা বাস্তব, ভালো করে খোঁজ নিলে দেখবে। <br />আমাদের বার্ধক্যের একটা সমস্যার কথা তোমরা যৌবনে কখনো বুঝতে পারবে না।<br />একাকিত্ব। <br />দৈনিক অন্তহীন একাকিত্ব, <br />যেখানে ঘড়ির আর কোনো অর্থ থাকে না, <br />ক্যালেন্ডারের প্রত্যেকটা দিন একই রকম সংলাপহীন। <br />এই ক্ষুধার্ত সময়ে, <br />যখন প্রত্যেকটি মানুষ শুধু টিকে থাকার<br />থাকার জন্য উদয়াস্ত শ্রমে ক্লান্ত,<br />সেখানে বাতিল বুড়োবুড়িদের এই হাল বদলাবে না কোনোদিন,<br />আমাদের নিজেদেরই খুঁজে নিতে হবে <br />ধারণা বিনিময়ের সঙ্গী,<br />দুঃখ বাঁটার বন্ধু,<br />এক সাথে হেসে ওঠা নকল দাঁতের পাটি।<br />বর্তমানের সাথে আমাদের কিছুই মেলে না, <br />যুগের হাওয়া<br />শুধু তোমাদেরই নৌকার পালে,<br />তার কিছু যাবে আসবে না আমরা হারালে ।</p>
<br /><p>সঙ্গতি আর ক্ষমতা থাকতে থাকতে <br />তাই আমরা বেরিয়ে এসেছি,<br />একজোট হয়েছি একেকটি আবাসনে। <br />কলেজের পরে বন্ধু হয় না,<br />সেটা যে ভয়ানক মিছেকথা, <br />এই আয়ুর শেষের ধাপে এসে বুঝেছি।<br />শুধু তফাৎ এইটুকুই, আমার বন্ধুদেরও এই একই ঠিকানা।</p>
<br /><p>তোমাদের পৃথিবীর আমাদের দুনিয়ায় ঢোকা মানা, <br />বার্ধক্যে না পৌঁছালে এখানে ঢোকার পথ থাকে অজানা।</p>
<br /><p>আবাস বা আশ্রম নয়, <br />আমি আর আমার নতুন বন্ধুরা ভালোবেসে <br />আমাদের আস্তানাটাকে অন্য আরেক নামে ডাকি, <br />শুনবে তা কী?</p>
<br /><p>আমরা দিয়েছি নাম বিকেলের ডানা।</p>
<br /><p>আর একটা অনুরোধ। যাই বলে ডাকো , সামনে বৃদ্ধ বসিয়ে দিও না। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/ston/স্তন2022-12-27T06:03:08-05:002023-06-27T19:49:29-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। স্তন। </p>
<br /><p>শিল্পী এক জোড়া স্তন আঁকলেন। বৃন্ত থেকে চুঁইয়ে পড়ছে দুধের ফোঁটা, <br />যেন এক শিশুর ঠোঁটের অপেক্ষায়। <br />দর্শক মুগ্ধ চোখে দেখে বললো , মা!<br />সমালোচক বললেন, গতানুগতিক। </p>
<br /><p>শিল্পী তুলি দিয়ে ঝটিতি বদল করলেন। দুধের ফোঁটা মুছে এঁকে দিলেন রক্তিম আদরের দাগ,<br />আভাস দিলেন বিশ্রস্ত কাঁচুলির।<br />দর্শক দর্শকাম লুকানোর চেষ্টা করতে বলে উঠলো<br />উদ্দীপক!<br />সমালোচক ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন সস্তায় নাম কেনার চেষ্টা। </p>
<br /><p>শিল্পী আবার বদলে দিলেন ছবিটা।<br />আদরের দাগ বদলে গেলো কালির পোঁচে ,<br />পুরু ময়লার আস্তরণ দৃশ্যমানকে করে তুললো অস্বস্তিকর। <br />ক্লিভেজে আটকানো কিছু রুটির টুকরো, ওপরে অদৃশ্য জিভ থেকে লালা চুঁইয়ে পড়ছে সামনে দিয়ে।<br />দর্শক চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো এ তো রাস্তার সেই পাগলীটা।<br />সমালোচক বললেন, দুরবস্থার ফায়দা ওঠানো হচ্ছে ভালোই। </p>
<br /><p>শিল্পীর তুলির টান থামলো না।<br />স্তনের ওপরে দেখা দিলো আঁচড় কামড়ের দাগ, <br />একখানা বৃন্ত প্রায় ওপড়ানো, ভেতরের লালচে হলুদ উঁকি মারছে থকথকে জমে থাকা রক্তের মাঝে।<br />দর্শক বললেন, আর দেখা যাচ্ছে না! এ যে গণধর্ষিতা!<br />সমালোচক বললেন, কারো সর্বনাশ, কারো পৌষমাস।</p>
<br /><p>শিল্পী আবার ইজেলে হাত চালালেন।<br />একখানি স্তন থেকে ফেটে বেরোলো এক ভয়ঙ্কর ঘা,<br />আশেপাশের চামড়াকে যা টেনে নিয়েছে ভেতরে।<br />একটা স্ক্যালপেল ধরা গ্লাভস পরা হাত উদ্যত তাকে কাটতে,<br />আর অন্য স্তনটির বৃন্তকে ঘিরে উঠছে এক নতুন সূর্য,<br />যার রোদে আলোকিত বাকি চিত্রটি।<br />দর্শক চোখের জল মুছতে মুছতে বললো মৃত্যুর থেকে জীবনে ফেরা।<br />সমালোচক বললেন, অমুক হাসপাতালের বিজ্ঞাপন।</p>
<br /><p>চোখে ঝিলিক এনে শিল্পী সব ক্ষত মুছে<br />আবার এঁকে ফেললেন দুটি নিটোল নিখুঁত স্তন,<br />আর তাদের ঠিক মাঝে, অতি মনোযোগ সহকারে এঁকে দিলেন এক তৃতীয় নয়ন ।<br />দর্শক দুহাত মাথায় ঠেকিয়ে বললো, দেবীই মানবী অথবা মানবীই দেবী।<br />সমালোচক বললেন, ধর্ম নিয়ে খেলা! দেখাচ্ছি মজা।</p>
<br /><p>ছবি শেষ করে ক্লান্ত শিল্পী মৃদুস্বরে বললেন, <br />আসলে কিছুটা রঙ, কাগজ আর তুলি । <br />বাদবাকি সবই কল্পনা।</p>
<br /><p>দর্শক বললো, ম্যাজিক কার্পেট সেটা আমাদের কাছে,<br />তুলি দিয়ে যার সব মায়াসুতো বোনা।</p>
<br /><p>সমালোচক কী বললেন, সেটা আর কেউ শুনলো না।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/itihasher-jatra/ইতিহাসের যাত্রা2022-11-14T17:16:46-05:002023-06-27T00:49:40-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ইতিহাসের যাত্রা ।</p>
<br /><p>ইতিহাস একদিন রাষ্ট্রকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, <br />একটি শিশুর জন্য আপনি কী করতে পারেন?</p>
<br /><p>উত্তরে রাষ্ট্র বললেন, খেতে দেবো , পরতে দেবো,<br />দিকে দিকে ইস্কুল খুলে যত খুশি পড়তে দেবো ,<br />টিকা দেবো. পুষ্টি দেবো, প্রথম দশে খিদের সূচক দেবো,<br />যাতে সবকটা বাচ্চা বড় হয়ে আমাকেই ভোট দেয়!</p>
<br /><p>এই কথা শুনে ইতিহাস তার হাসি আর থামাতেই পারছিলো না,<br />তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে রাষ্ট্র বললেন,<br />দাঁড়া, তোকে বদলে দিই, তখন বুঝবি।<br />দরকারে সিলেবাস থেকে দেবো বাদ, <br />আজীবন হাতড়িয়ে সত্যি খুঁজবি,<br />দেখবি, শিশুদের কাজে লাগিয়ে আমি কী করতে পারি! </p>
<br /><p>মানে মানে পালিয়ে ইতিহাস গেলো ধর্মের কাছে।<br />সেখানে ক্রশ তসবি আর রুদ্রাক্ষের মালা <br />জপযন্ত্রের সাথে আড্ডা মারছিলো।<br />ধর্মকে ইতিহাস জিজ্ঞেস করলো, <br />শিশুদের নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?</p>
<br /><p>ধর্ম বললেন, ছোটোবেলা থেকে ওদের বিবেক জাগাতে হবে।<br />হিংসা দ্বেষ রাগ ঘৃণা মুছে যেন জেগে থাকে ভালোবাসা।<br />শিশুর মধ্যে ঈশ্বর থাকেন, <br />কাজেই ওদের নিজের মতো বাড়তে দিতে হবে,<br />সব বিভেদ মুছে বড় করতে হবে প্রকৃত ধার্মিক হিসেবে।</p>
<br /><p>বলতে বলতে এক ঝামেলার শব্দে <br />ইতিহাস পেছন ফিরে দেখলো,<br />রুদ্রাক্ষ আর তসবি ভয়ানক কুস্তি লড়ছে, <br />ওদিকে জপযন্ত্র আর ক্রসের মারামারি বেঁধে গেছে,<br />কোলাহলের মধ্যে শুধু একটা কথাই শোনা যাচ্ছে,<br />শুধু আমার বাচ্চারা ঈশ্বরকে জানবে, <br />অন্যগুলোর জন্য এই পৃথিবী নয়!</p>
<br /><p>ইতিহাস এ ঝগড়াতে পেয়ে গেলো ভীষণ ভয়। <br />পালাতে পালাতে সে গিয়ে হাঁপাতে লাগলো তন্ত্রের পাড়ায়,<br />যেখানে মোড়ের মাথায় <br />রাজতন্ত্র আর সমাজতন্ত্র খুব তর্ক করছে,<br />গণতন্ত্র আদৌ আছে , <br />না ওটা কিছু উটকো লোকের কল্পনা।</p>
<br /><p>ইতিহাস একটু শুনলো সে আলোচনা, <br />তারপর ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,<br />ইয়ে, শিশুদের নিয়ে আপনাদের বক্তব্য যদি বলেন।<br />দুজনে একসাথে বলে উঠলো, <br />বক্তব্য আবার কি,<br /> জন্ম থেকেই ওদের বাধ্য প্রজা হিসেবে বড় করতে হবে,<br />যা নির্দেশ হবে, চোখ বুজে যেন পালন করে। <br />বলতে বলতে দুজনে বের করলো দুটো ছাঁচ,<br /> যারা দেখতে আলাদা বটে, কিন্তু কোথাও যেন একও।<br />তারপরে যৌথস্বরে বললো, <br />এই দেখো , সব শিশুর মগজ এতে ফিট করাতে হয়,<br />একটাও যেন বাদ না পড়ে।</p>
<br /><p>ইতিহাস বললো, কোনো শিশুর মাথা যদি ফিট না করে?<br />দুজনের কেউই কিছু বললো না উত্তরে,<br />শুধু রাজতন্ত্র তরোয়াল বের করলো <br />আর সমাজতন্ত্র একটা পিস্তল। <br />তারপর , ঢেউহীন স্বরে বলে উঠলো ‘ কে সেটা, বল!’</p>
<br /><p>ইতিহাস আর সাহস পেলো না, <br />সরে পড়লো সেখান থেকে,<br />যেতে যেতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো বিজ্ঞানকে দেখে।<br />শেষ অবধি তাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো সে,<br />শিশুদের জন্য কী ভাবছেন?</p>
<br /><p>বিজ্ঞান মাথা নেড়ে বললো,<br /> উঁহু , আমার ভাবা বারণ।<br />যেমন রাষ্ট্র হুকুম দেন, <br />যেমন ধর্ম বিধি বেঁধে দেন <br />আর তন্ত্র উপায় বাতলান,<br />আমি ঠিক তেমন জিনিস তৈরি করি। <br />আপাতত মোবাইল গেমস বানাচ্ছি, <br />যাতে ছোটোবেলা থেকেই ফোনের নেশাটা<br />ঢুকে যায় বাচ্চাগুলোর মগজে। </p>
<br /><p>ইতিহাস এর পরে কাকে আর খোঁজে! <br />ফিরে আসতে আসতে হঠাৎই কানে এলো তার,<br />শিশুদের কারা যেন বলছে<br />’ প্রশ্ন করো, জবাব না পেলেও।<br />স্বপ্ন দেখো , সফল না হলেও। <br />শান্তি খোঁজো, চারিদিকে যুদ্ধ থাকলেও। <br />আলোর দিকে দেখো, অন্ধকার ডোবাতে চাইলেও’। <br />কারা ওরা? <br />উঁকি মেরে ইতিহাস দেখে, একদল লোক,<br />কেউ লেখক, কেউ আঁকিয়ে, কেউ কবি, কেউ বা গায়ক,<br />রাষ্ট্র পেরিয়ে, ধর্ম গুঁড়িয়ে , তন্ত্র ছাড়িয়ে, বিজ্ঞান এড়িয়ে<br />ওসব আনাপশানাপ শেখাচ্ছে শিশুদের। <br />ওরা জানে, গারদ বা গর্দান যাওয়া ভবিতব্য, <br />যদি ওপরের কেউ পায় সেটা টের। </p>
<br /><p>ইতিহাস আগামীকে হৈহৈ করে বলে উঠলো, <br />যা ব্যবস্থা করে রাখ, <br />একদিন সত্যিই মানুষ বুঝবে মানে শিশুদিবসের।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/abol-tabol-2019-22/আবোল তাবোল ২০১৯-২২2022-10-30T13:18:03-04:002024-02-18T12:52:23-05:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। আবোলতাবোল ২০১৯-২২। </p>
<br /><p>ঈশ্বরপ্রতিম সুকুমার রায়কে প্রণাম জানিয়ে..</p>
<br /><p>সুযোগ পেলেই রুমালগুলো আজও বনে হুমদো হুলো<br />শিকেয় তোলা মাছ খেয়ে যায় চুপিচুপি এসে <br />কাকেশ্বরের হিসেবটাতে পেনসিলটাই সবার হাতে<br />ভাগশেষে আর কিচ্ছুটি নেই আবোলতাবোল দেশে।</p>
<br /><p>হাঁসজারু বা হাতিমি না হারাম করে এখন জিনা<br />এই প্রতীক আর ওই প্রতীকের মর্জিমাফিক সন্ধি,<br />ভীষ্মলোচন অলপ্পেয়ে কান খেয়ে নেয় শ্লোগান গেয়ে<br />সবাই জানে মন্ত্রীমশাই কোন সে এসেন্সগন্ধী।</p>
<br /><p>বোলো না হে, আরে ছি ছি , কারা খেলে কানামাছি<br />পাহারা দেয় কে ওয়াই সি কে, পশ্চাতে সিঁদকাটা ,<br />খাচ্ছে এবং গিলছে রাজা ন্যাড়ার ভাগে গুল আর গাঁজা<br />উন্নয়নের জোয়ারে আজ বেলতলা ইঁটভাঁটা।</p>
<br /><p>হেড অফিসের বড়বাবু নেই-কাজে আজ এমন কাবু, <br />নিয়ম করে জল আর সাবু সেবন করেন রোজ<br />উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে কে আর ফাইল-ধুলো ঝাড়ে <br />ফক্কা আপিস সবাই হাপিস, ছুটির ওভারডোজ।</p>
<br /><p>রামগড়ুরের নাতির নাতি ফেসবুক তার নিত্যসাথী<br />রাজার নামে কার্টুনে দেন মোকদ্দমা ঠুকে,<br />হাসবে শুধু ওপরমহল বাকির চোখে সর্বদা জল<br />এমনতর ভরসা পোষেন বেজায় গোমড়ামুখে।</p>
<br /><p>ভয় পেয়োনা’ বাগিয়ে মুগুর গাছ কেটে নেয়,বোজায় পুকুর,<br />নয় ছেলে তার কামড়িয়ে দেয় ভয় না পেলেই বরং<br />হ্যাংলা হুঁকোর দুখান লেজে দুই পতাকা বাঁধলে কে যে<br />এক শরীরেই ডান বাঁ করে লড়াই করার ভড়ং।</p>
<br /><p>আর কত কি বলবো মামা ধরতে ছায়া মস্ত ধামা<br />আসল কায়া সেই সুযোগে ফুড়ুৎ পগারপার,<br />নিত্য হাঁকে পাগলা জগাই থাকুক খিদে, যুদ্ধটা চাই<br />তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিমেই ভোটের ইস্তেহার।</p>
<br /><p>পাগলা কিছু দাশরথি চেঁচায় দেশের মন্দগতি<br />ভুল স্বপ্নের গাজর নাকি ঝুলছে খুড়োর কলে,<br />আদ্যানাথের মেসোর বাড়ি খুঁজতে থাকে লাখ আনাড়ি<br />শেষে দেখে শুরুর খোপে এসেছে ফের চলে।</p>
<br /><p>অসুখখানা কি তা জানা কিন্তু সেটা বলা মানা<br />গারদখানায় কোন বোকা আর পড়বে বলো ঢুকে<br />কুমড়োপটাশ নাচ দেখালে নাচছি সবাই তালে তালে<br />যজ্ঞিদাসের মামা’র মতন মারছি জগত মুখে।</p>
<br /><p>খুঁজছি সবাই, পাচ্ছি না কেউ অলীক দ্রিঘাংচুকে...</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>
<br /><p>২০২১ সংযোজন..</p>
<br /><p>সবাই বাঁধা খুড়োর কলে, গাজর হয়ে ধর্ম ঝোলে,<br />কি যায় আসে রান্নার গ্যাস হাজার ছুঁলে বলো,<br />বোম্বাগড়ের রাজার পিসি, বেচেন জিনিস শুদ্ধ দিশি<br />গরুর হিসির দুধের থেকে দামটা বেশি হলো।</p>
<br /><p>এই কোভিডের বেদম ধাঁধা, আমজনতার রুজি আধা,<br />কাঠের বুড়োর শুকনো কাঠই ভাগ্যে শুধু মেলে<br />সেনসেক্স তাও ষষ্ঠীচরণ, কোন জাদুতে এই আচরন,<br />রহস্যটা বুঝতে হবে ফুটোস্কোপে ফেলে। </p>
<br /><p>শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে , ভ্যাক্সিনে দেশ খুব এগিয়ে,<br />লক্ষ্য থেকে দো গজ দুরি একশো কোটির মোটে,<br /> বিজ্ঞাপনের চলছে ড্রামা, ফসকে যেন না যায় মামা,<br />ভর্তি যেন হয় ও ধামা সহজ সুলভ ভোটে।</p>
<br /><p>সব লেখা সেই কেতাবখানা, কি লিখেছে রাজার জানা <br />ইনফ্লেশনের পাগলা ষাঁড়ে ঢুঁসায় দেশের বুকে,<br />ছায়া ধরার ব্যবসাদারে, রোজই দেশের আলো কাড়ে <br />শিবঠাকুরের আপন দেশে দাঁড়ায় না কেউ রুখে।</p>
<br /><p>কোন সাহসী খুঁজবে বলো অলীক দ্রিঘাংচুকে?</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ<br /> । ২০২২ সংযোজন। <br /> <br />মাপার ফিতে উদোর হাতে খাড়াই কোমর বা গলাতে<br />সবাই জানে সমস্ত মাপ এক হবে ছাব্বিশে<br />ঘুমোয় পেঁচা জজ-চেয়ারে, ধর্ম জেতে লাভ-পেয়ারে<br />রাজ-আস্তিনে আজ গিয়েছে দেশ-খেকো সাপ মিশে।</p>
<br /><p>গাছের ওপর দুখান পাখি , সেইপানে বাণ চলবে নাকি,<br />এক চিড়িয়া আগুনদামের, অন্য হাপিস কাজ,<br />গাছের তলায় পাতা ধামা’য় দেয় না তাদের লাশ যে আমায়<br />বরং সে বাণ ফসকে এসে লাগছে বুকের মাঝ।</p>
<br /><p>নোটবই আজ বদলেছে নাম, মুখবইতে তার অ্যাসাইলাম<br />তাবত জিনিস এরই পাতায় মগজ ছুঁয়ে ঢোকে,<br />কোনটা নিজের কোনটা টোকা, ধাঁধায় লাগে সবার ধোঁকা,<br />হেঁট মাথাতে সারাটা দিন পড়তে থাকে লোকে।</p>
<br /><p>বুথ সাহেবের বাচ্চারা সব, গলায় যাদের থিতু রাসভ,<br />বড় হয়েও ছিঁচকাদুনে রয়েই গেছে তারা,<br />ধর্ম নিয়ে তিল-হোঁচটে, ভীষণ কেঁদে থানায় ছোটে<br />ভাবাবেগের সামলাতে বেগ এদেশ দিশাহারা।</p>
<br /><p>বৃদ্ধ নাজির শুঁকছে খালি, কে ভালো কে চোখের বালি,<br />এক নিমেষেই দেশদ্রোহী বলতে পারে শুঁকে,<br />আমরা সবাই নন্দগোঁসাই, তুঙ্গে বোধহয় শনির দশাই,<br />ঘাড় নেড়ে যাই সঠিক বলে ভাগ-করা ভুলচুকে।</p>
<br /><p>‘সুদিন’ বলে দেখছে এ দেশ অলীক দ্রিঘাংচুকে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/purush/পুরুষ2022-10-27T02:07:50-04:002023-06-27T19:49:43-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। পুরুষ। </p>
<br /><p>পুরুষটি অবাক হয়ে ভাবছিলো ।<br />এই অভ্যেসটা ওর নতুন হয়েছে, সারাদিন ধরে নানান জিনিস<br />নিয়ে ভেবে যাওয়া। <br />ও জানে, এটা ওর দল ছাড়া আর কেউ পারে না। <br />ভয়ানক শ্বদন্ত বাঘেরা পারে না, পাহাড়ের মতো উঁচু ম্যামথেরা পারে না,<br />এমকি প্রায় ওরই মতো দেখতে ওই নিয়ান্ডারথালগুলো,<br />যারা ওর মতো কথাও বলতে পারে, পাথুরে অস্ত্রও বানাতে পারে,<br />তারাও পারে না ।<br />ভাবতে পারে বলে ওদের দলের সবার একটা ভীষণ গর্ব আছে।<br />ওরা রোজ নানা জিনিস ভাবা অভ্যাস করে,<br />তারপর পরস্পরকে সেই সব ভাবনাকে কথা করে বলে। <br />ওরা এর নাম দিয়েছে, গল্প। </p>
<br /><p>কয়েকটা চাঁদ আগে, ওর পছন্দের নারীটি এমনই একটা গল্প বলেছে ওদের।<br />সে নারী বলেছে , শিশুর জন্মদানে পুরুষের অবদান স্রেফ ক’ফোঁটা বীর্য,<br />শিশুর সৃষ্টি থেকে বড় হওয়া আর জন্মের পরও স্তন্যতে নারী ছাড়া গতি নেই আর।<br />ওরা খেয়াল করেছে, আলো ছাড়া গাছ হয় না, <br />নারীটি বলেছিলো আকাশের জ্বলা গোলকটার সেই আলো শুধু বীর্যের মতো,<br />গাছের জন্ম দেয় আসলে তো মাটি,<br />তাই মাটি নিশ্চিত নারী। </p>
<br /><p>খিলখিল করে হেসে সে নারী জানিয়েছিলো, <br />ওই নদী বন আর রাতের আকাশের টিম টিম করে জ্বলা অসংখ্য আলো,<br />কেউ যদি সৃষ্টি করে থাকে অনেক অনেক চাঁদ আগে,<br />তবে সে নারী ছাড়া আর কিছু নয়।<br />ওর দলের সকলে সেই দিন ভীষণ আগ্রহ নিয়ে শুনেছিলো এই গল্পটা,<br />তারপর, সবচেয়ে বড় যেই বুড়ি, সে হেঁকে বলেছিলো,<br />তাহলে সৃষ্টিকারকে আমরা এখন থেকে মা বলে ডাকবো। </p>
<br /><p>পুরুষটা ভাবছিলো, তার মা’কে কবেই তো খেয়ে গেছে বুনো জন্তুতে<br />বাপ একা একা বড় করেছিলো তাকে,<br />শিখিয়েছে বুনো খরগোশ আর সজারু শিকার,<br />চিনিয়েছে কোন ফল খাওয়া যায়, কোন পাতা বিষ,<br />পাথর ঘষে সে যে এখন বানাতে পারে তীক্ষ্ণ বল্লম, <br />সেও তো বাবার থেকে শেখা। <br />তবে তো নারী না হয়েও তার বাপ তার সৃষ্টিকারীই হলো!<br />তবে কেন আসল সৃষ্টিকার কেবল নারী হতে যাবে? কোনোভাবে পুরুষ কি হতে পারে না?<br />তার তো ইচ্ছে করে সৃষ্টিকারকে মা নয়, বাবা ডাক দিতে। </p>
<br /><p>ইচ্ছা! পুরুষটি লাফিয়ে ওঠে! <br />পাওয়া গেছে! ওই নারীটির থেকে ভালো গল্প বলবে সে এবারে,<br />দলের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে। <br />পুরুষটি ভাবে, আরো ভাবে।<br />তারপর একা একা হো হো হাসিতে ফেটে পড়ে। </p>
<br /><p>সেদিন সন্ধ্যায় সে এক অদ্ভুত পুরুষের গল্প বলে। <br />যে ইচ্ছে করলেই সব সম্ভব করতে পারে। <br />ওর পছন্দের নারীটি একবার জিজ্ঞেস করেছিলো বটে, <br />গর্ভ কোথায় পেলো সেই অলৌকিক ইচ্ছাধারী,<br />সে হেসে বলেছিলো, কেন, নারী তার ইচ্ছেতে সৃষ্টি হলো, তারপর সেই নারীর গর্ভে হলো <br />অরণ্য নদী আর যাবতীয় আকাশের আলো!</p>
<br /><p>সবচেয়ে বড় যেই বুড়ি, সেও থমকে গেছিলো। <br />সত্যি তো, ইচ্ছেতে যে সব কিছু পারে,<br />সে তো নারীও সৃষ্টি করতে পারে। <br />ওর পছন্দের নারীটি বলার চেষ্টা করেছিলো, এমন তো কোথাও ঘটেনি, <br />এমন ইচ্ছায় জন্ম দেওয়া পুরুষ কোথাও কেউ দেখেনি,<br />কিন্তু বুড়ি বলে দিলো, ইচ্ছে আর ভাবনা, দুটো থাকলে হয়তো বা হতেও পারে,<br />ওই দূরের পাহাড়ের ওদিকে কত কী যে আছে, <br />তা তারা কি কেউ জানে?<br />বুড়ি হেঁকে বললো . এই গল্পটা আগেরটার থেকে ভালো। <br />তাই এখন থেকে সৃষ্টিকারকে আমরা বাবা বলে ডাকবো।<br />গর্ভ থেকে নয়, ইচ্ছের থেকে সব সৃষ্টি।</p>
<br /><p>গল্প চলতে থাকলো মুখে মুখে। <br />হাজার হাজার বছর ধরে সেই পুরুষ নারীর সন্ততিরা<br /> গল্প নিয়ে আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে গেলো <br />এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া।<br />তারা লিখতে শুরু করলো…<br />আর পুরুষ ভগবানটি কোথাও ‘ রা’ হলেন, কোথাও ‘ জিউস’, কোথাও বা ব্রহ্মা। <br />আরো পথ পেরিয়ে তিনি জিহোবা গড আল্লাহ হলেন।</p>
<br /><p>কিন্তু সৃষ্টিকার আর কোনোদিন নারী হলেন না। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/ebar-khola/এবার খোলা2022-09-20T08:43:33-04:002023-06-26T17:17:09-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>।এবার খোলা। </p>
<br /><p>রোজনামচার কোণখামচায় আতিপাতি খুঁজছি ঢেউ,<br />ঠিক না বেঠিক মুখোশ পরা, আদৌ কি আর বুঝছি কেউ।<br />সেই যারা সব ভূত ভাগাতেন মুখোশ ছাড়া দেখলে মুখ,<br />মুখ না মুখোশ করলে জিগেস, কুলুপ মুখে তারাও মূক।</p>
<br /><p>ডেঙ্গি আবার লেঙ্গি মারে ফ্যালসিপেরাম ছুটায় ঘাম,<br />টাইফয়েডও নেই ভয়েডে, ভোলাচ্ছে জ্বর বাপের নাম।<br />এদের মাঝে তুচ্ছ কোভিড পুচ্ছ নাচায় আর কোথা,<br />দরকারি তাই সরকারি সিল বন্ধে মুখোশ-দাসপ্রথা।</p>
<br /><p>তিনটে বছর প্রায় পেরোলো, চিনছি না কেউ কাউকে আর,<br />অর্ধ মুখের গল্পগুলোয় বাকির ফাঁকি কল্পনার। <br />খুললে মুখোশ ভীষণ অবাক, মোটেই অমন নয় তো সে,<br />নতুন কোনো মুখ চিনিনি কোভিডকালের ভয়-দোষে।</p>
<br /><p>তবুও মুখে লাগাই মুখোশ, আতংকে নয় ,অভ্যাসে<br />কোথাও দেখে দেয় বাহবা, কোথাও আবার সব হাসে।<br />দুপক্ষেরই যুক্তি আছে, অকাট্য নয় কেউ তারা,<br />ঠিক না কি ভুল কঠিন বোঝা, নতুন কোনো ঢেউ ছাড়া।</p>
<br /><p>সে ঢেউখানার আবার হানার সম্ভাবনা শূন্য নয়,<br />সেটা জানা, কিন্তু তাতেও চিন্তা কিছু নেই বোধহয়।<br />কমবেশি সব দেশের মানুষ ভ্যাক্সিনে আজ রক্ষিত<br />রক্ষী হয়ে সামলাবে যে তেমন ঢেউয়ের ঝক্কি তো।<br />পক্ষে এবং বিপক্ষে থাক যুক্তি লেখা য’দিস্তা,<br />হতেই পারে মুখোশ ছাড়া এখন দোকান অফিসটা।</p>
<br /><p>মালিক যারা, দেন না তবু মুখোশ খোলার নোটিশটা।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/manusher-mita/মানুষের মিতা2022-09-14T11:09:06-04:002023-06-26T17:19:18-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। মানুষের মিতা। </p>
<br /><p>রাষ্ট্র কবিকে তলব করলেন তার প্রাসাদে। <br />সভার মধ্যেখানে ভীষণ ধমকে জিজ্ঞেস করলেন,<br />‘ শুনলাম, তুমি নাকি আমার বিরুদ্ধে লিখছো?’</p>
<br /><p>কবি অভিবাদন করে বললেন, ‘আজ্ঞে না তো।’<br />রাষ্ট্র বললেন , ‘সাবধানে থেকো, তোমার ওপর কিন্তু কড়া<br /> নজর রাখছি।’</p>
<br /><p>ধর্ম কবিকে ডেকে পাঠালেন একদিন।<br />বেদীর ওপর থেকে নিচে কুঁকড়িয়ে থাকা পদ্যলেখকের দিকে<br />তাচ্ছিল্যের হাসির সাথে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন তিনি..<br />‘নরকের ভয় নেই? শুনলাম তুমি নাকি ঈশ্বরের বিপরীতে?’</p>
<br /><p>কবি নতমুখে আবছা স্বরে বললেন. <br />‘আজ্ঞে ভয় নেই বটে , তবে আমি তো ওনার বিরোধী নই।’</p>
<br /><p>ধর্ম বললেন, <br />‘আমরা স্বর্গ ও ঈশ্বরের তরফ থেকে তোমার ওপর নজরদারি চালাবো।’</p>
<br /><p>রাজনীতি একদিন ঘুম থেকে তুলে নিয়ে এলো কবিকে মাঝরাতে।<br />কলার ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,<br />‘ এই শ্লা, তুই নাকি আমার পেছনে কলমবাজি করছিস?<br />এমন হুড়কো দেবো না. ‘</p>
<br /><p>কবি তার হাত ছাড়িয়ে অবিন্যস্ত জামা ঠিক করতে করতে বললেন,<br />‘আপনার বিরুদ্ধে না তো। <br />ভোর হয়ে এলো, সূর্যোদয় দেখতে যাবেন আমার সাথে?’</p>
<br /><p>রাজনীতি গরররর গরররর করে বললো, <br />‘ রাখ তোর ফালতু বুকনি ।<br />শোন্, আমার ছেলেরা তোর ওপর চব্বিশ সাত নজর রাখছে,<br />একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই..’</p>
<br /><p>এই সব ঘটনা কবি ঘরোয়া আসরে কিছু অনামী পাঠকের কাছে বলছিলেন।<br />তাঁদেরই একজন জিজ্ঞেস করেই ফেললেন,<br />‘তাহলে কবি , আপনি কার বিরুদ্ধে লেখেন কবিতা?’</p>
<br /><p>কবি বললেন, কারোর না। মানুষের পক্ষে লিখি শুধু।<br /> মানুষের কথা বলি মানুষের মাঝে, <br /> আজন্মকাল আমি মানুষের মিতা। </p>
<br /><p>ওই তিনজন কেউ কবিতা বোঝে না ।তাই ওরা খুঁজে চলে শুধু বিরোধিতা।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/swajanposhon/স্বজনপোষণ2022-08-24T05:46:13-04:002023-06-26T17:23:53-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। স্বজনপোষণ। </p>
<br /><p>ঠিক ভুল বেছে নিই আগে। </p>
<br /><p>ধর্ম ঈশ্বর, <br />দেশ রাজনীতি, <br />পদবী জাতি বা ভাষা<br />কে স্বজন আগে থেকে চিহ্নিত করি।</p>
<br /><p>পরের ঘটনাবলি খাড়া থোড় বড়ি, <br />পুণ্য বা পাপ হোক কার্যকলাপ</p>
<br /><p>পক্ষে লড়াই জারি বিনা জিজ্ঞাসা। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/scapegoat/স্কেপগোট2022-07-28T03:16:08-04:002023-06-26T17:23:25-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। স্কেপগোট। </p>
<br /><p>একটা মিথ্যা কথা বলতে হবে তোমায়। রাজি?</p>
<br /><p>কি! কী?</p>
<br /><p>সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য। আগে কথা দাও, বলবে।</p>
<br /><p>ইল্লি আর কি! খামোখা মিথ্যে বলবো কেন?</p>
<br /><p>ধরো তাতে একজনের প্রাণ বাঁচবে।</p>
<br /><p>আচ্ছা, তাহলে বলতেই পারি।</p>
<br /><p>যার প্রাণ বাঁচবে সে একজন লুণ্ঠনকারী।</p>
<br /><p>ধ্যাৎ! তার জন্য আমি মিথ্যে কথা বলতে যাবো কেন!</p>
<br /><p>তোমাকে বখরা দেবে, রাতারাতি হয়ে যাবে অতিশয় ধনী।</p>
<br /><p>আচ্ছা, তাহলে ভাবতে পারি। শতাংশে কত?</p>
<br /><p>দুটো জিনিসের শতাংশ হয় না। শূন্য আর অন্তহীন।<br />তোমার নিবাস শূন্যে । তবু জিজ্ঞেস করছো?</p>
<br /><p>তাও তো ঠিক। আচ্ছা রাজি। অগ্রিম পাবো?</p>
<br /><p>পাবে। দেখো, এই নোটের তাড়া। নেবে কিনা ভাবো।</p>
<br /><p>নেবো, নেবো। ঘরেতে অভাব থিতু, <br />পূর্ব-প্রজন্ম সিন্দবাদের বুড়োর মতো ঘাড়ে চেপে আছে,<br />উত্তর-প্রজন্মের ভবিষ্যৎ<br />ভূতের মতো কল্পিত অস্তিত্বে, <br />বিশ্বাস করলে আছে, বাস্তবে হয়তো বা নেই।<br />একাকী লড়াই করে শিরদাঁড়া ফাঁপা, <br />নোয়ানো বা বেঁকানো অতীব সহজ,<br />উপযুক্ত মূল্য পেলে বেচে দিতে পারি।<br />ভাববার কিছু নেই, রাজি আমি।</p>
<br /><p>ঠিক তো? <br />ভাববে না পরে হলো ভীষণ বোকামি?<br /> ভেবে বলো একবার। </p>
<br /><p>কিছু নেই ভাববার ।<br />বেকার বর্তমানে উপায় তো নেই কিছু আগে দেখবার।<br />কী মিথ্যে বলতে হবে , সেটা শুধু বলো এইবারে।</p>
<br /><p>তেমন কিছুই নয়। ওর দোষ নিতে হবে ঘাড়ে।<br />সংক্ষেপে, সে হবে তুমি আর তুমি হবে সে।</p>
<br /><p>সে কি! গোটা পরিচয়টাই বদলাবে শেষে । <br />না না, <br />এতখানি মিথ্যে যে আমি পারবো না।</p>
<br /><p>রাজি হয়ে গেলে একবার, <br />আর নেই কোনো আলোচনা।<br />হয় ওই পরিচয়ে বাঁচো কিছুদিন, <br />নয় তুমি মুছবে এখনি।<br />অরাজিতে পরিবার পথে,<br /> রাজি হলে আশাতীত ধনী।</p>
<br /><p>বুঝেছি। <br />যে কোনো পথ বাছি, আমি হবো খুনই। </p>
<br /><p>এরপরে মুছে গেলো একটা মানুষ।<br />সে কেউ নয়, শুধু স্কেপগোট।<br />কোনোখানে তাই নেই কোনো আলোড়নই।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/may-dibash/মে দিবস2022-05-01T07:57:13-04:002023-08-01T17:09:18-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। মে দিবস। </p>
<br /><p>শ্রমের ঘামের দাম কমেছে , কাজ খেলো সব প্যান্ডেমিক,<br />সান্ত্বনাতে শান্ত না আর, মানুষ মেজাজ পাল্টে নিক।<br />অনুদানের লজ্জা কেটে রোজগারে হোক নিজের বশ,<br />সবার হাতে কাজ ফেরালে, তবেই শুভ মে দিবস।</p>
<br /><p>মহামারী ভাগ করেছে দেশ কেটে আজ তিনখানা,<br />একটা ভাগে ধুঁকছে যত দিন খাওয়া আর দিন আনা।<br />দুনম্বরে খুব ধনীরা , কিছুই যাদের হয়নি লস,<br />শূন্য বনাম হাজার কোটির হিসেবটা চাক মে দিবস।</p>
<br /><p>তিন নম্বর ভাগে কতক রাজনীতিক ও ধর্মবাজ,<br />যাদের সেবায় দেশ জুড়ে আজ ঘেন্না দ্বেষের কুচকাওয়াজ।<br />প্রথমভাগের লোকরা এবার দিক মুছে সেই বিষের কষ,<br />আল্লাহ রাম আর যিশু মুছে মানুষ চেনাক মে দিবস।</p>
<br /><p>বামপন্থা রামপন্থা , থাক না যে যার পন্থাতে, <br />রাজনীতি-মত বদল না হয় যেন মানুষ-হন্তাতে।<br />নাগরিক আর নাগরিকের লড়াই ডেকে আনবে ধস,<br />সে বার্তাটি দেশের মাটির বুকে ছড়াক মে দিবস। </p>
<br /><p>আর কতদিন পড়বে মানুষ ভাতা’র ভাতের লজ্জাতে,<br />নিজের হাতে কিনতে পারে আসুক তেমন ‘রোজ’ হাতে।<br />নব্বই ভাগ ছিবড়ে চোষে দশ ভাগে খায় লাভের রস,<br />তেমন হলে শুধুই মাসের পয়লা তারিখ মে-দিবস। </p>
<br /><p>শ্রমের ঘামের দাম না পেলে বেকার তখন এ দিবস।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/nabhir-dike-dekho/নাভির দিকে দেখো2022-03-08T04:58:09-05:002023-06-26T20:21:33-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। নাভির দিকে দেখো।</p>
<br /><p>নারীর কথা ভাবলে নিজের নাভির দিকে দেখো।<br />ওই নাড়ীতেই সবার শুরু, সত্য শিখে রেখো। <br />তার জীবনে হ্যাঁয়ের চেয়ে বেশি প্রভাব না’রই,<br />এইখানে বাঁধ, ওইটা বারণ , বলে মাথা নাড়ি,<br />সেসব তালা খোলার যদি চাবির দিকে দেখো,<br />জানবে তবে স্বর্ণালী এক ভাবীর দিকে দেখো।</p>
<br /><p>জরায়ুহীন বাঁচে না ভ্রুণ, সবাই সেটা মানে,<br />কিন্তু প্রথম নারীর কথা নেই রে কোনোখানে।<br />সবার বইয়ে পুরুষ প্রথম , আদম মনুই আদি<br />অলৌকিকের দোহাই দিয়ে জরায়ু যায় বাদই<br />সেই পুরুষই নাকি আবার প্রথম নারী আনে,<br />কোথা থেকে জন্ম দিলো , আল্লাহ হরিই জানে। </p>
<br /><p>সৃষ্টি হবার শর্ত যে মূল সেই প্রজাতির জোড়ায়<br />সে তথ্যটা হারিয়ে গেছে ঘোড়ার ডিমের তোড়ায়।<br />ইন্দ্র কিংবা জিউস বলো, জেহোবা গড আল্লাহ<br />পুরুষ ভগবানেই ভারী সভ্যতাদের পাল্লা <br />দেবীদেরও স্বামী সেজে পুরুষ ছড়ি ঘোরায়,<br />ডগাতে জল দিয়ে কী হয় , গলদ যখন গোড়ায়?</p>
<br /><p>বিষমতার এ বিষ থেকে মেয়ে বাঁচিয়ে রেখো,<br />স্রেফ আগামীর মানুষ বলেই কন্যাটিকে দেখো।<br />শিখিও ওকে, যুগান্ধদের প্রবল বাধার মুখে<br />যুগান্তরের স্বপ্ন বুকে যারা দাঁড়ায় রুখে,<br />পুরুষ নারী নির্বিশেষে তাদের সাথে থেকো,<br />ও পথ কঠিন, গর্ত অনেক, তবুও সেদিক বেঁকো।</p>
<br /><p>হতাশ হলে মন ফেরাতে নাভির দিকে দেখো।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/babbharombho/বহ্বারম্ভ2022-02-26T12:07:57-05:002023-06-26T17:15:31-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। বহ্বারম্ভ। </p>
<br /><p>রাশিয়া হাসিয়া কহে শোন ওরে বিশ্ব,<br />করিস না কোনোরূপে আজ যেন মিস show.<br />তৈলটি রুশ হবে ইউক্রেনি চরকার,<br />ক্রেন দিয়া উপারিবো কেমনে সে সরকার,<br />গ্যালারি ভরিয়া বসি দেখ সেই দৃশ্য।</p>
<br /><p>মার্কিন তাই শুনে কহে মহা রুষিয়া,<br />আমাদের দিন চলে ওই আঁটি চুষিয়া<br />বুঝিয়াছে সে পিপাসা আফগান ইরাকি<br />রুশেরা খেলিছে আজ সেই একই ক্রীড়া কি,<br />দাও সবে স্যাংশন পশ্চাতে ঠুসিয়া। </p>
<br /><p>অমনি নড়িয়া বসে গর্জিল ইউ কে<br />বলে কে বদল করে পৃথিবীর viewকে?<br />অতীতে আমরা আর এক্ষণে ইউ এস<br />বিশ্ব চুষিয়া লয়ে করিয়াছি নিঃশেষ<br /> রাশিয়া দখল তাহা করিবে কি Nukeএ?</p>
<br /><p>স্যাংশন করো ত্বরা, চেঁচাইলো ইউরোপ<br />ফ্রিজ করো ব্যাঙ্কদের, ইনকামে মারো কোপ,<br />ন্যাটোকে করিছে খাটো ওই রুশ বেয়াদপ,<br />স্বাধীন রাষ্ট্র ধরে সে ডেমন কপাকপ,<br />ডেমোক্রেসিটি হায় পায় বুঝি পুরো লোপ।</p>
<br /><p>ইউক্রেন ক্ষীণস্বরে বলে ওহে ভাইসব,<br />আমার রাস্তা জুড়ে ওই দেখো ডাঁই শব।<br />তোমাদের স্যাংশনে হবে কাঁচা কদলী,<br />শীঘ্র করিতে হবে সেই প্ল্যান বদলই ,<br />রাশিয়া ঠাসিয়া ধরে, অস্ত্র যে চাই সব।</p>
<br /><p>ইউ এন বলে আহা জানি হও ক্রুদ্ধ,<br />ওই পথ আপাতত পুরো অবরুদ্ধ,<br />আমরা বকিতে পারি ঘর থেকে ভাই রে,<br />তাই বলে পাঠাই না সেনা কেহ বাইরে,<br />নইলে বাঁধিয়া যাবে ভয়ানক যুদ্ধ। </p>
<br /><p>ইউক্রেন কাঁদি কহে যুদ্ধ তো চলিছে<br />রাশিয়া নিতেছে কত সন্তান বলি যে।<br />হিটলারও এমনই তো করিয়াছে শুরুতে<br />এখন আঘাত যদি না করো ঊরুতে<br />দানব ছিঁড়িবে নখে পৃথিবীর কলিজে।</p>
<br /><p>কান্না শোনে না কেউ, চায় সবে এড়াতে<br />ব্যাঘ্রেরা বদলাইয়া গিয়াছেন ভেড়াতে। <br />রাশিয়া হাসিয়া খায় ইউক্রেন রাষ্ট্র,<br />ডুবন্ত সেই দেশ খুঁজে চলে লাস্ট স্ট্র,<br />কেউ নেই তার দিকে আজ মুখ ফেরাতে,<br />নেকড়ে দিয়াছে হানা শশকের ডেরাতে।</p>
<br /><p>ভারত? মুখটি চেপে বসে আছে বেড়াতে..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/protiti-judhher-pore/প্রতিটি যুদ্ধের পরে2022-02-25T15:35:28-05:002023-06-26T17:22:46-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। প্রতিটি যুদ্ধের পরে। </p>
<br /><p>প্রতিটি যুদ্ধের পরে,<br /> লাশের স্তুপের থেকে নিজের সন্তান ও ভাইদের <br />আলাদা করতে করতে হাহাকার করে ওঠে হোমো স্যাপিয়েন্স।</p>
<br /><p>প্রতিটি যুদ্ধের পরে, <br />অজস্র গণকবরের স্মৃতি বুকে চেপে ঘরে ফিরে <br />হোমো স্যাপিয়েন্স ধর্ষিতা মা বোন মেয়েদের মুখগুলো দেখে,<br /> যাদের মগজ জুড়ে পুরুষ দেখলে বেজে ওঠে সাইরেন,<br /> আজীবন না থামা তীক্ষ্ণ আওয়াজে। <br /> আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে চারিদিক হাতড়িয়ে <br />আতিপাতি করে সে খোঁজে সভ্যতা ঢাকবার আব্রু।</p>
<br /><p>প্রতিটি যুদ্ধের পরে, <br />ক্লিন্ন অতীত ধরে ভিটে ফিরে হোমো স্যাপিয়েন্সের চোখে পড়ে, <br />এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে অনাথ শিশুরা, <br />কেউ অর্ধেক পোড়া, হাত নেই , পা নেই কারো, <br />সেইসব বিকৃত শৈশব বড় হলেও ঘাড়ে বসে থাকবে সিন্দবাদ কাহিনীর বুড়োর মতো। <br />এর পরে, এক দুই তিন অথবা চারটে প্রজন্ম ধরে <br />এমন বিকলাঙ্গ সমাজ জন্মাতে থাকবে , <br />যাকে ‘ বিশেষভাবে সক্ষম’ বলে মুখ রক্ষা করা যাবে না। <br />তাকে আটকানোর জন্য হাজার রকমের রিহ্যাবিলেটশন প্রোগ্রাম চালু করে <br />অবশেষে সে বোঝে, সময়ের ফাটলে রিফু হয় না ।</p>
<br /><p>প্রতিটি যুদ্ধের পরে, <br />হোমো স্যাপিয়েন্স দেখে ধ্বংস হয়ে গেছে জীবনের চেনা চিহ্নরা সব।<br />তার স্কুলের ওপর বোমা পড়ে সেটা এখন পরিত্যক্ত পোড়ো বাড়ি,<br />তার ঘরের পাঁচিল ভেঙে পাশের মাঠটা অবধি পড়ে আছে ঘষটানো দাগেদের হিজিবিজি,<br />যেখানে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ওরা একে একে গুলি করেছিলো তার বাবা, কাকা আর প্রতিবেশী চশমা-কাকুকে । <br />যে বটগাছটার আড়ালে তার প্রথম চুমুর স্মৃতি,<br /> ওরা তার ডালেই লটকে দিয়েছিলো গণধর্ষণের পরে তার প্রেমিকাকে,<br />বিষণ্ণ বাতাস এসে আজও দড়িটাকে দুলিয়ে দিচ্ছে পৈশাচিক পেন্ডুলামের মতো।<br />তার কলেজ যাওয়ার রাস্তায় মাইন ফেটে বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে,<br />প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে একজন নিখোঁজ, <br />একজন বিপরীতদিকের ইনফর্মোর সন্দেহে অকথ্য অত্যাচারে উন্মাদ, <br />আরেকজন জাতিগত সাফাই অভিযানের নামকরা খুনে।<br />বেঁচে যাওয়া নেড়িটার ল্যাজ নাড়া ছাড়া, <br />জীবনের একটি জিনিসও আর আগের মতো নেই। <br />উদভ্রান্ত পথিকের মতো হোমো স্যাপিয়েন্স ঢোকে তার ঘর বলে চেনা চৌহদ্দিতে, <br />ভাঙা আয়নার কাঁচে মুখ দেখে ভয়ানক চমকিয়ে ওঠে। <br />প্রতিবিম্বের থেকে চেয়ে আছে এক অচেনা আগন্তুক, <br />যার সব আলো কোনো এক কৃষ্ণগহ্বর হাঁ করে গিলে নিয়েছে।</p>
<br /><p>প্রতিটি যুদ্ধের পরে, <br />হোমো স্যাপিয়েন্স দেখে চারিদিকে ভাঙা মূর্তির টুকরো পড়ে আছে।<br />বুদ্ধের পাথুরে প্রতিমা ভেঙে টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছে, <br />অভয়মুদ্রার সবকটি আঙুল ভাঙা,<br />মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর স্ট্যাচুটাকে কারা যেন উপড়ে ফেলেছে,<br />কাত হয়ে পড়ে বাপু পা বাড়িয়ে আছেন , <br />কিন্তু কোথাও পৌঁছচ্ছেন না,<br />নেলসন ম্যান্ডেলার কেউ মাথা ভেঙে দিয়ে গেছে, <br />কবন্ধ সে মূর্তি কোনো হরর ফিল্মের থেকে কম বীভৎস নয়,<br />মার্টিন লুথার কিংয়ের গায়ে বিঁধে আছে অজস্র বোমার শ্রাপনেল।<br />হোমো স্যাপিয়েন্স নিজেকে বোঝাতে চায়,<br /> এই সব আবার ঠিক তৈরি করে নেওয়া যাবে,<br />ঘন হয়ে আসা অন্ধকার তার কানে কানে বলে যায়, <br />ভেঙে গেলে ইতিহাস বদলায় না। </p>
<br /><p>প্রতিটি যুদ্ধের পরে, <br />সমস্ত হারিয়ে ফেলে হোমো স্যাপিয়েন্স শোকার্ত হাহাকারে সময়কে প্রশ্ন করে,<br />এই সীমাহীন ধ্বংসের দায় কার? <br />আমার প্রজন্ম ছিন্নভিন্ন করে চলে গেলো কোন ঘাতকের তলোয়ার? </p>
<br /><p>লাশের পাহাড় থেকে গলিত আঙুল ওঠে,<br />ধর্ষিতা নারীদের ঠোঁটে অভিযোগ ফোটে<br />বিপন্ন শৈশবে আচমকা কথা জোটে,<br />ভাঙা স্কুল মূর্তি ও উড়ে যাওয়া রাস্তারা আচমকা করে ওঠে জোরে চিৎকার,</p>
<br /><p>দশখানা দিক থেকে <br />প্রতিধ্বনিরা বলে.. তোমার .. তোমার..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/meye-hok-barang/মেয়ে হোক বরং2022-02-19T17:39:46-05:002023-06-26T17:19:21-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। মেয়ে হোক বরং। </p>
<br /><p>মা বোলো না, কন্যা বলে ডাকো, মাতৃভাষা কোলের ওপর রাখো। </p>
<br /><p>মা’র ওপর আর দায় কতটুক থাকে, <br />মা-ই তো বরং সবার খেয়াল রাখে,<br />মা মানে তার আঁচল ছায়ায় বসে , আলাদিনের চিরাগ দেওয়া ঘষে,<br />যা খুশি তাই তার কাছে যায় চাওয়া, <br />কিন্তু মায়ের কার থেকে কী পাওয়া,<br />হিসেবটা তার ভীষণই একপেশে, দায় সারা সব মুখেই ভালোবেসে,<br />কজন জানো, মা’র কী ভালো লাগে, <br />সব কিছু কম থাকে মায়ের ভাগে। <br />তাই ভাষাকে মা বলে যেই ভাবি, ভাষার তাতে হয়না কোনো লাভই,<br />হওয়ার দাবি আমরা জানাই বটে, <br />সত্যি কি আর তেমন কিছু ঘটে?</p>
<br /><p>তাই বলি কি, ভাবনা বদল করে, <br />মাতৃভাষা বরং খেলুক ক্রোড়ে।<br />আমরা ভাষার মা আর বাবা হয়ে, আগলে রাখি ঝামেলা সব সয়ে,<br />পড়শি যদি কুনজরে দেখে, <br />মেয়ে যেন তার জবাব দিতে শেখে,<br />খুব রূপসী জন্ম থেকেই সে যে, গান কবিতায় নিত্য থাকুক সেজে, <br />রোজ আদরে চোখের সামনে বাড়ুক, <br />মুখ দেখে তার সবার অসুখ সারুক, <br />আবদারে তার সাড়া দিতেই হবে, মেয়ের কথা আর বাপ মা ফেলে কবে,<br />আমরা সে মেয়ের যত্ন নেবো বেশ, <br />স্বপ্ন দেখা করাবো অভ্যেস,<br />দেশ বিদেশে ঘুরতে যাবে সাথে, ঘুমপাড়ানি গান শোনাবো আদর করে রাতে। </p>
<br /><p>মা বলে তো অনেক একুশ গেলো, <br />তবুও ভাষার সফর এলোমেলো,<br />এবার নাহয় অন্য কোরাস গেয়ে, সবাই বলি বাংলা আমার মেয়ে।</p>
<br /><p>কন্যা আদর বেশি পাবে হয়তো মায়ের চেয়ে..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/janak/জনক2022-02-18T08:20:00-05:002023-06-26T17:18:03-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। জনক। <br /> । ১।</p>
<br /><p>২৭ শে জানুয়ারি বাড়ি ফেরবার পথে, থমথমে সন্ধে নেমেছে,<br /> অকালবৃষ্টি নেমে চারিদিকে থিতু নির্জনতা, শীতও কিছুটা বেড়েছে,<br />যথারীতি ছাতা সাথে নেই, তাই পা চালিয়ে হাঁটি,<br />আবার বৃষ্টি এলে দেরি হয়ে যাবে , খবরটা দেখা হবে মাটি।<br />সে আশায় ছাই দিয়ে ঝমঝম করে মেঘ কাঁদলো আবার,<br />শীতের অন্ধকারে গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা ভালো লাগে কার,<br />তড়িঘড়ি এপাশে ওপাশে কোনো আশ্রয় খুঁজি।<br />ওই তো.. জীর্ণ পুরনো বাড়ি, তবে ছাদ আছে, আপাতত সেখানেই দেহটাকে গুঁজি।<br /> ।২।</p>
<br /><p>দরজাটা ভাঙা, মোবাইলে টর্চ জ্বেলে ঢুকে পড়ি ঘরের ভেতরে ,<br />আলো পড়ে একখানা নেড়ি ওঠে মৃদু ঘেউ ঘেউ করে, <br />হয়তো ওটার এখানে ঠিকানা পার্মানেন্ট, আমি বহিরাগত,<br />তবু কুকুরেরা সীমান্ত অতটা বোঝে না। আমি যে স্বাগত,<br />ল্যাজ নাড়া দেখে বুঝি। বাইরে বর্ষা ক্রমে হচ্ছে জোরালো,<br />হঠাৎই চোখটা গেলো ডাইনের দিকে। একখানা ঘর থেকে আলো,<br />চাপাস্বর ভেসে আসে, কারা যেন দেশ নিয়ে করে আলোচনা।<br />কেউ কি আছেন? হাঁকি গলা খাকরিয়ে করে দোনামনা,<br />অন্তত জানানো দরকার আশ্রয় হয়েছে নিতে নিরুপায় হয়ে।<br />‘ভেতরে এসো বাবা’..ক্ষীণ আহ্বানখানি নিয়ে এলো যেই স্বর বয়ে,<br />যেন বহুকাল ধরে চেনা। মা ঠিক এরকমই যেন..<br />ধ্যাত্তেরি, সে মহিলা কবেই তো চলে গেছে ছেড়ে, এখনো যে তবু এত হাহাকার কেন!<br /> । ৩। </p>
<br /><p>ঘরে ঢুকলাম। আলোটা যে কোত্থেকে বোঝা যাচ্ছে না,<br />যেন কেউ পূর্ণিমা রেখে গেছে ঘরে। বাইরে বৃষ্টি আর ভেতরে জোছনা,<br />সে আজব ব্যাপারের চেয়ে অদ্ভুত, ঘরখানা জনহীন, খাঁ খাঁ<br />টেবিলে পুরনো বই, বাঁশের লাঠিতে লাগা ভারতের তেরঙা পতাকা,<br />একটু মলিন হওয়া প্যারিস প্লাস্টারের অশোক স্তম্ভ একখানা কোনে,<br />একটা দেওয়াল জুড়ে ভারতের ম্যাপ। আমি টর্চ জ্বালি ফের ফোনে,<br />কই কেউ নেই ! কে ডাকলো তবে? ব্যাপারস্যাপার মোটে লাগছে না ঠিক,<br />পিছু ফিরতেই সেই স্নেহময় স্বর, ‘এসেছো যখন তবে বসো নাগরিক।’<br />কে বলে? স্বর দেখি ভেসে আসে ভারতের মানচিত্র থেকে, আলোর উৎস ওই বই,<br />পতাকাটা দুম করে সটান আর খাড়া। অশোক স্তম্ভ বলে ‘প্রশ্নটা করো ওকে , সই! ‘<br />করবো, একটু ধাতস্থ হোক! ও এখনো ভাবছে বোধহয় সব কাণ্ড ভুতুড়ে,<br />মানচিত্র বলে । পতাকা রয়েছে খাড়া কিঞ্চিৎ দূরে,<br />পালাতে গেলেই ঠিক আগলাবে পথ, এ কার ম্যাজিক! হঠাৎই আশিরনখ শিহরণ জাগে, <br />ম্যাপটা আমার চেনা ভারতের নয়। প্রদেশের সংখ্যাটা বড় কম লাগে।<br /> । ৪। </p>
<br /><p>‘উনি প্রথম সংবিধান, আমি প্রথম ম্যাপ, অশোক আর ত্রিবর্ণ বদলায় নি,’<br />বলে ওঠেন মানচিত্র, গলায় মমতা ঠিক মা যেন আমার। ‘তোমাদের সমকাল আমাদের ঋণী,<br />যদিও ইদানিং নথিতে আমরা লঘু ,ব্যক্তির ছবি জ্বলজ্বলে,<br />তবুও আমরা আছি, আপাতত ইতিহাস না বদলে যতদিন চলে। <br />তোমাকে একটা প্রশ্ন করি উত্তর-নাগরিক, জানি জবাবটা তার সোজা ভাবে লোক,<br />তবু নিশ্চিত , তারা পুরোটা জানে না। বলো দেখি, গান্ধীজী কেন এই জাতির জনক?’<br /> । ৫।</p>
<br /><p>ইতিহাসে ছেচল্লিশ ছিলো মাধ্যমিকে। কুঁতিয়ে বললাম ‘ওই তো অহিংস অসহযোগ ,ভারত ছাড়ো, সবাই জানে যেসব কথা<br />মানে ভীষণ বড় নেতা তো তাই। ওঁরা হো হো হেসে বললেন, বেয়াল্লিশের আন্দোলনে সাতচল্লিশে এলো স্বাধীনতা,<br />সেরকম ভাবো বুঝি? গান্ধী একাকী নন, ওদিকে সুভাষের ফৌজ, এইদিকে ক্রমাগত প্রজা অসন্তোষ, <br />ওরা বুঝেছিলো না দিলে কপালে দুঃখ আছে। যাওয়ার আগে তাই করা শেষ ফোঁস,<br />দেশের মাঝখান গিয়ে রাডক্লিফ তরোয়াল কেটে দিয়ে গেলো বরাবরের মতো শান্তিকে , <br />বলি স্বাধীনতা পাওয়াটাই যদি পিতৃত্বের কারণ, এতটা বিদ্বেষে কেন দেখে তাঁকে সীমানার ওইদিকে?’<br />আমি ভাবলাম, সত্যিই তো, পাকিস্তানে তাঁর কোনো মূর্তি নেই প্রকাশ্য স্থানে <br />একবার গুগলে দেখেছিলাম । মৌলবাদের অসহযোগের কাছে কবেই হারিয়ে গিয়েছে অহিংসার মানে। </p>
<br /><p> ।৬।</p>
<br /><p>বাইরে শীতের বৃষ্টি, পোড়ো এক ঘরে অলৌকিক আলো আর চারখানা জীয়ন্ত জড়,<br />যাঁরা স্বাধীনতার প্রথম প্রতীক। হয়তো বা ভৌতিক, তবু ভয় কেটে গেছে , বিশ্বাস করো,<br />শুধু এক সম্ভ্রমমিশ্রিত কৌতুহল জেগে আছে। জ্ঞানের অভাব স্বীকার করে নিই করজোড়ে,<br />তারপরে বলি, ‘বলুন, শুনতে চাই, মহাত্মার থেকে তিনি জাতির পিতা হলেন কেমন করে।’ <br />এতক্ষণে বই কথা বলেন, সংবিধানের প্রথম ও আদি সংস্করণ,<br />‘তোমাকে বলবেন ওই মানচিত্র-মা। আমারও জন্ম জেনো হয়নি তখন।’<br /> । ৭।</p>
<br /><p>‘আগস্ট ১৯৪৭ ..’ মানচিত্র কেঁদে ওঠেন বলে। সীমান্তের রেখা বেয়ে হঠাৎ পড়তে থাকে রক্ত ঝরঝর<br />রক্তের অক্ষরে ফুটে উঠতে থাকে নাম.. কলকাতা, লাহোর, করাচি, দিল্লী, অমৃতসর,<br />‘ওপারে হিন্দু শিখ, এপারে মুসলমান মরে শয়ে শয়ে, প্রথমে দুটো দেশে একই হিংস্রতা,<br />বাপু বসলেন অনশনে ।দাবী তাঁর অন্তত ভারতে ফিরুক শান্তি।<br />পদতলে অস্ত্র নামিয়ে থেমে গেলো কলকাতা।<br />দিল্লী তখনও নরক, দলে দলে শিখ আর হিন্দু রিফিউজিরা সঙ্গে আনছে বয়ে বীভৎস ক্ষত,<br />যার খেসারত দেয় এই দেশে থেকে যাওয়া মুসলিমরা। ধর্ষণ খুন আর লুণ্ঠন চলে ঠিক লাহোর করাচির মতো,<br />এ সুযোগে আর এস এস আর মহাসভা জানাচ্ছে দাবী দেশ হিন্দু ও শিখেরই হতে হবে,<br />কংগ্রেসে সেই ঢেউ আছড়িয়ে পড়ে। সেকুলার রাষ্ট্রের স্বপ্ন বিনষ্ট হয় বুঝি শৈশবে,<br />ঠিক তখনই, নরকের মধ্য থেকে একটি স্বর্গীয় স্বর দৃঢ়সংকল্পে এক বার্তা পাঠান,<br />‘যতদিন হিন্দু মুসলিম শিখ ফিরে আসে সহাবস্থানে, ততদিন অনশন। দরকারে গেলে যাক প্রাণ।’</p>
<br /><p> । ৮।</p>
<br /><p>স্তম্ভিত আমি শুনছি শুধু , সাতচল্লিশ আটচল্লিশ সালে ক্ষীণজীবি বৃদ্ধের অটল লড়াই,<br />‘ ওইপারে যা হচ্ছে তার বদলা নেওয়া না। নতুন এ ভারতে সব ধর্মকে আমি পাশাপাশি চাই’<br />সেই আহ্বান শুনে সম্বিত ফিরে পায় একখানা দেশ। ওপারে হিংসা যখন আরো দাউ দাউ জ্বলে, <br />এপারে শান্তি নামে। তখনও অস্থায়ী সে, জানিনা থাকতো কতদিন ওইভাবে বাপুজীর মৃত্যু না হলে!’<br />‘মানে? ‘ মহাবিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করি আমি, ‘নাথুরামের গুলি না চললে ওই হিংস্রতাতেই ফিরে যেতো দেশ?’<br />মানচিত্র কথা বলে কান্নার মতো স্বরে, ‘ তাঁর ওই শবদেহ প্রমাণ যে করে গেলো কোনখানে মানুষকে নিয়ে নেয় বিদ্বেষ।<br />হিন্দুরাষ্ট্রের দাবী মন থেকে মুছে গিয়ে বাপুর স্বপ্নকে সারা দেশ করলো স্বীকার অবশেষে আরো একবার, <br />ওই সংবিধানের জন্ম হলো তার পরের বছরে । ২৪শে নভেম্বর , ১৯৪৯, পৃথিবী জানলো এই দেশ সেকুলার।’</p>
<br /><p> । ৯।</p>
<br /><p>কম্পিত স্বরে বলি, তার মানে এই যে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এত কথা,<br />এত গর্বিত উচ্ছাস,<br />এ সবের পেছনে একখানা মানুষের জেদ, ভিত গড়ে দিয়ে গেছে সে মহান লাশ? <br />প্রাকস্বাধীনতা নয়, বরঞ্চ পরে তাঁর অমৃতে বাঁচে দেশ, যদিও নিজের ভাগে জুটেছিলো বিষ..<br />চারজন প্রতীকই একসাথে বলে, ‘তিনি না থাকলে সেকুলার থেকে দেশ দূরে নিয়ে চলে যেতো সাতচল্লিশ।’</p>
<br /><p> ।১০।</p>
<br /><p>হঠাৎই ঘেউউউউ ডাকে তন্দ্রাটা কাটে। কুকুরটা ডাকছে, কখন ঘুমিয়ে গেছি , বুঝিইনি সেটা, <br />বাইরে বৃষ্টি থেমে হিমেল আঁধার। পোড়োবাড়িটার থেকে বেড়িয়ে বাড়ির পানে লাগাচ্ছি হাঁটা,<br />হঠাৎই চলতি গাড়ি আলো ফেলে গেলো সেই বাড়ির দেওয়ালটাতে,<br />চমকিয়ে দেখি অপটু হাতের বেশ বড়সড় এক ছবি আঁকা তাতে।</p>
<br /><p>বোধহয় ২৬ জানুয়ারি উপলক্ষ্যেই। গান্ধীজী হাঁটছেন, সাথে লাঠি নয়,<br />ত্রিবর্ণ পতাকাকে তুলে দুই হাতে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/tinkhana-choshma/তিনখানা চশমা2022-02-09T11:51:45-05:002023-06-26T17:24:05-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। তিনখানা চশমা। <br /> <br />তিনখানা চশমা হারিয়ে গিয়েছে আমাদের । এখনই খুঁজে না পেলে ভীষণ বিপদ,<br />ঝাপসা অন্ধত্বে পাশের নিরীহ ছেলেটাকে মনে হয় আগামীর হিংস্র শ্বাপদ,<br />অতীতের অর্ধেক দেখা যায় না, বানানো ইতিহাস সত্যি বলে মনে হয়,<br />তিনখানা চশমা হারিয়ে গিয়েছে, হয়তো বা তাই, ঠেলেঠুলে ভুল দিকে নিচ্ছে সময়। </p>
<br /><p>একটা চশমা ছিলো, পুরোপুরি গোল গোল ফ্রেম, তার সাথে সরু দুটো ডাঁটি,<br />চশমার পিছে দুটো ব্যথাতুর চোখ.. নোয়াখালি, বিহার, কলকাতা হেঁটে যায় অসহায় লাঠি,<br />হিংসারা জিতে গেছে, লাশের স্তুপের মাঝে কখনো আসছে ভেসে<br />ধর্ষিত রমণীর শেষ গোঙানি,<br />তবুও অহিংস তিনি স্বপ্ন দেখেন, ভারত নামক দেশে এক হয়ে থেকে যাবে জল আর পানি,<br />একটা চশমা ছিলো, শেষবার দেশ দেখে যার মালিকের স্বরে বন্দিত হয়েছেন রঘুপতি রাম,<br /> গোল গোল ফ্রেম আর সরু ডাঁটিওলা, তোমরা দেখেছো কেউ, সময়ের গোলমালে কই হারালাম?</p>
<br /><p>আর একটা চশমার কাঁচটা অমনই গোল, ডাঁটিটা একটু মোটা, একটু বাহারী,<br />ভাসা ভাসা দুই চোখে স্বপ্নের পাকা বাসা , একদিন স্বাধীনতা আনবেনই বাড়ি,<br />হিন্দু মুসলমান খ্রীস্টান শিখ এক , আজাদ সে ফৌজটাতে যখন কণ্ঠে শুধু হিন্দ যায় শোনা,<br />সেসময় লিগ আর মহাসভা পরস্পরের প্রতি বিষ উগড়িয়ে বলে ইংরেজ প্রভুদের কিছু বলবো না,<br />তাদের উহ্যে রেখে চশমাধারীর ধ্যানে আর ধারণায় ধরা দেয় ধর্মের কাঁটাহীন আগামীর ছবি,<br />কোথায় রেখেছো দেশ সেই চশমাটা, ওটা চোখ থেকে খুলে সেই একই বিভাজনে দেখো কেন সবই?</p>
<br /><p>তিন নম্বর ছিলো বেশ মোটা ফ্রেমওলা, কাঁচ পুরো গোল নয়, ওপরে কিছুটা চ্যাপ্টানো,<br />যাঁদেরকে ছুঁতে মানা ছিলো সে সময়ে, ছায়াকে মাড়িয়ে গেলে ব্রাহ্মণ করে নিতো স্নানও,<br />তাঁদেরই প্রতিভূ সেই চশমা-মালিক। কতিপয় চিতপাবন ব্রাহ্মণ ভেবেছিলো রাখবে দলিতদের দুপায়ের নিচে,<br />যেমন থেকেছে তারা সহস্র বছর ধরে । চশমার অধিকারী আগলে না দাঁড়ালে জানিনা আজ দেশে হতো ঠিক কী যে,<br />অন্তত খাতায় কলমে আজ জাতপাত নেই। তবু গোঁফ রেখে খুন হয় <br />আজকের ভারতেও দলিত তরুণ,<br /> অনার কিলিং ঘটা অতি বাস্তব। সংবিধানও নাকি খুঁজছেন সে চশমা, সন্ধানে নাগরিকও একটু নড়ুন।</p>
<br /><p>অন্ধের কালো ওই চশমাটা সানগ্লাস নয়, ওটা শুধু দেখবার ব্যর্থতা ঢেকে রাখে,<br />ওটাকে ফ্যাশন ভেবে পরতে যেও না, ওতে সব কালোই দেখাবে। চেনা দেশ হারাবে সে বিলাসের ফাঁকে।</p>
<br /><p>তিনখানা চশমা দেশ থেকে হয়েছে উধাও । চুরি করে কারা তুলে রেখেছে তালা মারা কোনো এক আলমারি তাকে।</p>
<br /><p>পাল্লাটা ভেঙে ফেলে তোলপাড় করে খোঁজো। দরকার ফেরা ওরা সকলের নাকে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/iti-gajo/ইতি গজ2022-02-02T15:12:24-05:002023-06-26T17:17:58-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>সূত্র: শরশয্যাশায়ী ভীষ্মের কাছে যুধিষ্ঠিরের রাষ্ট্রশিক্ষা।</p>
<br /><p> । ইতি গজ। </p>
<br /><p>তাড়াতাড়ি যাও ধর্মের রাজা, জানোই তো উনি মৃত্যুশয্যায়,<br />আর কয়েকটা দিন মোটে, তারপরে শেষ হবে এক অধ্যায়,<br />এ সময়ে শিখে নাও রাষ্ট্রের নানাবিধ কৌশলী খেলা,<br />আহা তুমি রাজা আজ, সামলাতে হবে কত ফালতু ঝামেলা,<br />গতায়ু বৃদ্ধের থেকে শেষ উপদেশ কিছু নিলেই বা, ক্ষতি কি,<br />জনগণ বুঝবে না তোমার এই দেখা করা ঢংটা প্রতীকি,<br />তারা ভেবে নেবে ঠিক তোমার যা শেখবার, সব নিলে শুষে,<br />কে আর দেখতে যাবে কখানা পেরেক ঠোকো জনতার রোজ বওয়া ক্রুশে?</p>
<br /><p>ভেবে দেখো হে ধর্মের রাজা, ওই বৃদ্ধের কোলে খেলে হলে বড় ,<br />তবু তো বিঁধেছো বাণে , শিখণ্ডী খাড়া করে কি উপায়ে লড়ো,<br />সেটা বড় কথা নয়, মোদ্দা কথাটা হলো তুমি গেছো যুদ্ধটা জিতে,<br />শরবিদ্ধ হয়ে বৃদ্ধ শায়িত আজ, তোমার প্রাসাদ ওঠে ওঁর গড়া ভিতে,<br />সে কথা ভুলিয়ে দিতে তড়িঘড়ি যাও বোসো বুড়োটার কাছে,<br />সাক্ষী প্রচুর রেখো, সংবাদ যাক চলে আনাচে কানাচে,<br />যদ্যপি হত্যাকারী, তবুও তুমিই ওঁর একমেবাদ্বিতীয়ম উত্তরসূরী,<br />প্রচার তো তোমার হাতেই। সত্য লুকাতে পারে কৌশলে পুরোপুরি,<br />সেসব তোমার জানা , সেই যে হত হেঁকে ইতি গজ ফিসফিসে বলা,<br />রাষ্ট্রের প্রথমপাঠ আদতে সেটাই! রাজা তো হতে না বাপু বিনা সেই ছলা!</p>
<br /><p>সময় আসছে কমে, শিগগির যাও ওই তিরে বেঁধা জ্ঞানীর সকাশে,<br />উনি শেখাবেন জানি প্রজার বিপদ হলে রাজা যেন থাকে তার পাশে,<br />দেশে মারী এলে তোমার প্রাসাদ গড়া থামাবে কি চালু রেখে দেবে,<br />সেই আলোচনাখানা অবশ্য হবে না। তোমাকেও তাঁর মতো ভেবে<br />উনি বলবেন অনাবশ্যক বোঝা চাপিও না কর বলে প্রজাদের কাঁধে,<br />তুমি কান দেবে কেন, সকলে শুল্ক দেবে কতিপয় অমাত্য বাদে,<br />সেভাবে চালাতে থাকো দেশ । দেবেন প্রাচীন জ্ঞান ওই মৃতপ্রায়,<br />যোগ্য ও জ্ঞানী যেন রাষ্ট্রের কাছে যথাযথ মান আর মর্যাদা পায়, <br />তুমি শুনো শুধু । যোগ্যতা ও জ্ঞান সংজ্ঞাটা ঠিক করা তোমার ওপরে,<br />সে চাকায় তেল দিও, তোমার রথের গতি ক্রমাগত দ্রততর হয় যার জোরে। </p>
<br /><p>যাও ধর্মের রাজা, তাড়াতাড়ি যাও, শুনে এসো রাষ্ট্রের সুশাসন মন্ত্র,<br />বৃদ্ধের আয়ু শেষ , তবু তিনি চান যে শেখাতে। শিখবে না সে কথা স্বতন্ত্র,<br />তবু ভান করো । কটা দিন পরে আর সুযোগ পাবে না । </p>
<br /><p>দেশরূপী দেহখানা ত্যাগ করবেন ওই তিরে শোওয়া বুড়ো গণতন্ত্র।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/bandhan/বাঁধন2022-02-01T07:38:01-05:002023-06-26T17:15:38-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। বাঁধন।</p>
<br /><p>ব্যাস ভারী ঢেকে চেপে বর্ণনা দেন ।চোখের আলোকে কাড়া এই বস্ত্র,<br />স্বামীর সোহাগে ডগমগ প্রেমঅভিজ্ঞান নয়, ওটা ভয়ানক অস্ত্র,<br /> যুদ্ধ করার মতো অনুগত সেনা নেই, সাথী নেই কষ্টকে ভাগ করবার,<br /> সুখের ছদ্মবেশে এই অভিসম্পাতে আর তো আয়ুধ কিছু নেই লড়বার,<br /> চোখের এই বাঁধনেই জমা রাগ ক্ষোভ ঘৃণা দ্বেষ প্রতিশোধ-ইচ্ছারা সব,<br />আশাকে বাঁচিয়ে রাখা একদিন এ বাঁধন ধ্বংস জাগাবে, বলি হবে যাবতীয় কুরু পাণ্ডব,<br /> বিনষ্ট হবে স্বামীশ্বশুরকুলে সব পুরুষেরা , যারা বেঁচে যাবে,জীবন্ত শব হবে ভেতরে ভেতরে, <br /> তোমরা দেখেছো শুধু বস্ত্রাবৃত চোখ, বোঝোনি প্রলয় বেঁধে রেখেছি কোচড়ে। </p>
<br /><p>শুরু থেকে দেখো। মহাপরাক্রমী রাজ্য হস্তিনাপুর, তাঁরা কিনা বেছে নেন ক্ষুদ্র গান্ধার,<br />প্রার্থী স্বয়ং ভীষ্ম, তাঁকে না করবার সাহস বা ক্ষমতা যে ছিলো না পিতার,<br />বলাই বাহুল্য। নেপথ্যে ছিলো শুধু এক বহুশ্রুত রটনা , একশো সন্তানের বর পাওয়া নাকি আমি,<br />রূপ নয় , গুণ নয়, স্বপ্ন বা ইচ্ছার মর্যাদাদান নয়, কুরুর গর্বের কাছে গর্ভটি দামী,<br />ব্যাসবীজ একবার রক্ষা করেছে বটে, তবু তাতে উৎপন্ন পুত্রেরা অসম্পূর্ণ , জানে সকলেই,<br />পরবর্তী প্রজন্মে বহু পুত্র হলে , সিংহাসনের আর সেরকম বিপদের সম্ভাবনা নেই, <br /> সেই পুত্রেষ্টি চাহিদার বলি হলো গান্ধাররাজার দুহিতা, শুধু তার জরায়ু শতসন্তানক্ষম বলে,<br />আমি তাই বেঁধে নিই আমার দুচোখ। দর্পণহীন মন যদি সেই শরীরের অপমান ভোলে। </p>
<br /><p>ভোলেনি। ভোলেনি মন একখানা দিনও, ভোলাবার মতো প্রেম দিলেন কখন সেই জন্মান্ধ পতি,<br />তাঁর শুধু একটাই লক্ষ্য তখন, পাণ্ডুর আগে যেন পিতা হন তিনি।<br />প্রেমহীন সঙ্গম বিনা সম্মতি,<br />তোমাদের কলিকালে বিবাহে ঘটে না বুঝি? মুক্তির উপায় শুধু দ্রুত হয়ে পড়া গর্ভিণী,<br />এখানেও ব্যত্যয় নেই । পরবর্তী সিংহাসন নিশ্চিত ভেবে, বৈশ্য দাসী সম্ভোগে মন দেন তিনি। <br />তারপরে সুসংবাদ এলো, কুন্তীর কোল আলো করেছে যুধিষ্ঠির। স্বামীটি নিতান্ত হতাশ,<br />সে সুযোগ নিয়ে আমি উদরে আঘাত করি। গর্ভপাত হলে হতো আমার স্বামীর বংশ মূলেই বিনাশ,<br />সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি যদিও। মহামুনি ব্যাসের কৃপায় সেই মাংসখণ্ডের থেকে হলো কৌরব,<br />কুরুর প্রাসাদ জুড়ে সে কি উৎসব সেইদিন! জন্মদাত্রী শুধু গরবিনী <br />নয় , বরঞ্চ বুকে দাউ জ্বলে রৌরব।</p>
<br /><p>ব্যাসের পাঠককুল এতই ব্যস্ত থাকে বীরকাহিনীতে, নারীদের প্রতিবাদ এড়ায় সহজে,<br />এই গান্ধারী কেন স্নেহ বুকে পিষে পুত্রদের মুখ দেখতে বাঁধন খোলেনি, কে কারণ খোঁজে,<br />ধরে নেওয়া হয় এই পতিব্রতাটি করে গেছে কর্তব্যপালন তার দৃঢ় শপথে,<br />বোঝাননি মহাভারতকার, দেখতে চাইনি আমি কুরুঔরসজাত কোনো পুরুষের মুখ কোনোমতে,<br />যে বংশ আমার জীবন জুড়ে নামিয়েছে চির-অন্ধকার। ব্যাস যেটা লেখেননি এইখানে ঠিক হবে বলা,<br />দেখেছি অবশ্য আমি একজনকে, চুপিচুপি বাঁধন সরিয়ে।আহা ভারী রূপবতী আমার দুঃশলা,<br />জননীর যত প্রেম সবটাই তার। বাকি গর্ভজাতরা বৈরী আমার,<br />বরং দিয়েছি ঠেলে স্নেহহীন ধ্বংসের দিকে,<br />কেন জানিনা কেউ প্রশ্ন করেনি দুই সহস্র বছরে , দুর্যোধনের এত কাছাকাছি এনে দিলো কে শকুনিকে।</p>
<br /><p>আজকে যু্দ্ধ শেষে কানে আসে শুধু কুরুনারীর বিলাপ। স্বামীর পুত্র সেই দাসীগর্ভজাত যদিও জীবিত,<br />সে কখনো বসবে না ওই সিংহাসনে। উত্তরার গর্ভস্থ সন্তান কবে হবে,<br />সেই অনাগততেই এ রাষ্ট্র ধৃত।</p>
<br /><p>কাজ শেষ হয়েছে আমার। বেঁচে থাকা সন্তানহারা কুরুবৃদ্ধটি আজ চাইছেন যেতে উপায়হীন বাণপ্রস্থে,<br />আমিও সঙ্গী হবো , ওই শোক প্রতিশোধ কোনো এক কিশোরীর, যার স্বপ্নরা প্রভাতেই গিয়েছিলো অস্তে। </p>
<br /><p>চোখের বাঁধনটাকে কাব্যিক প্রেম ভেবো না। কুরুর বিনাশ শুরু ওই এতটুকু প্রতিবাদী বস্ত্রে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/aadiporbo/আদিপর্ব2022-01-18T04:28:10-05:002023-06-26T17:14:28-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। আদিপর্ব। </p>
<br /><p>আইনকে জন্মান্ধ বানালেন রাষ্ট্রের জন্মদাতারা। <br />তিনি দেখতে পাবেন না, ধনী গরীব হিন্দু ইসলামী, দলিত উচ্চ বা নারী পুরুষ,<br />অতঃপর, তাঁরই হস্তে ধৃত করালেন রাষ্ট্রকে তারা, <br />ভাবলেন , যে দেখেনা, তার বাকি ইন্দ্রিয় সজাগ থাকে। সুবিচার ঠিক পাবে দেশের মানুষ।</p>
<br /><p>অন্ধ অভিভাবক যাতে একা না হন , সেটাও দেখতে হবে । <br />নানা দেশ খুঁজে জন্মদাতারা নিয়ে এলেন সর্বগুণান্বিতা শ্রেষ্ঠতমা সংবিধানকে,<br />আইনের সাথে রাজ্য সামলাবেন তিনি ।দেশ পৌঁছাবে আবার অতীতের গৌরবে,<br />সেই আশায় দুজনের গাঁটছড়া বাঁধা হলো। পার্টিশনের লাশেরা রইলেন নীরব সাক্ষ্যে। </p>
<br /><p>চক্ষুষ্মতী সংবিধান আইনের অন্ধত্বকে আরো মান্যতা দিতে চাইলেন সাথী হিসেবে,<br />তাঁর মনে হলো, সেটা প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং প্রজাপালনের জন্য আবশ্যক । <br />অনুরাগিনী ভাবলেন , তাঁর দৃষ্টি চারদিকে গেলে হয়তো বা বিপরীত মতের জন্ম দেবে,<br />তাই সেরকম কিছু না দেখতে মিশকালো রুমালে তিনি বেঁধে নিলেন চোখ।</p>
<br /><p>এই ঘটনার থেকে বহুদূরে, নিতান্ত সাধারণভাবে বড় হয়ে উঠছিলেন সমানাধিকার।<br />তার পিঠোপিঠি ভাই পেট-ভরা-ভাত ও সব-হাতে-কাজ , আরেকটু ছোটো শিক্ষা আর মূল্যবোধ ,<br />প্রজারা জানতেন এই পাঁচ ভাই আগামী প্রজন্মে হবেন দেশের শাসনের মূল অংশীদার,<br />যেটা জানতেন না , সেটা এই, সেই আরোহন খুব সহজে হবে না। পদে পদে বাধা দেবে নানান বিপদ।</p>
<br /><p>ওদিকে প্রাসাদে তখন যুবরাজ দুর্নীতি নেতৃত্বের ভার নিচ্ছেন, তাঁর ভাই ধর্মান্ধতাকে নিয়ে।<br />একশো ভাইয়ের নাম মনে রাখা সম্ভব নয়, কেউ ভোটের-জন্য-কোটা , কেউ ধনীর-জন্য- সব,<br />মোটমাট এদেরই দখলে গেছে রাজার প্রাসাদ। আইন ও সংবিধানকে তাঁরা রেখেছেন পুতুল বানিয়ে,<br />তাঁরা তো দেখতে পান না । শোকার্ত চিৎকারে তাদের বোঝানো হয়, ওটা উৎসব। </p>
<br /><p>কোনো এক সম্ভাবনায় গর্ভিণী সন্ধ্যায়, পাঁচ ভাই এসে দাঁড়ালেন রাজার প্রাসাদে,<br />আইন জানেন এঁরাই দেশের উত্তরাধিকারী, সংবিধান জানেন এঁদের অধিকার স্বীকৃত,<br />তবু তাঁরা দ্বিধাগ্রস্ত। তাঁদের বোঝানো আছে, আর কেউ আগামীর রাজা নয় দুর্নীতি বাদে,<br />তাঁর স্তাবক ও বন্ধুদের মুখে শুধু গুণগান শুনেছেন। বাস্তব বিকৃত আর বিক্রীত। </p>
<br /><p>এইবারে কী হবে? কে জয়ী হবে এই আসন্ন সংঘাতে? মাফ করবেন, আমি নই ত্রিকালদর্শী ব্যাসদেব ,<br />অধম শুধু বর্তমানকে জানে। যদিও আইন দৃষ্টিহীন, সংবিধান তো নন, তাঁর ইচ্ছাধীন খোলা চোখ, <br />হয়তো তিনি দেখতে পাবেন প্রজারা ওই পাঁচ ভাইকেই চাইছেন, উল্টিয়ে যাবে তবে একশো ভাইয়ের করা তাবত হিসেব,<br />অথবা এ কাহিনী প্রচলিত মহাকাব্য অনুসারী হবে । অন্তিম হবে তার সর্বনাশক। </p>
<br /><p>বাসুদেব? এ সময়ে উহ্যতে রেখে দিই তাঁকে। সব ঋজু শিরদাঁড়া শ্রীকৃষ্ণ হোক। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/daag/দাগ2022-01-14T14:49:10-05:002023-08-13T04:37:38-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। দাগ। </p>
<br /><p>মেয়েটার গায়ে সাদা দাগ। পরিভাষা বলে ভিটিলিগো। <br />পড়শীরা ঠারেঠোরে বলে, কোনোদিনও বিয়ে হবে কি গো?<br />কেউ কেউ আবছা না অত, ঠোঁটকাটা কথা বসে কেটে,<br />এই মেয়ের বিয়ে দিতে হলে, মালকড়ি রেখো হে পকেটে।</p>
<br /><p>মেয়েটা ছোটোর থেকে শোনে, চামড়াটা ওর বড় খুঁত,<br />আর কিছু দেখবে না কেন, সে ভাবনা ভারী অদ্ভুত। <br /> তবু সেটা বড় বাস্তব, সেই মেয়েটা পদে পদে বোঝে,<br />চামড়া ও ফিগার পেরিয়ে, নারীতে মানবী কেউ খোঁজে?</p>
<br /><p>তার ওপরে এই দেশে হলে, বিয়েটাই মোক্ষ যে তার,<br />যে মহলে হয়ে যাক যত, মেয়ে স্বাধীন বলে চিৎকার। <br />শেষ অবধি ওখানেই আসে, সামাজিক তাবত নজর,<br />ফিসফিসে আলোচনা চলে, ‘বিয়ে কেন হচ্ছে না ওর?’</p>
<br /><p>মেয়েটার কথাতেই ফিরি, সে জানতো সে-ই ভারী খুঁতো,<br />কোনোখানে যেতে হলে তাই, ঢেকেচেপে চামড়া লুকাতো।<br /> জেনে গেছে সামাজিক স্থিতি, প্রেম নিয়ে ভাবে না বিশেষ,<br />এদিকে সে পড়াশোনা শেষে , চাকরি পেয়েছে ভালো বেশ।</p>
<br /><p>একদিন নিভৃত মুকুরে , প্রতিবিম্বটি বলে তাকে, <br />খুঁত নয়, স্বাতন্ত্র্য এটা, মেনে নাও এবারে আমাকে।<br />লোকে কী বলতে পারে ভেবে , এতদিন যে রূপ লুকালে,<br />এবারে সে প্রকাশিত হোক, দেখো না সে কি আগুন জ্বালে।</p>
<br /><p>সেইমতো মেয়েটা বেরোলো, আর নয় দাগ রাখা ঢেকে,<br />যে যেমন, সেরকমই ঠিক, বহু ঠেকে অবশেষে শেখে।<br />মোটা রোগা সাদা কালো, দেঁতো বেঁটে আর যাই আছে,<br />গর্ব বা লজ্জার নয় , জিন বয়ে ঠাঁই নানা ছাঁচে।</p>
<br /><p>মেয়েটা আলোতে এসে দেখে, শেষ যেই লুকোচুরি খেলা,<br />জীবনের থেকে গেছে মুছে, সামাজিক বিবিধ ঝামেলা ।<br />এখন সে হাতকাটা পরে, ফ্যাশনের যেমন চাহিদা,<br />দাগ কেউ দেখলে দেখুক , মিলমিশে নেই কোনো দ্বিধা।</p>
<br /><p>তোমাদের চুপিচুপি বলি, কানাঘুষো কাহিনীরা বাড়ে,<br />মেয়ের নাকি শীত গেছে কেটে , বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। <br />আয়নাটা রোজ হেসে বলে , কোনকালে তুই জিতে যেতি,<br />সাদা দাগ খুঁত নয় তোর, শুধু যদি আগে টের পেতি। </p>
<br /><p>দাগগুলো প্রেরণা মেয়েটার । পরিভাষা বলে ওকে শ্বেতী।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/sun-re-bhai/শুন রে ভাই2022-01-11T15:18:57-05:002023-06-26T17:23:51-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। শুন রে ভাই। </p>
<br /><p>দাদা হিস্যেবে তুকে কটা কুথা বইলেন যাই রে মান্যুষ!<br />ইদিক উদিক কি দ্যেখছিস,<br />ওই যন্তরটায় চোখ লাগা কেনে টুকুস,<br />ত্যবে তো দ্যেখবি । ওই যে রে, মাইকরস্কোপ, <br />যা দিয়্যে ছোটপারা সব বড় দ্যেখায়, <br />উইটাতে দ্যেখ না কেনে! ওই ত্যো! <br />এইবারে মু কে গ্যেছিস জেনে, <br />চল্লিশ কোটি সাল বড় রে তোর থিক্যে, তবু আজ চ্যিনলি ব্যাটা।<br /> মু করোনা রে, যার জইন্য তোর আজ এত্য ল্যাঠা,<br />রোজ বদনে এত ত্যানা জড়্যাচ্ছিস, <br />তবু জ্বর আটক্যাতে লারছ্যিস!<br />তুরই মতো পক্কিতি মা’য়ের সন্তান, <br />এই দ্যাখ কেনে স্পাইক প্রোটিন, এবার চিনত্যে পারছ্যিস?</p>
<br /><p>দ্যাখ ভাই, তু মু’কে তুর ঘরে ড্যেকে আন্যেছিস। <br />বাদুরের সাথে কত্ত কোটি সাল ঘর ক্যরছি, তুরা সিট্যা কুনোদিন জ্যেনেছিস?<br />ল্যাবরটারি না সখ্যের খানা খ্যেতে গিয়ে দাওয়াতটো দ্যিয়েছিলি,<br />উস্যব খ্যুজ্যে কি হবেক, <br />উবজিয়ে বিপদট্যো তো ঘরেই লিয়ে এল্যি,<br />ওই ত্যোদের ধৃতরাষ্ট্রের মত্যো। <br />ভাইয়ের পাঁচ ব্যাটাকে না আনালে কি আর হত্যো, <br />অত বড় লড়াইটোই বাঁইধতো না, <br />কানার ব্যাটাই তো রাজা হত্যো , নাকি? <br />মুরা তো করি নাই তুদের সাথে কুনো চাল্যাকি,<br />তুরাই তো দ্যিলি দুয়ার খুলে তুদের দুনিয়াতে এনে , <br />এখ্যন যাব্যি কবে যাব্যি কবে বল্যে কান্দিস ক্যেনে? </p>
<br /><p> যাক গে যাক, তুর আর মুর লড়াইটো তো চ্যইলবেই, <br />তবুও বড়দাদা হিস্যাবে তুকে কটা কথা বলে দেই! <br />এই যে এত দ্যেশ দ্যেশ কইরে হেদিয়ে মরছ্যিস তুরা, <br />ইখানে পাঁচিল, উখানে নিয়ম, বল্যি করোনা আটক্যাতে তো তুদের বর্ডার ফেল একদম, তব্যু শিখলিনে বাপ, <br />উ্য সব কালো ধলো হল্যুদ খাঁচা বানায়্যে কুনো লাভ নাই, <br />তুরা সব মুর মতো, ভাগাভাগি হল্যেও আদতে জানোয়ার তো একটাই।<br />তব্যু তুরা যুদ্ধ ক্যরবি, ব্যোম বান্যাবি, <br />গায়ে ব্যোম বেঁধে উড়্যায়ে দিবি লোকজন! <br />সব ধন একজোট হল্যে , আমাদ্যের ওষ্যুধ বান্যাতে লাগত্য বল কতখন!</p>
<br /><p> আর ওই ধম্মো! বাপ রে বাপ, এত্য ভিড় কইরে তুরা কি পাস?<br />জান্যিস তো সুবাই ভিড় হল্যে ঝাপ্যে আসব্যে করোনাভাইরাস,<br />মুর নাম বল্যে বল্যে ডাক্তারগুলা <br />যে গব্বর সিংয়ের মত্যো ডরাচ্ছে, <br />পরব আর ম্যেলা এল্যেই <br />সেই সব জ্ঞানগুল্যা তো বানের জল্যে ভেস্যে যাচ্ছ্যে! <br />তোদ্যের হিঁদু খ্যেলোম, <br />মোল্লা খ্যেলোম,<br /> কেরেস্তান খেল্যোম. তব্যু তুরা বুঝল্যি না ভাই, <br />এট্যা তুদের সবাকার, <br />এই দুনিয়াজ্যোড়া এত্ত কোটি মানুষের সুব্বার লড়াই?</p>
<br /><p> তুদের ধরবার লেগ্যে মু ত্যো বারবার বদল্যাচ্ছি , <br />উই মিউটেশন না কি বল্যিস না , <br />তাই ক্যরছি আর তুদেরকে খাচ্ছি, <br />তো তুরা কেন বদলাইতে লারছ্যিস রে ভাই? <br />ইট্যো আর লড়াই কুথ্যায়, যখ্যন ইচ্ছা হয় তখন্যি তো মু জিত্যে যাই! বদল্যে যা রে মুর চল্লিশ কোটি সালের ছুট্য ভাই ,<br /> মু ভালো কথাটো বলছ্যি, শোন। <br />হিঁদু মোল্লা কেরেস্তান থিক্যে, <br />সাদ্যা কাল্যো হল্যুদ থিক্যে, <br />এশিয়া আফ্রিকা ইউরোপ থিক্যে এবার কর মিউটেশন, <br />সব্বাই বদলে মান্যুষ হ আবার বাপধন। </p>
<br /><p>তুদের ওই ভীষ্মের মত্যো মুও বল্যে দিল্যাম, <br />মুএর মরণ হব্যে শুধ্যই তখ্যন।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/shoytan/শয়তান2022-01-09T10:55:12-05:002023-06-26T17:23:36-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। শয়তান। </p>
<br /><p>রাস্তায় গণধোলাই খাওয়া অচেনা কিশোরকে<br />  যে লোকটা বেধড়ক মেরে সবকটা পাঁজর ভেঙে দিয়ে গেলো,<br />সে কোনো ঘাঘু ক্রিমিনাল নয়।<br /> বাড়ি ফিরে সে তার সন্তানকে কোলে নেবে,<br />বৌয়ের মুখঝামটায় মুখ চুন করে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে,<br />কাজের জায়গায় নিয়মিত সে ঊর্ধ্বতনের গালি খায়। </p>
<br /><p>অথচ ওই কিশোরকে  থেঁতলে দেওয়ার দেওয়ার সময়<br /> তার চোখে ছিলো খ্যাপা হাতির হিংস্রতা,<br />প্রতি মারে গুটিয়ে থাকা শরীরটা আরো যখন কঁকিয়ে উঠছিলো ক্ষীণকন্ঠে, <br />মুমূর্ষুর শেষ উচ্চারণ  তার মনে জন্ম দিচ্ছিলো উল্লাসের। </p>
<br /><p>লোকটার নাম কোনো থানা জানে না,<br /> লোকটা কোনোদিন ওর বউয়ের গায়ে হাত তোলেনি,<br />  পড়শির সাথে কথা কাটাকাটি হয়তো হয়েছে, লাঠালাঠি নয়, <br />কাজের জায়গায় ধর্মঘট হলে <br />লোকটা ঝামেলায় না থেকে বাড়ি চলে আসে ।<br />তবু সে ওই কিশোরের হত্যার প্রধান জল্লাদ হলো কি করে? </p>
<br /><p>আসলে ওকে বলা হয়েছিলো সগৌরব উন্মত্ত গণকন্ঠস্বরে,<br /> ওই কিশোরটি চোর।<br /> অথবা ধর্ষক । <br />অথবা ওর ঈশ্বরের অবমাননাকারী ।<br /> মোটকথা, ওই সকলের মার খাওয়া কাতরানো ক্লিন্ন দেহটার নাম নেই, <br />মা বাপ পরিজন নেই,<br />বাঁচার অধিকার নেই,<br />ও মরে গেলে লাভ হবে সমাজের, দেশের বা ঈশ্বরের। </p>
<br /><p>এরকম লাভ হলে হত্যারা বলির পুণ্য হয়ে যায়,  <br /> ভালো কাজের ছদ্মবেশে আদিম হিংস্রতা জেগে ওঠে।<br />ওই কিশোরকে লোকটা আর দেখতে পায় না, সে মারে। <br />সে মেরে পাঁজর ভাঙে সেই বাইকআরোহী দুর্বৃত্তদের , <br />যারা তার  বৌ বোন মেয়েকে মাঝরাস্তায় ভুল ছুঁয়েছিলো। <br />সে দুমড়ে মুচড়ে দেয় সেই ডাকাতের দলটাকে, <br />যারা ছোটোবেলায় তার বাবার সর্বস্ব লুটে নিয়েছিলো,<br />সে মারে ওর উপাসনালয় ভাঙা বিধর্মীদের, <br />অন্য দেশে বা রাষ্ট্রের সুনজরে থাকার জন্য <br />যাদের কেশাগ্র স্পর্শ করা যায়নি। <br />সে মারে। <br />সে মারে । <br />সে শুধু মারে। </p>
<br /><p>পুণ্যের লোভ দিয়ে শয়তান বাসা বাঁধে তার ব্যবহারে।  </p>
<br /><p>মানুষ? প্রতি গণহত্যায় নিজের কাছেই সে গোহারান হারে। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/firie-dileo/ফিরিয়ে দিলেও2022-01-04T16:37:46-05:002023-06-26T17:17:27-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ফিরিয়ে দিলেও । </p>
<br /><p>কেউ ভালোবাসলে, ফিরে যদি তাকে ভালো নাও বাসো, দায়িত্ব এসে যায়। <br />মিঠে হও, কড়া হও , তাই বলে রূঢ় অশিষ্ট হয়ে সম্মান তার যেন নষ্ট কোরো না,<br />এত কোটি ভিড়ে কেউ তোমাকে বাছলো যদি,  তোমায় দেখতে হবে যেন সেও না ভেসে যায়, <br />প্রেম বড় দুর্লভ সহজাত ছয়খানা রিপুদের বনে, কজন জীবনে পায় সেটা হাতে গোনা। </p>
<br /><p>তাই বলে যত লোকে ভালোবাসি বলে, সকলেই সত্যি বলে না , জেনে বা না জেনে, <br />বহু লোকে জ্যোৎস্নার ফাঁদে পড়ে  চাঁদ পেতে চায়, অমাবস্যার কথা বেমালুম ভোলে, <br />চাঁদের আঁধার দিক , খন্দ ও খানাময় কলঙ্ক ভালোভাবে কজন আর চেনে,<br />সেটাও দেখতে হবে, গ্রহণ দেখতে পেলে কাদের প্রেমের ম্যাপ গোলায় ভূগোলে। </p>
<br /><p>শরীরকে ছেঁটে দিলে আবেগেরা বেশি যায় নালা দিয়ে বয়ে, রূপে আর রঙে কাম প্রেম বলে চলে,<br />ভালোবাসা নিবেদন হরমোনে যতটা চোবানো, নিকষিত হেমময় মনে তত নয়,<br />বহু প্রেম হাতকড়া হতে চায়,  শরীরের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিতে চায় নিজের দখলে,<br />আংশিকে পাঁচসিকে ভেবে নিয়ে মনটাকে ফাউ ভাবে অনেক সময়। </p>
<br /><p>সেই সব পার করে তবু কিছু ভালোবাসা ডানা মেলে উড়ে আসে ভ্রান্ত আকাশে,<br />যেখানে বসন্ত ঋতু বন্ধকে  দেওয়া আছে আর কারো কাছে, ঋণখেলাপেরও নেই সম্ভাবনা, <br />তেমন ভাগ্য হলে ফিরিয়ে তো দিতে হবে, সব গল্পেই কি কুশীলব হাসে,<br />তবু কিছু দায়িত্ব থেকে যায় । অপমান নয় তাকে, সম্মান দিয়ে বলো <br /> ওভাবে ভাবো না। </p>
<br /><p>তারপরে একেবারে সরে যেও । কখনো কোরো না তার নামে আলোচনা।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/naposhak/না-পোশাক2021-12-20T18:08:50-05:002023-06-26T17:19:39-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। না-পোশাক। </p>
<br /><p>কাজের থেকে ফেরার পথ আটকে একটা মিছিল যাচ্ছিলো ।<br /> ‘ ভোট দিন , ভোট দিন, আমাদের চিহ্নে ভোট দিন!’<br />উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো,<br />এ আবার কি! স্বনামধন্য প্রার্থীটি যে একেবারে বস্ত্রহীন!<br />প্রথমে ভাবলাম ভুল দেখছি। চোখ কচলে আবার দেখলাম,<br />নাহ! একেবারে ঠিক। জন্মদিনের পোশাকে একেবারে উদোম উনি,<br />আমার কাছে এসে গদগদস্বরে বললেন মনে রাখবেন আমি অত নম্বর বোতাম,<br />টিপে দিলেই ব্যাস! পাঁচটা বছর নির্বাচন থেকে মুক্তি তক্ষুনি!<br />আমি সেলাম করে বললাম সে নয় বুঝলাম, কিন্তু এইভাবে কেন?<br />নেতা  হাঁ করে ঝাড়া পাঁচমিনিট তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে,<br />তারপর জিভ হাল্কা বের করে বললেন, ন্যাকা! জানেননা যেন,<br />এটা না-পোশাক। রাজাদের ইস্টাইল, এখন মিলছে প্রিন্ট গণতান্ত্রিকে। </p>
<br /><p>মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাড়ি ফিরছি, হঠাৎ দেখি হুটোপাটি হচ্ছে ভীষণ ,<br />একদল ছোকরা এসে  কমজোরি পার্টিদের পতাকা নিচ্ছে খুলে,<br />হরণের  নিপুণতা দেখে রীতিমতো সন্দেহ হয় ওদের কোচ নির্ঘাত দুঃশাসন,<br />মানে এভাবে নির্বলকে বেআব্রু করার  তিনিই তো আদতে মূলে,<br />তাই আর কি ।মজার ব্যাপার হলো,  যদিও ওয়ান শটার, লাঠি ছুরি ইত্যাদি আছে ,<br />কিন্তু ওসব ছাড়া ছেলেগুলো ন্যাংটো। ওদের মধ্যে একজন আধাচেনা বেরোলো,<br />তার দিকে দাঁত কেলিয়ে বললাম ‘ভালো?’ দেখছি না-পোশাক পরেছো নেতার ধাঁচে,<br />আজকাল ইস্টাইল বুঝি এটাই?’ ‘শুধু জেতা পার্টির দাদা’’, ছেলেটা বোঝালো, <br />‘হেরে গেলেই গায়ে পোশাক চড়াতে হবে।’ আমি বললাম, কিন্তু ভোট তো এখনো..<br />একটা উলঙ্গ  ছেলে অমনি  ধমক দিয়ে বললো, ফুটুন তো মশাই! ভোটের দিন দাঁড়াবেন লাইনে ,<br />তার বেশি আর চিন্তা করেন কেন! আমরা চাইলে এখন থেকে বলে দিতে পারি মার্জিনও,<br />কিন্তু গণতন্ত্র বলে একটা ব্যাপার আছে না! আমাদের ভীষণ আস্থা সং-বিধান আর আইনে। </p>
<br /><p>অতগুলো পোশাক না পরা মানুষ দেখে মাথা ঘুরছিলো বোঁ বোঁ করে। <br />একটা গলি ধরে বাড়ির দিকে শর্টকাট করতে যেতেই, আরেকটা মিছিল, একেবারে সামনেই। <br />এখানে প্রার্থীর পোশাক পরা দেখে বুঝলাম, এরা শুধু ‘ভাটকতে হুয়ে আতমা’ হয়ে ঘোরে,<br />জয়ের মুখ দেখেনি এখনো , সম্ভাবনাও কম । গণতন্ত্রতে এমন দলের কোনো দাম নেই,<br />কারণ শূন্যকে তো কেনা বা বেচা যায়না। বলতে বলতে প্রার্থী আমার কাছে এলেন চলে,<br />তারপর হাতজোড় করে বললেন, আমাদের জিতিয়ে দেখুন দাদা এবারে,<br />কথা দিচ্ছি না-পোশাক বিশ্বময় ফ্যশন করে দেবো । ফালতু ভাববেন না এখন পোশাক পরি বলে,<br />ক্ষমতায় এলে আমাদের দল ওদের থেকে অনেক বেশি উলঙ্গ হতে পারে। </p>
<br /><p>মিছিল সামলে কোনোরকমে বাড়ি ফিরে দেখি, দরজার তালা ভেঙে হয়ে গেছে চুরি,<br />চারদিকে দেশ বাঁচাবার এত মিছিলের ফাঁকে, ছাপোষার ঘরে হলো বিপদের হানা,<br />সব ফাঁকা হয়ে গেছে। ব্যাঙের আধুলি সব কাঁচিয়ে নিয়েছে, গিয়েছে বিয়েতে পাওয়া আংটি ও ঘড়ি,<br />আর গেছে আলমারি থেকে সব কাপড় ও জামা। এবারে করবো কি যে সেটা অজানা।</p>
<br /><p>অভাগার না-পোশাক তবুও হবে না। বাথরুমে ঝুলে আছে গামছা দুখানা। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/namkaran-2/নামকরন ২2021-12-10T11:34:48-05:002023-06-26T17:19:37-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। নামকরন। </p>
<br /><p>বাড়ির পাশের কৃষ্ণচূড়াটাকে যদি পিঙ্কিদিদি বলে ডাকি ,<br /> কেমন হয়? <br /> একটু এগোলেই একটা সিড়িঙ্গে বছরবিউনি শিউলি গাছ, <br /> ওকে যদি বাসন্তীমাসি বলি?<br /> চায়ের দোকানের গা ঘেঁষে ওঠা পলাশগাছটাকে <br />লালমোহনবাবু ডাকলে তুমি কি পাগল ভাববে?<br />আসলে, বরাবর দেখে আসছি, <br />নামহীন হলে কোনো আবেগ থাকেনা। <br />পাড়ার খোঁড়া কালো কুকুরটাকে যারা ভুলু নামে চেনে, <br />তারাই তাকে বিস্কুট কিনে দেয়,<br />গলিতে আগন্তুক কোনো ওলা বা বাইকের কাছে <br />সে মূর্তিমান আপদ। </p>
<br /><p>গাছেদের আমরা গাছ বলেই চিনি।<br /> মোড়ের মাথার বড় অশ্বত্থ,<br />বাজারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা একলা রাধাচূড়া <br />বা মর্নিং ওয়াকে গিয়ে চেরা পাতা দেখে চেনা কাঞ্চনগাছটা, <br />রোজ দেখা হকার বা ভিখিরির মতো <br />রুটিনের মুখচেনা শুধু,<br />অনেক চেষ্টা করেও যেমন মনে করতে পারো না <br />ভিখিরিটার কোন পা খোঁড়া <br />বা হকারের ঠিক কিসের দোকান,<br />তেমনি ওই গাছগুলোর কেউ ডাল কাটলে <br />অথবা পাতার রঙ বদলালে মনে দাগ কাটে না। <br />এবার ধরো, ওই অশ্বত্থের নাম মনিকাকু, <br />রাধাচূড়াটার নাম সন্দীপ <br />আর কাঞ্চনকে তুমি রুনা বৌদি বলে ডাকো,<br />তাহলে কি ওদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় <br />কেমন আছো বলতে দুদণ্ড দাঁড়াবে না?</p>
<br /><p>হয়তো তোমার বাগান করার সখ । <br />বীজ থেকে বা চারা থেকে<br /> শীতকালে বড় হয় পিটুনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা ডালিয়া গাঁদারা,<br />বর্ষায় রঙবেরঙের দোপাটি। <br />ধরো স্কুলের বাচ্চাদের মতো ওদের এক একটা নাম থাকলো, <br />আর তুমি সকালের জল দেওয়ার সময় রোলকল করতে থাকলে,<br />আত্রেয়ী, অরিত্র, সৌরদীপ, সংহিতা … <br />তাহলে কি তোমার শুধুই ফুলের জন্য অপেক্ষা থাকবে? <br />তুমি কি দেখবে না, আত্রেয়ী আজ একটু মুষড়ে পড়েছে, <br />কিংবা সৌরদীপের কটা পাতায় পোকায় কাটা দাগ?<br />তারও চেয়ে বড় কথা, <br />ঋতু শেষ হয়ে গেলে যখন ওরা বিদায় নেবে একে একে,<br />তোমাকেও কি ভীষণ মনখারাপে ধরবে না?</p>
<br /><p>জানি পাগল ভাবছো , নিদেনপক্ষে খ্যাপাটে তো বটেই। <br />তোমরা গাছেদের বন্ধু বলো, <br />সবুজরক্ষার জন্য বৃক্ষরোপন করো,<br />শুধু নাম দিলেই আপত্তি কেন গা?<br />আসলে নাম দিলে তখন একরাশ দায়িত্ব এসে পড়ে, <br />তখন তো গাছের ডাল কাটা নয়,<br />লালমোহনবাবুর গায়ে হাত তুলেছে কেউ, <br />কিংবা রুনাবৌদিকে কেউ অশ্লীল ইঙ্গিত করেছে।</p>
<br /><p>তুমি জানো, <br />এই ভরা শীতেও বাসন্তী মাসীর তলায় <br />বেশ কটা শিউলি পড়েছিলো কাল? <br />আমি কুড়াতে কুড়াতে আপনমনেই ওর দিকে তাকিয়ে বললাম <br />‘থ্যাংক ইউ’</p>
<br /><p>কি জানি শুনলো কিনা কেউ, <br />তবে ভুলোটা কিন্তু প্রবল ল্যাজ নাড়াচ্ছিলো বন্ধ করে খেঁকুরে ঘেউ,<br />আর সেটা ওই বাসন্তীর দিকেই তাকিয়ে। </p>
<br /><p>বিশ্বাস না হয় , কালকে এ পাড়া ঢুকে দেখে এসো গিয়ে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/harte-sekhao/হারতে শেখাও2021-11-24T14:50:02-05:002023-06-26T17:17:46-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। হারতে শেখাও।</p>
<br /><p>হারতে শিখতে হয়। <br /> জিতবার স্ট্র্যাটেজি সবাই তৈরি করে, <br />কিন্তু সময় যখন পরিস্থিতিকে বৈরী করে, <br />সেই প্রাণপণ চেষ্টার পরে লক্ষ্যে না পৌঁছালে কী করতে হবে,<br />সেটা কজন আর হাতে ধরে শেখাবে!<br />প্রায় কোনো প্ল্যানেই বিফলতাকে একটা সম্ভাবনা বলে ধরা থাকে না,<br />তারপর কী কী হয়, সেই সব কাহিনী তো আমাদের চেনা।<br />হেরো হতাশার কুয়াশা আগামীর পথ দেয় ঢেকে,<br />শূন্যের নিচে থেকে খুব কম লোক ফের ফিরে যেতে শেখে।</p>
<br /><p>ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে শিখে নার্সারির যে বাচ্চাটি স্কুলে গেলো,<br />সেকেন্ড ছাড়ো, ফিফটি নাইনথ হলেও যে সেটা তেমন কিছু নয়,<br />সব্বাই তাকে বলতে ভুলে গেলো। <br />কাজেই পঁচানব্বই পেলে আনন্দ নেই, তিন অংকই একমাত্র সাফল্যের ঠিকানা,<br />আশি বা ষাট পেলে তো সে বেচারির চোদ্দগুষ্টির মুখ খোলা মানা,<br />প্রতি পরীক্ষার পরে, খবরের কাগজে মায়ের হাতে রসগোল্লা খাওয়া কটা ছেলেমেয়েই সুখী,<br />বাকিরা কুরুক্ষেত্রে লড়া অক্ষৌহিনীর মতো বেকার খরচ।<br /> এই রিয়েলিটি শোয়ে হেরে গেলে একশো শতাংশ থাকে হারানোর ঝুঁকি।</p>
<br /><p>যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ আর প্রবাদবাক্য নেই,<br /> এখন কারো ভাগ্যে শাঁস, বাকিদের কপালে আঁশ,<br />অন্তত আশা আর হতাশার নিরিখে। <br />লক্ষ্যচ্যুত হওয়া মানে জীয়ন্ত লাশ,<br />কেউ তাদের বলে দেয় না, পরাজয় স্রেফ এক কষ্টিপাথর,<br />ঘষে সোনা বুঝে গেলে, জীবন দরজা তার খোলে তারপর।<br />না খুললেও, লড়াই ছাড়ার কথা নয়, হেরে যাওয়া আর হারিয়ে যাওয়ার অর্থ আলাদা,<br />সেই কথা শেখায় না কোনো টিউটোরিয়াল।<br />প্রচারে সাফল্য বড় চড়া সুরে বাঁধা।</p>
<br /><p>কে শেখাবে তবে?<br /> হারিয়ে যাওয়ার থেকে হেরে যাওয়াদের বাঁচাবে কে?<br />ষাট পাওয়া ছাত্র, <br />চাকরি না পাওয়া শিক্ষিত, <br />চাকরি খোয়ানো সংসারী, <br />জীবনের পরাজিতরা পালে ফের বাতাস পাবে কোথা থেকে!</p>
<br /><p>কেন , তুমি, আমি, আপনি ও ওই যে কোণার দিকে বসে আছেন , উনিও।</p>
<br /><p>জেতা তো শেখাতে জানে সব্বাই। <br />হারতে কিভাবে হয়, <br />নিজের জীবন থেকে নিংড়ানো সে গল্প <br />এইবারে কাউকে ফেরাতে শুনিও।</p>
<br /><p>কে বলতে পারে, যে বিষাদ ছুরি হাতে তার পিছু ঘোরে,<br />হয়তো মানবে হার সে চেনা খুনীও। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/ora-satjon/ওরা সাতজন2021-11-17T00:58:24-05:002023-06-26T17:19:56-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ওরা সাতজন। </p>
<br /><p>সে কিশোর অন্য দলের, যার সাথে এদলের যুদ্ধ।<br />সে কিশোর অন্য পাড়াতে, যে সময় সকলেই ক্রুদ্ধ।<br />সে কিশোর নিরস্ত্র, ক্লান্ত ও দিশাহীন, হয়তো কিছুটা উদভ্রান্ত,<br />সে কিশোর ফিরে যেতো, শুধু যদি বেরোবার পথটুকু জানতো।<br />এখন ঘিরেছে তাকে বেপাড়াতে এক দুই তিন করে সাতখানা লোক,<br />নিস্তার নেই আর, বিস্তার হিংসার, খুন চায় সাতজোড়া খুনরঙা চোখ।</p>
<br /><p>দুজন প্রবীণ এই অসম হত্যাকাণ্ডে প্রবলের দলে,<br />দুজন প্রবীণ, বস্তুত যাদেরকে দুদিকেরই বলা চলে<br />দুজন প্রবীণ, যারা ওই কিশোরকে জন্মাতে দেখেছেন রীতিমতো,<br />দুজন প্রবীণ, এ সময়ে বিপরীতে কণ্ঠ উঠালে যারা যুগ ভালো হতো,<br />নামে কি বা এসে যায়, কৃপ দ্রোণ, আব্দুল রফিক বা রতন পরান,<br />মোটমাট, দুজন প্রাজ্ঞ লোক, ভিড়ের থাকতে সাথে হন শয়তান।</p>
<br /><p>একজন কিশোরেরই বংশজ বটে, তবে আজ বিপরীতে স্থিতি।<br />একজন ওদলে গিয়েছে চলে বলে, মানে না এ তারই সন্ততি।<br />একজন ভয়ানক রেগে ওর বাপের ওপরে, ক্ষমতার চেনা বিভাজনে,<br />একজন কিশোরের বয়েস দেখে না, ওকেও শত্রু বলে গোনে।<br />কর্ণ বা বিভীষণ, জাফর ঔরঙ্গজেব , হালের পাল্টি খাওয়া নেতা,<br />সকলের ধারণায় হত্যা বিবেচ্য নয়, আসল লক্ষ্য হলো জেতা।</p>
<br /><p>আরো দুইজন স্রেফ বন্ধুস্থানীয়, হোতাদের সাথী নিয়মিত<br />আরো দুইজনই জানে কিশোরের ঘর তার ক্ষতি করেনি তো।<br />আরো দুইজন তবু, নেতা যা নির্দেশ দেন সেটা করে প্রশ্নবিহীন,<br />আরো দুইজন ভারী চেনা সৈনিক,ঝামেলায় দেখা যায় যে কোনোদিন।<br />অশ্বত্থামা কৃতবর্মাই ডাকো, কিংবা দাদা বা দিদির কোনো ভাই,<br />এখানে মগজের ব্যবহার নেই। কিশোর হলো তো কি, হবে হত্যাই।</p>
<br /><p>বাকি দুইজনই শুধু বিরোধীর মৃত্যুপিপাসু, হোক না তা কিশোরের লাশ,<br />বাকি দুইজনই ভাবে শত্রুশিবিরে হওয়া প্রতি শোক আনে উল্লাস। <br />বাকি দুইজন এই ধ্বংসের মূল হোতা, সব হত্যায় আছে সায়,<br />বাকি দুইজন জানে, যে জেতে, ইতিহাসে নেই তার কোনো অন্যায়।<br />শকুনি দুর্যোধন, হিটলার মুসোলিনি, অথবা অন্য কোনো জুটি,<br />যুদ্ধতে জয় পেতে দ্বিধাহীন কাটে তারা যে কোনো কিশোরের টুঁটি।</p>
<br /><p>ওরা জড়ো করে ফেলে গোটা পাঁচ হাতের পুতুল।কাউকে ক্ষমতা দিয়ে , কাউকে বা রুটি।</p>
<br /><p> অভিমন্যুর লাশে অত ক্ষতদাগ দেখে আমরাও নিয়মিত চমকিয়ে উঠি।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/choddota-mombati/চোদ্দটা মোমবাতি2021-11-01T17:46:49-04:002023-06-26T17:16:36-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>।চোদ্দটা মোমবাতি।</p>
<br /><p>চোদ্দটা ভূত খোঁজো চতুর্দশীতে। <br />প্রাক্তন হলো যারা নিরালা নিভৃতে,<br />বিশেষ পুরনো নয়, গায়ে আজও চেনা জীবনের গন্ধ, <br />মরার কারণ সেই করোনার চেনা ঘোষ নন্দ,<br />সেরকম চোদ্দটা ভূত খুঁজি চলো, <br />বিবেক নাড়িয়ে গেছে যাদের মরণ,<br />চোদ্দটা মোম দিয়ে জীবিতরা একদিন করুক স্মরণ। </p>
<br /><p>এক নম্বরে নাও জামলোর নাম।<br /> ভুলে গেছো জানি তাকে, ফের তুললাম,<br />লঙ্কার ক্ষেত থেকে হেঁটে বাড়ি ফেরেনি দ্বাদশী,<br />অন্ত্যজ মানুষেরা সুমারির ফাউ, তাই তার মৃত্যুতে কেউ নয় দোষী।<br />যে ভারত মরে গেলে কেউ কাঁদেনা, <br />তাদের প্রতিনিধি ছিলো সে বালিকা,<br />একখানা মোম দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা কোরো।<br /> জানি পাপ পোড়াবে না শিখা।</p>
<br /><p>দুই নম্বরে থাক খুনে লাল রুটির ভুখারি।<br />রেল চলে গিয়েছিলো যাদের ওপরে, শ্রমিকের সেই শব-সারি,<br />এগারো জনের নাম কেউ জানেনা, <br />নাকি জানে মুখে আনে না?<br />লকডাউন হোক বা না হোক, লাইনে চলতে পারে ট্রেন,<br />সারাদিন হেঁটে যারা ক্লান্তিতে সেটা ভুলেছেন, <br />সে বোকার খেসারত দেশ কেন দেবে?<br /> মোমবাতি থাক তাই না মেটা হিসেবে।</p>
<br /><p>তিন নম্বরে  চেনামুখ ডাক্তার কেউ। <br />কেড়ে নিয়ে গেছে যাকে জ্বরের  সুনামি ঢেউ,<br /> টিকা পেয়ে বা না পেয়ে গিয়েছিলো লড়তে যে রাষ্ট্রের বোড়ে। আদতে যোদ্ধা নয়, তবুও সে নিধিরাম গিয়েছিলো প্রাণপণ লড়ে, যদিও অন্তিমকালে বুঝেছিলো কেউ নেই সাথে, <br />সঞ্চয় শেষ হলো বাঁচবার চেষ্টা চালাতে, <br />পরিবার কিছু পাবে সেই আশা আজও মরীচিকা।<br /> তার নামে জ্বেলো এক মোমবাতি-শিখা। </p>
<br /><p>চার নম্বর মোম পাক সেই লাশ, <br />জীবিততে পায়নি যে শ্বাসের বাতাস।<br /> চারদিকে হাহাকার, অক্সিজেন নেই কোনো সিলিন্ডারে, <br />মৃতদের থেকে নল জীবিতরা কাড়ে, <br />শুধু গুঁজে দিতে শেষ শ্বাস তখনও লড়াই করা প্রিয় ফুসফুসে, <br />এইভাবে এর আগে মরেনি মানুষে। <br />জীয়ন্তে অক্ষম দেশ দিতে দম,<br />চলো তাকে মোম দিই, স্মৃতি দিক ওম। </p>
<br /><p>পাঁচে থাক সেই পরিবার, <br />রোজগার যার হলো কোভিড-শিকার।<br />কিছুদিন চেয়েচিন্তে চলে, একদা স্বচ্ছলতায় হাত পাতা মানা,<br />এই দেশে যে কোনো প্রদেশে আছে ছড়িয়ে ঠিকানা।<br />একদিন বুঝেছিলো, আর কিছু নেই বেচবারও, <br />আগামীর অন্ধকার আরো বেশি গাঢ়,<br /> সুতরাং মা বাবা অনায়াস লাশ হয়ে গেছে সম্তান মেরে । <br />সেই মৃত মোম পাক, আয়নায় ওরাই তো তুমি আমি যে রে। </p>
<br /><p>ছয়ে সেই জলে ভেজা লাশ, <br />গঙ্গার বুকে যার একলা সফর।<br />কোনো এক কালে তার নামপরিচয় ছিলো,আর ছিলো থিতু ঘর, বেমালুম মুছে গেছে মারীতে সুমারী থেকে। <br />মোম ছাড়া ওকে আর মনে রাখবে কে?</p>
<br /><p>সাতে কোনো ধার্মিক, পুণ্যের খোঁজে যার যাওয়া জমায়েতে,<br />রাষ্ট্রই দোর খুলে ভোটের তাগিদে তাকে দিয়েছিলো যেতে, <br /> মৌলবী পুরোহিতে হাত তুলে বলেছিলো  হবেনা কিছুই ।<br />সত্যিই হয়নি কিছু,<br />বেঁচে আছে যাবতীয় বোয়াল ও রুই, <br />শুধু কিছু চুনোপুঁটি নিয়ে গেছে ভাইরাসে। <br />কতটা পুণ্য নিয়ে গেছে ওইপাশে,<br /> সে হিসেব এখন আর কোত্থেকে পাই, <br />তার চেয়ে চলো ওই মোমই জ্বালাই। </p>
<br /><p>আটে সেই গ্র্যাজুয়েট ছেলে , <br />ব্যর্থ ব্যবসা করে সবজির গাড়ি ঠেলে ঠেলে,<br />অবসন্ন অবশেষে ক্ষান্ত দিয়েছে , <br />শান্তিতে ট্রেনে গলা দিয়ে মরে গিয়েছে।<br /> সুইসাইড লেখা আছে পোস্টমর্টেমে, <br />হেরে গেলে জীবনের এ স্কুইড গেমে, <br />মৃত্যুকে ওই বলে চালানোই প্রথা।<br /> দায় আবার কে নেবে বলো অযথা,<br />ওকে কেউ মরতে বলে নি তো। <br />একখানা মোম পাক সেই শিক্ষিত।</p>
<br /><p>নয়ে থাক সেই ক্লাস ন’য়ের কিশোরী,  <br />স্মার্টফোন নেই বলে শিক্ষার থেকে তার দো গজ কি দূরি,<br /> চাষার মেধাবী মেয়ে পারেনি সইতে। <br />ওড়না দিব্যি পারে গোটা শরীরের ভার বইতে,  <br />কতভাবে কতবার এইদেশে কন্যারা সেটা জেনে যায় ।<br /> সে জ্ঞান জ্বলতে থাক মোমের শিখায়। </p>
<br /><p>দশে থাক বন্ধু বা প্রিয়জন কোনো।<br /> কাউকে হারায়নি,এইদেশে নেই একজনও, <br />যদি বা থাকেও কোথাও সেই সৌভাগ্যবান, <br />পরিচিত মহলে পায় নি সে স্থান। <br />অসময়ে চলে গেছে এরকম প্রিয়মুখ ফিরুক এই প্রাকদেওয়ালিতে। অশ্রুর ফোঁটাগুলো বাধা না দাঁড়ায় হয়ে বাতি জ্বেলে দিতে।</p>
<br /><p>এগারোতে প্রিয় আইডল। <br />গান নাচ অভিনয় সাহিত্যে বিজ্ঞানে ভূপতিত মহীরুহদল, <br />যাদের যাওয়াতে জানি থিতু হয়ে বসেছে আঁধার,<br />জাগরুক হোক শোক তবুও আবার। <br />এসো কথা দিই ওই মোমের শিখাকে, <br />স্মরণে ও শরণে মনে রাখবো তাঁকে। </p>
<br /><p>দ্বাদশও ভূতই বটে, তবে সে মানুষ নয়। <br />ওপরে উঠতে লোকে যেই দিক চায়, <br />মারী ও রাষ্ট্র মিলে কুড়ুল মেরেছে দিয়ে সেই শিক্ষায়। <br />উপায় হয়নি ভাবা চালাবার স্কুল, <br />প্রজন্মে থেকে যাবে সেই মহাভুল,<br />মারী যদি আরো থাকে কিছু কাল, <br />স্কুল তবে  মিড ডেতে দেওয়া চালডাল, <br />সব খুলে শুধু স্কুলে তালা দেওয়া হলো। <br />আমাদের করনীয় আর কিছু নেই, শুধু ওই মোমবাতি জ্বালো।</p>
<br /><p>আনলাকি থার্টিনে সেকুলারিজম। যদিও সে বহুকাল মৃত,<br />তবুও শবের গন্ধ এর আগে নাক জুড়ে এত আসেনি তো।<br /> সেই তবলিগি থেকে বিভাজন শুরু, তারপর আড়ে ও বহরে, <br />বেড়েই চলেছে সেটা। রাজনীতি সে আগুন পৌঁছেছে ঘরে। <br />করোনা যদিও  বিভেদ করেনি কোনো হিঁদু মুসলিমে, <br />তবুও তা দিয়ে দিয়ে সে ঘোড়ার ডিমে, <br />সেকুলার পরিচয় লুকাচ্ছে ভারত আজ ভারী লজ্জাতে।<br />সে ভূতের শ্রাদ্ধটা এইবারে হয়ে যাক মোমবাতি হাতে।</p>
<br /><p>চোদ্দতে থাক সেই ভূত, যে ছিলো বহুকাল পড়েইনি চোখে,<br />আজ তার শেষ স্বীকৃত। একখানা মোম দাও গণতন্ত্রকে।<br />উঠো না রে রে করে, জানি ভোট দাও, <br />সংবিধানের নামে এখনো কসম খাও, <br />তবুও বেছেছো শেষ কবে বলো ব্যক্তিকে? <br />অন্ধের মতো ছাপ দিচ্ছো প্রতীকে।<br /> জনগণমন থেকে বহুকাল ছিন্ন রাজারা ,<br />সব দলে গিজগিজ পাজিদের পা-ঝাড়া, <br />সেসব স্বীকার করি কজন আর বলো!  <br />ছেড়ে দাও, তার চেয়ে মোম জ্বালি চলো।</p>
<br /><p>চোদ্দটা নিতান্ত নিরীহ ভূত , কে আর করবে বলো মনে।<br />ভোট নেই এদের দেখিয়ে। নোট নেই ক্ষতির পূরণে।</p>
<br /><p>চতুর্দশীতে তবু,<br />এসো জ্বালি চোদ্দটা মোমবাতি তাদের স্মরণে। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/report/রিপোর্ট2021-10-28T16:35:31-04:002023-06-26T17:23:01-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। রিপোর্ট। </p>
<br /><p>অতিমারী শেষ হওয়ার পরে,<br />  ধনীতম ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলেন জনৈক রিপোর্টার,<br />‘স্যার, এপিডেমিক নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?<br />ব্যবসায়ী তুমুল হাততালি দিয়ে বললেন,’ চমৎকার, চমৎকার!<br />ওই সময়ে সস্তা শ্রমিক,<br /> জলের দরে কারখানা, <br />নজরদারিহীন লাভের দৌলতে <br />বেশ কয়েক হাজার কোটি আমদানি ঘটেছে<br />আহা, আবার যে কবে দেবেন ভগবান এমন ছপ্পর ফুঁড়ে , <br />কে জানে!’</p>
<br /><p>রিপোর্টার বললেন, <br />‘তবে যে শুনেছি এত লোকের কাজ চলে গেছে, <br />এতগুলো ঘরে নিভে গেছে চুল্লি, <br />এত কোটি ঘরে আজ খিদের অন্ধকার অমাবস্যার মতো থিতু?’</p>
<br /><p>ব্যবসায়ী হেসে উঠলেন আবার । <br /> ‘ ওই খিদেটাই তো মূলধন !<br /> সেনসেক্সের ওস্তাদ টিম জিডিপির ওঁচা দলটাকে গো-হারান হারিয়ে দিয়েছে, <br />সব লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে ব্যাঙের আধুলিগুলো<br />কাচিয়ে কুচিয়ে এসে গেছে আমার হাতে। <br />এর থেকে ভালো ব্যবসা আর হয় না, <br />খিদে কিনে নিলে মানুষকে দিয়ে যা খুশি করানো যায়। <br />এই তুমি চা কফি নেবে , না ঠাণ্ডা?’</p>
<br /><p>রিপোর্টার বললেন , জল। </p>
<br /><p>রিপোর্টারটি এরপর গেলেন দেশের ক্ষমতাসীন মুখ্যের কাছে।<br />প্রশ্ন রাখতেই তিনি ভুরু কুঁচকে বললেন,<br /> ‘বিরোধী দলের থেকে টাকা খেয়েছো নাকি? <br />এপিডেমিক আবার কোথায় পেলে, <br />ছোট্টমতন একটা জ্বর, <br />তাকে তো কবেই তাড়িয়ে দিয়েছি।<br /> আমরা টিকায় একনম্বর, <br />রোগনির্ণয়ে এক নম্বর, <br />রোগসারাইয়ে এক নম্বর, <br />অর্থনীতিতে এক..না না ওটা বোধহয় দুই কিংবা তিন।’</p>
<br /><p>রিপোর্টার বললেন, ‘ ওই যে সার সার চিতা, <br />একটু বাতাসের জন্য হাসপাতালের বাইরে হাহাকার, <br />নদী বয়ে ভেসে যাওয়া জ্বরোরোগীর লাশ, ওগুলো তবে কী?’<br />প্রমুখ বললেন ‘চক্রান্ত।<br /> রোজ কত মরে এই দেশে কোনো ধারণা আছে? <br />তাদেরই কটা’কে সাজিয়ে কোমর্বিডিটিগুলোকে জ্বর বানিয়েছিলো ওরা, <br />সব ধরা পড়ে গেছে। <br />কটা দিন যেতে দাও, <br />এসব বিকৃতি ঠিক করে সত্যি ইতিহাস সামনে  আনছি।’<br />রিপোর্টার কি একটা বলতে গেলেন। <br />প্রধান হেসে বললেন, <br />‘অমুক নথির সাথে তমুকটা লিংক করিয়েছো? <br />না করলে নাগরিক সুবিধার থেকে বঞ্চিত হবে। <br />যাও যাও.. তবে যাওয়ার আগে নতুন প্রাসাদটা ঘুরেফিরে দেখে যেও।’</p>
<br /><p>রিপোর্টার বললেন, আচ্ছা।</p>
<br /><p>রিপোর্টার বেরোলেন। <br />আজকের মধ্যে অ্যাসাইনমেন্টটা জমা দিতে পারলে তবে তাঁর মাইনে ঢুকবে।<br />বাবা কোভিডে গেছেন হাসপাতালের বাইরে হাঁপাতে হাঁপাতে,<br />বোনের  চাকরিটা গেছে মারীর আবশ্যিক ছাঁটাইয়ে। <br />তবে পেটের চাগাড় দেওয়া খিদের কথা ভেবে, <br />এইসব তিনি লিখতে যাবেননা বোকার মতো।</p>
<br /><p>তাঁকে যে বেঁচে থাকতে হবে। <br />তাঁর স্বদেশ যেমনভাবে আছে। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/sap/সাপ 2021-10-21T09:32:33-04:002023-06-26T17:23:17-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>ঘৃণা করার তালিকায় আরেকটা নাম যোগ হলো, ইকবাল হোসেন। <br />মণ্ডপে কোরান রেখে এই নরক সৃষ্টির ষোলোআনা দাবীদার।</p>
<br /><p> । সাপ।</p>
<br /><p>হায় হোসেন, হায় হোসেন, দেশের মাঝে দ্বেষ ঠোসেন,<br />মণ্ডপে যান  কোরান রেখে, বিধর্মীদের বেশ দোষেন ।<br />দাঙ্গা বাঁধান উৎসবে, ভরেন নিজের ভূঁই শবে,<br />নিজের পায়ে কুড়ুল মারার নামবে মাথার ভূত কবে?</p>
<br /><p>এতই যখন না-পাক মন, কোন সাহসে কোরান ছোঁন,<br />আর যা কিছু হন না কেন, মুসলমান তো আপনি নন।<br />কাজ তো এ না ধার্মিকের, আজ যে আগুন চারদিকের<br />আমরা যারা শান্তি খুঁজি, ঘরেতে আঁচ পাচ্ছি টের।</p>
<br /><p>পেলেন কি এই দাঙ্গাতে, হিংসা এমন নাঙ্গাতে,<br />বিশ্ববাসী বলছে ডেকে , দেখ না কী হয় বাংলাতে।<br />বাংলাদেশী আপনি কি, কাগজ যত থাক ঠিকই,<br />নিজের দেশে জ্বালায় না কেউ এমন করে আগ ধিকি।</p>
<br /><p>অন্ধ হবার ভুল মোহে, সামিল হলেন দেশ-দ্রোহে,<br />লাগলে যে পাঁক ঘেন্না শুধু , ডোবেন না-পাক সেই দহে।<br />এপার ওপার দুবাংলায়, দেশ বিভাগের সে দাঙ্গায়,<br />দগদগে ঘা যা রয়েছে, খুঁচিয়ে দিলেন ফের সে ঘা’য়।</p>
<br /><p>হায় হোসেন হায় হোসেন, মীরজাফরের জ্বিন পোষেন,<br />বাঙালী নন আপনি মোটে, কোন বিভেদের বিষ চোষেন?</p>
<br /><p>এখন দেখার সে বিষধারী , আর কখানা সাপ পোষেন।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/porichoy-2/পরিচয় ২2021-10-19T13:17:49-04:002023-06-26T17:20:13-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। পরিচয়। </p>
<br /><p>‘কে তুমি? ‘</p>
<br /><p>‘আমি মানুষ ।এই পৃথিবী আমার জন্মভূমি।’</p>
<br /><p>‘সৃষ্টি কবে ?’</p>
<br /><p>‘এক ল্যাজহীন বানরের জন্ম  দু লক্ষ বছর আগে, আফ্রিকার কোথাও হবে।’</p>
<br /><p>‘মোটে দুই লাখ? তার আগে? ‘</p>
<br /><p>‘পৃথিবী ভর্তি ছিলো  ম্যামথ , ম্যাস্টোডন, খড়গদাঁত বাঘে।’</p>
<br /><p>‘শুরু সেখান থেকে?’</p>
<br /><p>‘ধ্যুৎ! তারও আগে ডাইনোসর, টিরানোসরাস রেক্স, ডিপ্লোডোকাস আর টেরোডাক্টিলরা গেছে ছাপ রেখে। ‘</p>
<br /><p>‘আরো আগে কিছু আছে?’</p>
<br /><p>আছে তো !তাদের ফসিল কত ছড়িয়ে রয়েছে আজও আনাচে কানাচে, <br />এই ভাবে ছোটো হতে হতে একদম এককোষী প্রাণী। </p>
<br /><p>‘বেশ। ওখানেই শুরু এ কাহিনী?’</p>
<br /><p>‘উঁহু তারও বহু বহু আগে সাড়ে চারশো কোটি বছর পেছোলে পৃথিবী জন্ম নিলো,<br />আর সাড়ে তেরোশো কোটি বছর আগে নাকি বিগ ব্যাঙ হয়েছিলো।’</p>
<br /><p>‘এই দাঁড়াও দাঁড়াও, এভাবে ব্যাখ্যা দিলে গোটা নাটকের মধ্যে একদম ছোটখাটো, এক মিনিটের রোল। <br />আবার প্রশ্ন করো। এত ছোটো হয়ে গেলে  ভারী গণ্ডগোল ।’</p>
<br /><p>‘আচ্ছা। বলো তুমি কে?’</p>
<br /><p>‘আমি আধুনিক মানুষ। পায়ের নিচে রাখি গোটা পৃথিবীকে।’</p>
<br /><p>‘এত ক্ষমতা তোমার?’</p>
<br /><p>‘ভাণ্ডার দেশে দেশে লক্ষ প্রলয় ডাকা আণবিক বোমার,<br />আমার ক্ষমতায়  অরণ্য বিলীন হয়ে নগরের ওঠে<br />সমু্দ্র সরিয়ে দিয়ে বহুতল চুমু খায় আকাশের ঠোঁটে, <br />যে কোনো প্রজাতির কমাবাড়া আমার সখ ও প্রয়োজনে ।’</p>
<br /><p>‘বাহ! ঝড় আর বন্যাও বুঝি কথা শোনে?<br />প্রলয় আনতে পারো, সৃষ্টি করাও কি  বাঁ হাতের খেলা?’</p>
<br /><p>‘ওই দেখো পুনরায় বাঁধালে ঝামেলা। <br />আমি শুধু নিই, মাটি থেকে, জল থেকে, পাহাড় আর বন থেকে।<br />সীমানাতে সব বাঁধি আমার আমার হেঁকে, <br />সৃষ্টি যা করি সব আমারই দরকারে, তার বেশি করিনি কখনো।’</p>
<br /><p>‘তার মানে পৃথিবীর কাজেই আসো না কোনো?<br />বলিউডি সিনেমার মতো তুমি অবিমিশ্র এক স্রেফ খলনায়ক?’</p>
<br /><p>‘ওহ! ফাঁদে ফেলে দিয়েছো আমাকে , আবার প্রথম থেকে হোক।’</p>
<br /><p>‘আচ্ছা, আরেক বার। দাও পরিচয় ।’</p>
<br /><p>‘আমি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। ধর্ম ভাষা ও দেশ যতগুলো হয়,<br />আমারই কীর্তি সে। <br />আমার বানানো গীতা বাইবেল  কুরান , আমি বানিয়েছি ভেবে সব ভগবান, <br />আমারই রচনা সব গান ও কবিতা, সুর তাল ছন্দ সোনাটা রাগিনী,<br />সামনে এগিয়ে যাই বিনা দৃকপাত, রোজ অতীতের থেকে আরো বেশি জানি।’</p>
<br /><p>‘বাবাহ! লম্বা ফিরিস্তি দিলে বেশ। মানছি ধর্ম ভাষা দেশ ,<br />আর যা যা বললে সব তোমারই আবিষ্কার।<br />তাহলে কি দায় নেবে আজ অবধি ঘটা সব গণহত্যার?<br />অথবা পরিকল্পনা করে  ধর্ম দেশের নামে গণধর্ষণের?’</p>
<br /><p>‘অ্যাই শোনো! সহ্য করছি ঢের, <br />অনেক চলেছো করে প্রশ্ন করার এই অসহ্য ন্যাকামি।<br />কি দরকার বলো , জেনে কী করবে শুনি কে আমি?<br />আর তুমি কোন হনু হও শুনি?’</p>
<br /><p>‘ চতুর্থ মাত্রা হয়ে মুহূর্ত গুনি, তোমরা দিয়েছো নাম শুনেছি ‘সময়’। <br /> আসলে এ জানাটা আমার জন্য নয়।’</p>
<br /><p>‘তবে কার? আমি কে সেটা জানা কার দরকার?’</p>
<br /><p>‘এখনো বোঝোনি সেটা? শুধুই তোমার।</p>
<br /><p>তাছাড়া পরিচয়ে  যায় আসে কার?’</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/khal-2/খাল ২2021-10-17T01:34:13-04:002023-06-26T17:18:41-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। খাল । </p>
<br /><p>খাল কেটেছি ধর্ম খুঁড়ে, যা কেউ গিয়ে কুমীর লা,<br />এদিক গেলে লাহোর পাবি, ওদিক গেলে কুমিল্লা।<br />সংখ্যালঘু ধর তো কটা, দুবলা এবং একলা লোক,<br />খুন করে দে থেঁতলে দেহ, ধর্ম আমার শীর্ষে হোক।</p>
<br /><p>জানবি এসব ঘুঘুর বাসা, সব্বোনাশা লঘুর জাত,<br />ব্যাঙের ছাতার মতন গজায়, সব দোষেতেই ওদের হাত।<br />ভারত হলে নমাজ বারণ, গুরুগ্রামে ধুন্ধুমার,<br />বাংলাদেশে দুর্গাপুজো বন্ধ করুক হিন্দু তার।</p>
<br /><p>এদেশ ছেড়ে ওদেশ যা না , জিভের ডগায় এক বুলি,<br />বদলালে দেশ হয়না বদল অত্যাচারের ছলগুলি।<br />জন্মভিটে ওই মাটিতেই ,সাতপুরুষের গোর চিতা<br />বিচার তবু চায়না ভয়ে ধর্মবাজের ধর্ষিতা। </p>
<br /><p>সংখ্যালঘু হলেই শিকার, হয়তো নিয়ম সভ্যতার,<br />জীবন নারী এবং বাড়ি ভীষণ সহজলভ্য তার।<br />রাষ্ট্র থাকেন আব্বুলিশে, দূর থেকে কন দাঙ্গা নয়,<br />রাষ্ট্র যদি মদত না দেন, কোথাও কি আর দাঙ্গা হয়?</p>
<br /><p>খাল কেটেছে সভ্য মানুষ, ধর্ম যা তুই কুমীর লা,<br />এদিক গেলে সাহরানপুর, ওদিক গেলে কুমিল্লা।</p>
<br /><p>তিনখানা দেশ, লঘুর তবু ভাগ্যে দেখো কি মিল না?</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/manthan/মন্থন2021-10-16T11:05:24-04:002023-06-26T17:19:14-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। মন্থন ।</p>
<br /><p>হেঁইয়ো , হেঁইয়ো .. শুনতে পাচ্ছো? <br />তোমার চারপাশে, মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের তাবত রুটিরোজগারে, কারা যেন টেনেই চলেছে কোনো অদৃশ্য দড়ি।<br /> একবার এদিক, একবার ওদিক, হেঁইয়ো হেঁইয়ো,<br />টানছে চাষী, শ্রমিক, বাস ড্রাইভার আর ট্যাক্সিচালক, <br />মাঝারি মাপের কেরানি, ডাক্তার , উকিল.. এমন কি তুমিও .. বিড়বিড় করছো কাজের ফাঁকে হেঁইয়ো হেঁইয়ো।</p>
<br /><p>মন্থন চলছে হে । <br />তুমি আমি হরিদাস আব্দুল হরপ্রীত সিং আর মাইকেল ডিসুজা, এমন কি ভিনদেশী যত নাগরিক<br /> যারা নিজেদের দৈনিক রোজগার নিজের ঘামের বিনিময়ে করে, <br />তারা সকলে সভ্যতা নামক বাসুকি নাগের<br /> মাথার দিকটা ধরে সময় নামক মন্দার পাহাড় <br />মন্থন করে চলেছি মহাবিশ্বের এই অতল সাগরে।</p>
<br /><p> বিপরীত দিকে আছেন এযুগের দেবতারা, <br />তাঁদের নাম আম্বানি হতে পারে বা জুকেরবার্গ, <br />বাজোস কিংবা বলসেনারো, <br />মোদী রাহুল কিংবা মমতা, <br />পুটিন বাইডেন বা জনসন, <br />মোটকথা যাঁদের অর্থ প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা <br />আমাদের রোজনামচা নিংড়ে আসে, <br />সেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা ক্ষণজন্মারা। </p>
<br /><p>সভ্যতা যাতে ডুবে না যায়, <br />তাই কূর্মাবতারে তাকে ধারণ করেছেন ইতিহাস,<br />কদাচিতই তিনি খোল থেকে মুখ বের করেন। </p>
<br /><p>হেঁইয়ো হেঁইয়ো, সভ্যতা সাপের মন্থন চলছে, <br />সাপের মুখ যেহেতু আমাদেরই দিকে ,<br /> সুতরাং যাবতীয় গরল উপচাচ্ছে আমাদের ওপরেই। <br /> হেঁইয়ো হেঁইয়ো, ওই উঠে এলো জাতি দাঙ্গা, <br />হেঁইয়ো হেঁইয়ো,উঠছে বর্ণবৈষম্য, <br />আরো জোরে , আরো জোরে, <br />ওই যে ইয়াজিদি, বসনিয়াক, উইঘুর আর দলিত নারী ধর্ষণ চলছে, হেঁইয়ো হেঁইয়ো,<br />দেবতারা বুঝিয়েছেন, <br />এই সময় মন্থন করেই উঠে আসবে অমল প্রগতির  অমৃত ,<br /> হেঁইয়ো হেঁইয়ো, জোরে হাত চালাও ভাই!</p>
<br /><p> ইতিমধ্যে উঠে এসেছে মন্থন থেকে নানা বহুমূল্য দ্রব্য। <br />উঠেছে ক্যাপিটালিজম,<br /> যা এখন মণি হয়ে শোভা পাচ্ছে দেবতাদের গলায়। <br />গণতন্ত্র উঠে এসেছেন এই মন্থনে, <br />আর কি আশ্চর্য, <br />গিয়ে বসেছেন ওই দেবতাদের  দিকেই, <br />যদিও মুখে বলছেন তিনি সব্বার। <br />কমিউনিজম নামক আশ্চর্য সাতমাথা ঘোড়া প্রথমে আমাদের দিকে এলেও, <br />আপাতত টুক করে সরে গিয়েছে দেবতাদের দিকে।<br />মাঝেমধ্যেই  উঠে এসেছে কালকূট গণহত্যা,<br /> অতীত জার্মানি থেকে বর্তমানের সিরিয়া আফগানিস্তান অবধি ছড়িয়ে দিয়েছে তার বিষ,<br />মহাদেবতা মানবাধিকার কোনোক্রমে তাকে ধারণ করেছেন,<br />ওই দেখো, হলাহলে তার কণ্ঠ কেমন ভয়ানক  নীল।</p>
<br /><p>  দেবতারা বলছেন প্রগতির ভাগ দেবেন তাঁরা।<br /> কিন্তু আমরা দেখছি,<br /> আমাদের জন্য মোহিনী সোশ্যাল মিডিয়া এক মোহজাল রচনা করছেন, <br />আমাদের ক্ষোভ শোক রাগ প্রেম অনুরাগ আন্দোলন ও ঘৃণা আমরা সেখানে ছড়িয়ে দিচ্ছি,<br /> এদিকে ক্রমেই প্রগতির অধিকার চলে যাচ্ছে দেবতাদের দখলে, জেফ বাজোস থেকে জুকেরবার্গ,<br />  বাইডেন থেকে মোদী ,  <br />ঝুনঝুনওয়ালা থেকে টেসলা,<br />সকলে আরো আরো ওপরে চলে যাচ্ছেন , <br />এমন এক স্বর্গীয় উচ্চতায় , <br />যেখানে আমাদের দৃষ্টি দূরবীনেও পৌঁছায় না।</p>
<br /><p>  খবরদার, <br />ওতে ভাগ বসিও না কোনো দৈনিক কামানেওয়ালা। <br />দেবতাদের অস্ত্র তোমায় দুফাঁক করে বাঁচিয়ে রাখবে, <br />না ঘর কা না ঘাট কা  হয়ে। <br />অসুর হয়েছো, দেবতাদের  জন্য অমৃত মন্থন করো,<br />তারপর বিষে বা আয়ুশেষে টুক করে যাও মরে। </p>
<br /><p>  হেঁইয়ো হেঁইয়ো, <br />চলো মন্থন করি,  <br />প্রগতির অমৃত পেতে সময়ের মন্দার ঘোরাই সজোরে। </p>
<br /><p>  দেবতারা রয়েছেন অপেক্ষা করে..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/oiswarik/ঐশ্বরিক2021-10-10T08:53:16-04:002023-06-26T17:19:54-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ঐশ্বরিক। </p>
<br /><p>ঈশ্বর ভাবলেন একদিন লুঙ্গি পরবেন ।<br />মানুষ বললো ছিঃ। ওভাবে উপাসনালয়ে ঢোকা যায় না। <br />যান ভালো পোশাক পরে আসুন। <br />ঈশ্বর খুব রঙিন বারমুডা পরে এলেন। <br />মানুষ বললো এ আবার কি!<br />ধর্ম নিয়ে ইয়ার্কি করছেন? <br />ঈশ্বর বললেন আমার চেয়ে স্বচ্ছ কেউ নেই,<br /> যে দেখতে চায় সে সব দেখতে পাবে। <br />আমার চেয়ে বহুরূপীও কেউ নয়, <br />তোমার ধর্মেও তো তাই বলা আছে। <br />মানুষ বললো, ছাড়ুন তো ওসব গল্প,<br /> এই নিন পোশাকের লিস্টি। <br />এসব পরতে পারলে ঢুকবেন, নয়তো কেটে পড়ুন দেখি।</p>
<br /><p>ঈশ্বর ভাবলেন এবার নারী হবেন।<br />মানুষ বললো, স্রাবের তারিখ বলুন। <br />ঈশ্বর বললেন কেন?<br />মানুষ খেঁকিয়ে উঠলো, এটাও জানেন না?<br /> ওই দিনগুলো আপনি অপবিত্র।<br />ঈশ্বর বললেন, আমার চেয়ে পবিত্রতর কিছু নেই, <br />প্রতি রজঃতে আমি ভাবীকালের জাতকের ভরসাস্বরূপ বিরাজমান।<br />মানুষ বললো জ্ঞান দেবেন না।<br /> এমনিতে ওটা শরীর খারাপ বলা হয় না। <br />পৃথিবী রসাতলে দেবেন না কি?</p>
<br /><p>ঈশ্বরের ইচ্ছা হলো, সংখ্যালঘু হবেন। <br />তিনি পুজো করতে গেলেন,<br /> তাঁর প্রতিমা মানুষ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলো।<br />তিনি নমাজ পড়তে গেলেন, <br />মানুষ হ্যাট হ্যাট করে তাঁকে তাড়িয়ে দিলো।<br />তিনি ক্রুশের সামনে বসলেন,<br /> মানুষ চার্চে আগুন লাগিয়ে দিলো।<br />ঈশ্বর বললেন, তোমার তো আমি কোনো  ক্ষতি করিনি।<br />মানুষ চোখ রাঙিয়ে বললো, <br />করতে কতক্ষণ! আপনি তো আর আমার মতন না। </p>
<br /><p>ঈশ্বর বললেন হিন্দু । মানুষ বললো পাকিস্তান।<br />ঈশ্বর বললেন ইসলাম। মানুষ বললো জিন জিয়াং।<br />ঈশ্বর বললেন খ্রীস্টান । মানুষ বললো সিরিয়া। <br />ঈশ্বর বললেন বৌদ্ধ। মানুষ বললো বামিয়ান। <br />ঈশ্বর বললেন ইহুদী। মানুষ বললো অসউৎজ।</p>
<br /><p>ঈশ্বর হতাশ হলেন। <br />আহত স্বরে মানুষকে জিজ্ঞেস করলেন তবে তুমি চাও কী?</p>
<br /><p>মানুষ মাথায় হাত ঠেকালো, <br />নমাজ পড়লো, <br />বুকে ঝোলা ক্রুশ ছুঁলো,<br />আরো কত কী করলো।</p>
<br /><p>তারপর বললো, <br />আমায় জিজ্ঞেস করছেন কেন? সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/hajar-hath/হাজার হাত2021-09-20T04:21:00-04:002023-06-26T21:05:00-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। হাজার হাত।</p>
<br /><p>‘আমায় ডেকেছো কন্যা?’ দরজার বাইরেতে বললেন যিনি,<br />তিনি মহাভারতকার, কৃষ্ণদ্বৈপায়নব্যাস। দূতমাধ্যমে তাঁকে রাণী যাজ্ঞসেনী,<br />পরমভক্তিভরে আহ্বান করেছেন আজ পাণ্ডব অন্তঃপুরে।<br />যুদ্ধের অবসানে ঘন কুয়াশার মতো শোক থিতু বেঁচে থাকা সব মন জুড়ে,<br />দ্রৌপদীর পিতা ভ্রাতা, পাঁচ সন্তান সকলে জীবিত ছিলো কমাস আগেই।<br />এখন রয়েছে বৈভব, দাস দাসী, রাজসিংহাসন। শুধু তা দেখার কোনো হাসিমুখ নেই। </p>
<br /><p>‘আমায় ডেকেছো বাছা?’  বাইরে বেরিয়ে এসে পাদ্য অর্ঘ্য দেন রাণী দ্রৌপদী,<br />‘আসুন ঋষিশ্রেষ্ঠ। আপনার বিরচিত ‘জয়’ কাব্যটি এসময়ে শোকের ওষধি, <br />রোজ পাঠ করি আমি । কিন্তু মহাত্মন, দ্যূতক্রীড়া পর্বটি একেবারে নয় যথাযথ <br />কেন সেটা বুঝতে পারিনি। আপনি ত্রিকালদর্শী, সত্য জানেনা কেউ আপনার মতো,<br />আপনি জানেন সেই কঠিন সময়ে, কী ঠিক হয়েছিলো বস্ত্রহরণে।<br />বাসুদেব বহু দূরে, প্রশ্নই নেই তার সভাতে আসার সেই দিন। আপনি জানেন ঋষি, হাজার হাতের শাড়ি কিসের কারণে।’</p>
<br /><p>ব্যাস নিরুত্তর। লেখবার পর থেকে তার ভয় ছিলো মুখোমুখি হতে কৃষ্ণার,<br />চিরকাল স্পষ্টবাদিনী তাঁর প্রপৌত্রবধূ। স্বভাবত সত্যের বিকৃতি সহ্য হবেনা সেই অপমানিতার,<br />কিন্তু কি করেন তিনি! হাজার হাতের শাড়ি যে  সম্ভ্রম বাঁচিয়েছিলো পাণ্ডবপত্নীর, সেটা বাস্তব,<br />ব্যাস সেটা লিখতে পারেননি বলে অগত্যা অলৌকিকে ত্রাতা হয়ে গেলেন কেশব।<br />ধরা পড়া সজ্জন ব্যক্তিমাত্রেই না জানার ভান করে, মহাঋষি ব্যাসও তার ব্যতিক্রম নন,<br />আজ তাই অবাক হওয়ার ভানে বিপরীতে প্রশ্ন করেন, ‘ বলো বৎসে তবে , কি ঘটেছে আসলে তখন!’</p>
<br /><p>‘আপনি জানেন মহামুনি । পাশা খেলেন মাতুল শকুনি, কর্ণ দুর্যোধন হাসে প্রতি জয়লাভে,<br />যুধিষ্ঠির দাস হয়েছেন, শৃঙ্খল পরানো তার পায়ে। একথাও ভুলেছেন লিখতে কোনোভাবে,<br />শৃঙ্খল না পরালে সেই দিনই রাজসভা তছনছ করে দিতো বাকি চার স্বামীরা আমার,<br />অতটা মূর্খ নয় দুষ্ট চতুষ্টয়, ওঁদের না বেঁধে নিয়ে সাহস করবে ছুঁতে কেশ কৃষ্ণার। <br />সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে ব্যাস করলেন মাথা নিচু। তারপর বললেন , ‘আসলে জানো তো মা,<br />দুদিকেই ছিলো প্রপৌত্র আমার। অতটা ধূর্ত ওরা জেনেও স্নেহতে করেছে বুড়ো কিছুটা ক্ষমা।’</p>
<br /><p>‘তা বলে বস্ত্রহরণে সত্যের অমন অপলাপ? আজও মনে পড়ে সেই ভয়ানক দিন,<br />রজস্বলা একবস্ত্রা সভায় একলা আমি । দুঃশাসন বাড়িয়েছে হাত,<br />সভায় সবার সামনে আমাকে করবে বস্ত্রহীন,<br />দুর্যোধন, শকুনি কর্ণের লালাঝরা দৃষ্টি কামুক, অধোবদনে বসে অসহায় কুরুবৃদ্ধরা..<br />হঠাৎই হুংকার হলো বামাকণ্ঠে। রাজবধূ ভানুমতী, সাথে দুঃশলা<br />হাঁক দেন ‘কই গেলি তোরা!’<br />অমনি অন্তঃপুর থেকে যত কৌরবের রমণীরা বেরিয়ে এলো সেই নারীহীন রাজার সভাতে,<br />‘ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখো হে দেওর’, গর্জান ভানুমতী, ‘আমরাও খুলে দেবো শাড়ি সাথে সাথে! ‘<br />মুহূর্তে হাত গোটালো দুঃশাসন, চোখ ফেরালো কর্ণ, অধোবদন হলো দুর্যোধন শকুনি,<br /> রাজা ধৃতরাষ্ট্রেরও ফেরে সম্বিত।হাজার নারীর সেই হাজার শাড়ি <br />আমাকে বাঁচিয়েছিলো মুনি,<br />সেই অনন্য প্রতিবাদ বাদ দিয়ে হঠাৎই কেন আপনার কাব্যে কৃষ্ণ বাঁচালো কৃষ্ণাকে?<br />বাসুদেব বন্ধু আমার, বিখ্যাত কীর্তিধর দ্বারকাধিপতি, তাই বুঝি দেবতা বানিয়ে দেন তাঁকে? ‘</p>
<br /><p>ব্যাস নিশ্চুপ। পুরুষের সমাজে নারীই বাঁচালে নারী, কাহিনী যে কেউ শুনবে না। <br />তারা চায় প্রতিটি নারীর যেন রক্ষক থাকে।</p>
<br /><p>সেটা বলা যায় নাকি এই কন্যাকে?</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/a-mrito/অ-মৃত2021-09-11T02:42:46-04:002023-06-26T22:49:02-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। অ-মৃত।</p>
<br /><p>ভালোবাসা মরে গেলে কী থাকে তখন পড়ে, বিষাদ না ঘৃণা?<br />পাশাপাশি থাকা শেষ হলে কি জীবন একই সেই প্রেম বিনা?<br />নাকি তার গতিপথ রুটিনে ব্যাঘাত ঘটা নদীর মতন,<br />বানে ভেসে যায় তীর, ঘরবাড়ি মন্দির, কদমগাছের তল,  প্রিয় উপবন?</p>
<br /><p>কাছাকাছি চলে এসে বাছাবাছি করে ভিড়ে পথে ধরা হাত, <br />ফের দূরে চলে গেলে গোলমেলে হয়ে যায় গোটা ধারাপাত,<br />যোগ আর বিয়োগের সহজ অঙ্কগুলো পাল্টায় নতুন সে ছকে,<br />স্মৃতি জুড়ে দোষারোপে অতীত হিসেবে নামে ভাগশেষ আর গুণিতকে।</p>
<br /><p>মানুষেরা সেতু ভাঙে, বিপরীতে চলে যায় ঘনিষ্ঠ রোজনামচারা  <br />প্রেমের বিয়োগ হলে ছিবড়েতে পড়ে থাকে আবেগের ভিন্ন চেহারা। <br />অথই বিষাদ থাকে অথবা জীবন পোড়ে অসহায় জ্বালাময় ক্রোধে<br />স্মৃতি প্রতিরোধ করা বাঁধের ওপর দিয়ে দিশাহীন ভাসে মন তীব্রতর বোধে।</p>
<br /><p>প্রেম ভেঙে গেলে যদি আবেগেরা নখে ছেঁড়ে নাম এলে মনে,<br />তাহলে মরে নি প্রেম, রূপ বদলিয়ে শুধু ঘি ঢালে চিতার দহনে।<br />ঝরে যাওয়া ভালোবাসা যদি ফেলে রেখে যায়  বিষাদ বা ঘৃণা,<br />জীবন স্থবির হয়, স্মৃতিরা ধমকে বলে এই জেলখানা ছেড়ে তুই বেরোবি না।</p>
<br /><p>গরাদটা সেই ভাঙে, যে বলে নির্বিকারে ওই নামে আমি আর কেয়ার করি না।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/dekhechhen/দেখছেন2021-09-05T04:57:58-04:002023-06-27T04:44:23-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। দেখছেন। </p>
<br /><p>মাস্টারমশাই , আপনি কিছু দেখেননি।<br />এই যে দেবতার আসন থেকে টেনে নামিয়ে আপনাকে সামান্য বেতনভূক কর্মচারী করে দিয়েছি,<br />যার কাজ বন্ধ স্কুল থেকে মিড ডে মিলের কাঁচামাল বিতরণ করা,<br />আমরা নিশ্চিত, এটা আপনি দেখতে পাননি।</p>
<br /><p>কিচ্ছু দেখেননি আপনি , মাস্টারমশাই।<br />আজকে সিলেবাস থেকে কোথাও বাদ পড়ছেন রবীন্দ্রনাথ, কোথাও মহাশ্বেতা, <br />ঢুকে যাচ্ছে ক্ষমতায় থাকা অশিক্ষিতের ব্যক্তিগত প্রলাপ, <br />এইসব আপনার দেখার ক্ষমতার বাইরে<br />শরৎচন্দ্রের মহেশ পড়ালে আজকে আপনার নামে সমন বেরোবে মাস্টারমশাই,<br />আজকাল কোনো দলিত মুসলিমের  সাহস হবেনা তার ষাঁড়ের ওই নাম রাখার!<br />রাষ্ট্রের কোপে দুফাঁক হওয়া দেশের মাঝখানে বওয়া রক্তের নদীটা<br />আপনি দেখেননি মাস্টারমশাই।</p>
<br /><p>এই মহামারীতে একটা জিনিস আমরা দেশ থেকে তুলে দিয়েছি মাস্টারমশাই।<br />সবার জন্য শিক্ষা। <br />যাদের ঘরে স্মার্টফোন , তাদের জন্য অনলাইন ক্লাস চলছে, <br />যাদের ঘরে ল্যাপটপ, <br />টপাটপ তারা শিখে নিচ্ছে কোডিংয়ের দুনিয়াতে সিঁড়ি বাইবার কসরতগুলো,<br />বহুদূরের নিস্পৃহ কোনো অ্যালগরিদম জায়গা কেড়ে নিচ্ছে মানবিক আবেগের,<br />এখানে কেউ বকে না, কেউ বলে না ভুল হয়েছে দশবার লেখো,<br />কেউ বলেনা রাজুর রচনাটা আজ সব্বাই পড়ে দেখ, কি ভালো লিখেছে!</p>
<br /><p>ডিজিটাল ইন্ডিয়া হু হু করে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে রতন বাউড়ি আর রহিম শেখের বাচ্চাদের,<br />বীনা মুর্মু আর লতা হালদারের দিনান্তে পেটভরা ভাতই জোটে না,<br />তো বাচ্চাদের জন্যে স্মার্টফোন!<br />মাস্টারমশাই, আপনি দেখেননি ক্রমশ আপনাকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বিলুপ্তির পথে,<br />অ্যালগরিদম আর কোচিং কারখানাগুলোয় ছাত্রদের নাম জানার কোনো দরকার নেই, <br />ব্যক্তি সেখানে সমষ্টির কাছে পর্যুদস্ত।</p>
<br /><p>তবুও আজও কেউ <br />স্টেশনের আলোতে পথশিশুদের পড়াচ্ছেন,<br />শবর বা ভিলদের গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছেন কোনো খ্যাপা স্বপ্নপথিক,<br />নদীর জল ঠেলে, <br />পাথুরিলা পাহাড়ি পথ ডিঙিয়ে,<br /> ঘিঞ্জি বস্তির অনামী বাড়ি খুঁজে, <br />ইটভাঁটা আর ক্ষেত থেকে কৈশোর ছিনিয়ে এনে <br />দেশের নানা কোণায় কেউ না কেউ সাক্ষর আর স্বাক্ষরের তফাৎ চেনাচ্ছেন।<br />রাষ্ট্র না চাইলেও দেশ ঠিক গড়ে চলেছেন কিছু মানুষ গড়ার কারিগর।</p>
<br /><p>মাস্টারমশাই , আপনি দেখেছেন , সব দেখছেন।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/ma-faleshu/মা ফলেষু2021-08-18T10:34:35-04:002023-06-26T17:19:11-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। মা ফলেষু।</p>
<br /><p>আল্লাহর কসম , আমি এখন বন্দুকে হাত দেবো না।<br />আর্তনাদ করে উঠলো তালিবান বীর, <br />ওদিকে যাদের ভিড় তারা সব আমনাগরিক, <br />আমারই মতো নিষ্ঠা ভরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,<br />আমার আব্বুও তো এই কাবুলেই ফল বিক্রি করতেন,<br />চাচার দোকান ছিলো আতরের। <br />ওই ভিড়ে আমি অস্ত্র চালাবো না,<br />এটা যুদ্ধ নয়, স্রেফ হত্যা।</p>
<br /><p>বুদ্ধের দিব্যি, ওদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই, সায়া!<br />মায়ানমারে বিচলিত এক সাধারণ সৈনিক। ওরা মিছিল করছে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, সেটা জানি,<br />কিন্তু তা বলে লাঠি চার্জের জায়গায় অটোমটিক রাইফেলের গুলি!<br />দয়া করুন সায়া, <br />এই একমুখী সংঘর্ষে আর কিছুক্ষণ বাদেই ওপাশে লাশের পাহাড় আর এপাশে স্রেফ খালি হওয়া বুলেটের খোল।<br />আমার বন্দুক উঠছে না, উঠবেও না , মাননীয় সায়া লে!</p>
<br /><p>একটা গ্রামের সমস্ত মহিলাকে ধর্ষণ? সমস্ত পুরুষ খুন?<br />শিউরে উঠলো ডি আর কঙ্গোর  নব্যযুবা জঙ্গী।<br /> ওরা তো সৈনিক নয়, সাধারণ ভিতু গ্রামবাসী, তবে কেন? <br />Mzee, আমিও ওদের মতো গাঁয়েই মানুষ,<br /> লুঠপাট করা হোক , <br />শত্রুর লোক হলে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে মারবো নাহয়।<br /> তাই বলে পুরো গ্রাম, প্লিজ কমান্ডার , <br />যিশুর দোহাই, পারবোনা ওই ভাবে করতে কোতল।</p>
<br /><p>জিয়ান সেং, ওরা কলেজে আমার বন্ধু ছিলো ।<br /> চেঁচিয়ে উঠলো চৈনিক সৈনিক। <br />ওরা কোনো অপরাধ করেনি, <br />স্রেফ উইঘুর বলে মহান পিপলস কংগ্রেস বলেছেন মারতে ওদের। <br />রাষ্ট্রের জয় হোক, <br />ফায়ারিং স্কোয়াডের সদস্য আমাকে করবেন না জিয়ান সেং, ওদেরকে লাশ হতে দেখতে পারবো না।</p>
<br /><p>অতঃপর, কাবুলের রাস্তার মোড়ে, <br />ইয়াঙ্গনের খোলা ময়দানে,<br />কঙ্গোর গ্রামের গেটের সামনে <br />আর চীনের পুলিসি ব্যারাকে <br />নানা ভাষায় একই হুংকার শোনা যায়,<br />‘ চোওওওপ! বন্দুক ওঠা, <br />তাতে রাষ্ট্রের কল্যাণ, জনগণের কল্যাণ।<br />তুই স্রেফ ক্ষমতার অসহায় ট্রিগার, <br />যার শুধু কাজ গুলি করা !’</p>
<br /><p>বহু শতাব্দীর ওপার থেকে <br />হাহাকার করে ওঠেন যদুপতি বাসুদেব<br />‘ দেখো দেখো ধনঞ্জয়, <br />সেই একই ভুল আবার করলো মানুষেরা!’</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/nach/নাচ2021-08-14T04:00:25-04:002023-06-27T01:28:53-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। নাচ। </p>
<br /><p>এই যে স্বাধীন তাক ধিনা ধিন দেশাত্মবোধ তুড়ুক নাচন, <br />নিমের পাচন মুখ করে সব ফেরত যাওয়া অতীত গানে,<br />পতাকাটা উঠিয়ে দিয়েই লাইন লাগাই কষাইখানায় ,<br />এই যে সে দিন যেদিন ঘরে ভালো রাংয়ের মাংস আনে,<br />ক্যালেন্ডারের লাল তারিখে দেশের পুজো সকালবেলায়,<br />এই যে সেদিন নেতাজি আর ক্ষুদিরামের ফটোয় মালা <br />আজকাল তো সিডিও না, গান পাওয়া যায় ইউটিউবে,<br />এই যে সেদিন স্বদেশ জুড়ে ভালো আছি’র নাট্যশালা..</p>
<br /><p>এসব থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করাই  খুব বোকামি,<br />ভালো আছির মানে কানার মুখে তালা কানেও কালা।</p>
<br /><p>এই যে সেদিন ঘুষ নেবো না বললো না তো একটি লোকও,<br /> জমির  জবরদখল নিতে  সবল সফল অনায়াসে, <br />ধর্ষিতা মেয়ে ফিরলো ঘরে, এফ আই আরও যায়নি করা,<br />এই যে সেদিন, ওই পুকুরে সে ধর্ষিতার শরীর ভাসে। <br />এই তো স্বাধীন , ধর্মভেদে মানুষ ঘিরে মারছে মানুষ ,<br />ভীষণরকম দাঙ্গা হলো দলিত ছেলের গোঁফ রাখাতে,<br />ওই কোণে দেয় গলায় দড়ি বেকার যুবক উচ্চজাতের,<br />এই যে সেদিন , জাতের ভ্রমে খুন হলো মেয়ে বাপের হাতে..</p>
<br /><p>এসব থেকে ফেরাও আলো, আঁধার জুড়ে আতশ দেখো<br />মাংসটা হোক জমিয়ে রাঁধা, রাত্রে খাবো মদের সাথে।</p>
<br /><p> দেশদ্রোহীর তকমা তাকে, নাচছে না যে এ ধিন তা’তে। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/kheyali-polao/খেয়ালি পোলাও2021-08-04T14:34:15-04:002023-06-26T17:18:45-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। খেয়ালি পোলাও।</p>
<br /><p>এর পরে কি? দশ লাখ বিশ লাখ ইনাম, চাকরিতে এক দুই ধাপ পদোন্নতি,<br />সংবর্ধনা সভা, দায়সারা কিছু সর্ষের তেল বা হেল্থ ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন..<br />ব্যাস। দায়িত্ব শেষ হলো আমাদের অবশেষে অলিম্পিকবিজয়ীর প্রতি,<br />তারপর টি ভি জুড়ে আই পি এলের খেলা, নিয়মিত নিশিদিন ক্রিকেটযাপন।</p>
<br /><p>এভাবেই চলেছে, চলবেও বহুকাল বাকি খেলাধুলা। পদক আসুক যত,<br />ঘরে ফিরে পান্তাই জোটে আগামী চ্যাম্পিয়নের হাড়ভাঙা খাটুনির পরে,<br />লাভলিনা মীরাবাঈ ওঠে স্রেফ অদম্য জিদে, মাঝপথে থেমে যায় কত,<br />গরীবের দেশ জুড়ে ক্রিকেটে নিলাম চলে, বিদেশী বিক্রি হয় কোটি টাকা দরে।</p>
<br /><p>শত্রু ক্রিকেট নয়, প্লেয়ারেরা বস্তুত ব্যবসার কাঁচামাল, চাহিদার যন্ত্রে পেষাই,<br />আমরা শিয়রে তুলি একটা খেলাকে, ক্রিকেটারই শুধু হিরো প্রজন্ম জানে,<br />বাড়ি গাড়ি  নারী দেখে মোহিত মিডল ক্লাস খেয়ালি পোলাওয়ে আরো তৈল মেশাই,<br />যেখানে মিলবে মধু , স্বভাবত মৌমাছি দলে দলে ভিড়বে সেখানে! </p>
<br /><p>কবে যে সময় হবে ক্রিকেট পেরিয়ে গিয়ে বাকি খেলাগুলোতেও একই মন দিতে,<br />দেড়শো কোটির দেশে কখানা কাংস্য শুধু , মেরে কেটে এক দুটো রুপো সোনা জোটে,<br />প্রতিভা রয়েছে কত পৃথিবী দেখতে পেতো অন্য দেশের মতো ঠিক লগ্নীতে,<br />মন্দির বদলিয়ে কুস্তি তীরন্দাজি সাঁতারের কাঠামোরা কবে যে চাহিদা হবে ভোটে!</p>
<br /><p>স্বপ্ন তবুও দেখি কখনো অলিম্পিকে জন গণ বারবার বাজে আর ত্রিবর্ণ ওঠে,<br />অবরে সবরে নয়, লাভলিনা সিন্ধু বা মীরাবাঈ চানু , যে সময় নিয়মিত ভাবে যাবে ঘটে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/bidaymala/বিদায়মালা2021-08-03T04:14:50-04:002023-06-26T17:16:06-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। বিদায়মালা।</p>
<br /><p>আজকাল প্রয়াণদিবস কেমন ঘটা করে হচ্ছে,<br /> দেখেছো হারাধন? <br />জন্মদিনের থেকেও বেশি উদ্যোগে <br />মৃত্যুর তারিখের এই যে স্মরণ,<br />সেটা কি স্রেফ একটা হুজুগ <br />নাকি আমাদেরই  চাপা পাপবোধ ,<br />যাদের গলায় মালা, <br />তাদের কাজের সাথে আমাদের যাপন-বিরোধ,<br />সে কথা ঢাকতে তাই বেদী করে <br />পুজো করি নতুন এক দেবতার মতো,<br />মানুষ না হলে তাঁরা কেন পিছু যাইনি যে,<br /> অজুহাত থাকে কিছু হাতে অন্তত।</p>
<br /><p>হারাধন, মণীষীর সংখ্যাটা কম নয় দেশে, <br />বরঞ্চ যথেষ্ট বেশি,<br />মনুষ্য সংখ্যাটা তবু বাড়ে না যে,  <br />রসিকতা বলো দেখি এটা কোনদেশি!<br />অবশ্য বলতে পারো , <br />লোক গুনে আঁতকিয়ে ওঠে প্রতি আদমসুমারি,<br />নেতারাও ছুতো দেন,<br /> এই জনসংখ্যাকে নিয়ে কী করতে পারি, <br />সেখানে মানুষ কম, <br />বলাটা কেমন যেন জ্ঞান দেওয়া আঁতেলের ভানে  <br />হারাধন, বলো দেখি তবে খুব ভালো করে ভেবে, <br />মনুষ্য কথাটার আছে কোন মানে।</p>
<br /><p>জেনে রাখো চিরকালই  অসৎ-য়ের সম্পদ বেশি,<br /> মিথ্যেরই বেসাতি অধিক,<br />সুদূর অতীত থেকে অনাগত আগামীতে <br />এ নিয়ম রয়ে যাবে ঠিক। <br />ঘুষ খাওয়া মানুষের চারতলা বাড়ি হবে, <br />একই কাজে সৎ যাবে বাসে ঝুলে ঝুলে,<br />মোটকথা, বাস্তবে বিপরীতই ঘটমান সর্বদা, <br />ভুলে যাও শিখেছো যা স্কুলে।<br />তবুও এসব সয়ে যারা সৎ থেকে যায়, <br />ভালো থাকে স্রেফ ভালো থাকার তাগিদে,<br />তাদেরই মানুষ বলে ,জানো হারাধন,<br /> অসৎ হয়না যারা পেলেও সুবিধে।</p>
<br /><p>কটা লোক খুঁজে পাবে এরকম বলো <br />ওই আদমসুমারি হওয়া দেড়শো কোটিতে?<br />স্বচ্ছন্দে অসৎ হয় সাড়ে চোদ্দ আনা,  <br />মণীষীর বাণী কাজ বইয়ের পাতায় থাকে যতনে নিভৃতে।</p>
<br /><p>হারাধন, জন্মের দিনে নয়, <br />আমরা যোগ্য তাই প্রয়াণদিবসে ফটো খুঁজে মালা দিতে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/punji/পুঁজি2021-08-01T08:44:16-04:002023-06-26T22:19:51-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। পুঁজি।</p>
<br /><p>বন্ধুর পথে যদি হাত থাকে বন্ধুর, <br />নিকষ আঁধারে সাথী একফালি রোদ্দুর।<br />সময় যতই সুখ না করুক মঞ্জুর,<br />বন্ধুরা সাথে হলে হাসি যাবে কোন দূর?</p>
<br /><p>দীন সে মানুষ যার বন্ধুর দিনেতে<br />একলা কাটছে দিন বন্ধুর বিনে-তে।<br />শারীরিক যোগাযোগ যত যাক ক্ষীণেতে<br />ডি এন এর মতো দোস্ত থিতু থাক জিনেতে।</p>
<br /><p>হাসি মজা হুল্লোড়,  রেগে কাঁই ঝগড়া<br />হেরে গিয়ে ফিরে যায় বিষাদের ঠগরা।<br />জীবনকে বলি হেসে যত কেন রগড়া,<br />এ মুলুকে আস্কারা পায় শুধু মগরা।</p>
<br /><p>আত্মীয় পায় লোকে রক্তের ছুতোতে<br />সুতো ধরে কেউ থাকে আজীবন গুঁতোতে।<br />বন্ধুতা অমলিন, নেই সেই খুঁত ওতে,<br />দেখা হলে মন ঘোরে গুপি-বাঘা জুতোতে।</p>
<br /><p>জীবনের কাছে কারো যত থাক বায়না<br />বন্ধুর চেয়ে দামী আর কিছু পায় না।<br />নানাদিকে হেরে যদি বিষ লাগে আয়না,<br />সকলে ছাড়তে পারে , বন্ধুরা যায় না।</p>
<br /><p>দেখো যেন এই পুঁজি কখনো ফুরায় না..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/desh2/দেশ ২2021-07-30T18:42:02-04:002023-06-26T17:16:50-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। দেশ।</p>
<br /><p>ইয়ামাগুচির শাটল ককটা নেটে আছড়ে পড়তেই লাফিয়ে উঠলো মন্টু। <br />জিওওওওওওও ! <br />বলে চেঁচিয়ে উঠলো রতন কালুয়া আব্বাস।<br />কি হলো রে?<br /> তড়িঘড়ি স্ট্যান্ডে অটোটা দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো বাবুলাল।<br />সিন্ধু জিতে গেছে!<br /> হৈ হৈ করে উঠলো অটোওলা ছেলেগুলো। <br />একটু দূরেই লাইনে দাঁড়িয়ে উশখুশ করা ভিড়টা <br />হঠাৎ ম্যাজিকে টোকিওর ফাঁকা স্টেডিয়াম ভরানো <br />উদ্বেল জনতা হয়ে গেলো।<br />মুখোশ পরা এক মহিলা সম্পূর্ণ অচেনা সামনের প্রৌঢ়কে বললেন,<br />‘ মেরি কম হেরে যাওয়াতে যা মন খারাপ হয়েছিলো!’<br />পেছন থেকে রঙচটা ছেঁড়া জিনসে শোভিত এক ছোকরা বলে উঠলো,<br />‘লাভলিনা কিন্তু জিতেছে। দীপিকা আর অতনুও!’<br />তাই শুনে হাততালি দিয়ে উঠলো <br />কাছের দোকানে থামস আপ কিনতে আসা কিশোর কিশোরী।</p>
<br /><p>ওপরের ঘটনাটির অকুস্থল কলকাতা হতে পারে <br />অথবা শিলিগুড়ি।<br />আগরতলা দুর্গাপুর বা আসানসোল <br />হওয়াও অসম্ভব নয়।<br />ভাষা ও চরিত্রগুলো পালটে দিলে, <br />একই দৃশ্য ঘটেছে, ঘটছে ও ঘটবে <br />মনিপালে, ভূবনেশ্বরে, কোটায়, <br />নাসিকে, পোর্টব্লেয়ার আর ইটানগরে।<br />জ্বরের কাছে জীবিকা খোয়ানো মানুষের দল,<br />উপায়বিহীন নদীতে শব বইয়ে দেওয়া মানুষের দল,<br />গরীব থেকে কপর্দকহীন ভিখিরি হওয়া মানুষের দল,<br />তাদের সস্তার মোবাইলে দেখছে কতগুলো নিখাদ ভারতীয়<br /> তির ছুঁড়ছে,<br /> ঘুষি মারছে ,<br />ব্যাডমিন্টনে সপাট স্ম্যাশে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিপক্ষকে।<br />আবছা হচ্ছে রক্তরুটি মাখা রেললাইনের স্মৃতি, <br />আবছা হচ্ছে নিজের দেশে হাজার মাইল হাঁটার ক্লান্তি,<br />আবছা হচ্ছে অক্সিজেন না পেয়ে পরিজন হারানোর শোক,<br />ডেল্টার আগামী আতংকও যেন এক নিরুপদ্রব বর্তমানের কোলে ঘুমিয়ে নিচ্ছে,<br />মশালের মতো দেশ জুড়ে জেগে উঠছে কিছু নাম<br />পি ভি সিন্ধু .. <br />মেরি কম..<br /> দীপিকা কুমারী.. <br />লাভলিনা বড়গোঁহাই..<br />মীরাবাই চানু.. <br />অতনু দাস .. <br />বজরং পুনিয়া<br />প্রাদেশিক বিবাদ, ভাষাসন্ত্রাস, <br />দলিত-উচ্চ খুনোখুনির দুধারে থাকা <br />লোকগুলোর মনে ঝলসে উঠছে একটাই নাম.. ভারতবর্ষ।</p>
<br /><p>এসবের থেকে বহুদূরে <br />ক্রিকেটের বিনোদন কর্তারা হিসেব করে চলেছেন, <br />কোন বিদেশী প্লেয়ার কোন দল কত কোটিতে কিনবে..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/khader-dike/খাদের দিকে2021-07-29T07:21:39-04:002023-06-26T17:18:41-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। খাদের দিকে।</p>
<br /><p>উড়ছে মানুষ, ঘুরছে মানুষ, <br />আকাশ সাগর পাহাড় মরু,<br /> সবার বাধা ফুঁড়ছে মানুষ,<br />কিন্তু আদিমকালের মতোই ঘেন্নারাগে পুড়ছে মানুষ, <br />ধর্ম ভাষা বর্ণ লেজুড় জন্ম থেকেই জুড়ছে মানুষ, <br />ঠাকুর্দাদার ঠাকুর্দাকে কাগজ খুঁজে খুঁড়ছে মানুষ,<br />হাজার হাজার বছর পেরোয়, <br />মানুষ কোথাও যাচ্ছে না,<br />কিছু লোকের ভোজ দুবেলা, <br />বাকি খেতে পাচ্ছেনা।</p>
<br /><p>যাচ্ছে রাজা, আসছে নেতা, <br />তফাৎ যে কী, বলবে কে তা<br />গণ হওয়ার আদিখ্যেতায় বাক্সতে ভোট পুরছে মানুষ,<br /> প্রতিশ্রুতির কোরানিতে ভাগ্য নিজের কুরছে মানুষ,<br />কিন্তু নেতা রাজার মতোই অবহেলায় ছুঁড়ছে মানুষ, <br />যেই গদি পায় তার থেকে যায় হাজার মাইল দূর যে মানুষ, <br />পার্টি আসে ,পার্টিরা যায়, <br />যুদ্ধ যেমন রাজায় রাজায়,<br />খাগড়া উলুর হুলুস্থুলু, হাল তবু কাল ফিরছে না,<br />বন্দরে সব নেতার জাহাজ, <br />ভাঙা ডিঙি ভিড়ছে না।</p>
<br /><p>দুনিয়াভরা রহস্যদের সব সমাধান করছে মানুষ, <br />হোক না অণু পরমাণু, কিংবা ভীষণ জ্বরজীবাণু,<br /> ক্ষুদ্র কত সূত্র খুঁজে  সবার সুলুক ধরছে মানুষ, <br />সাফল্যতে গগন ছুঁয়ে কীর্তিপাহাড় গড়ছে মানুষ,<br />কিন্তু ভেঙে হাজার দলে আগের মতোই লড়ছে মানুষ, <br />কারণবিহীন হিংস্রতাতে মাছির মতো মরছে মানুষ, <br />লাশের ওপর লাশ সাজিয়ে সিঁড়ির মতো চড়ছে মানুষ,<br />যন্ত্রে শুধু  অগ্রগতি , <br />মনের বদল হচ্ছে কই,<br />বেশি মানুষ নামছে নিচে, <br />কয়েকজনাই চড়ছে মই। </p>
<br /><p>আকাশ ছোঁয়ার অছিলাতে ফেলছে খুঁড়ে খাদ অথই।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/barora-sunben/বড়রা শুনবেন2021-07-26T16:01:56-04:002023-06-26T17:15:44-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। বড়রা শুনবেন। </p>
<br /><p>মাসিমা ও মেসোমশাইগণ, <br />থুড়ি থুড়ি ,কাকু ও কাকিমারা, <br />এক্সট্রিমলি সরি, এক্সকিউজ মি,  আঙ্কলস অ্যান্ড আন্টিস,<br />আমরা, মানে ক্লাস দশ আর বারো <br />দুহাজার একুশে দিলাম যারা,<br />আপনাদের কিছু বলতে চাই। <br />ইমপর্টান্ট, সো লিসন টু দিস, প্লিজ।</p>
<br /><p>উই ডিডন’ট চুজ কোভিড।<br />না,  আমরা বাছিনি অতিমারীকে,<br />আপনাদের মতো আমরাও জ্বরের ভয়ে ঘরের ভেতরে কেঁপেছি।<br />আচমকা স্কুল যাওয়া ছেড়ে <br />মোবাইলে ক্লাস করা নিতে হলো শিখে,<br /> মা বাবার হাসিমুখ ক্রমশ বিষণ্ণ হতে আমরা বাড়িতে বসে দেখেছি।</p>
<br /><p>আমাদের হাতে শুধু পড়াশোনা ছিলো, <br />কিভাবে চলবে সেটা নয়।<br />ভোটের প্রচার চালু, অথচ বন্ধ স্কুল, <br />এ নিয়ম করেছেন বড়দেরই সরকার,<br />আমাদের মতামত কেউ চায়নি। <br />টিচারদেরও কেউ জিজ্ঞেস করেননি <br />কি করলে ঠিক হয়,<br />উই ওয়্যার জাস্ট টোল্ড টু ফলো।<br />‘এটা অতিমারী, সকলের ঘরে থাকা দরকার।’</p>
<br /><p>আপনারা সান্ত্বনা দেবেন, অনলাইন ক্লাস চালু ছিলো। <br />প্লিজ ভাবুন, রিমেমবার ইয়োর স্কুল ডে’জ,<br />শুধু কি পড়াশোনার জন্য স্কুল? <br />বন্ধুত্ব, খেলাধুলা, খুনসুটি, টিনএজ লাভ,সব,  সব ওখানে<br />আমাদের পুরো কৈশোরকাল ঘরের ভেতরে শেষ হয়ে গেলো, <br />নেভার টু রিটার্ন উই গেস,<br /> মেমরিজ বলতে কী থাকলো বলুন তো? <br />নেক্সজেন  বুঝবে কি স্কুল ডে’জ মানে? </p>
<br /><p>এটা ওয়ার। ভীষণ যুদ্ধ। <br />অ্যান্ড লাইক অল ওয়ারস, চিলড্রেন আর অন দি লুজিং সাইড।<br />কারোর বাবা মা নেই, থাকলেও রোজগারে টান, <br />জ্বর খায় ছোটোবেলা আজ সব ঘরে,<br />আমরা কোথায় যাবো, কোথায় পালাবো, দেয়ার ইজ অ্যাবসোলিউটলি নো হোয়্যার টু হাইড,<br />ভারচুয়ালের এই শিক্ষার বোঝা নিয়ে  <br />রিয়েল ওয়ার্লডে গিয়ে লড়বো কি করে?</p>
<br /><p>এত কিছু হারিয়ে ফেলেছি, ফেলছি ও ফেলবো আগামী সময়ে। <br />উই আর ইন আ আনচার্টার্ড লেন,<br />হুইচ ইজ ডার্ক অ্যান্ড ডেঞ্জারাজ টু। <br />পরীক্ষা ছাড়া এই মার্কশিটয়ের সুবিধাটা এর সাথে পুওরেস্ট বার্গেন।</p>
<br /><p>আঙ্কলস অ্যান্ড আন্টিস, <br />এক্সামলেস রেজাল্ট নিয়ে মিম করবার আগে, <br />প্লিজ এই কথাগুলো ভেবে দেখবেন।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/ranna/রান্না2021-07-24T17:00:54-04:002023-06-26T17:22:59-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। রান্না।</p>
<br /><p>শিক্ষায় চিরকালই শাসকের কুন্ঠা, একবার জ্বেলে দিলে জ্ঞানের উনুনটা,<br />রাঁধবে যে কী সেটা বোঝা বড় শক্ত, চোখে চোখ রাখে কাল আজকে যে ভক্ত,<br />পাখি পড়া করে তাকে যে মশলা শেখানো, বুদ্ধিতে ধোঁয়া গেলে মুশকিল টেকানো,<br />যত বলো ঝাঁঝ হবে ধর্মের তড়কায়, ভিন্ন রকম স্বাদ হালালে ও ঝটকায়,<br />ওষ্ঠ উল্টে বলে শিক্ষিত রাঁধুনি, মানুষকে বাদ দিলে সবই লাগে আলুনি। </p>
<br /><p>যে খানা পাকানো হয় রাষ্ট্রের কিচেনে, ভাষা জাতি বর্ণের নানাবিধ ভিয়েনে,<br />সেখানে শিক্ষা ভারী বেয়াদপ খুন্তি,  অন্ধ স্তাবক পালে কমে যায় গুনতি,<br />শেখালেও শিখবে না ঘৃণা আঁচে ভাপানো, ভালোবাসা ঢেলে বলে আরো পাঁচ কাপ আনো,<br />কেটে নিতে যেই বলে বিভাজন ছুরিতে, মানুষকে ওরা গোটা রেখে দেয় ঝুড়িতে,<br />কাবাব করতে যদি হিংসার শিক চায়,  কিছুতে না পোড়ে যেন তাই দেখে শিক্ষায়।</p>
<br /><p>সুতরাং বড়জোর সাক্ষরই লক্ষ্য, রাষ্ট্রের সাথে নেই শিক্ষার সখ্য,<br />সাক্ষর যেই ক্রমে স্বাক্ষরে বদলায়, চোখ থেকে পটি খুলে নাগরিক হক চায়।<br />খুব কষে আঁটা চাই শাসনের বাঁধুনি, ফস্কা গেরোতে বাঁধে শিক্ষিত রাঁধুনি,<br />শিক্ষার ভ্রমে রাখো ঢেলে দিয়ে নম্বর, না শিখিয়ে ছোটো থেকে ভিত করো কমজোর,<br />পাশ করা লোক যেন দেশে হয় বাড়তি, নম্বরে চাপা পড়ে শিক্ষার আর্তি,<br />সত্যিই শিক্ষিত করে দিলে লোককে, মানুষের থেকে নেই রাষ্ট্রের রক্ষে।</p>
<br /><p>উসকিয়ে দিয়ে তাই নম্বরি ঝোঁককে, শাসকেরা বেঁধে রাখে ভাবনার চোখকে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/banan/বানান2021-06-12T07:17:34-04:002023-06-26T23:00:38-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। বানান। </p>
<br /><p>দেশটা শুরু হওয়ার সময়, <br />কর্তারা দেখলেন চারপাশ বড় এবড়োখেবড়ো।<br />কেউ বসে আছে এত উঁচুতে, <br />যে বাকি মানুষদের নাগরিকের বদলে পোকামাকড় বলে মনে হয়।<br />কেউ আবার এতটা খাদের ভেতরে, <br />যে অন্ধকারে হাতড়ে হোঁচট খাওয়াটা অভ্যেস হয়ে গেছে। <br />কোথাও মস্ত পাথুরে দেওয়াল প্রতিবেশীদের আলাদা করে রেখেছে,<br />কোথাও আবার যোগাযোগের পথ এত বন্ধুর, <br />যে বন্ধুত্ব হওয়া প্রায় অসম্ভব।<br />কর্তারা বুঝলেন,একটা কোদাল চাই।</p>
<br /><p> সব ফাটল ভরিয়ে, <br />জমি সমান করে, <br />সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা একটা হাসিখুশি ভরা দেশের জন্য,<br />একটা কোদাল তৈরি করলেন তাঁরা।<br /> নাম দিলেন, সংবিধান।</p>
<br /><p>কোদাল কথাটা লেখার সময়, কারা যেন ‘কোদ’ অবধি লিখে ,<br />আকার আর ল’টাকে অস্পষ্ট রেখেছিলো,<br />ইচ্ছাকৃত না অনবধানবশত, <br />সেকথা এতদিন পরে কারো মনে নেই।<br />তবে সবাই জানতো বলে মনে মনে ওটা ভরে নিতে অসুবিধা হতো না,<br />কোদালই যে লেখা , <br />তাই নিয়ে কোথাও কোনো সংশয়ও ছিলো না।</p>
<br /><p>মুশকিল হলো তারপরে ওই কোদালটার বেঠিক ব্যবহারে। <br />কখনো খাদের চারদিকে পরিখা খুঁড়ে সেটাকে সংস্কার বলে চালানো হলো,<br />কখনো আবার পাহাড়গুলো আরো উঁচু করা বলো সংস্কৃতির অছিলায়।<br />দেওয়াল আর ভাঙলো কই, <br />বরং এদিক সেদিক মাটি কেটে <br />আরো বেশ কিছু পাঁচিল তোলা হলো,<br />কালেভদ্রে যে কটা গেট তৈরি হয়েছে , <br />তার প্রত্যেকটাতেই কারো না কারো প্রবেশ নিষেধ লেখা আছে।</p>
<br /><p>তারপরে ঘটলো সেই কাণ্ডটা। <br />কারা যেন দাবী করে বসলো<br />কোদ’এর পরে আকার ল নয়, <br />আসলে ণ’য় ডয় লেখা ছিলো।<br />ওটা কোদণ্ড হবে , মানে ধনুক।<br />কর্তারা আসলে সকলকে যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে বলেছেন।</p>
<br /><p>প্রথমে অল্প হলেও,<br /> ক্রমে ক্রমে বেশি লোক বিশ্বাস করতে শুরু করে দিলো ধনুকতত্ত্ব,<br />কিছুলোক তো প্রমাণও করে দিলো,<br />ভালো করে তাকালেই বোঝা যায় <br />ওটা প্রথম থেকেই কোদণ্ড লেখা,<br />কোদাল ভাবাটাই ভুল হয়ে গেছে।</p>
<br /><p>সেই থেকে দেশটাতে <br />পাহাড় থেকে, <br />খাদের থেকে, <br />পাঁচিলের ওপর আর <br />ঝোপের আড়াল থেকে,<br />নাগরিকেরা পরস্পরের উদ্দেশ্যে সাঁই সাঁই করে <br />চালিয়েই চলেছে তীক্ষ্ণ সব বাণ।</p>
<br /><p>আজকাল ইতিহাসবিদেরও ধন্দ লাগে, <br />কোদাল না কোদণ্ড,<br />কি বানান লিখেছিলো সেই সংবিধান।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/ajob-tika/আজব-টিকা2021-06-01T07:24:17-04:002023-06-27T07:16:08-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। আজব- টিকা।</p>
<br /><p>( সরল সুবোধ কবির লেখা , চরিত্র সব কাল্পনিক,<br />  কারোর সাথে মিল পেলে ভাই মন্দ তোমার ভাবগতিক)</p>
<br /><p>আজবনগরে জ্বর-ঢেউ দিলো সে কি দাদা জোর ধাক্কা,<br />টক্করে তার টক করে মিঠে ক্ষমতার সব দ্রাক্ষা। <br />ফুঁসছে সবাই, দুষছে রাজাকে, যেন তিনি বড় ডাক্তার,<br />অথবা  সুনামি এসেছে বুঝি বা শুনে বুক ঠোকা হাঁক তার।<br />বেচারা রাজাটি সাতে পাঁচে নেই, ফালতুই গালি শানানো,<br />ইদানিং তাঁর মন জুড়ে আছে কেবল প্রাসাদ বানানো।</p>
<br /><p>আজবের নদী জুড়ে ভাসে লাশ, চিতা অনিবার জ্বলে,<br />কান পাতা দায় হলো  আজকাল প্রজাদের কোলাহলে।<br />প্রাসাদ বানানো যদিও চলছে, তবু জ্বর বড় ঝক্কি,<br />বেসুরো গাইছে একদা বাধ্য নীলরঙা টুনি  পক্ষী,<br />গোনাগাঁথা ক্ষুদে বিরোধীপক্ষ, দিচ্ছে তারাও হুংকার,<br />তোমরাই বলো এরকম হলে শান্তিতে হবে ঘুম কার!</p>
<br /><p>দাবানল হয়ে ছড়ানোর আগে নেভাতেই হবে শিখাকে<br />রাজসভা বলে মহারাজ দ্রুত ছড়াতেই হবে টিকাকে।<br />কিন্তু আগেই খালি হয়ে গেছে কেনা ভ্যাক্সিন ভাণ্ডার<br />প্রাইভেটে সব টিকা কারখানা, নয়কো রাজার আন্ডার,<br />তিনশো’র মাল দেড়শোতে বেচে গিয়েছে রাজার ধমকে <br />মাল ডেলিভারি মোটেই দেবে না এইবারে দিলে কম ওকে,<br />অথচ রাজার সালের বাজেটে প্রাসাদই প্রধান লক্ষ্য,<br />সাপ মরে যাবে লাঠি ভাঙবে না কোথায় এমন ছক গো?</p>
<br /><p>রাজার মন্ত্রী বাজারপন্থী, বিনিয়োগে হাত সিদ্ধ,<br />( বিরোধীরা তাঁকে প্রায়শই করে বেচুবাবু নামে বিদ্ধ)<br />বললেন তিনি , দুগুনে কিনুক প্রদেশের যারা কর্তা,<br />টিকা বেচে হলো যত লোকসান, তাতেই পোষাবে পড়তা।<br />চারগুন দামে প্রাইভেটে  বেচে টিকা কোম্পানি দিক তো,<br />আতংক কাজে কিভাবে লাগাবে, বোকাগুলো যদি শিখতো।<br />রাজা বললেন , নানান দামেতে বেচলে নানান জায়গায়,<br />এটা তো বোঝাও সিংহাসনটি পাকা হবে কোন কায়দায়।</p>
<br /><p>মন্ত্রী বলেন, আটগুন দামে প্রাইভেটে হলে বিক্রি,<br />সে দাম দিয়েও মধ্যবিত্ত নিয়ে নেবে টিকা শিগ্রী।<br />তাদের মনে যে ভয়টা ঢুকেছে, সেটাই লগ্নি বাজারে,<br />তিনশোর মাল ভিড় করে ঠিক নিয়ে নেবে দেড় হাজারে।<br />প্রদেশেপতিরা দাঁত কিড়মিড় যতই করুক মূল্যে<br />তারা জানে জ্বর হু হু করে বাড়ে টিকা ছাড়া লক খুললে।<br />সুতরাং তারা বাকি জনতাকে টিকা দিতে হবে ব্যস্ত,<br />কর ছাড় নেই টিকার ওপরে, রাজারও বাড়বে রেস্তো।</p>
<br /><p>মহারাজ যেই এইভাবে হবে গোটা দেশে টিকা সাঙ্গ,<br />আঁটি রেখে দিয়ে বাকিদের ভাগে চুষে নেবো গোটা ম্যাঙ্গো।<br />পৃথিবী জানবে পুরো দেশ টিকা পেয়েছে রাজার জন্য<br />আকাশের থেকে পাপড়ি ছড়াবে, পড়বে ধন্য ধন্য।</p>
<br /><p>রাজা বললেন মন্ত্রী তোমার বেতন দিলাম বাড়িয়ে,<br />মসমস করে মসনদ যাবে মারীকেই পায়ে মাড়িয়ে।</p>
<br /><p>বাইরে কাদের কান্নার রোল জ্বরে প্রিয়জন হারিয়ে...</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/koifioter-pore/কৈফিয়তের পরে2021-05-25T03:27:16-04:002023-06-26T17:18:59-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>( এ কবিতাটা পড়ার আগে কাজী নজরুলের ‘আমার কৈফিয়ৎ’ পড়া প্রয়োজন ।সেই অমর কবিতার বর্তমান প্রেক্ষাপটে অক্ষম অনুকরণ)</p>
<br /><p>                  । কৈফিয়তের পরে।</p>
<br /><p>অতীতকালের ছবি তুমি নও, কালিমা রয়েছে সেই সবই,<br /> সমকাল জুড়ে  ঝগড়া চলেছে পুরুত বনাম মৌলবী।<br />এখনো চাঁদেরা এদেশে আলাদা,<br />জেহাদ আর লাভ হাইফেনে বাঁধা<br />ধর্ম নিংড়ে রস চুষে খায় রাজনীতি করা মৌ লোভী,<br />অভাগার শুধু সম্বল তুমি আর স্থির জ্বলা ওই রবি।</p>
<br /><p>বিরুদ্ধমতে কিছু লেখা হলে এখনো কবিরা যায় জেলে<br />ছাড়াতে পারে না আইনের প্যাঁচে পরিজন আজও হায় বেলে।<br />যে আগুন ছিলো তোমার লেখাতে,<br />মশালে তা যদি জ্বলে কারো হাতে,<br />অশ্বেত প্রভুরা সদা তৎপর ,দ্রোহী সে দেশের রায় মেলে,<br />পোষ্য আই টি মিডিয়াতে এসে যত বিষ গায়ে যায় ঢেলে।</p>
<br /><p>শ্যামাসঙ্গীত এযুগে লিখলে শুরু হয়ে যেতো ধেই নাচা,<br />পিঁজরার চাবি দিয়েছিলে বটে, এখনো খোলেনি সেই খাঁচা।<br />এখনো হিন্দু আর ইসলামী<br />মানুষভাগের করে ভণ্ডামি,<br />জাত জালিয়াত বজ্জাতি করে মানুষকে বলে জান বাঁচা,<br />দাঙ্গায় যার হাতে সুতো থাকে, অনেক উঁচুতে তার মাচা।</p>
<br /><p>মারী এসে গিয়ে নিয়মে পেঁচিয়ে দিলো গরীবের ভাত মেরে<br />দেশ ভালো আছে বলে তবু যান মহান নেতারা হাত নেড়ে,<br />কাণ্ডারী বলে কেউ নেই আর,<br />ঢেউয়ের দাপটে দেশে হাহাকার,<br />অসুখের দায় জনতাকে দিয়ে রাষ্ট্র ফেলেন হাত ঝেড়ে,<br />জ্বর আর অভাব বসেছে জাঁকিয়ে, সুখ চেটে খায় পাত পেড়ে।</p>
<br /><p>রাজার প্রাসাদে কোষাগার খোলে ভ্যাক্সিনে করে কঞ্জুসি,<br />আগামীতে আরো অশনি হানার সংকেত দেয় ক্রন্দসী<br />বুক ফাঁকা করে গেলো কত পাখি<br />এই শোক কবি কার কাছে রাখি<br />যাপন খুবলে আরো ক্ষত করে রোজ বিষাদের খোক্কুসি,<br />সেনসেক্স কার্ভ তবুও ঊর্ধ্বে , ধনী লোকেদের মন খুশি।</p>
<br /><p>রাষ্ট্রের ভাষা না লিখলে আজ সে কলম দেশ-বিদ্বেষী,<br />তোমাকেও কাজী হয়তো বা কেউ বলে দিতে পারে ভিনদেশী।<br />দে গরুর গা ধুইয়ে চেঁচালে,<br />ঝটিতে পড়বে ভীষণ ক্যাচালে,<br />ইচ্ছামাফিক এদেশে এখন যায় না গো গাওয়া গীত বেশি,<br />ভাবাবেগে ঘা অভিযোগে আসে দ্রুত গ্রেপ্তারি নির্দেশই।</p>
<br /><p>দেশের ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি, কুকুর যেমন হাড় পিছু,<br />জিতে যায় যারা, জনতার  হিতে খরচ করেনা আর কিছু।<br />বলো বীর বলে দিলে হুংকার <br />পেছনে পেয়াদা লেগে যাবে তার<br />নাগরিক জানে সেই বেঁচে থাকে যার আজীবন ঘাড় নিচু,<br />উন্নয়নের বৃক্ষের পায়ে তারা স্রেফ গুঁড়ো সার কিছু।</p>
<br /><p>মন্দিরও আজ ঘোলাজল মেপে ভোটার ধরার ফন্দী রে,<br />লক্ষ্মণরেখা বনেছে পরিখা, ধর্ম দিয়েছে গণ্ডী রে।<br />এসময়ে কবি তোমার রচনা,<br />সাম্যের বাণী দুগ্ধে গো-চোনা<br />সংবিধানের নতুন বিধানও নয় সেকুলারগন্ধী রে,<br />জাহাজ দুলছে, জানি না আগামী আছড়ে ফেলবে কোন তীরে।</p>
<br /><p>হিংসা যখন বাড়ায় ব্যাপ্তি ফেক নিউজের ভুলভালে, <br />এখনো রয়েছে কিছু আধাখ্যাপা, লিখছে কবিতা ভুল চালে,<br />তারা বলে যায় খুঁজে দেখো মূল,<br />রয়েছেন  বসে রবি নজরুল,<br />তাঁদের আলোতে পথ খুঁজে নিও বিভেদ আঁধার উসকালে,<br />এখনই তোমার প্রয়োজন কাজী, জন্ম নিয়েছো ভুল কালে।</p>
<br /><p>বিভাজন বাঘ নরঘাতী আজ ভোটশিকারের স্বাদ পেয়ে,<br />কে জানে কোথায় তল পাবো শেষে দেশ নামে যেই খাদ বেয়ে<br />বদলাতে চায় কারা ইতিহাস,<br />সত্যের ছোঁয়া নেই কিছু খাস,<br />যেন বা বামন  ক্ষমতার ভ্রমে বসে হাতে তার চাঁদ চেয়ে,<br />হয়তো ভেবেছে এত কোটি লোক ব্যা করে ডাকা চারপেয়ে।</p>
<br /><p>চারিদিকে লোক হামাগুড়ি দেয়, শিরদাঁড়া খায় ভয়ের ঘুণ,<br />তোমার কবিতা হয়নি আবছা, এমনই তাদের জ্যোতির গুণ<br />এই মনে হয় কাল যেন লেখা<br />তুমি সাথে হলে কই আর একা<br />ক্লান্ত যোদ্ধা তোমার স্মরণে ফের ভরে নেয় কথার তূণ,<br />তুমি আছো বলে শীতল হয়নি এখনো শরীরে কারোর খুন। </p>
<br /><p>অতীতকালের কবি তুমি নও, বর্তমানেই তোমার বাস,<br />তোমারই অশ্রু আমার দুচোখে নদী বয়ে যায় যখন লাশ।<br />অন্ধ সময়ে জমে রোজ ভুল<br />সমকালে এসো কাজী নজরুল,<br />নাগরিক হতে চাইছি সবাই  রাষ্ট্র যখন চাইছে দাস,<br />আর যে সয়না বশ্যতা চেয়ে আইনের ছলে ছড়ানো ত্রাস।</p>
<br /><p>জানিনা হে কাজী, এ কবির শেষ কারাগারে নাকি বন্দুকে,<br />দেশ ভালো নেই, অমল কবিতা লিখে যাবো বলো কোন মুখে!<br />এখনো তুমিই, ওগো দুখু মিঁয়া<br />বিপরীত স্রোতে কথা-জাগানিয়া, <br />বিদ্রোহী হতে তুমিই প্রেরণা দেশ ধরে রেখে এই বুকে,<br />কখনো হতাশা ধরলে হে কাজী তোমার নামেই দিই রুখে।</p>
<br /><p>বর্তমানের কবি হয়ে তুমি এখনো বেড়াও  দীপ জ্বেলে<br />পরোয়া করিনা তাই তো এ দ্রোহ ক্ষমতাবানেরা টের পেলে।<br />এ কলম স্রেফ নকলনবিশ, নতুন কিছুই লেখে না খাস,<br />শিরদাঁড়া হোক তোমার মতন, যতদিন এই শরীরে বাস।</p>
<br /><p>সাম্যবাদের মন্ত্রে জ্বলেছি তুচ্ছ লিখিয়ে দেশের দাস।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/mushalporbo/মুষলপর্ব2021-05-19T07:11:16-04:002023-06-26T17:19:32-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। মুষলপর্ব। </p>
<br /><p>তিনি দেখছেন অসহায় হয়ে, <br />ঝগড়া করছে কৃতবর্মা আর সাত্যকি।<br />এই কিছুক্ষণ আগেও দুজনে একসাথে বসে মদ খেয়েছে,<br />তারপরই অকস্মাৎ অতীতের ভুল নিয়ে মারামারি বেঁধে গেছে।<br />তিনি দেখছেন, <br />ঝগড়া করছে নাসির আলি আর পরান মণ্ডল,<br />আহ, না না, ওরা  তো সতবির সিং আর মীর মহম্মদ! <br />ওই তো ছুটে যাচ্ছে প্রদ্যুম্ন , <br />সাত্যকি মাথা কেটে দিলো কৃতবর্মার,<br /> তিনি দেখছেন, কমল বসাকের বুকে ছুরি বসিয়ে দিয়েছে আমজাদ শেখ, <br />আমজাদের মাথায় তরোয়ালের কোপ বসালো হিম্মত সিং।<br /> প্রদ্যুম্ন , তাঁর প্রিয় পুত্র , কৃতবর্মার বন্ধুর হাতে ওই তো নিহত..<br /> তিনি শুনছেন, গণেশের মা আর আব্দুলের আম্মির কান্নার আর্তনাদ, <br />কি আশ্চর্য ,<br />শোকের স্বরে বা শব্দে কোনো তফাত নেই। </p>
<br /><p>তিনি দেখছেন, <br />যাদবেরা এক এক করে তুলে নিচ্ছে শরকাঠি, <br />আর মুহূর্তে সেটা মুষল হয়ে যাচ্ছে, <br />মুষল হয়ে যাচ্ছে গৌরহরির হাত-দা,<br />আজমলের গাঁইতি, সতবন্তের শাবল, <br />চারদিকে জ্বলে উঠছে আগুন, <br />দাউ দাউ করে পুড়ে যাচ্ছে দ্বারকা, <br />জ্বলছে হিন্দুর বাড়ি, পুড়ছে মুসলমানের ঘর, <br />তিনি শুনছেন <br />বাতাস কান চাপছে গণধর্ষিতা হিন্দু মুসলিম শিখ মেয়েদের ছিঁড়ে যাওয়ার চিৎকারে,<br />আহ দারুক, প্রিয় সারথী আমার, <br />যাও এ খবর নিয়ে অর্জুনের কাছে,<br /> যাদবরমণী আর নিরাপদ নয় । </p>
<br /><p>তাঁর হাত থেকে উধাও হয়ে গেছে সুদর্শন চক্র , <br />নিখোঁজ হয়েছে পাঞ্চজন্য, <br />অসহায় বিষাদে তিনি শুধু দেখতে পারেন এই স্বজনঘাতী সংগ্রাম। তিনি দেখছেন, <br />অন্ধকেরা অনেকে মিলে ঘিরে ফেলেছে কয়েকজন বৃষ্ণিকে, <br />তাদের হিংস্র উল্লাসে শুধু শোনা যাচ্ছে <br />মার কাফেরগুলোরে, <br />মার কাটার বাচ্চাদের, <br />পাগড়ি খুলে টায়ারে জ্বালা পাঁইয়া শালাদের,<br /> মার মার মার...<br /> চারদিকে মুষলের আঘাতে লুটিয়ে পড়ছে চেনা যাদবদের লাশ, অন্ধক, বৃষ্ণি, কুকুর, ভোজ.. <br />কোনো তফাৎ নেই মৃত্যুতে। </p>
<br /><p>    প্রিয় বলরাম, কোথায় তুমি? <br />রক্তের কাদা মাখা জন্মের ভূমি, <br />এসময় কোথায় লুকালে সংকর্ষণ?<br /> অন্তত উপক্রমণিকা শোনাও,<br />‘ We, the people of India’..<br /> তিনি খুঁজছেন, কৌরব পান্ডব সমান ভাবা বলভদ্রকে, <br />নিরপেক্ষতা যার আজীবন সম্পদ, <br />পাতায় পাতায় লেখা নাগরিক শান্তি ও শৃঙ্খলা রাখার উপায়, কোথায় তুমি সেকুলার সংবিধান? <br />মৃত মানুষের স্তুপের অন্ধকারে, দিব্যদৃষ্টিতে তিনি দেখলেন,<br />ধর্মনিরপেক্ষতা দেহত্যাগ করছেন, <br />আর তাঁর নাসারন্ধ্র থেকে বেরিয়ে আসছে সহস্র ফণার এক বিষধর সাপ,<br />যার প্রতিটি  ছোবলে আগামী জর্জরিত হবে।</p>
<br /><p>   হঠাৎই একটা তির লাগলো তাঁর পায়ে।<br /> তিরই তো, নাকি ওটা বুলেট? তিনি বুঝতে পারেননা,<br /> শুধু দেখেন রক্ত ছিটকিয়ে তাঁর বসন ভিজিয়ে দিচ্ছে।<br />ঘোলাটে হয়ে আসা দৃষ্টিতে তিনি দেখতে পান, <br />তাঁর স্বভূমি তলিয়ে যাচ্ছে যুক্তিবিহীন অথই হিংসার সমু্দ্রে। <br />তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে আততায়ীকে দেখেন। <br />কে তুমি , হত্যাকারী ব্যাধ? জরা, না নাথুরাম?</p>
<br /><p>     জন্মভূমির বাতাস শেষবার ফুসফুসে নিয়ে তিনি অস্ফুটে উচ্চারণ করেন  ‘ হে রাম!’</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/dayi/দায়ী2021-05-15T14:42:05-04:002023-06-26T17:16:48-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। দায়ী।</p>
<br /><p>সন্ধ্যা নামছে ধীরে, শান্ত তপোবন।<br /> সন্ধ্যাপ্রদীপ ঘিরে বসে পাঁচজন, আহ্নিক সমাপন করে। <br />বেদ অভ্যাসে থেকে সারাদিন ধরে,<br />কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস বসেছেন প্রিয় চার শিষ্যের সাথে , <br />ডান পাশে পৈল ও সুমন্ত , বাঁয়ে জৈমিনি , সামনে বৈশম্পায়ন,<br /> গুরুর রচিত ‘জয়’ কাব্যটি হাতে।<br />  সারাদিনমান গেছে  নিরস সূক্তদের তত্ত্বতালাশে,<br /> ব্যস্ত সময় কাটে  ঋক সাম অথর্ব যজুর বিন্যাসে ,<br />সন্ধ্যার পরে আর ওইসব আলোচনা গুরুর বারণ। <br />সে সময় ‘জয়’ পাঠে চারজন করে থাকে  অনিন্দ্য কাহিনীর মধু আহরণ।</p>
<br /><p>হঠাৎই বলেন পৈল, ঋকবেদ-হোতা, <br />‘ক্ষমা করবেন গুরু দীনের মূঢ়তা, <br />শেষ অবধি বিনষ্ট হলো এগারোটি বীর বাদে সব ক্ষত্রিয়, <br />এমন ভয়ঙ্কর সমরকথন নেই কোথাও দ্বিতীয়। <br />কুরুক্ষেত্রে সেই ভারতবিনাশের দায়  দেওয়া যায় কোন চরিত্রকে? সেকথা স্পষ্ট করে লেখা নেই আপনার আট হাজার শ্লোকে।’</p>
<br /><p>ব্যাস হেসে বললেন, ‘তোমাদের অভিমত শুনি? <br />দুর্যোধন দুঃশাসন কর্ণ শকুনি, <br />শুধুই এদের জন্য আসেনি বিনাশ, বুঝেছো তা ঠিকই।<br />তাহলে সে কে ছিলো, নেপথ্য থেকে জ্বালে যে আগুন ধিকি, <br />বলো দেখি ভেবে। যুদ্ধের দায় খুঁজে কার কাঁধে দেবে?’</p>
<br /><p>বললেন জৈমিনি, ‘আমি তো দোষ দেবো গান্ধারীকে।<br /> প্রতিশোধে বিঁধে দিতে অন্ধ পতিকে, <br />চক্ষুষ্মতী হয়ে তিনি দৃষ্টিবিমুখ, <br />নাহলে বুঝতেন ঠিক, শুরুতে বিনষ্ট হতো ঈর্ষা অসুখ।’</p>
<br /><p>‘প্রতিশোধ?’চমকে বললেন  সুমন্ত,<br /> ‘পতিপরায়না তিনি, প্রতিশোধী নন তো!’<br />মৃদু  হাসলেন জৈমিনি , <br />‘তাহলে চোখ না বেঁধে স্বামীর দৃষ্টি হয়ে বাঁচতেন তিনি, <br />আলোর পৃথিবীর যাবতীয় অনুভব তবে ধৃতরাষ্ট্রের হতো না অধরা, অন্ধের সাথে পরিণয়ে যেই অন্যায়, তার প্রতিশোধে ওই চোখে পটি পরা।’</p>
<br /><p>‘তাহলে তো ভীষ্মই দায়ী! মুখ খুললেন বৈশম্পায়ন। <br />যখন চেয়েছে তাঁকে কুরুসিংহাসন, <br />এড়িয়ে গেছেন দায়। <br />যোগ্য পুরুষ ছেড়ে বিচিত্রবীর্য রাজা, রাজ্যের সাথে সেটা ঘোর অন্যায়। <br />ভাই মারা গেলে, কেন তিনি বিয়ে করে নিজেই নেননি তুলে শাসনের ভার?<br />ক্ষমা করে গিয়েছেন দুর্যোধনের ভুল, কখনো টানেননি রাশ তার স্পর্ধার।’</p>
<br /><p>‘সে ক্ষেত্রে তো দায়ী করে যায় আমাদের গুরুকেই।’<br />পৈলের অভিযোগ শুনে আর কারো মুখে কথা নেই,<br /> দৃষ্টিরা ঘুরে গেছে মহর্ষির দিকে। <br />মৃদু হেসে ব্যাস বললেন,’জেনেশুনে ঔরসে জন্মাতে দিয়েছি দুই প্রতিবন্ধীকে, <br />সেটাই বলবে জানি।<br /> তাতে আমি কেন হতে যাবো বলো অভিমানী, <br />জয়ের চরিত্র ব্যাস আমারই কল্পনা বটে, তবে আমি নই। <br />আজ থেকে সহস্র বছর পরে যাতে লোকে মনে রাখে, কে লিখেছে বই,<br />তাই ওকে করেছি সৃজন। <br />হতে পারে, তোমরা খুঁজছো যাকে ব্যাসই সেই জন।’</p>
<br /><p>‘না গুরুদেব, দায়ী অন্য অস্ত্রগুরু, মহাবীর দ্রোণ।’<br /> বললেন বৈশম্পায়ন। <br />দ্রুপদের প্রতি তাঁর  প্রতিশোধ নিতে, <br />যে মূল্য বললেন দক্ষিণা দিতে, <br />তারই অপমান থেকে জন্ম যাজ্ঞসেনীর । <br />তাঁকেই কেন্দ্র করে তাবত যুদ্ধকথা এই কাহিনীর।’</p>
<br /><p>‘যুধিষ্ঠির নন কেন? সুমন্ত স্পষ্টত এতে অসম্মত।<br /> পাশাতে অমন বাজি নাই যদি হতো, <br />যদি অভিসন্ধি বুঝে ফেলে যদি উঠে আসতেন  ঘুঁটি ফেলে ছুঁড়ে, দূরত্ব থেকে যেতো  ইন্দ্রপ্রস্থ আর হস্তিনাপুরে ।’</p>
<br /><p>‘তাহলে তো কুন্তীই দায়ী হন ভাই ! <br />বক্তা জৈমিনি, যজুর্বেদ-জ্ঞানী, তিনিও উত্তেজিত যারপরনাই। শতশৃঙ্গ থেকে হস্তিনাপুর আসা ছিলো শুধু আশ্রয় চাওয়া  না সিংহাসনের দাবীতে?<br /> অবদান কম নয় তাঁরও সেই যুদ্ধের ভিত গড়ে দিতে, <br />কর্ণ নিপাত করা মাতৃস্নেহের অছিলায় <br />অথবা দ্রৌপদীকে বন্টন করে দেওয়া পাঁচটি ভ্রাতায়,  <br />তাঁর ক্ষমতালীপ্সার কথা করছে প্রমাণ।’</p>
<br /><p>আর কৃষ্ণ? বললেন পৈল। যুদ্ধের দায় তিনি কিভাবে এড়ান?<br />কর্ণের পরিচয় যুধিষ্ঠিরকে দিলে,<br /> তাঁকে রাজা মেনে নিতো দুপক্ষ মিলে,<br /> বরং বিপরীতে গিয়ে তিনি ধনঞ্জয়কে টেনে নামান সমরে,<br />ত্রিকালদর্শী তিনি, ধ্বংসের দায় তাই তার ওপর পড়ে।’</p>
<br /><p>‘তোমরা জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ, বেদ বিভাজন করো তর্কাতীত দক্ষতাতে। <br />তবু নও একমত কেউ কারো সাথে,  <br />কাব্যরচয়িতার লক্ষ্য সফল হয়েছে তবে। এ আমার নিশ্চিত শ্রেষ্ঠ রচনা।’<br />বলে থামলেন ব্যাস। শিষ্যরা থামালেন গূঢ় আলোচনা, <br />সবিনয়ে ব্যাসকেই প্রশ্ন করেন চারজনে,<br />‘যুদ্ধের দায়ী বলে আপনি  ভাবেন কাকে মনে?’<br />হাসলেন ব্যাস ।’ওরা সকলেই, এবং আরো অনেকে। <br />যুগ থেকে যুগ যেন পড়ে লোকে শেখে, <br />একার কারোর নয় ধ্বংসের দায়। <br />সমকালে যারা কুশীলব,সকলের ওপরে সে দায় বর্তায়।’</p>
<br /><p>একটা প্রদীপ ঘিরে চুপ পাঁচজন। ভাগীরথী কুলুকুল করে বয়ে যায়।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/murti-2/মূর্তি ২2021-05-05T14:20:38-04:002023-06-26T17:19:30-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। মূর্তি।</p>
<br /><p>মূর্তিটা সব দেখে । <br />আকাশে হেলান দিয়ে নিচে , বহু নিচে খুদে খুদে মানুষের কীর্তিকলাপ,<br /> নড়বড়ে স্তম্ভতে স্বপ্নের রাষ্ট্রের সব অপলাপ,<br />সবকিছু সে দেখতে পায় , <br />ছলাৎ ছলাৎ করে সময়কে সাথে করে নদী বয়ে যায়। </p>
<br /><p>বহুদূর দিল্লীর থেকে , <br />বাতাস দুফাঁক করে মূর্তির কানে আসে লাশ বনবার আগে জীবিতের শেষ আর্তনাদ। <br />নাকে আসে কটু ঘরপোড়া গন্ধ, <br />মানুষে মানুষ কাটে যেন উন্মাদ,<br /> বহু ওপরের থেকে এক চিলতে নরক নজরে আসে।<br /> মূর্তি চেঁচাতে যায়, বাপুজীইইই.. আবার নোয়াখালি... কলকাতা... বিহার.. আমি আছি আপনার পাশে,<br />থামাতে হবে এই আত্মবিনাশ.. <br />আহ জওহর, আজাদ, খানসাহেব, <br />দেখো দেখো এখনো লড়ছে ওরা , <br />ধর্মের অজুহাতে মানুষের হত্যাতে কি যে উল্লাস..<br />মূর্তি চেঁচাতে যায় , তারপরে বোঝে কেউ শোনবার নেই।<br />এ শোক বইতে হবে একলা তাকেই।</p>
<br /><p>মূর্তি দেখতে পায় অগণিত কারা চলে পথে প্রান্তরে। <br />জীবিকা নিহত বলে জীবন বোঁচকা বেঁধে কারা যেন হেঁটে বাড়ি ফেরে।<br /> দুহাতে ক্লান্ত শিশু, পাশে আরো হাক্লান্ত বউ নিয়ে পুরুষ ফিরছে তার গ্রামে,<br /> সাইকেলে বাপ নিয়ে কন্যা সভয়ে দেখে পথে সাঁঝ নামে, <br />কাদের অবসন্ন দেহ ছিন্নভিন্ন করে বুকের ওপর দিয়ে গেলো রেলগাড়ি,<br />মাঝপথে বন্ধুকে ছেড়ে না ফেরার দেশে দিলো তার দোস্ত পাড়ি,<br />মূর্তি অবাক হয়ে দেখে ।<br /> আকাশকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করে বসে সূর্যকে সে, <br />পার্টিশন এখনো কি এমন জ্বলন্ত আছে  আমার স্বদেশে?<br />সূর্য পাঠিয়ে তাকে গোধূলির আলো, <br />অস্তে যাওয়ার আগে আস্তে বোঝালো,<br /> তুমি তো অতীতস্মৃতি, মূলের মানুষটাকে ভুল উপহার,<br />দূর থেকে দেখা ছাড়া কী আছে তোমার?</p>
<br /><p>মূর্তি তবুও দেখে। <br />যেদিকে দুচোখ যায়, শ্মশানে শ্মশানে ভরে জ্বলন্ত লাশ, <br />মূর্তি কঁকিয়ে ওঠে... জওহর, রাজেন্দ্র কই, কোথায় সুভাষ, <br />এখনো কি এই দেশ জনতার নয়? <br />ভীমরাও , কিছু কি লিখতে বাকি আছে সংবিধানে? <br />ওদিকে প্রাসাদ দেখি এইদিকে শব,  <br />গণতন্ত্রের তবে আছে কোন মানে? <br />এত শব, <br />এত লোকে কাতরায় শ্বাসবায়ু না পেয়ে আজ চারদিকে, <br />তবু ওরা এক নয়, মারামারি চালু আছে প্রতীকে প্রতীকে! <br />এ কোন স্বদেশ যেখানে চিকিৎসা কম আর ধর্মের আচারের  এত বাড়াবাড়ি ? <br />এরই মাঝে খুনোখুনি, ভোট শেষে ভাঙচুর বিরোধীর বাড়ি, <br />জ্বরের শবের সাথে মিশে যায় ভোটজয়ে উল্লাসে বলি হওয়া মৃত! ...বাপুজীইইইই.. জওহর.. আজাদ.. সুভাষ...খানসাহেব...<br />নামবো পথে আমরা আবার,<br /> স্বাধীনতা এই দেশে আজও আসেনি তো। </p>
<br /><p>মূর্তি চেঁচাতে গিয়ে বারবার বোঝে, <br />এই দেশে কথা বলা যায়না সহজে। <br />তার শুধু একটাই কাজ, নিচে যা চলছে সেটা অসহায় দেখা।</p>
<br /><p>আকাশ মাথায় নিয়ে মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকে। <br />গণতন্ত্রের মতো একেবারে একা।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/tukre-tukre/টুকরে টুকরে2021-04-02T11:52:14-04:002023-06-26T22:11:03-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। টুকরে টুকরে।</p>
<br /><p>ভারতবর্ষ একটা নয়, দুটো।<br />একটা গরীবের একটা বিত্তবানের।<br />প্রথমটায় ক্রমাগত তাড়না কাল কি খাবে.. জবাবে কখনো আধপেটা হ্যাঁ কখনো নিষ্ফলা না ।<br /> দ্বিতীয়টাতেও জিজ্ঞাসা একই, কাল কী খাবে? <br />জবাবে মোগলাই না চাইনিজ, <br />ঘরে না বাইরে, পার্টি না ক্যান্ডললাইট, এম সি কিউয়ের ছড়াছড়ি।<br />দরিদ্রের ভারতবর্ষে ভাতের বিনিময়ে সব পাওয়া যায়, <br />দেহ, ভোট, বিরূপ সাক্ষ্য এবং জামিনবিহীন হাজতবাস,<br /> আর ধনীর ভারতবর্ষে ভাত ছড়িয়ে সব কাক জোগাড় করা যায়, মিডিয়া, পুলিশ, বিচার, বুদ্ধিজীবি, মায় মন্ত্রী পর্যন্ত!</p>
<br /><p>উঁহু হলো না। <br />ভারতবর্ষ দুটো নয়, চারটে।<br /> তিননম্বরটা সংখ্যাগুরুর , চার সংখ্যালঘুর। <br />প্রথম দেশে  হাজার বছরের বঞ্চনার গুমরানো ক্রোধ, <br />অন্যটায় জন্ম থেকে জানা আশ্রয়ে অনাথ হবার ভয়। <br />একদিকে  প্রাপ্য স্বদেশ’এর জবরদখল হওয়ার ভাইরাল ভিডিও, <br />আর কি আশ্চর্য, অন্যটাতেও ঠিক সেটাই , <br />শুধু সম্পূর্ণ বিপরীত আঙ্গিকে।<br />আর দুটো দেশের মধ্যে কাটা পরিখায় ভাসে অসংখ্য অকালমৃত ও ধর্ষিতার লাশ, <br />যাদের নাম জানা যায় শুধু দাঙ্গা আর ভোটের সময়।<br />আর অদ্ভুতভাবে , তাদের নিরানব্বই দশমিক নয় ভাগ, একনম্বর ভারতের বাসিন্দা।</p>
<br /><p>তাহলে চারটে দেশ? উঁহু হলো না।<br /> আসলে ছয়টা। পাঁচ দলিতের ভারতবর্ষ আর ছয় উচ্চবর্ণের ভারতবর্ষ। <br />এদের হাঁড়ি আলাদা, বাড়ি আলাদা,  নারী আলাদা.. <br />থুড়ি পাঁচনম্বরের মেয়েরা একেবারে আলাদা নয়,<br />প্রায়শই ছয়নম্বরের গণধর্ষণ ইত্যাদি জোটে। <br />ছয় নম্বর  সেটা তাদের জন্মগত অধিকার বলে মনে করে, বোধহয় পাঁচনম্বরও তাদের জন্মের প্রাপ্তি বলে মেনে নেয়। </p>
<br /><p>তাহলে ছয়টা দেশ আমার স্বদেশ। <br />উঁহু হলো না, আসলে আটটা। <br />পুরুষের ভারতবর্ষ আর নারীর ভারতবর্ষ।<br /> প্রথমটায় টোন কাটবার, কনুই মারবার আর বুরা না মানো হোলি হ্যায় বলবার জন্মগত অধিকার। <br />দ্বিতীয়টায় প্রাপ্তি ‘ না পোষালে ট্যাক্সিতে যান’ আর ‘ অমন পোশাকে ওই সময়ে বেরিয়েছিলো কেন’ ।<br />মজার ব্যাপার হলো, এই উক্তিগুলো সবসময় সাতনম্বরের বাসিন্দাদের নয়। <br />সাত নম্বরের ভদ্র নাগরিকের নিরন্তর ভয় এই বুঝি ফোর নাইন্টি এইট বা সহবাস আইনে হাজতবাস হলো, <br />আর আটনম্বরের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি শরীরে, চরিত্রে মনে আর মননে অবাঞ্ছিত আগন্তুকের হানা। </p>
<br /><p>তাহলে ভারতবর্ষ আটটা। উঁহু হলো না...</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/tomake-bolchhi/তোমাকে বলছি2021-03-26T10:41:35-04:002023-06-26T17:24:05-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। তোমাকে বলছি।</p>
<br /><p> প্রজা নও, এখনো অবধি তুমি নাগরিকই আছো।<br />এখনো তুমিই প্রভু গণতন্ত্রতে। তুমি নেতা বাছো,<br />যে যতই রাজা সেজে থাক,  বাজুক না যত জয়ঢাক,<br />তুমিই বানাও আজও  শাসক বিরোধী বা স্রেফ আব্বুলিশ,<br />তোমার জন্য বাঁচে বিচার ব্যবস্থা আর আমলা পুলিশ,<br />কক্ষনো উল্টোটা নয়। কখনো যেওনা ভুলে সেই পরিচয়।</p>
<br /><p>গণতন্ত্রতে নেই ভক্তির স্থান, কোনো নেতা উপাস্য নন,<br /> লঙ্কার ভার পেলে যে কেউ স্বজনঘাতী রাজা দশানন,<br />সুতরাং , পুজো থেকে সাবধান। সামলিয়ে রেখো সংবিধান,<br /> এ বড় মায়ায় গড়া, আগামী স্বপ্নে মোড়া নাগরিক-নথি,<br /> রাষ্ট্রের চেয়ে বড়, সব দ্বার রুদ্ধতে অগতির গতি।<br />সেখানে স্বাধীনতা, সমানতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ দেখো জ্বলজ্বল করে,<br />দোহাই সজাগ থাকো , পোকা না ঢুকতে পারে পাতার ভেতরে।</p>
<br /><p>এক লোক এক ভোট, ওখানেই টেনে দিলে সমানতা সীমা,<br />দেশ মানে যদি শুধু কাঁটাতারে মেপে দেওয়া অক্ষ- দ্রাঘিমা,<br />তবে গণতন্ত্রটি  মুখোশে আবৃত, আড়ালে স্বৈর যার এখনো জীবিত,<br />এখনো ইচ্ছা পোষে নাগরিক মানেটা সে পাল্টিয়ে দেবে,<br />নতজানু প্রজাদের মাথাতে দেবে সে পা দেবতা হিসেবে,<br />সেই ঠিক করে দেবে কে কতটা ভালোবাসে এ জন্মভূমি,<br />হলদেটে নথি চিরে বলে দেবে এদেশের কেউ নও তুমি।</p>
<br /><p>আর তুমি, বাধ্য প্রজার মতো সব হুকুম মেনে নেবে বুঝি?<br />ফেলে যাবে নিকানো উঠোন, চিরকেলে চেনা রুটি রুজি,<br />পুরাকালে যেরকম যেতো নির্বাসনে, সেরকমই চলে যাবে একুশে শাসনে?<br />যেও না। দাঁড়াও। তুমি প্রজা নও, ওই নেতাদের মতো তুমি নাগরিক।<br /> গণতন্ত্রে তোমার জায়গা কোথায়, এখনো তুমিই করো ঠিক।<br />অধিকার কেউ যদি কেড়ে নিতে চায়, রাজা ভেবে ভিক্ষে চেওনা,<br />তুমিও মালিক এই দেশটার।  বলে দাও , কোথাও যাবোনা।</p>
<br /><p>স্বাধীনতা। সমানতা। ভ্রাতৃত্ববোধ। ওখানে শুরু ও শেষ সব আলোচনা।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/abani/অবনী2021-03-23T17:32:47-04:002023-06-26T17:14:38-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। অবনী।</p>
<br /><p>অবনী তো বাড়ি নেই কবি। <br />পড়াশোনা যা করেছে জলে গেছে সবই, চাকরিবাকরি নেই,<br />রাজনীতি দাদা দিদি বলে গেছে এবারে হবেই,<br />শুধু ভোটে খেটে জয় এনে দিতে হবে অমুক প্রতীকে।<br />ঘোড়ার রেসের মতো ঠিক এ, <br />জয়ী নেতা জ্যাকপট পেয়ে যাবে পাঁচটি বছর,<br />অবনী ভেবেছে তাই ,এবারে সুরাহা হবে ওর।<br />শুধুই অবনী কেন, তপন ফিরোজ মিতা বরুণ আফজল,<br />সকলে নিয়েছে বেছে নিজেদের দল, দিনরাত মেহনতে দেওয়াল লিখন আর পতাকা ঝোলানো...<br />অবনী এম এ’তে কত পেয়েছিলো জানো? ফার্স্ট ক্লাস ছিলো..<br />তারপর কতবার টেট ফেট দিলো, আদালত, আন্দোলন আরো কত কি!<br />ওই দেখো, কবিকে একলা পেয়ে বেফালতু বকি, এইসবে আজকাল কিছু হয় নাকি,<br />দাঁড়াও ক্লাবের থেকে ওকে ঘরে ডাকি, এই তো পাশেই ওর প্রতীকের ঠেক, <br />সন্ধের পরে থাকে কাজও অনেক, পরের দিনের প্ল্যান, চুপচাপ কোণে বেঁধে ডাই করা বোম...<br />দুমদুমমমমমম...চুপ কবি, চুউউউউপ একদম,<br />কোথাও ফেটেছে পেটো, বোধকরি বাঁধবে ঝামেলা,<br />অবনীরা বলছিলো যখন তখন হবে খেলা। দুম দুম দুম..<br />আরো কটা, আজ রাতে ছোটাবেই ঘুম, নির্বাচনের আগে অকালদেওয়ালি।<br />অবনীইইইই.. আরে বাপ কোনখানে গেলি, <br />ঘরে আয়, তোর খোঁজ নিতে আজ এসেছে কে দ্যাখ..<br />রাস্তায় লাশ পড়ে এক, চেনা জামাটার বুকে লাল বানভাসি,<br />ও কবি, সামনে গিয়ে দেখো, এখনো রয়েছে মুখে হাসি,<br />চেনো ওকে? কাঁদো কবি, শব্দেরা ভিজে যাক শোকে,<br />গাল বেয়ে অশ্রু নামুক স্রোতে লোনা...<br />আর কক্ষনো কারো কড়া নেড়ে বলতে যেও না,<br /> বাড়ি আছো নাকি অবনী?<br />ফিরবে না এ বাড়িতে সে কোনোদিনই।</p>
<br /><p>শ্লোগান দিচ্ছে কেউ, কান পাতো কবি,<br /> ভুল হলো, অবনীর লাশ কাঁধে কারা দেয় ধ্বনি...</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/nirghum/নির্ঘুম2021-03-20T04:09:30-04:002023-06-26T17:19:49-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। নির্ঘুম।</p>
<br /><p>ঘুমপাড়ানি মাসি পিসির কে আর নেবে নাম,<br />হাত বাড়ালেই  বন্ধু হতে আছেন অ্যালজোলাম।<br />চিতার মতো জ্বললে সময় রাত হলে নিঝুম,<br />একটা বড়ি আনতে পারে মড়ার মতো ঘুম।</p>
<br /><p>ঘুম আসে না এখন কারো, ছোটোর থেকে বড়,<br />কাল কি হবে সে ভাবনারা কাঁটার মতো জড়ো।<br />আগামী যা গর্ত সাজায়  তা এড়াবার লক্ষ্যে,<br />ঘুম ফাঁকি দেয় স্থিরতাহীন বর্তমানের  চোখকে।</p>
<br /><p>ইঁদুররেসে  আবার ঢোকা ইঁদুররেসের শেষে,<br />ধরতে পারো প্রথাই এখন চাকরিখাকী দেশে।<br /> ডেডলাইনের হুমকি এবং অধরা টার্গেটে,<br /> ঘুম কোন ছার, কালকে লাথি পড়তে পারে পেটে।</p>
<br /><p>অবশ্য ওই গালভরা নাম শুনতে ক’জন পায়,<br />নালার জলে বেশির ভাগের ডিগ্রী বয়ে যায়।<br />ইঞ্জিনিয়ার বি পি ও তে, বি কম সিকিউরিটি, <br />রাত জেগে যায়, ঘুমের মানে টার্মিনেশন চিঠি।</p>
<br /><p>খাটনি শেষে নাক ডাকিয়ে ঘুম পারেনা দিতে,<br />চাষার জীবন উথালপাথাল বেহাল এম এস পি’তে।<br />শ্রমিক জানে ভিনশহরে ঘুম হবে না স্থায়ী,<br />মারী এলেই নামবে পথে, আবার পরিযায়ী...</p>
<br /><p>মধ্যরাতে বুটের আওয়াজ কোনো কবির দোরে,<br />রাষ্ট্র তাঁকে একা ছেড়ে ঘুমান কেমন করে।<br />গরাদ ধরে জেলের ভেতর ছাত্র একা জেগে,<br /> অন্যভাবে ভেবেছে তাই রাজা গেছেন রেগে।</p>
<br /><p>রাজপ্রাসাদের তাবত সেপাই এবং কলমবাজ,<br />তারাই শুধু নাক ডাকিয়ে ঘুমায় নাকি আজ।<br />সত্যি ঘুমায়? সন্দেহরা রাত জাগাবে ঠিকই,<br />কোনখানে ফের জ্বলতে পারে দ্রোহের আগুন ধিকি..</p>
<br /><p>হয়তো কারো স্বপ্নে আজও নিদ্রাবিহীন আশা,<br />এ দেশটা ফের শান্তি পাবে, ফিরবে ভালোবাসা।<br />সে পথ খোঁজার মশাল জ্বেলে পেরোয় হাজার যাম,<br />মানুষ যখন ভাগ করেনা আল্লাহ যিশু রাম।</p>
<br /><p>বাদবাকিদের হাতের কাছেই থাকে অ্যালজোলাম..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/tomake-bujhte-hobe/তোমাকে বুঝতে হবে2021-03-10T03:07:25-05:002023-06-26T17:24:07-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। তোমাকে বুঝতে হবে।</p>
<br /><p>তোমাকে বুঝতে হবে, চারদিকের পৃথিবীটা পাল্টে গেছে।<br />তুমি দেশে থেকে রাষ্ট্রের সমালোচনা করলে সেটা দেশদ্রোহ,<br />আর বাইরে থেকে করলে তা আভ্যন্তরীন সমস্যায় নাক গলানো,<br />তোমাকে বুঝতে হবে, এইসবে না গিয়ে চুপ করে বেঁচে যাওয়া ভালো।</p>
<br /><p>তোমাকে বুঝতে হবে, সীমার মধ্যে থাকলে তোমাকে কেউ কিছু বলবে না,<br />কিন্তু বাইরে যাওয়ার চেষ্টা কোরো না। কারণ প্রতিটি সীমান্তে এখন কাঁটাতার,<br />দুধারে ছড়ানো মাইন, সশস্ত্র অতন্দ্র প্রহরীরা পাহারা দেয় চব্বিশ-সাত,<br />অনেকটা দেশের বর্ডারের মতো। শুধু একটাই তফাৎ, এখানে হত্যারা নির্বিচার।</p>
<br /><p>তুমি বলতেই পারো, এর আগে এত উঁচু পাঁচিল দেখোনি, প্রতিটি গরাদে আজ রাষ্ট্রের স্ট্যাম্প।<br />তুমি বলতেই পারো, স্বপ্ন আর স্বাধীনতা এখন আর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে না,<br />প্রশ্নবিহীন আনুগত্যকে দাসখত বলে, রাষ্ট্রের সেটা চাওয়া ভালো কথা নয়।<br />তুমি বলতেই পারো, এই খাঁচার মধ্যে শিক্ষা আর মুক্তচিন্তার দমবন্ধ হয়ে আসে।</p>
<br /><p>বলতেই পারো, কিন্তু বোলো না। খুঁটে খুঁটে বেঁচে যাওয়া শেখো,<br />বুঝতে শেখো, তোমায় যে ভোটাধিকার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে,<br />ওটাকেই স্বাধীনতা বলে। ফ্রী স্পিচ শুধু মঞ্চের থেকে বিতরণ করা যায়,<br />নাগরিকের মুখে তা এলে বাকি সমস্ত পণ্যের মতো সেটারও মাশুল দিতে হয়,<br />তোমারে বুঝতে হবে আধুনিক পৃথিবীর সেই বাস্তব। </p>
<br /><p>তোমাকে বুঝতে হবে, এই খাঁচা, ওই কাঁটাতার, এই মুখ বন্ধের ফরমান ও দ্রোহীর কয়েদ,<br />এই সমস্তই তোমার এবং কেবলমাত্র তোমারই ভালোর জন্য করা হচ্ছে।</p>
<br /><p>লক্ষ্মী মানিক আমার, বেঁচে থাকা দরকারী সেটা অন্তত বোঝো!</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/manur-bharat/মনুর ভারত2021-03-06T13:45:01-05:002023-06-26T17:19:14-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। মনুর ভারত।</p>
<br /><p>হ’না রে মেয়ে অম্বিকা বা অম্বালিকার মতো।<br />পছন্দ দে জলাঞ্জলি, নিজস্বতার চড়ুক বলি,<br />পুরুষই তোর বর বেছে দিক, চাইবি রে আর কত?<br />অনিচ্ছাতেই হোক না বিয়ে,এই দেশে আর নতুন কি এ,<br />মাথার ওপর ছাদ ও খাওয়া পেলি তো অন্তত!</p>
<br /><p>বর যদি যায় খারাপ পথে, তুলিস না রে গলা।<br />পুরুষরা হয় একটু অমন, রমণ-খোঁজে মন উচাটন,<br />আদর্শ হোক দুর্যোধনের ভগিনী দুঃশলা।<br />দ্রৌপদীরা বাঁচে না আর, এফ আই আরের চেষ্টা বেকার,<br />শান্ত মনে নিস মেনে সব, ঝগড়াতে কাঁচকলা।</p>
<br /><p>বাচ্চা মানুষ করবি যেন কুন্তী বা গান্ধারী।<br /> কষ্টভাগের মন্দ কপাল,ভালো সময় থাকবি আড়াল,<br />মোটের ওপর , চুপ করে তুই থাকবি ছেলের বাড়ি।<br />পুত্র যেমন ইচ্ছে করে, মত দিবিনা তার ওপরে,<br />বন্য যেমন বনেই ভালো, তেমনি ঘরে নারী।</p>
<br /><p>শ্লীলতাতে হাত দিলে কেউ, হোস না মুখর যেন।<br />লাজ হারাবার বিষম ভয়ে, কাঁদিস কাটিস অনুনয়ে, <br />পুরুষ আছে, শোধ নেবে ঠিক, চিন্তা করিস কেন?<br />যতই বাড়ুক দুঃশাসনে,  পাঞ্চালীকে রাখিস মনে, <br />বন্ধ রাখিস থানায় গিয়ে কাঁদুনে প্যানপ্যানও।</p>
<br /><p>নারী মানে ফুলের নরম, চাঁদের মিঠে জ্যোৎস্না।<br />তেমন করেই থাকিস ঘরে, কাড়বিনা রা সাতটা চড়ে,<br />আর যাই হোক, স্পষ্টবাদী অম্বা যেন হোসনা।<br />নিজের লড়াই লড়বে নিজে, নিজেকে মেয়ে ভাবে কি যে,<br />শিখণ্ডী যে ব্যাস বানালেন, আর কারো তা দোষ না।</p>
<br /><p>মেয়েরা এসব শুনছে যখন, বিড়বিড়ালো কবি।<br />দেশটা সেদিন বাঁচবে যেদিন অম্বা সবাই হবি।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/srobonkumar/শ্রবণকুমার2021-03-03T09:36:57-05:002023-06-27T11:56:08-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। শ্রবণকুমার।</p>
<br /><p>ছেলেটা কবিতা বেচে বইয়ের মেলাতে।<br />ওর কোনো স্টল নেই, কোনো প্রকাশক নেই, <br />সাকুল্যে বই আছে এক। সেটাকেই নিয়ে হাতে,<br />হাঁটে আর আরো হাঁটে, বলতে ছাড়ে না কাউকেই,<br />‘ ভালো কবিতার বই আছে, পড়ে দেখতে পারেন।’<br />হাটে ও বাজারে আজ ফেসবুক জুড়ে ধুলোতে ছড়ানো কবিতা,<br />সেখানে অনামী কবি, নগদ পয়সা দিয়ে কেউ কিনবেন?<br />ছেলেটা তবুও ঘোরে, অচেনা ভিড়েও চলে আলাপচারিতা,<br />‘ভালো কবিতার বই আছে, করোনাকে নিয়ে নানা ছড়া’<br />লোকে নাক সিঁটকায়, না শুনে এগিয়ে যায় ঈপ্সিত স্টলে,<br /> তবু সে দমে না। কবিতাকে কাঁধে নিয়ে সময়ের ডাকহরকরা,<br /> ঠিকানা খুঁজছে বুঝি ব্যস্ত শহরে, এই নাগরিক  বই কোলাহলে,<br />কে পাগল আছে আজও অনামী কবিকে নেবে ঘরে দাম দিয়ে,<br />কে এখনো কবিতাকে  কথা-ঈশ্বরী ভেবে  করে উপাসনা,<br />তার খোঁজে মেলা ঘোরে কবিতা-হকার। লোক ডেকে ইনিয়েবিনিয়ে,<br />সে বেচে একটি কবির লেখা একখানি বই। বিক্রিও হয় হাতে গোনা।</p>
<br /><p>আমিও ভ্রাম্যমান ছিলাম মেলাতে, স্টল থেকে স্টল।<br />বই খুঁজে বই কিনে বয়ে চলি অভ্যাসবশত, সংস্কৃতি বইবার ভানে,<br />যদিও ই-যুগে জানি এ হুজুগে মন দেওয়া কাজ নিষ্ফল,<br />তবুও অতীতমুখী মানুষেরা মেলা থেকে ঠিক কিছু বই কিনে আনে, <br />যেমন কিনেছি আমি। এরকমই মাঝস্টলে তার সাথে দেখা,<br />‘কবিতার বই কিনবেন? করোনাকে নিয়ে ভালো ছড়া আছে’<br />কে এই বিরল যুবা? এ টুম্পাকালে কবিতা ছড়াতে চায় বিপরীতে একা,<br />নিছক কৌতুহলে , দাঁড়ালাম গিয়ে সেই হকারের কাছে।<br />‘আপনারই লেখা তো? দাম কত? দেখি বইখানা...<br />ছিমছাম বাঁধাইয়ে সুন্দর ছাপা, উল্টে পাল্টে নিয়ে তাকাই আবার,<br />ছেলেটা বোধহয় থতমত। আবেগরা চোখে দেয় হানা, <br />ঈষৎ থমকে বলে,  মূল্য একশো টাকা। আমার না, লেখাগুলো আমার বাবার।</p>
<br /><p>পৃথিবী দুললো কি? বাবার স্বপ্ন বেচে তবে এই ছেলে?<br />বাবাকে চেনাবে বলে রোজকার ফিরি করা এত ভিড় ঠেলে?<br />এই জড়যুগে সবই যখন আজ গিভ অ্যান্ড টেকে,<br />এ ছেলেটা সমকালে ভেসে এলো পৃথিবীতে কোনখান থেকে?</p>
<br /><p>কিনলাম বইখানা। পুত্রের হাত থেকে কিনলাম সৃষ্টি পিতার,<br />শ্রবণকুমার ফিরে এসে কলিযুগে,  বেচছে ভিড়ের মাঝে বই কবিতার।</p>
<br /><p>বই দিয়ে ভিড়েই সে মেলালো আবার।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/chhaya/ছায়া2021-02-27T15:40:41-05:002023-06-26T17:16:32-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ছায়া।</p>
<br /><p>দাদা যদি বলে আমি খুলে নিই শাড়ি,<br />দাদা যদি বলে বিষ খাবারে মেশাই<br />‘কেন’ এক মৃত অব্যয়, বাক্যতে ব্যবহার নয় দরকারী,<br />ছায়া হয়ে বেঁচে থাকি, ছায়ার মতোই শেষে আঁধারে মেলাই।</p>
<br /><p>দাশরথি ভাইদের প্রেম বিখ্যাত,<br />বৈমাত্র সৌমিত্র চির রাম-অনুগত,<br />আমার এ অনুরাগ তাঁর থেকে এতটুকু কম মোটে না তো,<br />হৃদয়ে জায়গা দিতে শুধু যদি সহোদর কাজে ভালো হতো।</p>
<br /><p>যা হয়নি , তার কথা লাভ নেই বলে,<br />দাদা খল, বিস্তারে বলেছেন সেটা ব্যাসমুনি<br />দ্রুপদের কন্যাটি আমার মৃত্যু বেঁধে এনেছে আঁচলে,<br />সেকথা জেনেও দেখো থামাইনি হাত।দাদার আদেশই শুধু শুনি।</p>
<br /><p>মানছি বালক , তবুও অভিমন্যু শত্রুর ছেলে,<br />আর শত্রুর শেষ রাখা বরাবর দাদার বারণ, <br />চক্র তো অজুহাত, মারতেই হতো ওকে ওরকম একা পেয়ে গেলে,<br />যুদ্ধতে সবই ন্যায়, সপ্ত বনাম একে গালি তাই দাও অকারণ।</p>
<br /><p>তোমাকে প্রশ্ন করি, ও কলির লোক,<br />সভ্যতা এগিয়েছো নিশ্চিত হাজার যোজন,<br />দাদার আদেশে যারা নরক নামাতে পারে বাঁধা রেখে চোখ,<br />এমন লোকের থেকে আজ বুঝি বেঁচে যায় তোমার স্বজন?</p>
<br /><p>আমি তো কেবল ছায়া, আদেশে নষ্ট করি নারী ও বালক,<br />দাদা ডাকলেই আমি এসে যাবো ঠিক। </p>
<br /><p>ওই ভোটে পড়ে ডাক .. ‘যাও দুঃশাসন.....’</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/behula/বেহুলা2021-02-20T06:27:18-05:002023-06-26T17:15:45-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>।বেহুলা।</p>
<br /><p>আমি তো দেখিনি কোন নদী ধানসিড়ি,<br />আমি তো চিনিনা গাছ কোনটা হিজল,<br />মৃত এ চেতনা বয়ে ঘাটে ঘাটে ফিরি<br />সে যে আশা-জাগানিয়া গাঙুরের জল।</p>
<br /><p>লাশকাটা ঘরে রাখা কবিতার শব,<br /> বেচারা করেনি শোধ সামাজিক দেনা,<br />সমবেত শব্দেরা সে শোকে নীরব,<br />সময় আর কাউকেই কবি বলবেনা।</p>
<br /><p>গলিত স্থবির এই ভেক- ডাকা যুগে,<br />বাঙালীরা তাকে আজ কতটুকু চেনে,<br />মাঝে মাঝে বের করে হঠাৎ হুজুগে,<br />বাংলার মুখ দেখে বনলতা সেনে।</p>
<br /><p>সমকাল উঠে এসে গা ঘেঁষে বসে,<br />ছেচল্লিশের কথা বলে দেয় দুয়ো,<br />বলে ,দেখো যে জীবন লিখেছিলো সে,<br />বদল হলোনা তার আজও একটুও।</p>
<br /><p>বেনোজলে ভেসে গেছে কবে বুড়িচাঁদ,<br />পেঁচারা ঘুরছে রাতে  ধরতে শিকার,<br />কথারা এখন পাতে ভোট ধরা ফাঁদ,<br />মাটির গন্ধ আর কে নেবে আবার।</p>
<br /><p> কবিতার সাথে ভাসে লাশ চেতনার...</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/swar-sati/স্বর সৎই2021-02-17T07:22:45-05:002023-06-26T17:23:53-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>( টালত ঘর মোর নাহি পরবেশি. .. বাংলাভাষার প্রথম কবিদের অনুকরণে কিঞ্চিৎ সান্ধ্যভাষার চেষ্টা..)</p>
<br /><p>        । স্বর সৎই।</p>
<br /><p>স্বর সৎই নয় যার , বাণী তার হানিকর,<br />পুরোহিত ভেবে তাকে ঘর বয়ে আনি ঝড়,<br />সব শ্বেত শ্বেতা নয়, মৃত্যুরও রঙ সে,<br />প্রয়োজনে আয়োজন মগজের ধ্বংসে,<br />করছে যে, তার পা’কে ভেবে নিলে পদ্ম,<br />স্বর সৎ ভাবনারা বন্দী ও বধ্য। </p>
<br /><p>বিনা পানি মাছ হয়ে খাবি খেলে শিক্ষা,<br />জীবিকা দাঁড়ায় হয়ে জীবনের ভিক্ষা।<br />সুখ লা সুখ লা বলে বিজাতীয় লব্জে,<br />যেইটুকু সুখ ছিলো শুকায় তা সব যে,<br />সংস্কৃতির সং কৃতী মুছে দেয় যেই,<br />বিদ্যা বিদায় নিতে আর বেশি দেরী নেই।</p>
<br /><p>শুভ রা কাড়ে না, অশুভরা শাব্দিক, <br />মন্ত্র না, মন্ত্রণা মন্থন চারিদিক,<br />ভারতই নড়বড়ে, ছেড়েছেন কমলা,<br />ভারতী কেমন করে থাকবেন অমলা,<br />হংসের রূঢ় প্যাঁক, শিক্ষিত লক্ষ্য<br />অতীত আগামী ভাবে আজকের যক্ষ।</p>
<br /><p>অঞ্জলি হয় নাকি অন্তর্জলীতে,<br />ডিগ্রী কাগজ শুধু, লাভ নেই ফলিতে।<br />কমল লোচন শুধু খোলে চোখ রাঙাতে,<br />খালেতে কুমীর খেলে, ব্যাঘ্ররা ডাঙাতে।<br />ছাত্র অর্থ আজ টিউশানি-খদ্দের<br />রাম নাম সৎ দেশে নেই স্বর সত্যের।</p>
<br /><p>ডি জে বাজা বন্দনা বাণী-পূজা অদ্যের।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/accident/অ্যাক্সিডেন্ট2021-02-12T08:15:18-05:002023-06-26T17:14:46-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>।অ্যাক্সিডেন্ট।</p>
<br /><p>অ্যাই , রোককে রোককে.. একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে,<br />ভীষণ জখম হয়েছে লোকটা। <br />পা ভেঙে , হাত মুচড়ে কি বীভৎস ভাবে পড়ে আছে, নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত,চোখ আধবোজা,<br />রোককে, ওকে চট করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে, নয়তো বাঁচানো যাবে না।<br />আরে কন্ডাক্টার, পথ আগলে দাঁড়িয়েছো কি, হটো! <br />জায়গা করে দাও! কি বললে , এই বাসে ধর্ম আর জাতিভেদ আছে বলে অসুবিধা হবে? <br />কোথায় ওরা , ডেকে দাও তাদের। <br />এই যে ভাই ধর্ম, একে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে এনি প্রবলেম?<br />একটু নাহয় কোণ চেপে বোসো,<br />আর মহামান্য জাতিভেদ, যেহেতু জানেন না, এ লোকটা নিচু না উঁচু, আপনি একটু পেছনের দিকে চলে যান।<br />অ্যাই গরীবি, অ্যাই ব্যাটা বেকারি, গাড়িতে যে উঠে বসেছিস, টিকিট আছে?<br />সে পরে দেখা যাবে খন, আপাতত ধর তো! সাবধানে, সাবধানেএএএ..<br />আহা শ্রীমান  শিক্ষা, অমন ফুলবাবু সেজে থাকলে চলবে? পোশাকে নাহয় একটু রক্ত লাগুক, আপনি মাথাটা ধরুন, <br />আর এই যে ম্যাডাম আন্দোলন, ওড়নাটা কোমরে পেঁচিয়ে হাত লাগান।<br />সিট ফাঁকা করুন,  গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর সিন্ডিকেট, আপনারা নেমে গেলেই ভালো, <br />লোকটার একটু আলোবাতাসের দরকার। দেখছেন না, কিরকম গোঙাচ্ছে! <br />ড্রাইভার, হাসপাতালের দিকে মুখ ঘোরাও, কর্পোরেট নয়, কোনো মানবিক মুখওয়ালা জায়গায়,<br />যেখানে এম বি এ’র থেকে এম বি বি এস বেশি দর পায়। চিকিৎসা শুরু করতে হবে এখনই।<br />ওই তো! চোখ খুলছে! কি নাম তোমার ভাই? <br />বলো বলো, মোবাইল বের করেছি, বাড়ির লোককে খবর দেবো? নাম কি? শুনতে পাচ্ছো? তোমার নামটা বলো! <br />অ্যাই ড্রাইভার, জোরসে!</p>
<br /><p>ভাঙা দাঁতে ফিসফিসে উচ্চারণ, কিন্তু কি স্পষ্ট... ‘ আমার নাম গণতন্ত্র, নিবাস ভারতবর্ষে..’</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/aswa-namer-hasti/অশ্ব নামের হস্তী2021-01-29T12:35:39-05:002023-06-26T17:15:22-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। অশ্ব নামের হস্তী।</p>
<br /><p>‘অশ্ব! দাঁড়া স্থির হয়ে , পিঠ ডলে দিই ঠিকঠাক!’<br />নদীতীর থেকে ভাসে স্নেহের ধমক, সাথে গুরু বৃংহণডাক।<br />অশ্ব ও বৃংহণ? ভারী কৌতুকপ্রদ! কিঞ্চিৎ চমকিত মধ্যম পাণ্ডব,<br />এসেছিলেন তিনি কিছুটা সময় কাটাতে নিজের সাথে, অদূরেই সেনা কলরব,<br />সাত অক্ষৌহিনী ভিড়ে কান পাতা দায়। শুধু হ্রেষা বৃংহণ আর মানুষের চিৎকার,<br />আর কটাদিন পরে  একাদশী তিথি, যুদ্ধের শুরু। জোর তোড়জোড় চলে দুপক্ষে তার।</p>
<br /><p>তিনি মহাবলী ভীম, একশো ধার্তরাষ্ট্র নিধন শপথ নেওয়া দ্রৌপদীনাথ,<br />লোকে ভাবে সর্বদা যুদ্ধং দেহি তিনি। সর্বদা গদাঘাতে উদ্যত হাত,<br />জিজ্ঞাসু মন নিয়ে জীবনতত্ত্বকথা ভাববার একেবারে উপযুক্ত নন ,<br />অথচ জানেনা কেউ, রোজের ভ্রমণে করা প্রকৃতি ও মনুষ্য অধ্যয়ণ,<br />পুঁথি নয়, মানুষ আর পৃথিবীই দিতে পারে যথার্থ জীবনের বোধ,<br />সে বিশ্বাসে এ অভ্যেস তাঁর।কিন্তু বেদব্যাস শ্লোকে ফোটান শুধু ক্রোধ,<br />সেখানে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জ্ঞানে উজ্জ্বল। আজ প্রত্যুষে ছেড়ে সেনাকোলাহল,<br />জাহ্নবীতটে সেই প্রকৃতিপঠনকালে শুনতে পেলেন বৃকোদর,<br />অশ্ব সম্বোধন করে কেউ পোষ্যকে, অথচ যাচ্ছে শোনা হস্তীর স্বর।<br />একটু এগোতেই দেখা গেলো তাকে, ঐরাবতপ্রমাণ এক মহারণ-গজ,<br />করাচ্ছে স্নান তাকে সযত্নে মাহুত, অনতিদূরেই খুলে রাখা আছে ধ্বজ,<br />আর বারংবার ধমকে উঠছে হাতি মৃদু নড়লেই। ‘ স্থির হয়ে দাঁড়া না অশ্ব!’<br />ভীমকে দেখে শশব্যস্ত প্রণাম জানালো সে। শুঁড় তুলে অভিবাদন জানালো পোষ্য,<br />মাহুতের প্রভু মানে সে মানুষ তারও মালিক। হেসে বললেন কুন্তীসূত,<br />‘হস্তীকে অশ্ব ডাকো কেন?’ এমন প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো মাহুতও,<br />তারপর বললো ‘ প্রভু, এর নাম অশ্বত্থামা। সেই নাম আচার্য দ্রোণের পুত্রেরও <br />পুরোটা বলা তাই নয় সমীচিন। তাই এই হস্তীতে অশ্বের গেরো।<br />হো হো করে হেসে উঠে  হিড়িম্বাপ্রিয়, হাতিটির শুঁড়ে দেন স্নেহের আদর,<br />তারপর থেকে, রোজই দেখা হতো যুগলের সাথে। কুরুক্ষেত্র শুরু হলো অতঃপর।</p>
<br /><p>ভীষ্মের পতনের পরে, দ্রোণ সেনাপতি। তিনি মহাদুর্মদ যোদ্ধা, অজেয় দেবতারও, <br />অস্ত্র থাকলে হাতে মারতে পারবে না কেউ। শিবিরে হতাশা ছেয়ে গাঢ়,<br />স্বয়ং অর্জুন অপারগ যে কাজে, তাঁকে বধ করা যাবে কোন অলৌকিকে?<br />স্বাভাবিক, সমস্ত সমস্যার শেষ সমাধান যিনি, সকলেই চান সেই কৃষ্ণের দিকে।<br />দ্বারকাধিপতিও  চিন্তিত খুব। অবশেষে বললেন, কন্ঠে মহাকালের অমোঘতা,<br />‘অস্ত্র থাকলে হাতে আচার্য অজেয়। শোনাতে হবে তাঁকে তাঁর পুত্রের মৃত্যুর কথা।’<br />‘দ্রোণপুত্র.. মানে অশ্বত্থামা? তার মৃত্যু হতে পারে নাকি, তিনি তো অমর!’<br />কৃষ্ণ বলেন ‘জানি। তবু যুদ্ধের উত্তেজনা তা ভোলাবে, বাপের হৃদয় বড় স্নেহনির্ভর।<br />তবু তিনি যাচাই করবেন নিশ্চিত। বিপক্ষে সত্যে যিনি আজীবন স্থির,<br />উত্তর চাইবেন আচার্য তাঁর থেকে ঠিক ।আপনাকে মিথ্যা বলতে হবে যুধিষ্ঠির।’<br />‘ অসম্ভব, বাসুদেব!’ কাতরে উঠলেন প্রথম পাণ্ডব, ধর্মের চিরঅনুসারী,<br />মিথ্যা বলতে আমি পারবো না । যত কেন যুদ্ধতে হারি, <br />সত্যের পথ আমি ত্যাগ করবো না কেশব। এ ভয়ঙ্কর অনুরোধ কোরো না আমায়!<br />হাসলেন দেবকীনন্দন। ‘ হে জ্যেষ্ঠ, পুরো মিথ্যা নয়। সর্প বিনষ্ট করে যষ্ঠী অক্ষত রাখার রয়েছে উপায়।’</p>
<br /><p>উপায় শুনে শিউরে উঠলেন ভীমসেন! হাতিটি যে হয়ে গেছে তাঁর বড় প্রিয় ,<br />রোজ তার ছোটোখাটো কুস্তির সাথী। অথচ উপায় আর নেই একটিও,<br />যুদ্ধের বালাই বড় কঠিন বাস্তব। বিষণ্ণ  মহাবীর অগ্রসর হলেন হস্তিশালাতে,<br />আগেই নির্দেশ পেয়ে সে মহাকরীর পায়ে পড়েছে শেকল।ভীম ঢুকলেন গদা হাতে,<br />প্রিয় মানুষটিকে দেখে শুঁড় তুলে অভিবাদন জানালো অশ্বত্থামা। কেন তাকে রাখা আছে বেঁধে,<br />সে অভিযোগও হয়তো বা করলো সে মৃদু বৃংহণে। মাহুত বেরিয়ে গেছে হাউ হাউ কেঁদে,<br />মধ্যম পাণ্ডব একা। হাতি তার সাথী দেখে একটু আদর চায়, এর থেকে নেই কোনো ভয়..<br />তখনই মৃত্যু নামে গদার আঘাতে। খুলি ফেটে মরে যেতে যেতে,<br />দুই চোখে ভরে বিস্ময়,<br />রণহস্তীটি শুধু ভীমকেই দেখে। দু চোখ গড়িয়ে নামে জল, শিকার ও ঘাতকের উভয়ত।</p>
<br /><p>উন্মাদের মতো চিৎকার করতে থাকেন তৃতীয় কৌন্তেয়। ‘ আমার হাতে অশ্বত্থামা হত! অশ্বত্থামা হত!’<br />পরের ঘটনাবলী সকলেরই জানা। যুধিষ্ঠিরের সেই ‘ অশ্বত্থামা হত.. ইতি নরোবা কুঞ্জবাঃ...’ <br />ভীমের দুঃখকথা লেখেন নি ব্যাসমুনি। সিংহাসনের গল্পে পায়না তা শোভা।</p>
<br /><p>আজও কি মরে কোনো অশ্বত্থামা হাতি নিজের লোকের আঘাতে?<br />কে জানে, হয়তো বা..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/lambstake/ল্যাম্বস্টেক2021-01-21T06:47:58-05:002023-06-26T17:19:08-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>।ল্যাম্বস্টেক।</p>
<br /><p>গড্ডলিকায় আমি শেষ মেষ। <br />আমার সামনে আছে অযুত আমার মতো, <br />শুনেছি তারও সামনে পথ দেখায় রাখাল।<br /> শুনেছি, দেখিনি তাকে,আমি তো লাইনে আছি, <br />গতকাল আজ থেকে অনাগত আগামীকাল, <br />আমি এই লাইনে দাঁড়িয়ে, <br />শুধু সামনের ভেড়াটির পশ্চাদ্দেশ দেখি , <br />কিভাবে যাচ্ছে সে পুচ্ছ নাড়িয়ে, <br />নাড়ানো অপছন্দ হলে দিই ঢুঁসিয়ে। <br />সেটুকু সুযোগ পেয়ে আছি খুশি হে, <br />যতক্ষণ আমারও পেছনে কেউ না দাঁড়ায় এসে,<br /> লাইনেই সব হয়, লাইনেই থাকা ভালো এখন এ দেশে।</p>
<br /><p>মাঝে মাঝে , দূরে কোনো বাঁকে, <br />লাইনটা বেঁকে যায়, যেন কোনো রেলগাড়ি অতিকায়, <br />দেখা যায় বহু বহু দূরে হাঁটে সারি দিয়ে ভেড়া।<br />আশেপাশে মাঠ আছে, আছে সবুজেরা, <br />যে বিচালি খাই তার থেকে আলাদা ও হয়তো বা সুস্বাদু হবে। <br />যদি কেউ ভ্যা করে বলে বসে খেয়ে দেখি তবে, <br />অমনি সাবধানবাণী ভেসে আসে কোথা থেকে যেন,<br />আরে ওই নাগরিক, ওই দিকে যেতে চাস কেন,<br /> লাইনে থাকতে হয় জানিস না ব্যাটা বোকা ভেড়া? <br />ওদিকে যাসনা কেউ, ওখানে মৃত্যুভয়, নেকড়ের ডেরা, <br />কখন কোথায় কে দুম করে মেরে দেবে থাবা,<br />বাকিদের সাথে থাকা  নিরাপদ খুব। লাইনেই থাক বাবা। </p>
<br /><p>এত মেষ হেঁটে হেঁটে শেষ অবধি যায় যে কোথায়!<br /> বাতাসে হিমেল স্বর ফিসফিস করে বলে, ‘ কসাইখানায়’। <br />তারও আগে খুলে নেয় গা’র থেকে সবটুকু উল।’ <br />ঢুঁসো দিতে মশগুল সামনের ভেড়াগুলো বলে ওঠে ভুল সবই ভুল, আমাদের নিয়ে যায় রাখাল নির্ঘাত কোনো স্বর্গীয় চারণভূমিতে, যেখানে ইচ্ছামতো খেতে পাওয়া যাবে, <br />ভালোবাসা রোমন্থন হবে নিভৃতে, <br />এ লাইন ধরে গেলে সকলেই পৌঁছাবে একদিন সোহাগী সময়ে, সমবেত সেই ভ্যা ভ্যা ডাকে, <br />বাতাসেরা পুনশ্চ যায় চুপ হয়ে।</p>
<br /><p>আঁধার নামলে পথে, সবাই জিরোই এই লাইনেই বসে।<br /> দূরে আগুনে এক কে যেন চুকচুক করে হাড় চোষে, <br />তৃপ্তি গলায় ঢেলে বলে আহা আজ মাংস  ভালো সেদ্ধ হয়েছে। <br />সেই ল্যাম্বস্টেকে কার স্মৃতিরা রয়েছে, <br />ভাবতে ভাবতে পড়ি ঘুমিয়ে অঘোরে,<br /> যে তরলে ভিজে মাটি পরদিন ভোরে, <br />সে কি শিশির, নাকি রাখালের পোষা কোনো নেকড়ের লালা, <br />ঠাহর হয় না। <br />কিছু বোঝবার আগে হুকুমছপটি পড়ে, ‘ লাইনে যা শালা!’</p>
<br /><p>পেছনে মারছে ঢুঁসো কেউ।<br /> এগোতে এগোতে ভাবি, ল্যাম্বস্টেকে আজ রাতে আসে কার পালা...</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/bhul-mane/ভুল মানে2020-06-15T07:48:47-04:002023-06-26T17:16:03-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ভুল মানে।</p>
<br /><p>ডিপ্রেশনের বাংলা যে নয় মনখারাপ,<br />এবার সেটা সবার মনে ফেলুক ছাপ।<br />কফির কাপে মিস করে যে বন্ধুকে,<br />সবার আঙুল ট্রিগারে নেই বন্দুকে,<br />যাদের মনে বিষাদ বোনে বিষ ভীষণ,<br />কেবল তাদের খাচ্ছে কুরে ডিপ্রেশন।</p>
<br /><p>আবেগগুলোর থেকে কত খোঁজ আসে<br />হাসির মতন মনখারাপও রোজ আসে।<br />মেঘলা আকাশ বৃষ্টিধারায় পরিষ্কার, <br />একটু পরেই রামধনু দেয় হরিষ তার।<br />কিন্তু যখন আকাশই ঘোর কৃষ্ণময়,<br />ডিপ্রেশন.. পথ হারাবার ভীষণ ভয়।</p>
<br /><p>ভাঙনগুলো যায় না দেখা দূর থেকে<br />ফেসবুকে পোস্ট, কোথায় গেলো ঘুরতে কে,<br />গ্যালারিময় ছিটিয়ে থাকে স্মাইলিফেস<br />আমরা ভাবি এই বাজারেও.. মাইরি, বেশ!<br />বালিশ জানে একলা ভেজা চোখদুটো,<br />ডিপ্রেশন.. হারিয়ে যাওয়ার চাই ছুতো।</p>
<br /><p>পাগল বলে দাগিয়ে দেওয়ার কুপ্রথায়<br /> বিষণ্ণজন ভেতরঘরে মুখ লুকায়।<br /> ‘ও কিছু না’ বলতে থাকেন বাড়ির লোক,<br /> কেউ বোঝেনা জমছে ঘাতক বিস্ফোরক,<br />জীবন তখন পেঁচিয়ে ধরা ভয়াল সাপ<br />একটা ট্রিগার, মরণকুয়োয় অমনি ঝাঁপ।</p>
<br /><p>বাঁচতো যদি ভাবতে না স্রেফ মনখারাপ।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/dui-footpath/দুই ফুটপাত2020-05-06T05:01:44-04:002023-06-26T17:17:01-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। দুই ফুটপাত।</p>
<br /><p>লাইনটা বেশ লম্বা ছিলো, নাহোক ধরো কিলোমিটার,<br />মাস্কে সবাই দূরে দূরে, স্তম্ভিত এক মিছিল যেন,<br />দাঁড়িয়ে আছে মুখে কুলুপ, বাক্যে ছেটায় থুতু দেদার,<br />সেসব থেকেই জ্বরের পোকা, বোকার মতো কথা কেন?<br />মাস্কে কিছু যায়না বোঝা, জিভ দিয়ে কি ঝরছে লালা,<br />হাজার চোখে তৃষ্ণা লেখা, খুলবে কখন সাধের দোকান,<br />কারবাসের দিন পেরিয়ে, আজ খুলেছে বন্দীশালা,<br />ইচ্ছা সবার গুচ্ছ বোতল, আজই কিনে ফ্রিজে ঢোকান।</p>
<br /><p>উল্টোদিকের ফুটপাতটায়, আরেক রকম মানুষ সারি<br />গোল চক্রের মধ্যে বসে, দৃষ্টি উদাস সমুখপানে,<br />জীর্ণ শরীর ছিন্ন বসন, তারাও কিন্তু মুখোশধারী,<br />এঁরাও কথা বলেন না কেউ, শুকায় লালা খিদের টানে।<br />এন জি ও রা খাবার বাঁটে, তারই আশায় এঁদের আসা<br />রুজি গেছে লকডাউনে, রোগের ভয়ে রুটিও হাওয়া,<br />বাসস্থানের নেই ঠিকানা, পেটের ভেতর খিদের বাসা,<br />কোনোক্রমে দয়ার দানে, এক দুবেলা জোটে খাওয়া।</p>
<br /><p>খুললো দুয়ার মদ দিতে আজ ,ওই ফুটপাত উঠলো জেগে,<br />দু চার বোতল কিংবা পেটি, যার যেরকম হপ্তা খোরাক,<br />সবার হাতেই কড়কড়ে নোট, দোকান খালি হচ্ছে বেগে,<br />লোক ভাবে আজ আবশ্যকই, মিডিয়া যতই কথা ঘোরাক।<br />এই ফুটপাত হচ্ছে সজাগ, ওই যে আসে ভাত দেওয়া ভ্যান<br />সকাল থেকে ছুঁচোর ডনে, আজের জন্য পড়বে ইতি,<br />হাত ধোওয়া নেই এদের কারো, সাবান কি আর এন জিও দেন<br />রাতের খিদেয় সান্ত্বনা দেয়, দুপুরবেলার খাওয়ার স্মৃতি।</p>
<br /><p>ঘন্টা দুই বা তিনের পরে, সব শুনশান দু ফুটপাতেই,<br />যে যার মতো খাঁই মিটিয়ে, গেছে ফিরে নিজের ডেরায়<br />একলা পুলিশ দিচ্ছে টহল, তা ছাড়া আর মনিষ্যি নেই<br />ব্যস্ত কুকুর খাবার খোঁজে, এদিক ওদিক ঘোরাফেরায়।<br />মদ-ফুটপাত বললো ডেকে, ওরে ও ভাই যমজ সাথী<br />মানুষগুলোর রকমসকম , আজও ঠাহর হয়না বিশেষ,<br />একদিকে এই নেশার গুঁতো, অন্য দিকে খিদের লাথি,<br />নেতারা যে মাইক বাজান, এদের মাঝে কোনটা সে দেশ?<br />ভাত- ফুটপাত বললো হেসে, খুঁজিসনা ভাই তার ঠিকানা,<br />আমিও ভারত, তুইও ভারত, মধ্যে পথের লাইন টানা।</p>
<br /><p>হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও, ঘুচবে না ওই তফাৎখানা..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/nari-o-lekhok/নারী ও লেখক2020-03-08T15:03:51-04:002023-06-26T17:19:40-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। নারী ও লেখক।</p>
<br /><p>যৌনতা ও জরায়ু, <br />এই দুটো বাদ দিয়ে নারী নিয়ে কিছু বলো দেখি!<br />উঁহু, রূপ বলবে না, যত সুন্দর হোক,<br />বাসনা না জাগালে আর রূপ হয় সেকি!<br />প্রসাধনহীন এক হোমো স্যাপিয়েন্স,<br />ক্লান্তি আঁচলে মুছে দিনের পাওনা দেনা রাখছে হিসেবে,<br />এভাবে নারীর কথা কতবার কে লিখেছে ,<br />বলো দেখি ভেবে!</p>
<br /><p>পণ ও পণ্য ছাড়া , <br />লাস্য দাস্য ছাড়া নারী কেউ জানো?<br />আকাশে পাখনা নেই, <br />খুঁটিতে শেকল দিয়ে নয় আটকানো,<br />ষড়রিপু, ভালোবাসা ,<br />আশা ও হতাশা দিয়ে ভরা দেহখাঁচা,<br />হোঁচটের চোটে আর কুটোসুখ ঠোঁটে নিয়ে <br />থতমত বাঁচা,<br />সেরেফ মানুষ হয়ে,<br /> মানুষের ভার বয়ে ন্যুব্জ জীবন,<br />ধুলো মাটি মাখা সেই কর্কশ গদ্যকথন <br />কতজন লেখনিতে আঁকে?</p>
<br /><p>এমন জীবন জেনো প্রত্যেক নারীদের ঘামে মিশে থাকে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/bisheshon/বিশেষণ2020-02-29T05:42:29-05:002023-06-26T17:16:16-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। বিশেষণ।</p>
<br /><p>বিশেষণগুলোকে বড় ভয় পাচ্ছি আজকাল।<br />বিশেষ্যগুলো ওদের প্রভাবে কেমন যেন ভোল পাল্টে ফেলে,<br />লেজুড় না হয়ে, বিশেষণই শব্দের মালিক হয়ে ওঠে,<br />কদাচিত যেরকম অভিধানে মেলে।</p>
<br /><p>সমর্থকের আগে গোঁড়া বসে গেলেই, পতাকার ক্রীতদাসেরা জন্মায়।<br />প্রশ্নবিহীন আনুগত্য বাস্তবকে দেখার ভঙ্গিমা পাল্টে এক অদ্ভুত অযুক্তি-জগৎ গড়ে, <br />যেখানে সমস্ত পোড়ার দাগ বিরোধীর অপরাধে হয়,<br />আর প্রিয় প্রতীকটি ভাজা মাছ উল্টাতে সর্বদা অস্বীকার করে।</p>
<br /><p>প্রতিশ্রুতির আগে নির্বাচনী এসে গেলে একটা নিটোল মিথ্যেকথার রাজ্য তৈরী হয়।<br />গরীবি হটে না, সর্বহারার শেকল হারায় না, আচ্ছে দিনের স্বচ্ছতা ধুলোটে আস্তরনে ঢাকে,<br />তবু প্রতি বার, প্রতিটি প্রতীক এসে আশ্বস্ত করে, আগামীর বরদানে বেশি দেরি নেই।<br />ইস্তেহারের নাম পিনোচ্চিও হলে, নাসিকা লম্বা হয়ে এতদিনে ছুঁয়ে ফেলতো আকাশটাকে।</p>
<br /><p>ভাবাবেগ যেই ধর্মীয়’র সাথে আসে, ভক্তি ও উপাসনা মনে ভাসে না।<br />বরং শঙ্কা হয়, সিঁড়ির শ্যাওলা কেউ ঐতিহ্যের অজুহাতে সরাতে দেবে না মোটে,<br />অতীতের ধমকে একুশের দাবীকে দাবানোর এমন মোক্ষম বিশেষণ আর হয় না,<br />ভাব ও আবেগ নয়, স্থবির কুসংস্কার চরৈবেতিক থেকে বড় হয়ে ওঠে।</p>
<br /><p>ইদানিং ভয় করে। <br />ভয় করে খুব, একদিন বিশেষ্যগুলো পুরোপুরি চলে যাবে এইসব বিশেষণের দখলে।<br />লোকে মনে রাখবে না ওদের আলাদা কোনো মানে ছিলো বলে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/kobita-noy/কবিতা নয়2020-02-27T10:06:14-05:002023-06-26T17:18:57-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। কবিতা নয়।</p>
<br /><p>নিতিন কুমারের বাবা বেরিয়ে ছিলেন আনতে ওষুধ<br />আকবরি কোথাও যাননি, ছিলেন পিতৃপুরুষের ঘরে,<br />তফাত হয়নি কিছু, দাঙ্গা উসুল করে আসল ও সুদ,<br />লাশদুটো পাঠিয়েছে পরম যত্ন করে শ্মশানে কবরে।</p>
<br /><p>অঙ্কিত শর্মা রাস্তায় ছিলেন নিজস্ব কিছু কাজে,<br />মেহতাব গিয়েছিলো দুধ আনতে, যেমন যায় রোজ <br /> আপনজনের কাছে ওদের আর ফেরা হলো না যে,<br />লাশকাটা ঘরে গিয়ে দুজনের পাওয়া গেলো অবশেষে খোঁজ।</p>
<br /><p>কাজ থেকে ফিরছিলো ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী আসফাক <br />জাকির ফিরছিলো ঈশ্বরের কাছ থেকে নমাজ সেরে<br />রতনলালের বৌ বলেছিলো আজ কাজে যাওয়া থাক<br />তিনখানা নাম গেছে রায়টের শিকারের তালিকাতে বেড়ে।</p>
<br /><p>ওপরের বারো লাইন কবিতা মোটেই নয়, হওয়া অসম্ভব<br />অজুহাত শুধু ওটা অতি বাস্তব এক তথ্য বোঝাতে<br />বাদী বা প্রতিবাদী মিছিলে ছিলো না ওই সবে হওয়া শব,<br />তোমার আমার মতো যাপন আরামে ছিলো স্বজনের সাথে।</p>
<br /><p>নিতিনের বাবা অনায়াসে হতে পারতো পাড়ার সুভাষজ্যেঠু<br />আকবরি দুটো বাড়ি পরে থাকা স্নেহময়ী খালা বা কাকি<br />রতন জাকির অঙ্কিত ছোটো থেকে দেখা টুটু আলি মিঠু<br />তুমি আমি যাদেরকে সহপাঠী, বন্ধু বা ভাই বলে ডাকি।</p>
<br /><p>কারা মারলো ওদের? খুনী কারা তবে? দেখি আয়নাতে<br />লাশের ওপর বসে তুমি আমি হাসি বুনো হিংস্র আদিম<br />আমরা করেছি খুন আমাদের নেতা ও ঈশ্বর সামলাতে<br />শব-শেষে ঘরে ফিরে প্রসাদে পেয়েছি খালি অশ্বের ডিম।</p>
<br /><p>ধর্মের কিছু নয়, নেতাদের পোয়াবারো, ক্ষতি শুধু আমাদের ভাগে,<br /> বিভেদের ছুতো দিয়ে চৌকাঠ লাল হয় আমাদেরই রক্তের দাগে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/the-wall/দেওয়াল2020-02-24T09:41:23-05:002023-06-26T17:24:02-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>।দেওয়াল।</p>
<br /><p>দেওয়ালের ওইপারে, ঘেঁষাঘেষি ঘর, দেওয়াল তফাতে।<br />শীৎকার ফিসফিস বা চুলোচুলি ,পড়শির কানে পৌঁছায়।<br />এপারে নিরালা ফ্ল্যাট, ঘরে ঢুকে এলে এক নিজের পৃথিবী,<br />দুনিয়া সফর চালু সোফার নরমে। নেমপ্লেট লেখা থাকে প্রতি দরজায়।</p>
<br /><p>ওইপারে টাইমের জল, বালতি-কলহ প্রায় রোজের ব্যাপার।<br />শৌচ আজও গণপ্রয়োজন, স্নানের আব্রু কিছু পর্দায় রাখা ।<br />এপারে ইচ্ছে মতো ঝর্ণার জল, চানঘরে গান আর নিভৃতিসুখ,<br />ওপারে মগ নিয়ে তপ্ত সকাল, এপারে সুচারু ভারী কমোডের ঢাকা।</p>
<br /><p>ওইপারে অবেতন স্কুল। শেখা নয় , নিয়ে যায় মিড ডে’র খিদে<br />স্কুলছুট কিশোরীর সিঁথিতে সিঁদুর, গাড়ি-কালি কিশোরের গালে,<br />এদিকে ঝকঝকে ক্লাসরুমে টকাটক ইংরেজি, মিও আমোরে টিফিনে,<br />আকাশ ও বাইজু রা অকম্প আলো জ্বালে স্বর্ণালী আগামীর আশার মশালে।</p>
<br /><p>দেওয়ালের ওইপারে দিন আনি দিন খাই। মাতালের হুল্লোড় সস্তা দিশিতে।<br />অসুখে শ্মশান যাওয়া ভায়া হাসপাতাল। ধর্ষণে থানা যাওয়া নয়।<br />এইপার চিন্তিত ট্যাক্সছাড় নিয়ে। রি পো রেট, ডিপোজিট, সেনসেক্স ওঠানামা<br />আরও কত লগ্নীকথন। ডলারে কতটা রুপি, পেগ ধরে তাই নিয়ে কথা বিনিময়।</p>
<br /><p>ওইপারে নেতা নেই, শুধুই সমর্থক। মরে যাওয়া, মার দেওয়া জনতার বাস।<br />ওখানে মিছিল থাকে, আর থাকে ভর্তুকি। চাল মদ দিয়ে কেনা ভোটেরাও থাকে।<br />দেওয়ালের এইপারে তাবত নেতারা। বাম,ডান, মাঝখান, টিকি দাড়ি চাপকান,<br />এন জি ও ,সরকার সবাই এপারে। ওইপারে যেতে হয় পেশাগত ডাকে।</p>
<br /><p>দেওয়াল। এইপারে ঝকঝকে রাজপথ, রাজাদের গাড়ি, নমস্তে বিদেশীপ্রধান।<br />দেওয়াল। ওইপারে দাঙ্গায় পুড়ে যাওয়া ঘর। প্রতিশ্রতির বানে পলি ঢাকা অনুদান।</p>
<br /><p> দেওয়ালের দুইপারে অপটু তুলির টানে কারা যেন লিখে গেছে ভারত মহান।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/rajnartoki/রাজনর্তকী2020-02-23T04:03:18-05:002023-06-26T17:22:55-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>।রাজনর্তকী।</p>
<br /><p>নূপুর বাঁধো তাজ, অভ্যাগতরা আসছেন।<br />সন্ধ্যার সূর্যের রক্তাভ প্রেক্ষাপটে তোমার মোহিনী সম্মোহনে মজেনি এমন পুরুষ নেই,<br />আজ ভিনদেশী সম্রাট আসছেন রাজার সঙ্গে,<br />দেখো যেন লাস্যে কার্পণ্য কোরো না। <br />তুমি নাচবে বলে যমুনায় বয়ে গেলো কোটি কলস স্ফটিকস্বচ্ছ জল,<br />যেন তোমার প্রতিবিম্ব সেখানে অলোকসামান্য সেলফির মতো ফুটে ওঠে।<br />তোমার গ্রীবাভঙ্গিমায় পাগল করো সম্রাটকে,<br />তোমার শ্বেতকাঁচুলির হিল্লোল অনাস্বাদিত আশ্লেষ এনে দিক রাজকীয় রিপুর বাগানে,<br />তোমার প্রতি মুহূর্তের বিভঙ্গবদল দেখে আবেশের আহ্লাদে সম্রাট আত্মহারা হোন।<br />তারপরে রাজা তাঁর থেকে চেয়ে নেবেন,<br />কোটি স্বর্ণমুদ্রার প্রতিশ্রুতির বেলুন,<br />বিশ্বনষ্ট করা পাশুপত অস্ত্রের গোপন সংকেত,<br />অথবা অলীক স্বপ্ন দেখানোর কায়দাকানুন।</p>
<br /><p>সুন্দরী সবরমতি সম্রাটকে বরণ করতে এগিয়ে আসেনি,<br />একদিকে ভালোই হয়েছে,<br />ছলাকলা ও বশীকরণ বিদ্যা তার আয়ত্ত্বে কখনো ছিলোনা।<br />খাদি আদি হতে পারে, সময়ের দাবীতে সে ধরে নাও বাদই,<br />তবুও গর্ব দেখো, সে কখনো রাজাদের বাঁদী হবে না।<br />তুমি তো তা নও তাজ, যুগে যুগে মসনদি অহংকার তুমি,<br />যেমন গর্ব থাকে শ্রেষ্ঠ সুন্দরীটি রাজনর্তকী হলে,<br />কত পূর্ণিমা রাত , কত সূর্যডোবা ক্ষণ কেটেছে তোমার নানা রাজার দখলে, ইয়ত্তা নেই।<br />আজ তাই, আরো একবার, ঘুঙুর শানিয়ে নিয়ে<br />এত মোহময়ী হয়ে ওঠো মনোরঞ্জনে ,<br />উর্বশী মেনকা রম্ভা নৃত্য থামিয়ে দিক স্তম্ভিত সম্ভ্রমে,<br />আসর উঠুক জমে রাজকীয় আমোদ প্রমোদে।</p>
<br /><p>আমরাও সুখ মেখে তোষকে অভাব ঢেকে মন দিই প্রাণপণ রাজকর শোধে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/she-ashena/সে আসেনা2020-02-18T08:22:29-05:002023-06-26T17:23:30-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। সে আসেনা।</p>
<br /><p>সেদিনের পর থেকে, ট্রামের ঘন্টা আর ছন্দে বাজেনা।<br />কারশেডে ফিরে রোজ চাকাগুলো সন্তর্পণে দেখে, রক্তের দাগ কিছু ফিকে হলো কিনা, <br />আর ইঞ্জিনটা সে সময়, অবিকল লেডি ম্যাকবেথের গলায় বলে ওঠে ‘ রক্তের গন্ধ যায়নি, আতরে ধুলেও যাবেনা।’</p>
<br /><p>লাশকাটা ঘরে তার থ্যাঁতলানো ইঁদুরের মতো দেহ দেখে,<br />অন্ধকারও কেঁদে ফেলেছিলো।<br /> শেষবার দেখা দিতে জানলায় এসেছিলো বুড়িচাঁদ, <br />নিঃসঙ্গ কথাদের অন্তিম বেনোজলে ভেসে যাবে বলে।<br /> ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ে জলঙ্গীর জল আজও ছন্দ খোঁজে,<br />রাত্রি বলতে পারেনি তাকে,<br /> সে কলম বিষাদের দেবতারা সযত্নে সাজিয়ে রেখেছেন পৃথিবীর নাগালের বাইরে।</p>
<br /><p>আর ধানসিড়ি? <br />কবি তাকে বলেছিলো জলসই করে, <br />আবার আসবে ফিরে, তার কাছে, <br />শুধু তার কথা বাতাসে ছড়িয়ে দিতে আরো একবার।<br /> নদী জানে, কেউ কথা রাখেনা কখনো, <br />বহুকাল হয়ে গেছে কিশোরীর হাঁস আর ঘুঙুর পরেনা, <br />তবুও আশার স্রোত বুকে নিয়ে বাঁচে, <br />হয়তো সে মায়াময় চোখদুটো শতাব্দী সাথে নিয়ে আবার ঘুরবে তার আনাচে কানাচে..</p>
<br /><p>দূষণে ক্রমশ কমা হিজলের বন, <br />বনসাই সখে টবে পোষ্য বন্দী হওয়া অশত্থ বট, <br />তারাও কি ভুলেছে কবিকে? <br />বিকেলের রোদ্দুর সবুজের সাথে এসে খুনসুটি করে, <br />ফিসফিস পাতাগুলো শুধায় তখন,<br /> এত জায়গায় যাও, <br />এত ঘর বন্দর শহরে ও গ্রামে, <br />দেখেছো কি তাকে, কথা যে কবিতা করে আমাদের নামে?<br /> কবে থেকে আসেইনা সেই জাদুকর, <br />তাই বুঝি চারদিকে এতটা অসুখ!</p>
<br /><p>শুধু তাকে ছোঁবে বলে পৃথিবীর বুকে বেঁচে বাংলার ধূসরিত মুখ। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/golap/গোলাপ2020-02-08T03:04:13-05:002023-06-26T17:17:39-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। গোলাপ। </p>
<br /><p>বয়েসকালের প্রেমের কথা ভাই খুলে আর বলবো কি<br />আগে দিতাম রাইকে গোলাপ, এখন আনি ফুলকপি।<br />জীবন রোজের চাঁদায় এখন ইচ্ছেমাফিক বিল কাটে,<br />চুম্বন আর বাদবাকি সব সাইবেরিয়ায় জেল খাটে,<br />মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ধরতে পারো বিগ জিরো,<br />সরস্বতী কিংবা ভি ডে, নেই কোনো দাম একটিরও।<br />এক শুধু ওই বার্ষিকীতেই কয়েক সিকের চু কিত কিত<br />ক্যাবলা হাসা যুগল ছবি, তার বেশি আর নেই পিরিত।</p>
<br /><p>তাই বলে কি প্রেম ছিলোনা কলেজকালের চিরকুটে?<br />একটা গোলাপ স্মৃতির ভেতর টাটকা আজও রয় ফুটে।<br />ঝকমকে সেই অতীত ঢাকা বর্তমানের শুক্তিতে,<br />পেছনপানে চাইলে পারে শীতল হওয়ার সুখ দিতে।<br />এখন কেমন ডিজিটালে ইমোজিদের বান ডাকে,<br />সকাল বিকেল ঘুটুর ঘুটুর না করলে কি মান থাকে<br />সেসব কালে মায়ের নজর, পাড়ার লোকও চৌকিদার<br />এড়িয়ে তাকে কোথায় যাবে আমার হবু বৌটি আর,<br />প্রেম করেছেন এটাই মহা দোষের মধ্যে গণ্য হয়,<br />জেনেই বাপের থমথমে মুখ, পাত্র বুঝি অন্য হয়!<br />সব মেয়েরাই রাজকুমারী, বাবার প্রিয় যখের ধন,<br />তাকান এমন হবু শ্বশুর, যেন আমি দুঃশাসন,<br />মাইনে কত, বাড়িতে কে ইত্যাদি সব জেরার পর,<br />নিমরাজী হন কায়ক্লেশে রাই পাঠাতে আমার ঘর,<br />শ্মশ্রুমাতাও অশ্রু মুছে জাহির করেন অ্যাপ্রুভাল<br />দেখতে পেলাম পর্দা নড়ে, রাইয়ের চুড়ি তার আড়াল।<br />পর্দাফাঁকে চোখবিনিময়, হালকা নজর বোঝাই দায়<br />রাই ইশারায় বলেন আমায়, জলদি এসো বারান্দায়।</p>
<br /><p>সময় রাধা কৃষ্ণচূড়ার, কদিন আগেই দোল গেছে<br />বিকেল বেলার রৌদ্র লেগে গাছ গোপীতে বদলেছে।<br />রাই দাঁড়িয়ে বারান্দাতে লাল হলুদের প্রেক্ষাপট,<br />আমৃত্যুকাল থাকবে মনে সময় নিলো যে ফ্রিজশট।<br />বোকার মতো ভেবলে গিয়ে কি বলবো ছাই ভাবছি তা<br />লুকিয়ে এত বকমবকম, আজ যে কেন পারছি না!<br />বুকের ভেতর ধুকের দাপট, মুখে ছড়ায় কি উত্তাপ,<br />হঠাৎ হেসে রাইকিশোরী, বাড়িয়ে দিলেন লাল গোলাপ।<br />বাড়ি ফিরে সে ফুলটাকে, নয় কোটি বার বোলাই হাত<br />গীতাঞ্জলির আঠাশ পাতায়, সামলে রাখেন রবীন্দ্রনাথ।</p>
<br /><p>আজকে আমার ফুলকপি ডে, গোলাপ দিবস অন্যদের<br />রান্নাঘরের থেকে এখন পাচ্ছি বড়ার গন্ধ টের।<br />রাই ডাকবার আগেই দেখি ঝুরঝুরে এক গীতাঞ্জলি,<br />আঠাশপাতায় থমকে আছে তেইশ বছর গোলাপ কলি।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/apnader-bolchi/আপনাদের বলছি2020-02-06T08:05:31-05:002023-06-26T17:15:11-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। আপনাদের বলছি।</p>
<br /><p>ওদের হাতে কোদাল দিলে ওরা মাটি খুঁড়বে, <br />গাঁইতি দিলে দেওয়াল ভাঙবে, <br />ইঁট আর রাজমিস্ত্রির মালমশলা দিলে ফটাফট বানিয়ে দেবে অট্টালিকা।<br />শুধু তিনবেলা ভাত, লজ্জা নিবারনের কাপড় আর মাথা গোঁজার আস্তানা,<br />আগামীবিহীন এইটুকু বর্তমান পেলে ওরা একটা দেশ গড়ে দিতে পারে।</p>
<br /><p>আর আপনারা কিনা কানে মন্তর দিয়ে ওদেরকে পাঠালেন মানুষ শিকারে?</p>
<br /><p>ওদের হাতে কলম দিলে ওরা কবিতা লিখবে, কিংবা ভালো লাগা মানুষটাকে প্রেমপত্র,<br />হাতেকলমে দিলে তাই দিয়ে রোজগার করবে, প্রিয় সাথীকে নিয়ে ফুচকা চুড়মুড় খাবে,<br />মাসমাইনে একটু থিতু হলেই, বাড়িতে বিসমিল্লা খান সানাই বাজাবেন।<br />আপনাদের শুধু কষ্ট করে ওই ‘থিতু’ কথাটাতে একটু স্থায়িত্ব <br />দিতে হতো,</p>
<br /><p>সেটা পেলে না ওরা অবস্থানে বসতো, না অবস্থান তুলতে বন্দুক পাকড়াতো।</p>
<br /><p>মুশকিল কি জানেন, ওই শিকারী ও বন্দুকবাজদের নিশানা ঘুরতে বেশি সময় লাগেনা,<br />এলেবেলে কেউ নয়, এই কথা বলছে ইতিহাস।<br />আপনাদের এই সব তুরুপের তাস, চোখ থেকে ঠুলি খুলে ফেলে যদি,<br />ভেবেছেন কি হবে ?</p>
<br /><p>কে জানে আপনাদের রঙমহলের জানলার কাঁচ ভেঙে প্রথম ইঁটের টুকরো উড়ে আসে কবে....</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/baton/ব্যাটন2020-02-05T12:31:25-05:002023-06-26T17:15:44-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। ব্যাটন।</p>
<br /><p>এইবারে ব্যাটনটা আর কারো হাতে দিতে হবে, নতুনতর কেউ!<br />এই ভেবে , পুরু চশমার মধ্য দিয়ে কবি জনসমুদ্রে প্রজন্ম খোঁজেন, কোথায় সে সন্ধানী ঢেউ,<br />যার শব্দের আঘাতে ঘুমন্ত কুল কেঁপে উঠে বলবে, ভাগ্যিস জাগালে,<br />নয়তো দেরী হয়ে যেতো । সমস্ত চরাচর যখন নিকষ অন্ধকারের নাগালে,<br />সে সময় ‘ জাগতে রহো’ বলবে তাঁরই মতন অথচ ঠিক তাঁর নকলে নয়, <br />কবি খুঁজছেন তেমন কলম, রঙের রাঙানিতে নির্ভয় ছান্দিক, রামধনু আখরে যে ধরবে সময়।</p>
<br /><p>বহুদিন ধরে সময়ের সমাচার পৌঁছে দিয়েছেন ঘরে ঘরে<br /> তাঁরও তো বয়েস হচ্ছে, শরীরে ব্যাধির কোপ, ছুটি নিতে ইচ্ছে করে,<br />কিন্তু প্রত্যাশা কমে না যে। প্রতি আঁধারের আক্রমণে আহতরা হাত বাড়ায় তাঁর দিকে,<br />নিহতেরা তাঁর কাছে স্মরণিকা দাবী করে। নিরস্ত্র কলমে তিনি চলেছেন প্রতিবাদ লিখে,<br />সে কত দশক ধরে। আশেপাশে এত কবি , চারদিকে ছড়ানো অযুত কথায় এত কবিতার বই, </p>
<br /><p>কিন্তু সে গুরুভার ব্যাটন বওয়ার মতো শিরদাঁড়া সোজা রাখা কলমটি কই?</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/boi/বই2020-02-03T14:02:17-05:002023-06-26T17:16:22-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। বই।</p>
<br /><p>উপরোধে বই কিনোনা। <br />ওতে শব্দের অপমান হয়,<br />খোলা যদি একদিনও না,<br />মলাটে কারোর শ্রম হয় অপচয়।</p>
<br /><p>জোর করে বই বেচো না<br />বাতাস তো আপনিই যায় ফুসফুসে<br />হাসফাঁসে সে বড় যাতনা,<br />নাকে যদি কেউ দেয় হাওয়া নল ঠুসে।</p>
<br /><p>কলমকে ছাপাখানা নেওয়াটা সহজ,<br />পাঠকের মন পাওয়া আলাদা ব্যাপার,<br />অতটা সস্তা যেন নাহয় কাগজ<br />লেখকের প্রতি যায় দৃষ্টি কৃপার।</p>
<br /><p>বই সম্পদ যদি ভালোবেসে কেনা<br />বই জঞ্জাল যদি উপরোধে ঢেঁকি,<br />মননের যদি নাই হয় লেনাদেনা<br />আজ থেকে আগামীতে যেতে পারে সে কি?</p>
<br /><p>প্রকাশক , ব্যবসাটা বুঝে,<br />কাটতির সাথে থাক কিছু পাগলামি,<br />এমন কলমকার পাওয়া চাই খুঁজে,<br />নিঃস্ব পকেটে যার কথা বড় দামী।</p>
<br /><p>বইয়ে মন বাঁচানো তাগিদে,<br />সংখ্যায় বেশি নয় , ভালো বই হোক।<br />সুষম পুষ্টি পেলে তবে বাড়ে খিদে,<br />তেমনই সঠিক বইয়ে পড়বার ঝোঁক।</p>
<br /><p>কি হবে বইয়ে যদি না পড়ে পাঠক?</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/akhando/অখণ্ড2020-02-02T07:00:27-05:002023-06-27T19:52:30-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। অখণ্ড।</p>
<br /><p>কবিতা অনেক আছে জানি, তবু যেন একটিও নেই<br />শেষ ভেবে থেমে গিয়ে দেখি, পৌঁছেছি ফের শুরুতেই।<br />এ সফর অফুরান জারি, কথাদের সাথে নিয়ে চলা,<br />সব আলাপ শেষ করে দেখি, বাকি আছে তবু কথা বলা।</p>
<br /><p>আসলে আলাদা কিছু নয়, খণ্ডতে লুকিয়েছে গোটা,<br />শিরোনামে সীমানা বানায়, অসীমের এক এক ফোঁটা।<br />সীমান্ত খোঁজা হবে বৃথা, ভিন্ন এখানে নেই কেউ, <br />কুলহীন অটুট সাগরে ,কবি শুধু সময়ের ঢেউ।</p>
<br /><p>কে ভাবে লিখেছে নতুন? ভুল সব সৃজনের দাবী,<br />অনাদি এ আবেগের স্রোত , আমরা সৃষ্টি করি ভাবি।<br />কখনো অন্ধ পেলে চোখ, দেখে এক নতুন পৃথিবী,<br />যা আছে আগে থেকে ছিলো ,খুঁজে পায় শুধু কথাজীবী</p>
<br /><p>আদিতম কবিতাটি লেখে, যে প্রথম নর বা নারী<br />পায়ে পায়ে কথারা হেঁটেছে, মহাদেশ জুড়ে দিলো পাড়ি।<br />সে আদিম আবেগের ঢল, কথা পায় নতুন ভাষায়,<br />বদল আর হয়েছে কতটা, হতাশা বা নিয়ত আশায়।</p>
<br /><p>কবিতা অনেক নেই মোটে, একটাই লিখছে মানুষ,<br />পুরনোকে নতুনের ভ্রমে, লিখে চলে পরের পুরুষ...</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/a-za-di/আ জা দি 2020-02-01T02:59:26-05:002023-06-26T17:14:31-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। আ জা দি।</p>
<br /><p>আ -য়ে আক্রমণ , আ-য়ে আগ্নেয়াস্ত্র , আ -তে আর্তনাদ,<br />আতংক, আশঙ্কা ,আততায়ী, সবই বড় ভয়ানক আ।<br />অমন আ’দের মুখে আগুন জ্বেলে , আকাশের মতো অন্য আ’দের চাই,<br />ওরা’র আগল ভেঙে, আ মানে এসো হই শুধু আমরাই। </p>
<br /><p>জা-তে জামাত , জা তে জানকীপতি, জা তে জালি ধর্মের জাল,<br />স্মৃতিতে কালিমা মেখে জালিম ওই জা দিয়ে জালিয়ান বাগ,<br />ওসব যাক না আজ, জা মানে জাগৃতি, জনতার জাগরণ হোক,<br />জানলা কপাট খুলে সব ঘরে পৌঁছাক জাতমোছা জাদুর আলোক..</p>
<br /><p>দি তে দ্বিখণ্ডিত, দি তে দ্বিধান্বিত, দি তে দিকভোলা যুবদের ঢল,<br />দি মানে রাজাদের প্রথাগত দ্বিরাচারও, দি তে মনের দীনতা <br />আমাদের দি মানে অন্য বোঝাও কেউ, ওই সব মানে দূরে যাক,<br />দি বললে সব্বাই কান পেতে শুনুক না এই কালো দিনগুলো বদলের ডাক।</p>
<br /><p>আ জা দি। প্রতি অক্ষরে তার দুনিয়ার সব লোক স্বপ্ন মেশাক। </p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/saraswati/সরস্বতী2020-01-28T13:48:50-05:002023-06-26T17:23:18-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। সরস্বতী।</p>
<br /><p>হুকুম যখন দাঁড়িয়ে থাকার ,রাষ্ট্র জুড়ে অতীতপোষণ,<br />ডিগ্রী নামক কাগজগুলোয় শিক্ষা থাকে কষ্টে ভীষণ<br />ফিসফিসানো আশায় তখন যে স্বর শোনায় চরৈবেতি<br />এগিয়ে চলার সেই জেদি সুর, তিনিই দেবী সরস্বতী।</p>
<br /><p>ভুল ইতিহাস লেখার গুঁতোয় সত্য কাঁপে কুঁকড়ে ভয়ে<br />শেকল যারা বাসতো ভালো বিপ্লবী যায় তারাই হয়ে<br />অভয় যে বই সামলে রাখে সূর্য সুভাষ সবরমতী,<br />পাতায় পাতায় সেই কেতাবের স্থিত দেবী সরস্বতী।</p>
<br /><p>ফেক ভিডিও সুযোগ খুঁজে জ্বালাচ্ছে মন মোবাইল স্ক্রীনে<br />ভুল খবরে হিংসা ছড়ায়, জ্বলছে আগুন রাত্রি দিনে,<br />যে সব কলম সত্য খুজে সামলে বেড়ান খবর-ক্ষতি<br />তাঁদের তন্দ্রাবিহীন নিবে নিবাস করেন সরস্বতী।</p>
<br /><p>চোখরাঙানির মুখের ওপর কেউ যদি গায় ফৈয়াজ নাজম<br />শাহীনবাগ বা তিয়েন স্কোয়ার, যাদের গলায় ধিক ফ্যাসিজম<br />সবাই যখন আঁটছে কুলুপ, বার্তা যাদের জবর গতি<br />দেশ যুগ আর কাল পেরিয়ে, তাদের সাথেই সরস্বতী।</p>
<br /><p>শিক্ষা যখন মানুষ জাগায় দিনবদলের দুঃসাহসে<br />মিথ্যা যতই কায়েমী হোক কেউ যদি না যায় আপোষে<br />সবাই যখন বশংবদ , কেউ যদি হয় অপর মতি,<br />ধর্মবিহীন তার পতাকায় বিরাজ করেন সরস্বতী।</p>
<br /><p>সত্য যাদের পথের মশাল তাদের কাছেই সরস্বতী।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/je-telephone-na-ele-hoy/যে টেলিফোন না এলে হয়2020-01-27T15:09:21-05:002023-06-26T17:18:07-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>।যে টেলিফোন না এলে হয়।</p>
<br /><p> ( প্রিয় কবি পূর্ণেন্দু পত্রীকে প্রণাম জানিয়ে..)</p>
<br /><p>যে টেলিফোন না এলে হয়,সে টেলিফোন এসেছে<br />দুজন লোকের মাঝের কথা অন্য কথায় ভেসেছে<br />ফোন শোভা পায় সবার হাতে, <br />বিরামবিহীন শব্দপাতে<br />অনন্যোপায় মন চলে যায় স্ক্রিনের দিকে দিনেরাতে,<br />সাথীর কথা যায়না শোনা, ফোনেই লোকে ফেঁসেছে<br />যে টেলিফোন না এলে হয়, সে টেলিফোন এসেছে।</p>
<br /><p>ফোন না এলে কি আসে যায়, ফেসবুকময় হুলুস্থুলু,<br />চোখেতে চোখ লাগার আগেই নতুন মেসেজ বাজায় উলু,<br />কে কাকে আর টানবে কাছে,<br />ইনস্টা কিছু মিস হয় পাছে,<br />আমার মতন আরেক আমি মোবাইল ফোনের মধ্যে বাঁচে,<br />সেলফি দেখো কেমন ভালো সেজেছে,<br />যে রিংটোন না বাজলে হয় , আপনমনে বেজেছে।</p>
<br /><p>আঙুলছোঁয়ায় বুকের ভেতর বাজে না আর হঠাৎ মাদল<br />বরং দেখি কার ডি পি তে বদল হলো কেমন আদল<br />ফোনের শিখায় জীবন জ্বালি,<br />ছোঁয়ার স্মৃতি জমায় কালি,<br />বাস্তবিকে একলা রাখে ভার্চুয়ালের এই পাঁচালি,<br />ফেসবুকময় তাকধিনাধিন<br />অনলাইনই এখন রুটিন <br />ফোন এসে যায়, স্ক্রিনের আলো জ্বলতে থাকে বিরামবিহীন<br />দূরের মানুষ কাছে এসে কাছের মানুষ ঘেঁটেছে<br />যে ফোনটা না এলে হয় কে আর কবে কেটেছে।</p>
<br /><p>মানুষরা সব ভালো থাকার বিপরীতে হেঁটেছে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/doshor/দোসর2020-01-25T02:40:23-05:002023-06-26T17:16:59-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। দোসর।</p>
<br /><p> ( আইজিয়াস : রাজা Aegeus)</p>
<br /><p>শরীর যখন বাঁধ মানেনা , সঙ্গী পাওয়া সহজ,<br />শরীর যখন বাগ মানেনা, তখন কি কেউ থাকে,<br />যখন সময় সব খেয়েছে , মন্ত্রী ঘোড়া গজ,<br />কিস্তিতে তাও যে বাধা দেয় , দোসর বলি তাকে।</p>
<br /><p>চুমু গোলাপ ইত্যাদি সব যুবাকালের দান,<br />বয়েসকালে ফিকে যখন, ডাইরি পাতায় স্মৃতি<br />হলুদ পাতায় বৃদ্ধ ডালে বন্ধ পাখির গান,<br />চশমা চোখেও ঠোকর খাওয়ার যখন পরিস্থিতি,<br />নষ্টি করার বয়েস গেছে, যষ্টি থাকে হাতে,<br />খাওয়াতে না ওষুধে হ্যাঁ রুটিন জুড়ে ধূসর,<br />পথিক যে মন সঙ্গে চলে বুড়ো হওয়ার সাথে,<br />সায়াহ্ণে সেই দরজা খোলা মানুষ আসল দোসর।</p>
<br /><p>হোয়াটসঅ্যাপে সুপ্রভাতের লিস্টি চলে বেড়ে<br />ভারচুয়ালে সুনামি হয় বন্ধু হবার ঢেউ<br />হারিয়ে গেলে অন্ধকারে হঠাৎ বরাতফেরে,<br />হাত বাড়ালে বাতাস শুধু ,ধরবার নেই কেউ।<br />একলা কালোয় মন্দ থাকা, নির্জনতার বন্দী<br /> অদৃষ্টতে হঠাৎ তেমন জীবন লেখে যদি<br /> বিষণ্ণতা স্থাবর হওয়ার করলে অভিসন্ধি<br /> আইজিয়াসের আস্তাবলে কেউ যদি হয় নদী,<br /> দরজা ভেঙে শর্তবিহীন আলো ঢোকায় ঘরে<br />ধমকে বলে, এক্ষুনি ওঠ, ধাষ্টামোটা ছাড়,<br />দুঃখগুলোর ক্ষত সারায় আজব ছুমন্তরে,<br />দোসর ছাড়া অন্য কিছু কি হবে সে আর!</p>
<br /><p>বন্ধ কথায় ভাবনাকে যে বইয়ের মতন পড়ে<br />হাতের সাকিন যার পাওয়া যায় হাত বাড়ানো যেই<br />নোঙর যে লোক বাদবাকি সব উড়িয়ে নিলে ঝড়ে<br />মোটের ওপর, যাকে ছাড়া চলার উপায় নেই....</p>
<br /><p>প্রেম কলহ ভাগাভাগির দোসর হবে সে-ই।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/janoikoder-lipikar/জনৈকদের লিপিকার2020-01-24T08:51:58-05:002023-06-26T17:18:03-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। জনৈকদের লিপিকার।</p>
<br /><p>রাজমিস্তিরিদের কেউ মনে রাখেনা, সবাই সৌধ দেখে।<br />শেষে তার কে মালিক, ক্ষীণস্মৃতি ইতিহাস সেই নাম লেখে,<br />বাকি সব সময়ের কুয়াশায় আবছায়া নামহীন অবয়ব,<br />তারুণ্য উজ্জ্বল হলে কে আবার মনে রাখে কার কোলে শৈশব!</p>
<br /><p>যে তন্ত্র চলুক না, আলোচনা যত হোক জনতাকে ঘিরে,<br />একখানা মুখও কেউ আলাদা রাখে না মনে সংখ্যার ভিড়ে,<br />ব্যক্তি বদলে দাও, কেউ বুঝবে না, প্রশ্ন হবে না কোনো সে কোথায় গেলো,<br />নেতাই প্রমুখ শুধু , নেতা তৈরির লোক চির-অগোছালো।</p>
<br /><p>কারা করে কথকতা জনতার? জন্ম , জন্মদান, মৃত্যু তারপরে,<br />মাঝের সময়টুকু অন্য নামের ফলক পালিশে পালিশে যারা চকচকে করে,<br />সমস্ত যুদ্ধ আর সব মন্বন্তরে যারা শুধু নামহীন শরীর তালিকা<br />তাদের ঘুপচিঘরে অস্পষ্ট কথাদের বলার জন্য কার মুসাবিদা লেখা?</p>
<br /><p>ইতিহাস করেনি তা, সে তো রাজা বাদশার অন্নদাস চিরকাল,<br />সে লেখে বিজয়লিপি, জন-বারমাস্যা তার কাছে ছেদো জঞ্জাল।<br />ধর্মের দায় নেই, তার কাছে সবাই অকিঞ্চিৎ প্রবর্তক ছাড়া,<br />মানুষে অরুচি খুব ,নিয়মের বেড়াজালে কেবল ঈশ্বরকে সে দেয় পাহারা।</p>
<br /><p>‘জনৈক’দের কথা প্রজন্মে নিয়ে যেতে মানুষের সম্বল শুধু কবিতারা।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/shunyata/শূন্যতা2020-01-21T12:52:33-05:002023-06-26T17:23:36-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। শূন্যতা।</p>
<br /><p>প্রিয়জন চলে গেলে, মনের অংশ কিছু সাথে চলে যায়<br />তুমি সে মানুষ নও, কিছুটা এসেছো ফেলে কবরে চিতায়,<br />স্মৃতি দিয়ে মেরামতি হয়না পুরোটা যার কোনোদিনও আর,<br />সময় নিয়েছে যাকে, সেও নিয়ে গেছে সাথে টুকরো তোমার।</p>
<br /><p>বাঁচা মানে আয়ু নয়, এক জন্মের মাঝে বহুল জীবন,<br />শিকলিতে গাঁথা দিন, কোটি অচেনায় পাওয়া কিছু প্রিয়জন।<br />হঠাৎ বাড়ালে হাত , কেউ যদি আগলায় প্রশ্রয়ে প্রশ্নবিহীন<br />তার মানে তার কাছে সে হাতের জমা হলো সময়ের ঋণ।</p>
<br /><p>এরকমই ধারবাকি রেখে চারপাশে, বন্ধকী জীবন কাটানো<br />অদ্ভুত জিগ-স’তে বহু টুকরো জীবন একসাথে আটকানো,<br />যার মালিকানা বিভ্রম আমাদের হতে থাকে যাপনের ফাঁকে<br />আমিই আমাতে সব, সেটা ভেবে ধমকাই রোজ আয়নাকে।</p>
<br /><p>তারপর , সেই দিন আসে।কথা ছিলোনা যার হাত ছেড়ে যেতে <br />সে চলে যায়। নোঙর উপড়ে নিয়ে ভেসে যায় না ফেরা জগতে,<br />হাত বাড়ানোতে শুধু শূন্যতা এসে লাগে আকুল আঙুলে<br />খোঁজার উপায় নেই। বাঁচাতে চেষ্টা বৃথা ,স্মৃতি থেকে তুলে।</p>
<br /><p>একদিন, মনখারাপিয়া ক্ষণ মিশেছে যখন এসে প্রাত্যহিকতায়<br />কাজে ঢাকা রোজনামচার ফাঁকে চমকিয়ে দেখি আয়নায়,<br />আমি আর পুরো আমি নই। কিছুটা জীবন ভেসে গেছে তার সাথে,<br />আমার হয়েও যা আমার ছিলো না, চলে গেছে ঋণ মেটানোর খাতে। </p>
<br /><p>তবু কি মেটে সে ধার, সুদ শোধ নেয় স্মৃতি আজীবন না ভরা শূন্যতাতে।</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/keno-kobi-noi/কেন কবি নই2020-01-20T07:13:58-05:002023-06-26T17:18:38-04:00আর্যতীর্থhttps://www.bangla-kobita.com/tirtha123/<p>। কেন কবি নই।</p>
<br /><p>শব্দের আঁকিবুকি কল্পনা ক্যানভাসে,<br />যেভাবে কবির কাছে কবিতারা সেজে আসে<br /> কলম-সোহাগী সেই কথাদের মন পেতে সাধ জাগে বড়।<br />খর যে তীক্ষ্ণ কথা প্রতিবাদে দড় , <br />তারা পেলবতাহীন নগ্ন রুক্ষতায় স্বভাবত অকাব্যিক হয়,<br />বাস্তবিকের পথ নয় মধুময়, বরং ঠোকর খাওয়া চলার সময়,<br />সেটা দস্তুর। প্রসাধন থেকে তারা বহু, বহু দূর।<br />তবু তো ইচ্ছে করে, অনাবিল প্রেম এসে কলাপীর নাচে,<br />আমার সৃষ্টি ছেয়ে বেপরোয়া বাঁচে,<br />রোজের পেষণ ভুলে শব্দেরা দোলে যেন ধ্রুপদী পেখমে,<br />ছাইপাঁশ যা লিখি কবিতার ভ্রমে,<br />একদিন সে ধুলোরা সোনামুঠি হবে কোনো অনিন্দ্য দুর্ঘটনায়,<br />কলম বউনি করি রোজ সে আশায়। </p>
<br /><p>তারপর , তারা আসে। বিষমেশা নিঃশ্বাসে,<br /> শিকারীরা কাঁপা বুক খুঁজে নেয় মাপা সন্ত্রাসে,<br />দেখি চারপাশে, মানুষের মৃগয়াতে নেমেছে মানুষ ।<br />ধিকিধিকি জ্বলে থাকা হিংসার তুষ,<br />পোড়া লাশ রেখে যায় সময়ের চৌকাঠে রোজ,<br />কিভাবে ফেরাবো তাকে, কিভাবে বলবো তবু জীবন সহজ,<br />বুঝতে পারিনা। বীণা পাণিতে তাই বাজেনা কখনো,<br />যখনই কলম খুলি, বেসুর বেতালা দ্রিমি তাণ্ডব শোনো।<br />জানি লাভ নেই, তবু মনপোড়া লাভাস্রোত উগড়িয়ে শান্তি তো মেলে,<br />কিভাবে দেখবো বলো, নীড়ে ফেরে কোন পাখি কুটো ঠোঁটে পড়ন্ত বিকেলে,<br />আমি যে দেখতে পাই পাখিটার দিকে তাক শত বন্দুক,<br />ট্রিগারে আঙুল রাখা ইচ্ছেমতন দিতে দুমড়িয়ে সুখ।</p>
<br /><p>কলমেও আসে তাই বিষণ্ণ পৃথিবীর অসুখের মুখ..</p>
<br /><p>আর্যতীর্থ</p>@ 2024 - আর্যতীর্থ