। উবের।


( একটি ইংরাজিতে পাওয়া ফরওয়ার্ডের তর্জমা)


ঘটনাটা ছোটোখাটো। বৃষ্টি পড়ছে সেদিন খুব।
চেনা শহর পেরিয়ে হাঁটু কোমরজলে দিচ্ছে ডুব।
ফিরতে হবে বাড়ি জানি জল বাঁচিয়ে ঘুরপথে,
ট্যাক্সিওয়ালা হাঁকছে যেন চাইছি যেতে তিব্বতে।
এমনিতে ভাগ করে যাওয়া আমার বড় চক্ষুশূল
বর্ষাকালের আতান্তরে বাঁচিয়ে দিলো উবের পুল।


ঝমঝমানো বৃষ্টিপাতে জলদি খুলে বাঁয়ের দোর,
অল্প ভিজেই গেলাম ঢুকে গাড়ির ভেতর বরাতজোর।
আমার পাশেই ছোট্ট খুকু, বয়েস হবে ছয় কি সাত,
তার ওপাশে তার মা বসে, সিঁদুর সিঁথি, শাঁখার হাত।
সামনে বসে মাঝবয়েসী, ফেজ টুপি আর চাপকানে
ছোট্ট মেয়েটা দেখছে ওটাই, কি ভাবছে তা সে-ই জানে।
আমি বসে মোবাইল ঘাঁটি, চেক করে নিই হোয়াটসঅ্যাপ,
হঠাৎ শুনি প্রশ্ন ক্ষুদের , কাকুর কেন অমন ক্যাপ?


থমকে গেলাম, চমকে গেলাম, মুহূর্তে হয় কানখাড়া,
এইবারে ঠিক শুনতে পাবো আমরা ওরা’র ভ্যানতারা।
মা’টি বলেন, দাদুর সামনে আমি যেমন ঘোমটা টানি
ওই কাকুটাও ওই টুপিতে দেখাতে চান সম্মানই।
বড়রা কই এই গাড়িতে?দুঁদে  ক্ষুদে প্রশ্ন শানায়,
এই গাড়িতে কাকু তবে কাকে এখন প্রণাম জানায়?
উবের গাড়ির গানের ভল্যুম হঠাৎ যেন একটু নিচু,
ফেজটুপি আর আমারও কান মায়ের কথার করলো পিছু।


‘ নমস্কার যে শিখিয়েছি কারোর সাথে দেখা হলে,
ওই কাকুটার বাবা মা-ও ঠিক তেমনই গেছেন বলে
ওই টুপিটা পরার মানে যাকে যাকে সামনে পাবে,
বড় ছোটো যেমনই হোক সবাইকে সে মান দেখাবে।’
ইসলামিও ভাবেন নি তো সম্ভবত এমন জবাব
এই দেশে যে ধর্ম দিয়েই বিচার করা সবার স্বভাব।


মেঘ কেটে রাত হালকা আলো, জানলা দিয়ে বাইরে দেখি
এমন মা’ রা থাকলে দেশে  রঙবাজেরা করবেটা কি।
বাড়ির কাছে গেলাম নেমে, বৃষ্টি তখন ঝিরি ঝিরি,
অমল আলোর ভরসা নিয়ে ইচ্ছেভিজে বাড়ি ফিরি।


আর্যতীর্থ