। হ্যাপি নিউ ইয়ার।
(বন্ধুবর শ্রী অতনু দত্তের গল্প অবলম্বনে)


রাতের খোয়ারি তখনও কাটেনি, গিন্নি বলেন শুনছো
আউট হয়েছো কয় পেগ খেয়ে এখনো কি তাই গুনছো?
আজ বছরের পয়লা তারিখ, অনেক রয়েছে ঝক্কি
যাওনা বাজার, সবজীর সাথে নিয়ে এসো রামপক্ষী।
বাড়িতে আসবে বান্ধবী সব হুল্লোড় হবে রাত্রে
তোমার এমন গা এলানো ভাবে জ্বালা ধরে যায় গাত্রে।


বেগতিক দেখে ব্যাগখানি হাতে বাজারের দিকে ছুটলাম
হায়রে বছর, প্রথম দিনেই কার মুখ দেখে উঠলাম!
নিজের মনেই গজগজ করে রাস্তাতে চলি একা,
হারান খুড়োর সাথে হয়ে গেলো হঠাৎ করেই দেখা।
খাটো ধুতি আর ফতুয়া পরনে, গায়েতে পুরোনো শাল,
খুড়োর পোশাকে হয়না বদল, হোকনা নতুন সাল।
হারান কাকুর সটান কথাকে সবলোকে ভয় করে
ছেলেকে মানুষ করেছেন একা কাকিমা যাওয়ার পরে
সেই ছেলে আজ বছর দশেক অনাবাসী ভারতীয়
দেশে ফিরবেনা সেই তথ্যটা নয় খুব গোপনীয়।
ডলারের থোকা মাঝে মাঝে নাকি খুড়োর বাড়িতে আসে
নিয়মিত  সেটা দান করে দেন নানান বৃদ্ধাবাসে।


'সাত তাড়াতাড়ি চললে কোথায়, হনহন করে ছোকরা?'
মাঝচল্লিশে ছোঁড়া ডেকে যান কাকুর মতন লোকরা।
মৃদু হাসি মুখে এনে তবু বলি হ্যাপি নিউ ইয়ার খুড়ো
খুঁড়োর কথায় সে সম্ভাষণ ভেঙে হলো গুঁড়ো গুঁড়ো।
'হ্যাপি তো হয়েছে মদের দোকান আর কিছু রেস্তোরাঁ,
ছাপোষাদের নয়া সাল এলে যায় আসে না হে ছোঁড়া!
সক্কলে মিলে পৃথিবীর সাথে ঘুরলাম আরো একপাক
বুঝিনা হে বাপু এই নিয়ে কেন হইচই হাঁকডাক।
চলি হে ছোকরা, মোবাইলটাতে পয়সা কিছুটা ভরবো
ভেবেছি আজকে ছেলেটার বাড়ি একবার ফোন করবো।'


বাজারে ঠিক ঢোকার পরেই  মনখারাপের খবর শুনি
বছরশেষের রাতের শেষে মরে গেছে পাগলি  টুনি।
টুনি পাগলি এই বাজারেই থাকতো হাসতো বকতো খালি
ইদানিং তো পাথর ছুঁড়তো, সঙ্গে বিকট গালাগালি।
নারী মানেই কিছু পশুর খুবলে খাওয়ার জন্য শরীর,
পাগলী হলেও পায় নি রেহাই, অঙ্গগুলো সেই তো নারীর।
তিলে তিলে বেড়ে উঠেছিলো ছেলে  ধর্ষিত জরায়ুতে ,
জননী পাগলী কখনো কাউকে শিশুকে দিতো না ছুঁতে
কালকে রাত্রে পাগলীটা গেছে ছেড়ে জীবনের দাবী
ছেলেটা এবার শেষ হয়ে যাবে বিষন্নবুকে ভাবি।


ফিরবার পথে চায়ের দোকানে জটলা একটা দেখি,
হারানকাকার কোলে বসে আছে টুনির ছেলেটা, একি!
'শোনো হে ছোকরা', খুড়ো বললেন কান্নার মতো হেসে
আমার নাতিটা পুরো মার্কিনী, ছেলে ফিরবেনা দেশে।
সময় কোথায় হাতে হে তাদের, ফোনটোন তুলবার
আমারও সময় এসে গেছে বুঝি তাদেরকে ভুলবার।
তাই ভাবলাম টুনির ছেলেকে আমি নিয়ে যাই বাড়ি
দেখাই যাক না কতটা যত্নে মানুষ করতে পারি।
মুশকিল হলো খুড়োর চোখেতে সরাসরি চোখ রাখা
রুমালে দুচোখ ঢেকে নিয়ে বলি,হ্যাপি নিউ ইয়ার, কাকা!


আর্যতীর্থ