প্রতিদিন ফুল ফোটে বলতে গেলে সারাবছর!
কতোনা সুরভিত, কতোনা বর্ণিল ফুল-পাতায়!
গাছটা এনেছিলেন কুড়িয়ে-
আমার মা। শিউলি গাছ।
মা নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন প্রথমে-
ছোট্ট একটি টবে, তারপর -
টব থেকে আঙিনায়!


কর্মজীবী মানুষ ছিলেন মা,
কাকভোর থেকে মধ্যরাত অবধি চলতো তাঁর
বিরামহীন সংসারধর্ম!
বাবাকে নিয়ে আলোচনায় -
আসবো পরে, তিনি যে থেকেও নেই।
মা নেই সবাইকে রেখে-
চলে গেছেন না ফেরার দেশে-
আমার ছোট্ট ভাইটির কাছে, সে যাবার
বছর কতোক পরে।


কেন সবাই এভাবে ছেড়ে চলে যায়?
মায়ার বাঁধন ছিড়ে সবাই গেলেও যায়নি সেই
শিউলি গাছ
সে ফুল দিয়ে, ছায়া দিয়ে
আগলে রেখেছে আমাদের।
শিউলি আমাদের পরম বিশ্বাস আর ভালবাসার!
আমার স্বপ্নময় অনুভূতি।
এখনো গাছের দিকে তাকালে-
আকাশ-দেবতা দেখি আমি।
শিউলিকে দেখলেই মাকে মনে পরে।
অলক্ষ্যে ওর কাছাকাছি চলে আসি
বড় ভালোবেসে, ওর ছায়াতলে
ওর ফুলে মায়ের আঁচলের-
গন্ধ নিতে।


প্রতিরাতে আমি শিউলীর সাথে কথাবলি।
ভাগ করে নেই জীবনের সুখ-দুখের
হিসেব-নিকেশ।


একদিন মাঝরাতে শিউলি প্রশ্ন করেছিলো
"তুমি আমার কষ্ট বোঝ?
উত্তর কি দেব ভেবে পাই না। সময় বয়ে যায়!
রাত শেষ হয়ে আসে, পাতা বেয়ে নিংড়ে পরে শিশির ফোটা
এবং কিছু ফুল
বুকটা চিনচিন করে ওঠে। মনে হয় মায়ের অশ্রু সাথে
তাঁর নির্মল ভালোবাসার ছোঁয়া। আমি অবাক চেয়ে থাকি
ক্রমশঃ ঝাপসা হয়ে আসে চোখ!


পূর্ব দিগন্ত আলোকিত করে সকাল হয়....
শিউলির কাছ থেকে বিদায় নিতে হয়, কথা দেই
সন্ধ্যা আবার দেখা হবে!


এখন দিনের কাজের শেষে
শিউলিতলায় বসি।
ওর প্রগাঢ আহ্বান ভালবাসাদিয়ে আঁকি
আগমী দিনের স্বপ্ন।
এখন শিউলি অনেক বড়
ওর অবয় বুকে নিয়ে পথ চলি আমি
শিউলি প্রতিদিন আঙিনায় আমার পথে ফুল বিছিয়ে রাখে।
আমার পথকে করে রাখে
কোমল মসৃণ সুগন্ধময়!


দিনমান আমরা অপেক্ষায় থাকি একে অন্যের।
সে আমার, আমি তার!