। প্রতিবেশী।


শয়তানের বাড়িটা ঈশ্বরের থেকে খুব দূরে নয়,
বস্তুত, ঈশ্বরের কাছে যেতে হলে, তার উঠোন দিয়ে যেতে হতে পারে।
অন্য রাস্তা আছে, কিন্তু সে ভারী ঘুরপথ।
জন্ম ইস্তক ঈশ্বরের বাড়ির সন্ধানে ঘুরপাক খেতে খেতে লোকে বোঝে,
ওইপথে খিদে পেলে জোটে শুধু গুড় আর বাতাসা, সে খোরাকিও নিজে নিজে খুঁজে নিতে হয়।
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে চকলেট নিয়ে কিছু সুবেশ এজেন্ট, শয়তান ফিট করে রেখেছে তাদের।
খিদে না পেলেও জোর করে গুঁজে দেয় পরে খেও বলে,
লোকেরা বন্ধু ভেবে ভাব করে নেয়,
আর ভাবে, আহা , এই  পড়ে পাওয়া চোদ্দোআনারা নির্ঘাত ঈশ্বরীদূত।
জিজ্ঞেস না  করলেও তারা দেখিয়ে দেয়, ‘ ওই ভিড়ে মিশে চলে যাও, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাবে।’
আরো কত লোক ঘোর কোলাহলে চলছে সে পথে, চকচকে অহোঁচট সড়কে হাঁটছে যারা, সকলেই দাবী করে তারা ভারী সুখী।
প্রত্যেকে বিশ্বাস রেখেছে, চলেছে তারা অভিষ্টসিদ্ধির পথে।।
সেই পথে নানা জটলায় ,  মিথ্যে কথা বললে বাহবা দেওয়া হয়,
চুরি করাকে গুণ, আর কামজ আত্মসমর্পণকে মোক্ষের পথ বলে প্রচার করেন সড়কাধিপতিরা।


এইভাবে হাঁটতে হাঁটতে একদিন এক অনুপম প্রাসাদে পৌঁছায় পথিক।
এ এক অদ্ভূত রাজ্য, যেখানে হাসিতে সুখ নেই, কান্নায় আন্তরিকতা নেই, সকলেই সকলকে সন্দেহ করে।
পাপকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে নিতে , ভিড়ের গড্ডলিকা সেটাকেই ঈশ্বরী আবাসন বলে মেনে নেয়,
যেখানে অর্থ ও ক্ষমতাবলে তাবত অপরাধ ধর্মের নাম করে ঢেকে দেওয়া যায়।


দু চারজন বোঝে, কোথাও বাজছে গান ভুল সুরে যেন।
জন্মাবধি যে ঈশ্বরী ভাবনা, তার বিপরীতে যেন বইছে বাতাস।
চুপিচুপি রক্ষীর নজর এড়িয়ে, আবার বেরিয়ে পড়ে তারা পথ হাতড়িয়ে,
কিন্তু, কোনদিকে যাবে? সে ঠিকানা লেখা নেই শয়তানি দেশে।


তখুনি আকাশে লুকিয়ে থাকা দিকচিহ্নরা তারার ছদ্মবেশে জ্বলে ওঠে ঠিক।
ফিসফিস শোনা যায়, ভয় কি রে বাছা, প্রায় পুরো পথ তো পেরিয়ে এসেছিস। মোড় ঘোর শুধু।


শয়তানের বাড়ির খুব কাছাকাছি, দরজা জানলা সব হাট করে খুলে ঈশ্বর অপেক্ষা করেন,
যদি কেউ জাল ছিঁড়ে তাঁর কাছে আসে...


আর্যতীর্থ