। স্বীকারোক্তি।


তোদের জন্য জঞ্জাল সরিয়ে বাসযোগ্য করতে পারিনি পৃথিবীকে আজও।
কচি হাতে ছাল উঠেছে ইঁটের ঘষায়,
হাজা হওয়া ছোট্ট আঙুলে এঁটো বাসনের গন্ধ,
দশের আগেই বুঝতে শিখেছিস পুরুষের ছোঁয়ার বিভীষিকা।
দৈনিক একথালা ভাতের সাধ অপূর্ণ থেকে গেছে,
ভয়হীন খিলখিলানো হাসি সময়ের মুখ দেখেনি,
তোদের ভ্রুণে খুন হতে দেখেও আমরা চুপ থেকেছি।


তোরা তবু, অসহায় নিরুদ্বেগে আমরা যেমন বলেছি তেমন করেছিস,
দশ বছরের দিদি হয়ে খুদে ভাইদের সামলেছিস,
চোদ্দো বছরে স্কুলের পড়া ছেড়ে দ্বিগুণ বয়েসীর ঘর সামলেছিস,
পনেরোর অস্ফুট যৌবনে মা হয়েছিস।


আসলে, তুই আমাদের ওপর বড় ভরসা করেছিলি।
ভেবেছিলি দেশের রাজাউজিররা বুঝে নেবেন দুচোখ ভরা অপ্রাপ্তিকে,
ভেবেছিলি  তোদের নামে এত এত প্রকল্প হচ্ছে,
সেটা সত্যিই অন্ধকার থেকে বের করে আনবো বলে।
হায় আমার মূর্খ মায়ের দল,
ভোটে ভালো সাজার জন্য আমরা কোথায় নামতে পারি,
তোদের স্কুল ছাড়িয়ে দেওয়া, ধমকে দাবিয়ে রাখা মগজে তা আসবে না।
আমরা বেটি বাঁচাও বলে চেচাঁই, কিন্তু কন্যাভ্রুণ হত্যাতে বাপমাকে শাস্তি দিই না।
আমরা মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করেছি, কিন্তু অভিভাবকের ঘাড় ধরে তোদের স্কুলে আনাতে পারিনি।


এত প্রতিজ্ঞাভঙ্গকারীর অঙ্গীকার করা সাজেনা,
তবুও কিছু লোক এখনো আলো আনার লড়াই চালাচ্ছে,
দাঁতে দাঁত চেপে ।
দেরী হলেও দেখিস, একদিন হয়তো আমরাই জিতবো।


ততদিন সভ্যতা বেঁচে থাকবে তো?


আর্যতীর্থ