[ শরৎ চন্দ্র চট্রপাধ্যায়ের "শ্রীকান্ত" উপন্যাসের গহর চরিত্র কে নিয়ে লেখা আমার ছোট্র ভালবাসা ]


বাল্মীকি সপ্তকাণ্ডে রচে রামায়ণ
কৃত্তিবাসে পদ্যেরচে জানে সর্বজন।
গদ্যে লেখে রাজশেখরে দিয়ে মনপ্রাণ
গহর লিখেছে তা জানে কয়জন।
দ্বাদশ বছর ধরে সকল স্বার্থ ত্যাগ করে
রচেছে কথার মালা সারাটা জনম ধরে।
ফকিরের রামায়ণ গড়া আজও কেন হয়নি পড়া?
তবে কী আমরা সবে বেঁচে থেকেও মরা?
ঐ যে সেই গঙ্গাধার তারিবাকে আম্রপাড়
বেনুবনের মধ্যদিয়ে গড়া আছে নিবাস তার।
অনর্গল কাটে ছড়া সবগুলো তার নিজের গড়া
বৃক্ষরাজি শ্রোতা হয়, নির্বাক নিথর ধরা।
তবু সে আপন মনে কইত কথা গাছের সনে
প্রথম সেথা দেখে কুঁড়ি মহানন্দ জাগত প্রাণে।
সেই সবুজ কবিয়াল ধরেনি সংসারের হাল
ভালবাসা রুদ্ধকরে রেখেছে শ্লোকের তাল।
শ্রীকান্ত এলে ঘরে, ছন্দ শোনার বায়না ধরে
অজুহাত করে খাড়া ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে।
একা একা জেগে রাত, পড়ে পুথি হয়ে কাত
জোনাকী মেয়েরা নাচে অন্ধকার করে সাথ।
কবিতার শুদ্ধপ্রাণ শিরাতে বহমান
অহিকূল গৃহে আসে, হয়ে'যে মেহমান।
মাধবী মালতী ফুলে শ্লোক শুনে ওঠে দুলে
কাঠপিঁপড়া ছুটে আসে, সব কিছু গিয়ে ভুলে।
রামায়ণের খাতা খানি, দড়ি দিয়ে বাঁধা জানি
টিনের বাক্সে শুয়ে আছে বড় সে অভিমানী।
গহরের রামায়ণকথা, কমললতা হয়'নি শ্রোতা
সারা জনম যা করেছে সবই'যে হল বৃথা।
বড় গোসাইয়ের ঘরে রামায়ণ রয়েছে পড়ে
শত লোকের চোখে পড়ে দেখে'না হাতে ধরে।
গহর গিয়েছে চাঁদে রামায়ণ গুমড়ে কাদে
প্রতিভা আটকে আছে মহাকালের ফাঁদে।
ভাগ্যাহত সেই গহর, পায়নি'যে ধলপহর
বাতাসে আজো ভাসে বেদনার নীলজহর।