একটা নদীর আত্মকথন
     - ইয়ামিন বসুনিয়া
************************
একটা সময় বুকের ঠিক মাঝখানটায় একটা
ফেরারি  নদী ছিলো আমার।
নদী মানে নামে মাত্র নদী।কখনওবা হঠাৎ
উত্তাল ঢেউয়ে ধেয়ে আসতো দু'কূল ছাপিয়ে জল।
আবার খড়ার মৌসুমে কখনওবা সেই জল শুকিয়ে কাঠ,
পরিণত হতো হাড্ডি চর্মসার বুভুক্ষু এক আসমানী অবয়বে।
তবুও ছুটে চলা অব্যাহত তার গন্তব্যহীন কোন
এক অজানার টানে.....
জীবনের বন্ধুর সেই বাঁকা পথে আচানক দেখা হলো কোন এক সুদর্শণা স্রোতস্বিনীর সাথে।
তার অযাচিত সাক্ষাতে নদীর জল বাড়লো,
বল বাড়লো, স্রোতের বেগ বাড়লো বহু গুণ।
মেঘ ছাপিয়ে বৃষ্টি নামলো নদীর টানে।
ফল-শস্যে ভরে গেলো মাঠ।
ঘরে ঘরে কৃষকের হাসি, রকমারি ফুল,
ভ্রমরের গুঞ্জন আর পাখির কলতানে মুখরিত নদী অববাহিকার দুই ধূসর  প্রান্তর।


হঠাৎ আগত নদীটা বললো,
এই শোনো!
আমরা দু'জনে বন্ধু হবো,
অভ্যন্তরে থাকবেনা কোন জলসীমা,
প্রয়োজনে ভাগাভাগি করবো ইচ্ছেমতো জল,
ঢেউ, স্রোত সবকিছু।
আমরা আত্মা ছোঁবো পরস্পরের,
অনন্তকাল এভাবেই চলবো,
দিগন্ত রেখার ওপারে সাগর ছোঁবো
অভিন্ন অবয়বে।
সহাস্য সরলতায় সেদিন স্বার্থহীন
সব শর্ত মেনে নিয়েছিল নদী।


অতঃপর......
অনাকাঙ্ক্ষিত কোন অজ্ঞাত ঘৃণা অথবা
কোন যুক্তিহীন সন্দেহে
শুরু হয় নদীটার বৈরী আচরণ।
মরাকটাল নাকি ভরাকটালের অদৃশ্য প্রভাবে
সামান্য এক শুষ্ক ঝড়ের ছুঁতোয় কমলমতি নদী
পরিবর্তন করে তার নতুন গতিপথ।
উপনদী আবার রূপান্তরিত হয় শাখানদীতে অবলীলায়।


নদীর সাথে বুঝি কস্মিনকালেও সখ্যতা হয়না নদীর।
সেই আধমরা নদীটার আর সাগর ছোঁয়া
হলো না কোনকালে।
আমার বুকের পাঁজর ঘেঁষে আজও তার
অনিয়ম ছুটে চলা অজানায়।
স্রোতহীন, জৌলুশহীন
অপরিবর্তিত এক সরল বিশ্বাসে.........