। শিরদাঁড়া হারানোর পালা।


রাত তখন কটা? ঘড়ি নেই, চাঁদও নেই আকাশে।
ওরা দাঁড়িয়েছে ভাঙাচোরা বাড়িটার সামনে এসে।
ভেতরে নিরীহ প্রবীণ দার্শনিক, তাঁকে ধরতে এত পদাতিক?
সৌম্য বৃদ্ধ  এলেন বেরিয়ে । রক্ষীপ্রধানকে বললেন, যেখানে ইচ্ছে চলো নিয়ে।
প্রধান শোনালেন , গ্রেপ্তারের হুকুম আছে আপনাকে।
পক্ককেশ বললেন, বলে দাও তোমার রাজাকে, আমার বাণী শাশ্বত সত্য , বদলানোর  সম্ভাবনাই নেই কোনো।
অকথ্য গাল দিয়ে উঠলো সৈনিকদের মধ্যে কেউ, ঘুম ভালো করে ছাড়েনি এখনো।
ঘুম? সারা শহরে বাকি বুদ্ধিজীবিরা তখন নিঃসাড়ে চোখ বুজে আছেন,
দেখতে তো হবে , যাতে তারা বেশিদিন বাঁচেন!
তাছাড়া বৃদ্ধের কথাবার্তা বড় বেয়াড়া, সিংহাসনের ভয়ডরহীন,
বিচার ও যুক্তি হলে এহেন স্বাধীন, তাঁকে দাবাতেই হয়।
নিষিদ্ধ করতে হয় বই, কেড়ে নিতে হয় তাঁর বিষয়আশয়,
ভুল বিচারে সাজানো সাক্ষী ডেকে প্রমাণ করতেই হয় , তিনি অপরাধী, দোষ রাজদ্রোহিতা,
রাজানুগামীরা অতি উৎসাহে জ্বালিয়ে দেয় তাবত বাণী ও কবিতা,
আর বাকি মগজোপজীবিরা হাত সেঁকতে সেঁকতে জলহাওয়ার নিরাপদ আলোচনা সারে।
তারা জানে, রাজকোপ বেশি পড়ে উঁচু হওয়া ঘাড়ে।
ইতিহাস দেখেছে ‘ শিরদাঁড়া কেড়ে নেওয়া পালা’টার অভিনয়  লক্ষ রজনী
যুগ আর স্থান দেখে নাম পাল্টেছে শুধু, বাদবাকি কিছু আর বদল হয়নি।
সক্রেটিস  ব্রুনো হয়ে পুড়ে যান হিংসুটে আগুনে ধর্মের হাতে,
ব্রুনো  লোরকা নাম নিয়ে দাঁড়ান ফায়ারিং স্কোয়াডে,
নাৎসি জার্মানিতে লোরকাই দেস্তোভনিক কাজু’তে অবয়ব পান,
রাশিয়ার আখমাতোভা মীরপুরের মেহেরুন্নিসা হয়ে ফের শাসকের সামনে দাঁড়ান।
যুগে যুগে কলমকে ভয় পায় বন্দুক,
তাই মাঝরাত্রে একাকী লেখককে ঘিরতে পল্টনের পর পল্টন পুলিশ আসে,
কি জানি, কখন বিদ্রোহ বারুদ প্রবল বিস্ফোরণে  ছড়িয়ে যায় বশংবদ বাতাসে!


শুনেছি এই দেশেও নাকি ‘ শিরদাঁড়া হারানোর পালা’ মঞ্চস্থ হতে পারে আজ,
নামভূমিকায় রাও, ফেরেরা ,গনসালভেজ, গৌতম নওলাখা, সুধা ভরদ্বাজ।


এখনো ঘুমাবে নাকি নাকে তেল দিয়ে, রোজ বুলি কপচানো সুশীল সমাজ??


আর্যতীর্থ