কবিবর, আপনি সহশ্র অশ্রুজলে, কঠিন বাস্তবের মুখেও
কামনার ফুল  ফুটিয়েছিলেন নন্দিনির মধ্যে -
                                                 ..................আমার মধ্যেও।
যৌবনের মধ্যগগনে  যখন প্রেম ও লালশার দৃষ্টি আমাকে দুদিক থেকে ছিরে ফেলেছিল,
তখন নন্দিনি আমাকে শান্তি দিয়েছিল, আশা দিয়েছিল।


না, আমি অবশ্য কোনও কবি কে মন দিই নি
বরং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তিনি একজন মার্চেন্ট নেভি অফিসার
আমার ভাগ্য যেন গাঁঠ বেঁধেছিল নন্দিনির সাথে।
আমরা দুই চোখের বালি, একসাথে একই নৌকায় সওয়ার
দুজনে একই থালায় সাজিয়ে রেখেছি, সুখ ও দুঃখের নানান ব্যাঞ্জনবর্ণ


শুভঙ্কর, তোমার নন্দিনি.......আমার শই চঞ্চল নয়
সে গড়তে জানে, বাস্তবকে সাজাতে জানে স্বপ্নের মত করে -
তার গহনা ব্যাক্ত করে, শতদলের স্নিগ্ধতা,
তার ভালবাসায় সেই বিশ্বাস বহন করে  -
যা নাইটক্লাব বা লিভটুগেদার এও ফিকে হয় না।
তার এলো চুলের গভিরতায় মুগ্ধ হয় কঠিনতম পুরুষ
তবু শুভঙ্কর, কি কঠিন মানুষ তুমি
এই মাধুর্যে আচ্ছন্ন হয়েও দূরে কোথাও বেচে ছিলে ........আজও।
হয়ত এই শহর তোমাকে বাচিয়ে রেখেছিল, বেধে রেখেছিল তার সৌন্দর্যে
কিম্বা কোনও এক দুর্দান্ত আকাঙ্খায় ভর করে কাটিয়েছিলে জীবন
ভেবেছিলে তার পায়ের শিকল একবার ভেঙ্গে দিয়ে
চিরকালের মত ফিরে আসবে নন্দিনির কাছে
সমস্ত অভিমান, অভিযোগ এক লহমায় দূর করে দেবে এই জীবন থেকে
সুভঙ্কর, অনেক ভেবেছি আমি,
কিছু বাস্তব, কিছু অলিক............ কিছু স্বপ্ন, কিছু নঃশ্বর সত্যি কথা
কিন্তু অনেক ভাবনার মধ্যেও, একটা কথা  জলের মত পরিস্কার ছিল আমার কাছে।
আয়নার ওপাশে ছবিটা যতই কাছে থাকুক না কেন
তার নাগাল পাওয়া যথেষ্ট কঠিন।


যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল শশাঙ্কর সাথে,
সেদিন ওর মুখে ছিল না বার্গম্যান বা ক্যুরসোভার নাম,
হাতে ছিল না গীটার বা চোখে ছিল না বিপ্লব।
তবুও ভিজেছিলাম এক অশময়ের শ্রাবণে
তার চোরা স্রোতে ভাসতে ভাসতে বানিয়েছিলাম আশ্রয়
আর তারপর দু-তিন মাস যেতে না যেতেই বুঝলাম
সেই বই খাতা হাতে পড়ুয়া বালকটা, আমার স্বপ্নসঙ্গি -
তারপর শুরু হল টেলিফোন, কথা বলা, মেলামেশা, আর একরাশ অপেক্ষায় ভরা
কিছু মুহূর্তর ওপর ভরশা করে বেচে থাকা।
সে আমাকে সাগর দেখিয়েছিল এক নতুন ছন্দে,
সাগর দেখিয়েছিল... আর শিখিয়েছিল কেমন ভাবে হারিয়ে যেতে হয় ঢেউয়ের অলিন্দে -
কেমন ভাবে স্বপ্নের উড়ান, মাত্রাছারা অভিমান বিলিন হয়ে যায় দিগন্তে
সেই দিগন্তেই নতুন করে ভেসেছিল সে......... সাথে নিয়ে একরাশ আকাঙ্খা।


ছোটোবেলা থেকেই নিজেকে তৈরি  করেছিলাম কঠিন বাস্তবের মত করে
বাবা চলে যাওয়ার পর এক মেয়ে বলে অনেক শক্ত হতে হয়েছিলো আমাকে
মা ভেঙে পরবে বলে, শক্ত হাতে হাল ধরে ছিলাম সংসারের।
পাড়ার মোরে মাস্তানি করা ছেলেদের দম্ভ ভেঙ্গে দেওয়ার সাহস এখনও আমার আছে
তাই শশাঙ্ক, তোমার কাছে নায়ক চাইনি আমি, চাইনি কোনও স্বপ্ন এক্‌লাখি
চাইনি কোনও রোজনামচা দুঃখ কষ্ট বা সুখের আভিধান
তোমার কাছে ফেরত চাইনি হস্টেলে রাতজাগা তোমার আমার নিঃশ্বাসের শ্বব্দ
সেদিনত তুমিই আমাকে বলেছিলে...... হ্যা তুমি...বলেছিলে পালিয়ে তুমি বিয়ে করবেনা
আমাদের সম্পর্কের চেয়ে পরিবারের সম্মান ছিল তোমার কাছে অনেক প্রিয়
অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলে তুমি...
সেই সব স্বপ্ন আমাদের ভালবাসার মুল্য কোনোদিনও দিতে পারেনি।
এই নিসঙ্গ দুপুরে তোমার ভালবাসা চাইনি, চিঠি চাইনি আমি
ফেরত চাইনি মুঠো করে ফেলে দেওয়া কবিতার লাইনগুলো
ফেরত চাইনি...............চেয়েছিলাম দুদন্ড তোমায় ভাল করে দেখব
কাছে টেনে আদর করতে চেয়েছিলাম মাত্র
তোমার এক্‌টু সময় চেয়েছিলাম...
তবুও বুঝতাম যদি তুমি সেই আধ খাওয়া আপেলের মতন
আমাকেও ছুড়ে ফেলে দিতে আস্তাকুরে
তবে আর কি, আমিও হয়ে যেতাম এক বিদ্রহিনি নারীর প্রতিরূপ
আর তুমি......তুমি হতে আমাদের সবার চেনা পুরুষ শাসিত সমাজের এক সভ্য
তোমাকে ঘৃণা করে কিছটা শান্তি পেতাম আমি
তাও যে এই অত্যাচারের থেকে অনেক সুখের ......অনেক সুখের
কিন্তু তুমি ত তা করনি, বরং প্রতিবার বিপদ থেকে বাঁচিয়েছিলে আমাকে
তবে আজ কেন এই উদাসীনতা, যেন আমার কথা শুনেও শুনতে চাওনা তুমি
যেন শত মৃদঙ্গের মাঝে, এক মুক ও বধির গভির নিদ্রায় শায়িত
যদি পার তবে এই বাদিটির দিকে একবার মুখ তুলে চাও
যদি পার তোমার এক্‌টু সময় দাও আমায়...... দোহাই তোমার
দাও তোমার জীবনের কিছু মুহুর্ত ... তোমার স্বপ্নচারিনি হতে দাও
আমি বড় একা, তোমার পথ চেয়ে বৈরাগী জীবন আর ভাল লাগছে না
আর যদি তা না পার তবে ছিন্নভিন্ন করে দাও আমার সব আত্মসম্মান,
ছারখার করে বাতাসে উড়িয়ে দাও আমার  নারিত্ম
তারপর এক নোংরা ডাস্টবিনে ফেলে দিও সেই আধমরা শরীরটাকে
এই নিসঙ্গতা থেকে আমায় মুক্তি দাও শশাঙ্ক...
মুক্তি দাও... প্লিজ...মুক্তি দাও......


আমি নন্দিনির কাছে কি অভিযোগ করব
সেও তো একই আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে, সেও আজ সঙ্গিহারা...
সখী তোকে দেওয়ার মত আমার কাছে কিছুই নেই
নেওয়ারও কিছু নেই অবশ্য
তবু এটুকু দয়া কর, তোর সাথে ভাগ করে নিই সব অভিমান
আজ দুজনের যত দুঃখ, রাগ, স্বপ্ন, ইচ্ছে আজ এক হয়ে যাক
আমাদের সবার এই প্রিয় শহরের মত,  অনেক ছোট ঘটনা-
অনেক রাজনিতি, অনেক বিদ্রোহকে দূরে সরিয়ে আজ পালে নতুন হাওয়া লাগুক
নতুন হাওয়ায় জুরিয়ে যাওয়া এক এক করেই বেড়ে উঠুক ইচ্ছেগুলো
আমাদের সব অপমান, অসস্তি ধুয়ে মুছে যাক সমস্ত লাজলজ্জা
সমাজের মুখে ধুলো দেওয়া আমাদের গোপন প্রেম পূর্ণতা পাক
আমরা যাত্রা করি অন্য এক দিগন্তের দিকে।


কবিবর, এই অশান্ত শ্রাবণ মুখর নিঃসঙ্গ দুপুরে
শান্ত জীবনের পথ খুজতে খুজতে এভাবেই যখন নন্দিনির সাথে আমার আলাপ হল
তখন আপনার লেখা আমার কাছে হয়ে উঠেছিল, এক দুঃসাহশিক অভিজান...
যা কিনা আমাকে উন্মুক্ত করেছিল, ভুলিয়েছিল সমস্ত দুঃখের যন্ত্রণা।
কবিবর একটা কথা জিগ্যেস করব আপনাকে?
আপনি কে বলুন ত? - সুখে দুঃখে রাগে অপমানে যখনই যেমন ভাবে চেয়েছি আপনাকে
আপনি তেমনই ধরা দিয়েছেন।
আপনার প্রতিটি লেখায় প্রতিটি সংগ্রামে খুজে পেয়েছি নিজের সত্বাকে।
আপনি ত অন্তরযামি নন... তবু কেমন করে প্রতিটি মানুশকে লিখেছেন আপনি
আপনার লেখা যেমন আমাকে বিদ্রোহের পথ দেখিয়েছে
তেমনি আমার ভালবাশাকে দিয়েছে অন্য মাত্রা
তাই আপনাকে যারা জানেনা, বা কবিতার সুপ্ত আনন্দটুকু যারা উপভোগ করতে চায় না,
তাদের এক একসময় খুবই নিকৃষ্ট বলে মনে হয়,
কারন জীবনে তারা বাচতে জানে না
বিরহের দুঃখের রোমাঞ্চটুকু তাদের কাছে অজানা
আমি তা জানি ...........আপনার লেখার মধ্যে দিয়ে
তাই আপনি কখনও আমাকে ছেড়ে গেলেও......নন্দিনি যাবে না......
সে বেচে থাকবে আমার মধ্যে দিয়ে  ...............অক্ষয়