দুদিনের জন্য জুরিখ এসেছিলাম, কয়েকটা ঘন্টা ফাঁকা পেয়েছিলাম মোটে।


      । জুরিখ সফর।
( এটা রাস্তা চলতে চলতে মাঝে মাঝে থেমে লেখা, শেষের কয় লাইন ছাড়া)


কবিতা তৈরী হোক আজ পথে যেতে যেতে....


বিদেশ বিঁভুইয়ে আজ বেরিয়ে পড়েছি শুধু সাহস সম্বল করে
ভাষাটি জানিনা, পথনির্দেশ সব অবোধ্য তাই,
একটি বিকেল শুধু, স্মৃতি ভরে নিতে হবে তার ভেতরে,
ইংরাজি বোঝে লোকে, ভীতু মনে ভরসা সেটাই।
এখানে রাস্তাঘাট ঝকঝকে তকতকে ,গাড়িগুলো সব বামহাতি
তিনকোণা চুড়ো বাড়ি ছবি হয়ে সাজিয়েছে রাস্তার ধার,
সুঠাম পুরুষনারী বিনাহর্ন চলে যায় নিঃসাড়ে বড় দ্রুতগতি
এমন কি পথচারী ট্রাফিকের সিগনাল মেনে করে পথ পারাপার!
এসব  হাঁসের মাঝে বোকা বোকা বক হয়ে চলেছি অজানা শহরে,
একটা টিকিট কিনে পুরো দিন বাস ট্রাম ট্রেন চড়া যাবে,
( অতটা রেস্তো নেই ট্যাক্সির ভাড়া গুনে বেড়াবো হে বিদেশসফরে)
গরীবের দেশ থেকে এসেছি আধুলি নিয়ে, মনোযোগ তাই হিসাবে।
শহরের মাঝখানে মস্ত জুরিখ লেক, ট্রেন ধরে সেখানেই যাবো,
স্টেশনটি চেনা চেনা, অবিকল মেট্রোর ময়দান পার্ক স্ট্রিট যেন,
মুশকিল একটাই, ভাষাহীন ইঙ্গিতে কোন ট্রেন কি করে বোঝাবো,
ভাঙা ইংরাজিটাই ত্রাতা হলো শেষমেষ, এসে গেলো  ঈপ্সিত ট্রেনও।
আরামে চাপিনু বটে, কিন্তু কতটা যাবো, কোনভাবে জানা যাবে  তা?
বাঙালীর স্বভাবটা কাজে এলো এইবার, পাশের ছেলেটি ফরাসী,
(এই দেশে গায়ে পড়ে আলাপ জমানো মোটে নয় সেটা ভব্যতা,
বিপদে পড়লে বাপু সাহেবকে মামা বলি, মেমকে বলতে পারি মাসী! )
স্টেশনে নামার পরে অবস্থা গুরুতর, গেঁয়ো যেন শহরে এসেছে,
লেক খুঁজে নিতে নিতে কিছুটা সময় গেলো (ভাগ্যিস ব্রীজগুলো ছিলো),
ভাবলাম দেখে আসি টলটলে নীল হ্রদ শহরের কতদূরে গেছে,
কাঁচঢাকা এ সি লঞ্চ ভাবনায় সাড়া দিয়ে লেকের ওপারে পাড়ি দিলো।
দুই ধারে সারি সারি তিনকোণা চুড়ো বাড়ি, আলাদা হয়েও যেন এক,
দিগন্তে উঁকি মারে সবুজ পাহাড়সারি, তারও পরে বরফের চূড়া,
একলা নাবিক হয়ে পালতোলা  নৌকায় আসে যায় সাহেব অনেক,
লেকের ওপাশে দেখি সবুজে সবুজ পার্ক,দৌড়ায় কিছু লোক, খেলছে শিশুরা ।
এদেশের ট্রামগাড়ি মেট্রোরেলের  মতো, শুধু এটা তিন কামরার,
টিকিটের দৌলতে চাপছি যে কোনো ট্রামে, আবার ধরছি ট্রাম নেমে,
শহরের বুকে ঘুরি কিশোর অপুর মতো, যাই দেখি চমক আমার,
আলগা ঘুরতে থাকি, জুরিখের নানা ছবি সঞ্চয় করে রাখি স্মৃতিদের ফ্রেমে।
এবারে ফেরার পালা, দিশেহারা ফের এসে তিনতলা রেলের স্টেশনে,
সুইসরা সহৃদয় এবং ভদ্রলোক, পেয়েছি তা টের বারেবারে,
তাঁদের দেখানো পথে কোনোমতে দিশা খুঁজে হোটেলে ফিরেছি মানে মানে,
এখন ডিনারে যাবো, খিদেটা মেটাতে হবে বিজাতীয় রাতের খাবারে।


ভাষা বা খরচ সামলানো যায় ,বিদেশসফরে ঝামেলা অন্য ব্যাপারে,
যে যাই বলুক, বাঁ হাতের কাজ হয় না হে টিস্যু পেপারে.....


আর্যতীর্থ