। চিঠি।


তোমাকে বলবো বলে যা সব আড়ালে ছিলো ব্যস্ততা অজুহাত চাপা,
আজ সেই চিরকুটগুলো ধুলো ঝেড়ে বের করে দেখি,
এত তারা ঝুরঝুরে, তোমার পড়ার আগে ঝরে পড়ে যাবে সব খুললে লেফাফা,
সময়ে বলবো বলে তামাদি গিয়েছে হয়ে সে দামী আবেগ,
ঠুঁটো কলমে ঝুটো কিছু লেখালেখি।


সুতরাং, নতুন এক সাদা পাতা এনে, খোলা চিঠি দেবো ভাবলাম,
এবার আর কোনো রাখঢাক রাখবো না, উপুড় করবো মন,
সেই ভেবে কলম বাগিয়ে বসে তো গেলাম, কিন্তু সম্বোধনে প্রিয়তমাসু লিখি নাকি নাম,
সেটা ভেবে বেলা বয়ে যায়। ভাবো দেখি কি জ্বালাতন!


আজকাল ইনস্টা’র যুগে চিঠিফিঠি কেউ লেখে, বলো! হুট পৌঁছায় হ্যাশট্যাগে,
বলবার ধরণও বদলে গিয়েছে, অর্ধেক ইমোজিতে, বাকি আধা অক্ষরে আধো-সংকেত,
লেফাফা, ডাকটিকিট অচেনা এ যুগে। মেঘেরা জমে না আর পিওনের ব্যাগে,
ডি ডি এল জে দেখে কেউ কি এখনো নিজেকে শাহরুখ ভাবে?
লংশটে কাজল আর ধু ধু গমক্ষেত..


যাক’গে সে সব কথা। প্রতি প্রজন্মে প্রেম নবজন্ম পায়, আসে নবকলেবর ধরে,
যারা বুড়ো তারা দেখে গজগজ করে। একালের মতো যদি হতো,
তবে এই চিঠিখানা বেকার ঠিকানা খুঁজতো না। কে পত্র দেয় বাবা ঘরের ভেতরে,
মনের খবর জেনে এবাড়ি ওবাড়ি ঠিক কথারা এগোতো।


কতগুলো বছর পেরোলো? সুনীলের তেত্রিশ পেরিয়ে গিয়েছে নাকি,
হিসেব করলে বোঝা যাবে। সম্বোধন উহ্য থাক চিঠিতে নাহয়,
প্রিয়তমা খুবই সেকেলে, আমাদের থেকেও প্রাচীন। কবে আর নাম ধরে ডাকি,
সুতরাং সরাসরি বিষয়েই আসা যাক। সাদা খাতা জমা দেওয়া ভালো কথা নয়।


কী লিখি, লিখি কী বলো তো! রোজনামচার যত প্রৌঢ় কাঁদুনি,
তোমাকে বলতে গেলে ফোপড়া শোনাবে। বালিশ সাক্ষ্য রেখে রাত্রির কথাবার্তাকে,
যদিও লিখতে পারি, পড়লে সেসব  মাথার ডাক্তার দেখাতে বলবে তখুনি,
রিস্ক নিয়ে লাভ নেই। বরঞ্চ সব কথা একটা বাক্যে ফেলে খামটা বন্ধ করি,
কালকেই দেওয়া যাবে ডাকে।


চিঠিটা যে পেয়েছিলো,
নেপথ্য কথাগুলো তার জানা নয় ।
তেত্রিশ বছর পরে তবু সে ফেরত গেলো অতীতের বাঁকে।


একটা লাইন শুধু ,
যথারীতি সম্বোধনহীন, নিচে কোনো সইটইও নেই,
সে তবু মোমের মতো গললো তাতেই।


লেখা ছিলো গোটা গোটা অক্ষরে স্রেফ
‘ যত দেরি হোক, কেউ কেউ ঠিক কথা রাখে’।


আর্যতীর্থ