। রিলে রেস।


হাঁপাতে হাঁপাতে পিছল হাতে ব্যাটন নিয়ে দৌড়াচ্ছে চৈতালী।
আর কয়েক ঘন্টা দৌড়ালেই সীমা দেখা যাবে।
রেসের নিয়ম মেনে সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে বৈশাখী,
গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ্দুরে সে বেচারিকে দৌড়োতে হবে।
রাস্তাটা মোটেই মসৃন নয়, যত সময় যাচ্ছে আরও খন্দে ভরছে,
গত কয়েকটা দশক ধরেই গরম বাড়ছে, সাথে মানুষের মেজাজ।
আগে চড়কের মেলা হলে গ্রামকে গ্রাম উৎসবে মাততে দেখেছে সে,
এখন রামনবমী বা হনুমান জয়ন্তীতে উৎসব কম, বেশি ক্ষমতার আওয়াজ।
কতবার দৌড় থামিয়ে সে হাঁ করে দেখেছে মস্ত বঁড়শী পিঠে বিঁধিয়ে ঘুরছে মানুষ,
হিঁদুর মেলা তো কি, কত রফিক আর আনোয়ারের দোকান ছিলো মেলাগুলোয়,
চৈতালী জুলজুল করে দেখেছে কাঁচের চুড়ি, পুঁতির হার, নকল রূপোর মল..
এবারে কি কোথাও মেলা বসেছে তেমন? ইতিউতি খুঁজতে খুঁজতে সে আবার দৌড়োয়।
পোশাকের লাল রংটা শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে, হঠাৎ খেয়াল  হলো তার।
এমনিতেই বরাবর রংহীন সে, ওর ঠিক আগে দৌড়ে আসা ফাল্গুনের পুরো উল্টো।
রামনবমীর দিন সে আপনমনে দৌড়াচ্ছিলো, হঠাৎ চারদিকে চিৎকার, মারামারি, গুলি, বোমা..
কিছু বোঝবার আগেই দলা দলা রক্তমাংস ছিটকিয়ে পড়লো ওর গায়ে, কি করে দাগ যাবে কেউ যদি বলতো!
হঠাৎ চিৎকারে সম্বিত ফেরে তার। গ্রাম থেকে গ্রাম হুহুংকারে ছুটছে বাইক ও পদাতিকবাহিনী,
হাতে উইকেট, কোদালের বাঁট, খোলা তরওয়াল, আর থেকে থেকে যুদ্ধের ডাক,
রক্ত ছিটকে আসে। চৈতালী প্রাণপণ ছোটে, পোশাকের রং পাল্টিয়ে ক্রমে গাঢ় লাল,
অবশেষে সীমারেখা। ওই তো বৈশাখী। জলদি ব্যাটন দিয়ে চাপাস্বরে সে বলে, ‘ শুভ নববর্ষ! দৌড়োতে থাক!’


আর্যতীর্থ