। নারীর দিবস।


ভোর চারটের লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল। ঠাসা ভিড়।
চারদিকে ক্যালোরম্যালোর, মালতী সরমা কল্পনারা ঝমঝম ছুটে চলেছে শহরের দিকে।গড়িয়া, বাঘাযতীন , যাদবপুর ,বিধাননগরে ডাঁই করা নোংরা বাসন আর একরাশ ঘরোয়া ধুলোবালি অপেক্ষায় আছে।


ভোর ছ’টা। হুড়মুড় করে মোবাইল অ্যালার্ম বন্ধ করলো শ্রাবণী, মধুমিতা, সুনীপা। বাচ্চার টিফিন, বরের ব্রেকফাস্ট, শাশুড়ির প্রভাতী পুজো আয়োজন, ঠিকঠাক হওয়া চাই রোজকার অভ্যাস মেনে। তার ওপরে কাজের লোকও এসে যাবে।


সকাল আটটায় চটজলদি রেডি হচ্ছে শ্রীতমা, গার্গী ,ঋতাভরী। কারো স্কুল, কারো অফিস মিটিং। একটু বাদেই নির্দিষ্ট বাস এসে যাবে, ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে।ঠিক একই সময়ে, তড়িৎ রূপটানে রূপসা ঝিমলি মধুমিতা বেরিয়ে পড়লো,যার যার খোপে ঢুকে যাবে ঠিক নয়টায়, কার্ড পাঞ্চ করে ।


সকাল দশটা,  প্রথম ক্লায়েন্টকে সুতপা কড়কড়ে দুহাজারি বান্ডিল দিলো। অনিমাদি শুরু করলেন কর্পোরেশনে ফাইল দেখা, তাঁর সই হলে তবে বিল পাশ হবে। পুলিশ থানায় কনস্টেবল মঞ্জুর কাছে তখন বসে এফ আই আর করছে অত্যাচারিতা শ্যামলী। তারই শাশুড়ি আর ননদের বিরুদ্ধে।


দুপুর বারোটা, কাজকাম শেষে অবশেষে ফেসবুকে মন দিলো
সোনালী।হোয়াটসঅ্যাপে একশো তিনটে আনরেড মেসেজ দেখে আঁতকে উঠলো সুকন্যা। মন্টুর মা আর তার মালকিন
করবী বসু, একসাথে তাদের প্রিয় সিরিয়ালে মজে গেলো।


দুপুর দুটো। জ্যোতিষ নির্ঘন্ট মেনে ডাক্তার বর্ণালী করলো সিজার  , দুর্ভাগ্যবশতঃ এবারেও ফুটফুটে মেয়ে জন্মালো।
ডাক্তার খুব খুশী, মা’র চোখে জল।


বিকেল পাঁচটা। ঘরমুখী ক্লান্ত নারীরা, সকলেই জানে গিয়ে গা এলানো যাবে না মোটেই।বাচ্চার হোমওয়ার্ক, রাতের খাবার ও সাথে থাকা মানুষের নানা বায়নাক্কা, সবকিছু সামলিয়ে তবে শুতে যাবে। ফিরতি ট্রেনের ভিড়ে কল্পনা মালতী, মাতাল স্বামীর কাছে, গরীব মাটির কাছে পৌঁছাতে মোটামুটি আটটা তো হবে। ডাক্তার বৈশাখী রোগী দেখে যায়।


রাত বারোটা। পৃথিবী গিয়েছে ঘুমে, ঘরে ঘরে মহিলারা পরের দিনের নানা কাজকে গুছায়...


আর্যতীর্থ