দিনে একই উদর থেকেই জন্ম হয়েছিল তাদের;
জগতের সব ভালো জিনিস দেখে একজন সুখ পেলে,
অন্যজন খোঁজে হিংস্রতা, একটু নগ্নতা আর অশ্লীলতা।
দু’জন দু’ধর্মের হলেও তাদের মধ্যে কিছু মিলও রয়েছে,
একজন কাঁদলে তখন আরেকজন হাসতে পারে না।
তাদের একটা জলাশয়ও আছে, আছে জলের উৎপত্তি
সুখে উজ্জীবিত হয় তারা, আর দুঃখে নামায় বৃষ্টি।
তাদের কার্যকলাপ দেখতে দেখতে সারাদিন চলে যায়,
তারা দু’জন ঘুমিয়ে গেলেই আমিও নিশ্চিন্তে ঘুমাই,
ঘুমে তারা দেখায় বলে আবার স্বপ্নে দেখি তোমায়।
।।
চোখ


তোমার গায়ের মাতাল ঘ্রাণ সে-ই প্রথম আমাকে জানিয়ে দেয়,
কাছাকাছি এলে ঘননিশ্বাস ফেলি, ছিদ্রপথ কিঞ্চিৎ গরম হয়।
একে অপরের গন্ধ নিতে থাকি, চোখ বন্ধ থাকে আমাদের-
খাম খুললে চিঠি থেকে বিভিন্ন কলমের কালির ঘ্রাণ আসে।
আমরা চুমোর মত দুএকবার ঘষাঘষি করি বেরোনোর আগে।
এরপর আরো গভীর থেকে আসে একরাশ নিকোটিনিক ধোয়া,
লালচে বাদামী করে পুড়িয়ে যায় অযত্নে বেড়ে যাওয়া গোফ।
তুমি চলে যাওয়ার দীর্ঘক্ষণ পরও আমি দুধ দুধ ঘ্রাণ পাই,
কখনো কখনো গন্ধ শুঁকে আবিষ্কার করি চা’য়ে চিনি কম,
তরকারিতে ঝাল বেশি কিংবা গায়ের শার্ট নোংরা হয়েছে
।।
নাক


ফ্যানের বাতাস গায়ে লাগে না; শুধু ভোঁ ভোঁ শব্দ শুনি,
ছেড়া মশারি দিয়ে মশা ঢুকলে মনে হয় যুদ্ধবিমান যায়;
একপাল ভেড়া গুনতে গুনতে চোখে ঘুম আনার চেষ্টা করি।
পাশের ঘরের বৌদির শীৎকার শুনে সকল চেষ্টা ব্যর্থ যায়,
ধুকপুক ধুকপুক শব্দ আসতে থাকে আমার বুকঘড়ি থেকে,
উঠে বসলে ত্রিশ বছরের বয়স্কা চৌকি ক্যাচ ক্যাচ করে।
বৌদির শীৎকার থেমে গেলে ধুকপুকানি আরো স্পষ্ট হয়,
তবু আমি বালিশের নিচে মাথা গুঁজে পড়ে থাকি চুপচাপ।
এভাবে একসময় আযান হয়, মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে জাদু আছে-
এরপর আর কোন শব্দ শুনো যায় না, ঘুমে তলিয়ে যাই।
।।
কান


শরীরের প্রায় সর্বস্থানেই  কমবেশি যাতায়াত আছে তাদের,
পা থেকে শুরু, উরু-নিতম্ব-কোমর-বুক হয়ে মাথা অব্দি।
আমাকে তারা কাগজে কলমে ডান-বামও শিখিয়েছেল-
বিশেষভাবে চিনিয়েছেল শরীরের কোনখানে কি সব থাকে,
আর যৌবনের শুরুতেই দিয়েছেল মৈথুনের কৃত্রিম সুখ,
এরপর প্রেমিকার নরম তুলতুলে বুকের উষ্ণ অনুভূতি।
ধরাধরি, টানাটানি এগুলো মূলত তাদের কাজেরই অংশ।
তাদের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে পাঁচ রকমের দশ আঙ্গুল,
দুই আঙ্গুলের ফাঁকে কখনো কলম, কখনো সিগারেট নাচে।
মাঝেমধ্যে পীঠ চুলকে দিলে তো আমি বেজায় আরাম পাই,
তাদের ঊর্ধ্বপানে তুলে ধরেই আবার স্রষ্টার কাছে ক্ষমা চাই।
।।
হাত


মূলত তারাই আমাকে জোর করে ঘরের বাইরে আনে,
বয়ে নিয়ে চলে বহুপথ, নদী, জঙ্গল, পাহাড়, সমুদ্রপানে।
এপাড়া থেকে ওপাড়া ঘুরে বেড়ায় আমাকে সাথে নিয়ে,
আমি হাটি না একটুও, বসে থাকি তাদের পিঠে ভর দিয়ে।
আমাকে বহন করা ছাড়াও তাদের আরো অনেক কাজ,
ফুটবল থেকে শুরু করে গরীবের পেট চিনে লাত্থি মারা,
বুকের উপর পাড়া দিয়ে সুদ সমেত আসল আদায় করা,
কিংবা বুটজুতো দিয়ে আঘাতে কারো চেহারা থেঁতলানো।
দুনিয়া ঘুরিয়ে আমাকে যখন তারা ছোট ঘরে নিয়ে আসে,
কেবল তখনই আমি তাদের খুব কাছ থেকে দেখতে পাই।
।।
পা


১৪/০৮/২০১৭
আমবাগান, মগবাজার।