। ক্ষমা।


খুঁজছি ওকে।
যৌবনে যে মেয়ে গেছিলো আমার কাছে নেহাত ঠকে,
সবটুকুনি নিংড়ে নিয়ে ভাসিয়ে দিলাম আমি যাকে
অনিশ্চয়ের ঘোলাজলের ঘূর্ণিপাকে,
পঁচিশ বছর ডিঙিয়ে এসে, আবছা হওয়া অতীত ঘষে,
খুঁজছি ওকে।


সেই মেয়ে দিয়েছিলো আমায়,
সদ্য ফোঁটা যুবতী মন ,শরীরেরও যা দেওয়া যায়,
বুনেছিলো স্বপ্ন খালি, কল্পলোকের গেরস্থালি,
আদরসোহাগ, ভরসাখুঁটি, একলা দুপুর লুটোপুটি,
সুযোগ পেলে জড়িয়ে চুমু, মুহূর্তরা তুরীয় কামুক,
আমি সুযোগ নিয়েছিলাম, ওই বাজারে যা পাওয়া যায়,
শর্তবিহীন সমর্পণে সে মেয়ে শুধুই চাইতো আমায়।


যাওয়ার সময় তাকাইনি তো,
এমনি গেছি, জীবিকাতে সিঁড়ি ওঠায় তখন সেটা বাধা হতো।
পায়ের তলায় মাটি সরেছে, ফোনের পরে ফোন করেছে,
ভেসেছিলো দুচোখ বানে, অবিশ্বাসে, অভিমানে,
যা সব কিছু আমায় দিলো, তার বেশি আর কিই বা দিতো,
প্রাণান্তকর অনুনয়েও, আমি ফিরে তাকাইনিতো।


আজকে খুঁজি তার ঠিকানা,
শেষ যেখানে ছিলো জানা, সে আস্তানায় ওরই খোঁজে দিলাম হানা।
বহুকালই গেছে চলে ওখান থেকে, পুরোনো এক পড়শী দেখে,
তার কাছে খোঁজ পেলাম কোথায় এখন বাড়ি । আবার পাড়ি দিলাম নতুন সেই পাড়াতেও,
বছর বারো আগেই নাকি বিয়ে করে ভিনশহরে একান্তে ঘর পেতেছে ও।
আশংকাতে নিরাশাতে পেরিয়ে গিয়ে বিঘ্ন নানা,
অবশেষে খুঁজে নিলাম তার ঠিকানা।


অনেকখানি বদলে গেছে।
সুখী সিঁদুর মাথায় পরে, অনেকগুলো দিন কেটেছে।
আমায় দেখে অবাক হয়ে, লাভার মতো চোখ জ্বালিয়ে,
বললো হঠাৎ কোন সাহসে, আমার সুখের ঘরে এসে,
আগুন ধরাও? ছাইয়ের থেকে ফিনিক্স হয়ে,
ফের উঠেছি সামলে নিয়ে, এখন কি চাও?
আমার অপরাধী চোখে সটান সোজা চোখ রেখেছে,
নরম নরম সেই মেয়েটা অনেকখানি বদলে গেছে।


আজ এসেছি চাইতে ক্ষমা।
সব নিয়েছি ,মিথ্যে করে সাজিয়ে তোকে প্রিয়তমা।
যত ব্যথা দিলাম তোকে, আজকে আমার মেয়ের চোখে,
এসছে ফিরে,
সবটা নিয়ে একটা ছেলে ,দিয়েছে তার জীবন ছিঁড়ে।
রোজ আগুনে পুড়তে দেখি, বিনা দোষে কষ্ট সেকি,
যায় না দেখা।
তোরই মতন আমারও মেয়ে ধিকিধিকি মরছে একা।
এতদিনে বুঝেছি রে, কতখানি ক্ষত করে
গেছি চলে, পায়ে দলে অমূল্য মন।
এ কষ্টকে দ্বিগুণ করে আমায় ফেরত দিচ্ছে জীবন।
আজ এসেছি ধুয়ে দিতে পঁচিশ বছর সেই অতীতে
যে পাপগুলো আছে জমা।
পারিস যদি , করিস ক্ষমা। করিস ক্ষমা।


আর্যতীর্থ