।জতুগৃহের আগে।


ভীম:
পুরোচন রোজ এত তেল দেয় দাদা রে,
নির্ঘাত পরে কোনো মহাগোল বাঁধাবে।
চারদিকে লাক্ষা, ঘি তেলের গন্ধ,
মতলব ভাজছে সে, যার বাবা অন্ধ।
নামখানা বলবোনা বাবা এই বাড়িতে,
কে কখন শুনে নেবে চুপিচুপি আড়িতে।
মোটকথা বুঝে নাও, শত্রুরা সাজছে,
কবে যে পোড়াবে তার মতলব ভাজছে।
অনুমতি দাও যদি , আজই ঘাড় মটকাই
তারপরে মা’কে নিয়ে পাঁচভাই সটকাই।


যুধিষ্ঠির:
মধ্যম! সন্দেহ ঠোঁটে তুলে এনোনা
চারদিকে চর আছে, দৃষ্টিকে টেনোনা।
বলিনি তোমায় বা বাকি চারজনাকে,
তাত বিদুর যা বলেছেন আমাকে।
যা ভাবো ঠিকই ভাবো, এই বাড়ি দাহ্য,
হ্ত্যার ষড় ঢাকা আদরের বাহ্য।
বহুদিন আগে তাই নড়ে ওঠা টনকে
সুড়ঙ্গ খোঁড়বার ভার দিই খনক-এ
সেই কাজ শেষ আজ, পুরোপুরি তৈরী
এইবারে পলায়ন, জানবেনা বৈরী।


ভীম:
না দাদা! এতখানি সোজা নয় পালানো,
ব্যবস্থা করা চাই ঘরটাকে জ্বালানোর।
ভেবে দেখো, ছয়জনে এইভাবে গায়েবে
দুয়ে দুয়ে চার করে নেবে ওরা হিসেবে
বনপথে চুপিসারে ঘাতককে পাঠালে
বেঘোরে মরণ জুটে যাবে পোড়াকপালে
এমন সুক্ষ্ণ ছক করা চাই, জ্যেষ্ঠ,
ধোকায় বলবে ওরা, কাজ হলো বেশ তো।
ওরা যেন ভাবে পুড়ে মরে গেছি সকলে,
কাঁটাহীন রাজ্যটি এসে গেছে দখলে।


যুধিষ্ঠির:
সুন্দর ভাবনাটি, হলে ভারী ভালো হতো
মধ্যম! তবু আশা দেখছিনা দৃশ্যত।
তোমার এ বিন্যাসে মহাবড় ফাঁক এই,
যতই পুড়ুক দেহ , শবটি তো থাকবেই
ছাই ঘেঁটে ওরা ঠিক বুঝে যাবে সত্যি,
লোভী বটে, বোকা নয় মোটে একরত্তি।
ঘাতক পাঠালে সেটা সামলাবো নিশ্চিত
এতদিন ধরে দ্রোণ গড়েছেন তার ভিত।
সময় সুযোগ বুঝে, চলো যাই পালিয়ে,
অমা-রাত এসে যায়, এসো করি কালই এ।


ভীম:
এই তো কাছেই থাকে নিষাদের পরিবার
সখ্য আমার সাথে হয়ে গেছে ভারী তার।
এক মা, পাঁচ ছেলে, ভালো করে গুনেছি
ওদের মাথায় রেখে এই ছক বুনেছি।
পাবনের ছলে ডেকে এই ঘর-মধ্যে
নেশাতুর করে দেবো যথেচ্ছ মদ্যে
( যেমন খাইয়ে থাকি ভরপেট ছাগ-কে,
তারপরে বলি দিই সানন্দে যজ্ঞে)
কালকের দিনটাই করা হোক ধার্য
শীঘ্র করতে হয় সব শুভকার্য।


যুধিষ্ঠির:
ভাই আমার! এ কেমন ছক তুই কস রে,
আমরা যে ক্ষত্রিয়, শান দিই শস্ত্রে।
এইভাবে নির্দোষ লোক হোক হত্যা
সর্বদা সেইখানে আমার অমত তা।
তার চেয়ে বুঝে নেবো পাঁচভাই আগামী
পারবোনা করতে এ কপটের পাপ আমি।


ভীম:
রাজনীতি এটা দাদা, পাপ কেন এ হবে,
চিরকাল এইপথে ইতিহাস এগোবে।
ছাগরা তো বলি হয় দেবতার তোষণেই
শুভকাজে ছল হলে তাতে কোনো দোষও নেই।
আগামী সুদিন ভেবে আজকে এ হত্যা
পাপ নয়, বস্তুত মুক্তির পথ তা।


যুধিষ্ঠির:
বেশ তবে কাল হোক কাজটা অগত্যা...


আর্যতীর্থ