জন্ম নেয় শিশুটা, মায়ের চোখে জল,
চাঁদের মত মুখ, সবার মুখে কলকল।
ঘরে বাজে হাসি গান, হেসে ওঠে ঠোঁট,
কে বুঝে তখন থেকেই শুরু হয়েছে ছোট।
ঘুমে ঢাকা শৈশব যায় খেলাধুলার ছলে,
চকলেটের সাথে স্বপ্ন খোঁজে গলির প্রতিটা তলে।
ভুল করে শিখে যায় ঠিকের সংজ্ঞা,
মায়ের বকা, বাবার চুপ—এই তো জীবনের রচনা।
ক্লাসে বসে পড়ে সে, বইয়ে লেখা স্বপ্ন,
তবু পেটের খিদে ডাকে—“তোর কলম কি দপ্তর পেটভর্তি রপ্ত?”
বড় হতে হতে বোঝে—দুনিয়া এক যুদ্ধ,
কে কার চেয়েও বড়? কে কতটুকু মিথ্যাকে বানায় সত্যর মুখ?
যুবা বয়স—চোখে আগুন, মনে জোয়ার,
হৃদয়ে প্রেম, আর পকেটে থাকে ভাড়া-জ্বলার ভার।
চাকরি খোঁজে, পায় না ঠিক,
ডিগ্রি থাকে, নেই গায়ে দালালদের টিক!
বিয়ে করে, সংসার বাঁধে,
দু'বেলা ভাত আর তিন বেলা চাহিদা বাঁধে।
বাচ্চা আসে, জ্বর উঠে, বাজার পড়ে হাটে,
বেতন এসে মিলিয়ে যায় বিল আর শোধের পাতায়।
রোজ সকালে দৌড়—বাসে, ট্রেনে, সিএনজিতে,
চোখে ঘুম, পিঠে ব্যাগ—জীবন যেন ছুটছে এক দুশ্চিন্তায় জিতে।
রাস্তায় রাস্তায় ক্লাক্সনের সুর,
মাঝে মাঝে মনে হয়—"আমিও কি একজন মৃত জীবিত পুর?"
সমাজ চায় মুখোশ, নয় সত্যর মুখ,
তাই মুখে হাসি, মনে বিষ—চোখে জমে দুঃখ।
পাশের বাসায় ঝগড়া, উপরে চাঁদা,
অফিসে বসে বসে জীবনটা যায় কাঠখোট্টা বাঁধা।
শরীর ক্লান্ত, মন বিষণ্ন,
তবু সন্তানের হাসি দেখে সবকিছুই যেন স্বর্ণ।
ছেলেটা পড়ে, বড় হয় ধীরে,
তুমি তখন পুরনো বই, ধুলো জমা বটগাছের নিচে পিরে।
চুলে পেকে যায় রুপালি রেখা,
আয়নাতে তাকিয়ে চেনা যায় না সে দেখা।
বন্ধু যায়, আত্মীয় চলে,
রাত গভীর হলে হাঁসফাঁস করে শূন্য বিছানার তলে।
একদিন বুকে চাপ, নিঃশ্বাস কাঁপে,
হাসপাতালে স্যালাইন ঝুলে, ডাক্তার মুখ নাড়ে চাপ চাপে।
চোখে জল, মুখে নাম—"আল্লাহ", "আম্মা", "সন্তান",
সব হারিয়ে যায়, সাদা কাপড়ে ঢাকা শেষ গান।
এক টুকরো কাফন, কিছু মাটি,
এক ফোঁটা অশ্রু, একদল ব্যস্ত আত্মীয়, এক হাতের খাটুনি।
পিছনে পড়ে থাকে ছবি, ঘড়ি, বই আর বিছানা,
জীবন ছিল, ছিল না কিছু—শেষে মাটি, সাদা জানাজা।
এটাই জীবন—চলার রেলগাড়ি, বিশ্রাম নেই;
ভালোবাসা খুঁজতে খুঁজতেই মুছে যায় অশ্রুজলেই।
সবাই আসে, যায়, কেউ থাকে না চিরকাল,
শুধু স্মৃতি জমে যায়, দোয়েলের ডাকে প্রতিদিন একবার…**