জীবন দেখেছো তুমি? জেনেছো জীবনের রকম-সকম?
জীবন দেখেছি আমি। নানান রকম।
জীবন দেখেছি সন্তানের অগোচরে গভীর রাতে
বিধবা মায়ের কান্না ভেজা বালিশে-
জীবিকার খোঁজে তার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায়।
মানুষের করুণা দৃষ্টির অনলে পোড়ে সে প্রতি মুহূর্ত;
করুণার দহন তার সবটুকু অশ্রু শুষে নেয় একদিন-
কিন্তু রক্ত ক্ষরণ থামে না হৃদয়ে,
জীবন তার কাছে সাদা কাফনে মোড়া কবরের অমানিশা বৈ কিছু নয়।
দারিদ্রের নিরন্তর নির্মম হাতুড়ি পেটায় কঠোরতার শৃঙ্খলে আবৃত সে;
এখানে সাধ নেই আহ্লাদ নেই যন্ত্রণার অবসানও নেই
সন্তানের আবদার এখানে মূল্যহীন, নেই দোষারোপের বালাই,
আছে শুধু আকণ্ঠ অভাবে ডুবে নিয়তির প্রতি ঘৃণা।
দেহের অপূরণীয় চাহিদার নিষ্পেষণ, কিছু শকুনের তীক্ষ্ণ চোখ
সব কিছু সয়ে বিধবা যেন সর্বংসহা নারী।
জীবন দেখেছো তুমি?
জীবন দেখেছি আমি। হরেক রকম জীবন।


জীবন দেখেছি দিন মজুর আর শ্রমিকের নিত্যদিনের সংগ্রামে-
পরিবারের মুখে আহার যোগাতে যাদের মস্তকে ঋণের খাড়া ঝোলে;
সব খুঁইয়ে যে নিদারুণ রোদনে আকাশ কাঁপিয়ে তোলে
দেহের কষ্ট, ব্যাধি-জ্বরাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গ্রীষ্ম কিবা শীতে
ঝড় বৃষ্টি খরা মাথায় করে বেরিয়ে যায় কর্মের সন্ধানে;
যার বধূ উনুনে হাড়ি চাপিয়ে অপেক্ষায় থাকে এই বুঝি সে আসে-
যখন শয্যাশায়ী বৃদ্ধ পিতা কাঁশির ধমকে কপালে হাত রেখে বলে,
আর তো পারি না। তখন আঁচলে মুখ ঢেকে গৃহিণীর যে চাপা কান্না,
শুনেছো কী কভু তার সুর?
দিনান্তে যে ঘরে ফেরে, কভু মৃদু হেসে কভু মেঘে ঢেকে মুখ-
জীবন দেখেছি তারই পুষ্টি হীনতায় ভোগা অভুক্ত বালকের সজল চোখে-
জীবন দেখেছি যৌবনের রোদ এসে লাগা তার কিশোরী মেয়ের ছেঁড়া কাপড়ে।
জীবন দেখেছো তুমি?
জীবন দেখেছি আমি। হরেক রকম জীবন।


চলবে.....