শেষ শ্রাবণের সকালটা বেশ স্নিগ্ধ শুভ্র রোদ্দুর ঝ্লমল
কলতানে মুখরিত ফুলে ফুলে সুশোভিত প্রাণ চঞ্চল,
আঙিনার পাশে ভেজা ভেজা ঘাসে শিউলী মনোরম
নীল আকাশে সাদা মেঘ ভাসে শারদী অনুপম ;
আমার প্রিন্স স্যুট বুট পড়ে বিদ্যালয়ের পথ ধরে
মোড়ের মাথায় বাঁশে বাঁশ লাগায়, পূজো কদিন পরে ,
টুকাই টা সকাল সকাল জটা চুল ঝুটি করে
ছোটটাকে কোলে নিয়ে মূর্ত্তি পাড়ার পথ ধরে,
               মাটি-ঘুঁটি কঁচলে দিলে যদি ক'টা মূড়ি মেলে ।


শেষ শ্রাবণের বিকেল গড়ায় লাল - নীলাভ দিগন্তে
মৌমিতা'রা পা মেলায় বালুতটে নিভৃতে,
পিছন ফিরে লম্বা ছা'এর দৈর্ঘ্যের মাপজোক
অনুরাগে আবেশ মেশায়, চলে প্রতিশ্রুতির সুখ দুঃখ্ ;
সময়ের সরগম ধরে চলে নীড়ে ফেরার শোরগোল
লাবনী'রা সেজেগুজে তৈরী আরেকটা রাতের মশগুল ;
টুকাই'র মা ঘড়ে ফেরে মাথায় লাকড়ীর বোঝা
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় স্বামী, "আঁচলে কি গোঁজা" !
               চাল-টাল যদু দু মুঠো আনে তবেই মিটবে ক্ষুদা ।


সাঁজের বেলা আলোর মেলা চারিদিক উজ্বল
ঘরে ঘরে সিরিয়ালে পটল কুমার'এ বিহ্বল,
রাজপথ ব্যস্ত ত্রস্ত, ফুচকাওয়ালা তারও বেশী
ঘন মেঘ ঘনীভূত আকাশ ক্ষণিকে কালোকেশী,
আলোর জোয়ারে রঙীন ফোয়ারা ক্রমশঃ ক্ষীনমতি
শেষ শ্রাবণ বুজি দিয়ে গেল , যেমন প্রায়শঃ, দুর্গতি ।
ভয়ে কাঁচু মাঁচু টুকাইদের সংসার পিদিম নিভু নিভু
মুখে ঈশ্বর হাতে হাড়ি ঊনুনের পাশে টুকাই জবুথবু ;
             অপেক্ষায় মাতাল বাপের ঘড়ে ফেরা, চেঁচামেচি, জোরজুলুম ।


ঘন কালো রাত শ্রাবণ কি বৈশাখ
চারিদিক ছম্ ছম্ , প্রকৃতির রণ সাজ
গুড়ুম গুড়ুম দামামা বাজায় বিষন্ন গগন
বার্তা পরম শঙ্কা সংশয় কল্পান্ত লগন্ ।
নত থেকে নত মস্তিষ্ক যত বৃক্ষরাজি শত শত
অতি উজ্বল বিদ্যুৎ ঝলমল, পৃথ্বী বিসৃত ;
টুকাই''র বাবা গোপাটে গোঁঙায় যেন বজ্রাহত
কলা পাতার ঘরে কচু পাতায় ঢাকে ভাতের হাড়ি
              টুকাই'রা ঘুমিয়ে গেছে নয়তোবা ভয়ে মূর্চ্ছিত ।


এখন শ্রাবণের শেষ প্রহর স্তিমিত পৃথিবী
ধ্ব্ংসাবশেষের স্তুপে স্তুপে সরীসৃপের পদধ্বনি ;
তখনো চেয়ারম্যানের দ্বিতলে ইনভার্টারের আলো
নাকে নস্যি ঘুমোচ্ছে শ্রোতা, টি ভি'তে টক্ শো
"সাম্রাজ্যবাদ - ধনতন্ত্র - পূঁজিবাদ - বিশ্বায়ন
সাম্প্রদায়িকতা - বিচ্ছিন্নতাবাদ - বিমূদ্রাকরন,
জি.এস.টি, আধার কার্ড, বিরোধী গট্-বন্ধন ";
টুকাই'র মায়ের আচমকা আর্ত চিৎকার সংক্রন্দন
               "আমার টুকাই নাই গো নাই"শোকোন্মাদ জননীর রোদন ।


আরেকটা শ্রাবণ শেষ, আরেকটা ঝড়ের রাত
কলা পাতার ছাউনী তলায় টুকাই'দের দিনাতিপাত
বছর শেষে আরেকটা টুকাই আরেকটা কালো রাত
আকাশে মেঘ ভারী হয়, ধরনী সয় বজ্রাঘাত,
দিন আসে দিন যায়, শ্রাবণ'রাও আসে যায়
ছাউনীগুলো চিরদিন ছাউনী রয়
বিভেদগুলো ঘুরে বেড়ায়, গাছ তলায়-পাঁচ তলায় ।


(জীবনমুখী কবিতা আবৃত্তির জন্য)