অগোছালো ভাবনা। এলোমেলো আড্ডা। সাহিত্যের প্রতি টান। মনে অজ¯্র স্বপ্নের বীজ। কলমের কালির ছোঁয়ায় পকেট সাইজের কাগজের পাতা। কয়েকজন সাহিত্যপ্রেমী তরুণের বিচ্ছিন্ন ভাবনা আর অবিশ্রান্ত পরিশ্রম-এভাবেই দখল করে নেয় চিরকুটের প্রতিটি পৃষ্ঠা।
২০১১ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি আজকের এই দিনে মাসুম মুনাওয়ার, সুদীপ্ত শাহাদাত, আব্দুল কাদের মার্জুক এবং এনামুল হক-এর সম্পাদনায় চিরকুট-এর প্রথম প্রকাশ। এরা সবাই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী। ৪০তম ব্যাচের ৪০তম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হলের দক্ষিণ পশ্চিমে ‘সুইজারল্যান্ড’ নামক স্থানে মোড়ক উম্মোচনের মধ্য দিয়ে দ্রোহ ও ভালবাসার পত্র চিরকুটের যাত্রা শুরু। এরপর শত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নির্মম বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এই কাগজটি নিয়মিত প্রকাশ করতে পারিনি।
পরবর্তীতে শ্রদ্ধেয় কবি খালেদ হোসাইন ও সুমন সাজ্জাদ স্যারের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে চিরকুটের দ্বিতীয় সংখ্যা ‘একুশ ফেব্রুয়ারী’ প্রকাশ করি। এ সংখ্যায় নয় জনের মোট ১৫ টি ছড়া-কবিতা স্থান পায়। ২য় সংখ্যাটি প্রিন্ট করে ভাঁজপত্র আকাওে উপস্থাপন করি। এরপর আবার কিছু দিন টানা বিরতি।
বিজয় দিবসকে সামনে রেখে দীর্ঘ ১০ মাস বিরতির পর ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর চিরকুটের ৩য় সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ সংখ্যায় কবি খালেদ হোসাইন, কবি সুমন সাজ্জাদ, গল্পকার মেহেদী উল্লাহ সহ মোট ১৮ জন লেখকের ছড়া কবিতা গল্প, নিবন্ধ ও কার্টুন ছাপা হয়। ট্যাবলয়েড আকারের ৪ পাতার এই সংখ্যাটির প্রকাশ ঘটে বাঁশপাতা কাগজে।
৩য় সংখ্যা প্রকাশের ৪ মাস পর এপ্রিল ২০১৪ সালে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ৪র্থ সংখ্যা প্রকাশ হয়। ট্যাবলয়েড আকারের এ সংখ্যাটি অধ্যাপক মানস চৌধুরী, মাসউদ ইমরান মান্নু, কবি হিমেল বরকত, তারেক রেজা, শিমুল সালাহ্উদ্দিন, সাদিকা রুমন সহ ১৬ জনের লেখায় পরিপূর্ণ হয়। ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সংখ্যার অলংকরণ করেন ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শুভ্র মজুমদার। ৪র্থ সংখ্যার সম্পাদনা পর্ষদে যুক্ত হয় আরো দুই তরুণ আদনান মনির ও আনিস শিশির।
সেপ্টেম্বর ২০১৪ পত্র সাহিত্য নিয়ে প্রকাশ করি ‘চিঠিপত্র’ ভিত্তিক ৫ম সংখ্যা। বাংলাদেশ সরকারের হলুদ পোষ্ট কার্ডের আদলে মাসুম মুনাওয়ারের করা প্রচ্ছদে এ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় বৃহৎ পরিসরে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি চিঠি ও প্রাবন্ধিক হায়াৎ মামুদ, খোরশেদ আলম, মিল্টন বিশ্বাস, কবি আসাদ চৌধুরী, রিলকে রশীদ, মনসুর আজিজ, পিয়াস মজিদ, ফারুক আহমেদ খান, রইস মনরম, সুহিতা সুলতানা, ফারজানা পলি সহ মোট ৪১ জনের লেখা প্রকাশিত হয়। ৫ম সংখ্যার সম্পাদনা পর্ষদ তরুণ সাহিত্যপ্রেমীদের নিয়ে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়। ৫ম সংখ্যার সম্পাদনায় ছিলেন মাসুম মুনাওয়ার, নিবার্হী সম্পাদক সুদীপ্ত শাহাদাত এবং সম্পাদনা সহযোগী রাকিবুল হাসান, অমিত হাসান, আনিছ শিশির, আনজুম সানি, আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ ও আশিক সূর্য।
শিল্পী চারু পিন্টু-এর মনোরম প্রচ্ছদে সাম্প্রতিক প্রকাশ পায় চিরকুটের ‘বই মেলা’ সংখ্যা। ৬ষ্ঠ সংখ্যাটিকে নতুন লেখকদের সাথে নিয়ে চিরকুট সদস্য, শুভাকাংখী ও ফেসবুক বন্ধুদের লেখায় ঢেলে সাজানো হয়। ২ ফর্মার এ সংখ্যায় মোট ৩০ জনের ৭২টি লেখা প্রকাশিত হয়। এ সংখ্যার সম্পাদনা পর্ষদে পূর্বের সাথে যোগ হন আরো কিছু উদ্দোমী সাহিত্যকর্মী মেরী মাহজাবীন, সা’দ শারীফ, তাজুল ত্বহা এবং নাঈমুল আলম মিশু।
চিরকুট আসলে সাহিত্যের ছোট কাগজ। চিরকুট এর এই পথ চলায় আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। প্রসঙ্গত তোতাপাখি নামে একটি ছড়ার ভাঁজপত্রের কাজও আমরা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে তোতাপাখির ৩টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৪ সালের শেষের দিকে চিরকুট নিয়মিত যাত্রা শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাহিত্য সংগঠনের অভাববোধ করেন অনেকেই। সেই প্রেক্ষিতে অনেক গুনীজন ও শুভাকাঙ্খী পরামর্শ দেন ‘চিরকুট’কে একটি সাহিত্য সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সাহিত্যের প্রতি আমাদের গভীর টান এবং গুণীজনদের পরামর্শের ভিত্তিতে ২০১৪সালের ২২ অক্টোবর সাংগঠনিক যাত্রা শুরু করে ‘চিরকুট’। সপ্তাহের প্রতি বুধবার সাহিত্য আড্ডা, মাসে একটা পাঠচক্র পরিচালনা করছে সাহিত্যভিত্তিক এই সংগঠনটি।
অবশেষে ‘চিরকুট’ ৪ বছর শেষে, পঞ্চম বছরে পদার্পণ করল। এই বন্ধুর পথ চলায় ‘চিরকুট’র সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে চিরকুট পরিবার। একই সঙ্গে কামনা করছে আগামী দিনগুলোতেও আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত হবে ‘চিরকুট’।
ধন্যবাদ সবাইকে।:)