ছন্দ ও কবিতার পাঠ –১৮ - লয়
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি মনোজ ভৌমিক মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
পূর্বপাঠ
১৫) ছেদ ও যতি  
১৬) পর্ব ও পর্বাঙ্গ
১৭) পদ, চরণ, পঙক্তি, স্তবক
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়-  ১৮) লয়
------------------------------------------------------------------------------
কবিতা পাঠকালে পঠনের গতিভঙ্গি হতে যে সুরের সৃষ্টি হয়, তাকে লয় বলে। ছন্দ-বিচারে, ধ্বনির গতিকে বলা হয় লয়। কবিতার প্রথম স্তবক বা চার লাইন পড়লেই বোঝা যায় ধ্বনিদের কোন বেগে সাজানো হয়েছে, এবং তার থেকে ঠিক করতে হয় কবিতাটির আবৃত্তি হবে ধীরে, দ্রুতভাবে বা মাঝামাঝিতে। গতির এই আপাত হিসেবে তিন লয়ের নাম দ্রুত, মধ্যম ও বিলম্বিত।
অর্থাৎ লয় তিনপ্রকার।


ক) ধীর লয়ঃ যে সমস্ত কবিতার পূর্ণপর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার, সেগুলি সাধারণত ধীরগতিতে পাঠ করা হয়। ইচ্ছা করলেও দ্রুত বা মধ্যম চালে পাঠ করা যায় না। এটি হল ধীর লয়। এই ধীরে ধীরে টেনে টেনে পাঠ করা হয়। এটি এককথায় অলস লোকের গতি।
যেমন- 'মহাভারতের কথা /অমৃত সমান
         কাশীরাম দাস কহে /শুনে পুণ্যবান।'


খ) দ্রুত লয়ঃ যে কবিতাগুলির পূর্ণপর্ব ৪ মাত্রার বা ছোটো ছোটো সেগুলি সাধারণত দ্রুতগতিতে পাঠ করা হয়। ইচ্ছা করলেও ধীর বা মধ্যম চালে পাঠ করা যায় না। এটি হল দ্রুত লয়। এটি এককথায় চটপটে লোকের গতি। এই লয় যেন লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।
যেমন- 'কে মেরেছে /কে ধরেছে /কে দিয়েছে/ গাল
        তাইতো খুকু /রাগ করেছে /ভাত খায়নি/ কাল।'


গ) মধ্যম বা বিলম্বিত লয়ঃ যে সমস্ত কবিতার পূর্ণপর্ব বড়োও নয়, ছোটোও নয়, মাঝারি ৫/৬/৭ মাত্রার, সেগুলি সাধারণত মাঝারি গতিতে পাঠ করা হয়। ইচ্ছা করলেও ধীর বা দ্রুত চালে পাঠ  করা যায় না। এটি হল মধ্যম বা বিলম্বিত লয়। এটি স্বাভাবিক গতিতে পাঠ করা হয়। এটি এককথায় স্বাভাবিক লোকের গতি।
যেমন-
'নগরের নটী /চলে অভিসারে /যৌবনমদে /মত্তা
অঙ্গে আঁচল/ সুনীল বরণ
রুনু ঝুনু রবে /বাজে আভরণ
সন্ন্যাসী-গায়ে /পড়িতে চরণ /থামিল বাসব/দত্তা।'

***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাংলা ছন্দঃ রূপ ও রীতি –  ড. মিহির চৌধুরী কামিল্যা , কলকাতা।    
----------------------------------------------------------------------------
আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানিয়ে লেখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবেন।