মধ্য দুপুরে বাড়ির উঠানে
সে বাড়ির নববধুটি,
ধানে দিচ্ছে পা বুলিয়ে
আর গান গাচ্ছে গুনগুনিয়ে।
প্রখর রোদের মধ্য দুপুরে
কাজ করছে সে আপন মনে,
হাতে রাখা তার ছোট্ট কঞ্চিতে
মাঝে মাঝে মুরগী তাড়াচ্ছে সেটা নেড়ে।
নতুন বউ! মাথায় লম্বা ঘুমটা
কাজের প্রতি তার কি যে মায়া,
সবার হাতের কাজ নেয় সে কেড়ে
শত আঘাতেও সে ভেঙ্গে না পড়ে।
সারাদিনের কত কাজ
শশুর শাশুড়ি র শত আবদার,
সাথে ননদের কাচা মরিচের মতো
কথাগুলো সব শক্ত পোক্ত।
তার স্বামী তো নয়
মনে হয় যেন শখের করাত,
সারাদিনের ক্লান্তি মুছতে
স্বামীর আদর ও জোটেনা রোজে।
রাতে যদি সে অসুখে ভোগে
স্বামী তার খোঁজ নেয় না মোটে,
যদি সে ডাকে হাত বাড়িয়ে
ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘুমায় সে মুখ ঘুরিয়ে।
কি ছিলো তার অপরাধ
নাকি মেয়ে হয়ে জন্মানো টা তার পাপ!
সে তো করেনি কোন ভুল
তবুও কেন দিতে হচেছ তাকে ভুলের মাসুল।
বাবা মা বিয়ে দিয়েছিল
বড় সাধ করে,
আজ তাকে শুনতে হচ্ছে
শশুড়বাড়ির অকথ্য কথা প্রতিক্ষণে।
সামান্য কিছু টাকা
আর মাত্র দুইটা গয়না,
তার জন্যই আজ
তার কপালে সুখ হয়না।
বাবা বলেছে সেটা দিয়ে দিবে
হাতের ঋণ টা শোধ হলেই,
এইতো আর কয়েকটা দিন
তার পরেই কি আসবে তার সুদিন।
হয়ত তার কপালে নাই সুখ
স্বামীর সোহাগ পেতে সে আবেগ আপ্লুত,
যদিও পায় সে স্বামীর সোহাগ মাঝে মাঝে
সেটা শুধু তার নিজ প্রয়োজনে।
প্রয়োজন ফোরানো র পর পড়ে থাকে সে এমন
কাঠ পোড়ানো র পর পোড়া কয়লা যেমন,
তবে কি তার জন্ম
শুধুই অপরের প্রয়োজন মেটানোর জন্য।
এ বছর ও প্রথমে খরা তারপর বন্যা
বাবার জমির ফসল সব গেছে খাওনা,
তবে কি তাহলে যৌতুকের পাওনা
এবারও আর শোধ হবে না।
দৈনিক শশুর বাড়ির অত্যাচারে
নতুন বউ টি উঠছে হাঁপিয়ে,
তার একটু শান্তির জন্য
সময় নিচ্ছে না একটুও নিজের জন্য।
অত্যাচারী শাশুড়ি দিচ্ছে রোজ ই
কখনো আগুনের ছেঁকা আবার মাঝে মাঝে ঝাঁটার বাড়ি,
সেই সাথে ছোট ননদ দুটির
মুখের শত কটূক্তি।
মাঝে মাঝে ভাবে এভাবে আর কত!
তাদের অত্যাচার গুলো রোজ ই বাড়ছে অমানুষের মতো,
জীবন তার বিষিয়ে উঠেছে
সবকিছু হয়ে গেছে তিক্ত ।
একদিন এক ঘুমন্ত ভোরে
দুটি ধুতুরা ফুল দিল মুখে পুড়ে,
সেদিনের ই কাক ডাকা ভোরে
নব-বধুটি পাড়ি জমাল না ফেরার দেশে।
তার মত আর কত নববধূ
হারিয়ে তার শেষ আশ্রয় টুকু,
দিচ্ছে তারা জলাঞ্জলি
নিজেদের তাজা প্রাণ খানি ।
আমরা কি আজো দিতে পেরেছি
মা বোন দের প্রাপ্য সম্মান,
আমরা সবাই বুক ফুলিয়ে বলি
নারী পুরুষ সমান সমান।