। শয়তান।


রাস্তায় গণধোলাই খাওয়া অচেনা কিশোরকে
  যে লোকটা বেধড়ক মেরে সবকটা পাঁজর ভেঙে দিয়ে গেলো,
সে কোনো ঘাঘু ক্রিমিনাল নয়।
বাড়ি ফিরে সে তার সন্তানকে কোলে নেবে,
বৌয়ের মুখঝামটায় মুখ চুন করে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে,
কাজের জায়গায় নিয়মিত সে ঊর্ধ্বতনের গালি খায়।


অথচ ওই কিশোরকে  থেঁতলে দেওয়ার দেওয়ার সময়
তার চোখে ছিলো খ্যাপা হাতির হিংস্রতা,
প্রতি মারে গুটিয়ে থাকা শরীরটা আরো যখন কঁকিয়ে উঠছিলো ক্ষীণকন্ঠে,
মুমূর্ষুর শেষ উচ্চারণ  তার মনে জন্ম দিচ্ছিলো উল্লাসের।


লোকটার নাম কোনো থানা জানে না,
লোকটা কোনোদিন ওর বউয়ের গায়ে হাত তোলেনি,
  পড়শির সাথে কথা কাটাকাটি হয়তো হয়েছে, লাঠালাঠি নয়,
কাজের জায়গায় ধর্মঘট হলে
লোকটা ঝামেলায় না থেকে বাড়ি চলে আসে ।
তবু সে ওই কিশোরের হত্যার প্রধান জল্লাদ হলো কি করে?


আসলে ওকে বলা হয়েছিলো সগৌরব উন্মত্ত গণকন্ঠস্বরে,
ওই কিশোরটি চোর।
অথবা ধর্ষক ।
অথবা ওর ঈশ্বরের অবমাননাকারী ।
মোটকথা, ওই সকলের মার খাওয়া কাতরানো ক্লিন্ন দেহটার নাম নেই,
মা বাপ পরিজন নেই,
বাঁচার অধিকার নেই,
ও মরে গেলে লাভ হবে সমাজের, দেশের বা ঈশ্বরের।


এরকম লাভ হলে হত্যারা বলির পুণ্য হয়ে যায়, 
ভালো কাজের ছদ্মবেশে আদিম হিংস্রতা জেগে ওঠে।
ওই কিশোরকে লোকটা আর দেখতে পায় না, সে মারে।
সে মেরে পাঁজর ভাঙে সেই বাইকআরোহী দুর্বৃত্তদের ,
যারা তার  বৌ বোন মেয়েকে মাঝরাস্তায় ভুল ছুঁয়েছিলো।
সে দুমড়ে মুচড়ে দেয় সেই ডাকাতের দলটাকে,
যারা ছোটোবেলায় তার বাবার সর্বস্ব লুটে নিয়েছিলো,
সে মারে ওর উপাসনালয় ভাঙা বিধর্মীদের,
অন্য দেশে বা রাষ্ট্রের সুনজরে থাকার জন্য
যাদের কেশাগ্র স্পর্শ করা যায়নি।
সে মারে।
সে মারে ।
সে শুধু মারে।


পুণ্যের লোভ দিয়ে শয়তান বাসা বাঁধে তার ব্যবহারে। 


মানুষ? প্রতি গণহত্যায় নিজের কাছেই সে গোহারান হারে।


আর্যতীর্থ