। শেষ স্মৃতি।


শ্বাস টেনে নিতে আর জোর কোরো না।
ফুসফুস বুঝে গেছে তার ব্যর্থতা,
যন্ত্রের দাক্ষিণ্য আজ বড় তাড়না,
ফিরবো না , মেনে নাও তার অমোঘতা।
বরং এখানে বোসো, চোখে চোখ রাখো,
কথা বলা এ জীবনে আর যাবে না,
আমি চাই তুমি শেষ স্মৃতি হয়ে থাকো,
তোমার স্পর্শ হোক শেষ লেনাদেনা।
সই দাও, যন্ত্র বন্ধে দিয়ে দাও অনুমতি,
খামোখা মগজটাকে কেন আর টানো,
ফুসফুস হৃদয়ের এত বড় ক্ষতি,
দেহ যে সামলাবে না, তুমি সেটা জানো।
হাঁপরের মতো শ্বাস ভরে দিয়ে দেহে,
যে লোকটা বেঁচে আছে আমি নাকি সে?
আরেকটু রাখবার অপারগ স্নেহে
বোঝো না কি এ শরীর ভরে গেছে বিষে?
আমার ক্ষমতা হলে টেনে খুলতাম নল,
থামাতাম যন্ত্রের সব জারিজুরি,
মগজটা বাদ দিলে পুরোটা অচল,
লাভ নেই কটা দিন আয়ু করে চুরি।
এই তো ক’মিনিট তুমি আছো সাথে
তারপর চারদিকে অচেনা সবাই,
তোমার উষ্ণতাকে ধরে রেখে হাতে,
সীমানার ওইপারে চলে যেতে চাই।
তোমাকে ছেড়ে আর কোথায় বা যাবো,
যাবে শুধু অক্ষম দেহটার ভার,
যতবার আনমনে আমাদের ভাবো,
কোত্থাও যাওয়া জেনো হবে না আমার।
ভাষাহীন হয়ে গেছি যন্ত্রকৃপায়,
তুমি তো পড়তে পারো এ চোখের ভাষা,
সাথীটি তোমার আজ চলে যেতে চায়,
জানি আমি, বোঝাবে তা চেনা ভালোবাসা।
দেহহীন হয়ে তবু যাবো আমি থেকে,
তোমার স্মৃতির থেকে কে আমায় নেবে?
কিছুক্ষণ বসে থাকো চোখে চোখ রেখে,
কথা দাও, তুমি আজ শেষ স্মৃতি হবে?


ডাক্তার হঠাৎ চমকে দেখতে পেলেন,
ভদ্রমহিলা নিজেই বন্ধ করে দিলেন ভেন্টিলেটার,
সবকাজ ফেলে যদিও দৌড়ে গেলেন,
রোগী করে ফেলেছেন সব সীমা পার।
‘ কেন করলেন?’ মহিলা নিরুত্তর,
‘ওঁকে খুন করলেন! এই মনে ছিলো?’
অবশেষে ফিরে পান তিনি তাঁর স্বর,
অস্ফুটে বলে দেন ‘ ও বলেছিলো।’


আর্যতীর্থ