। প্যারোল।


কোনো এক পলাতক উন্মনা সন্ধ্যায়, শব্দরা ছুটি চায়।
পড়ন্ত আলো এসে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে যায়, বোসো চুপ করে ।
মৃদু হাওয়া দোল দিয়ে মনের ভেতরে, হালকা ধমক দেয়,
‘সারাদিন কথা কেন বলো এত বেশি?’ বাগানের ফুল হয়ে কিছুটা সাহসী, ইশারায় ডাক দিয়ে বলে চলে এসো,
চুপিচুপি আমাদেরও কিছু ভালোবেসো, যান্ত্রিক জীবনের কাঁটাতার ছিঁড়ে। আঁধার ঘনিয়ে আসে চারদিকে ধীরে....


সূর্যের ভাণ্ডার আজকের মতো শেষ, জোছনার জিম্মায় রাত পড়ে আছে।ঝিঁঝিপোকা, জোনাকিরা আঁধার অতিথি, জেগে ওঠে আনাচেকানাচে।ঘুম ঘুম চোখে আমায় দেখতে থাকে আবছায়া ফুল, যন্ত্রের দাস এক কি করে যে চলে এলো করে দিকভুল! আমিও ওদের দেখি, তাই বলে ছুঁই না পাতা। রাত্তিরে গাছ ছুঁতে নেই, ছোটো থেকে শোনা আছে তা।মুঠোফোন সাবধানে অফ করে দিই, এসময় যন্ত্রকে ভাগ দিতে নেই,
ফুলের সুবাসমাখা হাওয়া টেনে ভরে নিই দুই ফুসফুস, ফুটে ওঠা তারাগুলো মিটমিট করে বলে, বহুদিন পরে এলে, কেমন আছো ওহে যন্ত্রমানুষ?


তারাদের দিকে হেসে আঁধারের রেণু মেখে নিই সারা গায়ে।মাঝখানে আড্ডাতে চাঁদ এসে যায়,বেহিসেবী জোছনাতে আশপাশ করে তোলে মায়ার পৃথিবী। ওপরের দিকে চেয়ে ভাবি, রোজ রাতে আকাশ সাজিয়ে রাখে মনখোলা চাবি।
শহরের আলো জ্বলা পরাধীন খোপে, আমরা জীবন কাটি
মুঠোফোন মাপে, রাতকে তাড়িয়ে দিই আলোজ্বলা স্ক্রিনে,
স্বপ্ন আসেনা তাই আর পথ চিনে।


দূর থেকে ভেসে আসে মন্দিরে ঘন্টা, আজানের ডাক, মিলেমিশে। সময় হয়না নীল ধর্মের বিষে, প্রতিটা মুহূর্ত চায় জীবনের কণাগুলো খুব ভালো থাক, টানটান হয়ে বেঁচে মৃত্যু তাড়াক। আমরা রাত্রি জেগে ষড় করি শুধু, সুতরাং আঁধারের জাদু, প্রলেপ দেয় না আর যাপনের ক্ষতে, আতংকে কাটে দিন আজ কোনোমতে।


ওইসব কথা আজ থাক, দূরে রাখি বিষাদের থলি। আপাতত চাঁদ তারা, বাগানের ঘুমঘুম ফুল নিয়ে কথা বলি, রাতচরা পাখিদের ডানার ঝাপট শুনি আঁধারে দাঁড়িয়ে, যন্ত্রকে ভুলে গিয়ে জীবন আলিঙ্গন একবার করে নিই দুহাত বাড়িয়ে।


একটু বাদেই তো যান্ত্রিক ঘরখোপে যেতে হবে চলে, মাঝে মাঝে তাজা হাওয়া ভরে নিতে চলে আসি সুযোগী প্যারোলে।


আর্যতীর্থ