। গুরু লঘুর অংক।


অবশেষে একদিন ইউ এন ভাঙলো।
নেশনেরা বুঝলেন,
কাঁটাতারই যুগের ফ্যাশন,
ইউনিটি থেকে ইউনিটই হয়ে থাকা ভালো,
গ্লোবালাইজেশন একটি গ্লোবাল লাই।
সকলে ‘ হিজ হিজ হুজ হুজ’ চুজ করলেন,
ভারত রাশিয়া চীন আমেরিকা ব্রাজিল থেকে
লুক্সেমবার্গ, এরিট্রিয়া বুরকিনা ফাসো আর ফিজি আইল্যান্ডও ঘোষণা করে দিলো ,
দেশ আগে , বিশ্ব চুলোতে,
কেউ আর যাবে না অন্য কারো পেছনে চিমটি কাটতে
বা ছদ্ম মাথায় হাত বুলোতে,
যে যার মতন থাকবে।


সুতরাং  সব দেশে শুরু হয়ে গেলো লঘুদের
আরো লঘু করে ক্রমশ বিলীন করার প্রক্রিয়া।
কেউ বললো, এত বছরের পরে যারা এসছে তারাই লঘু,
কেউ বাছলো ধর্মকে,
কেউ ভাষা,
কেউ রাজনৈতিক মতবাদ
কেউ শাসকের প্রতি আনুগত্যকে,
কেউ আবার স্রেফ গায়ের রঙকে।
যে ভাবেই ভাগ হোক,
ব্যাপারটা মোটামুটি সত্তর-তিরিশে দাঁড়ালো,
জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে।
চিহ্নিতকরণ ও নিধনের পরে,
পৃথিবীর জনসংখ্যা তিনশো কোটি কমে গেলো,
যদিও কোনো দেশ অন্য কোনো দেশ নিয়ে মন্তব্য করলো না,
ওই এখন যেমন
ইজরায়েলিদের ফিলিস্তিনিসংহারে
অন্ধ মূক ও বধির থাকা সভ্য বিশ্বের চাহিদা, ঠিক সেরকম।
প্রবল দেশপ্রেমে সবাই ভাবলো,
এতদিনে দুশো চারখানা শুদ্ধ দেশ পাওয়া গেলো।


কোথায় কী!
যেখানে ধর্ম নিয়ে ভাগ হলো, সেখানে ভাষা নিয়ে ঝগড়া শুরু হলো,
একভাষাভাষী দেশে আবার গায়ের রঙ নিয়ে প্রবল বিবাদ,
একরঙা দেশে ঝগড়া বাঁধলো ধর্ম নিয়ে।
এখানেও নতুন গুরুরা সমূলে বিনাশ করলো নতুন লঘুদের,
মোটামুটি ওই সত্তর তিরিশ হিসেবে।
কোনো দেশ অন্য দেশে নাক গলালো না,
পৃথিবীর জনসংখ্যা কমে হলো, সাড়ে তিনশো কোটি।
লোকে মাথা নেড়ে বললো, এবারে শান্তি আসতে বাধ্য।


ধ্যাত্তেরি!
আবার শুরু হয়ে গেলো পার্থক্য নিয়ে টানাটানি।
ধর্ম এক হলেও উপাসনা পদ্ধতি নিয়ে গোলমাল,
ভাষা এক হলেও উচ্চারণবিধি নিয়ে গোলমাল,
গায়ের রঙ এক হলেও চুল আর চোখের রঙ নিয়ে গোলমাল,
আর সবকিছু এক হলেও কে সে দেশে আগে এসছে তাই নিয়ে গোলমাল..
গুরু-লঘু, গুরু-লঘু করতে করতে করতে,
শেষ অবধি টিকে গেলো দুশো চারখানা মানুষ,
প্রতি দেশ প্রতি একজন।


মানুষগুলো এবারে সীমান্তের বাইরে তাকালো।
কারো ধর্মের সাথে মিল, কারো ভাষার সাথে,
কারো গায়ের রঙের সাথে।
সেই মতো আবার লঘু-গুরু, গুরু-লঘু , লঘু-গুরু..
এইবারে ‘আন্তর্জাতিক’ স্তরে,
একটা বিভাজন থামলেই আরেকটা শুরু।
এই করতে করতে করতে শেষ অবধি বেঁচে ছিলো যে দুইজন,
তারাও পরস্পরের অমিল খুঁজে বের করে যুদ্ধ করতে করতে শেষে একদিন দুজনেই মরে গেলো।


তখন সবুজ গাছেরা এসে সব দেশ-সীমানা মুছে দিলো,
পাখিরা এদেশের খেয়ে ওদেশে বাসা বেঁধে সে দেশে বেড়াতে যেতে লাগলো,
পশুরা যে যার ইচ্ছেমতো জঙ্গলে আস্তানা খুঁজে নিলো।


গ্রহান্তরের একদল  জীব,
পৃথিবীতে ক্ষণিক তাদের রকেট থামিয়ে চারদিক জরিপ করে
অবাক চোখে বলে উঠলো,
আরিব্বাস, একটা বিভাজনহীন বিশ্ব!
এখানকার প্রাণীরা কি সাংঘাতিক বুদ্ধিমান!


তারপর.. অনেক সেলফি নিয়ে, হুউশ করে উড়ে গেলো অন্তরীক্ষযান।


আর্যতীর্থ