মা কে নিয়ে একগুচ্ছ কবিতা

(০১)
আদি সূর্য মা
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সেই সূর্য,
যার আলোর কাছে পৃথিবী ভুলে যায় কাল,
তোমার রশ্মিতে গা ভাসিয়ে যে প্রথম দিন
পৃথিবীকে দেখেছিলাম, আজও দেখি।

তুমি সেই আদি সূর্য,
যার আলো ফেলে দ্যুতি আমার অন্ধকারে,
যেখানে মোর চোখের জলও একদিন হয়ে ওঠে
পৃথিবীর একমাত্র চাঁদ।
তুমি সূর্য, মা, তোমার আলো যেন
কোনো শেষ নেই, কখনো নিভে না
আমার অন্তরের গভীরে, তুমি চিরকাল জ্বলছো।

(০২)
অন্তহীন সুর
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সেই সুর,
যে সুর গেয়ে গড়িয়ে আসে রাত,
তুমি সেই কণ্ঠ, যার শব্দে হারিয়ে যায়
এ পৃথিবী, চলে আসে তোমার ভালোবাসা।
তুমি এক অনন্ত সঙ্গীত,
যার প্রতিটি লহরী বাজে, প্রতিটি অঙ্গীকারে,
আমার হৃদয়ের ভেতর, গভীর সঞ্চালনে।

তুমি সেই সুর, মা,
যে কখনো থামে না, কখনো চুপ হয়ে যায় না,
তুমি অদৃশ্য কণ্ঠ, এক অসমাপ্ত গান,
যে গানে আমি গাও, আমি বাঁচি।

(০৩)
চাঁদের আলো মা
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি চাঁদ,
যার রশ্মিতে আমি ঘুমাই,
যার আলোতে বুকটা ভরে যায় শীতল শান্তিতে,
তুমি সে চাঁদ, যার আলো সব কিছু
শুধু আলোয় রাঙায় না, বাঁচায়।
তুমি এক পৃথিবী, যাকে আমি খুঁজে
যত রাত আসবে, তত আমার হৃদয় পূর্ণ হবে
তোমার সেই শীতল আলোয়।

তুমি, মা, সেই চাঁদ,
যে চোখের আকাশে হারিয়ে গেলেও,
তোমার রশ্মির মধ্যে আমি থাকি,
যতদিন পৃথিবী থাকবে, তুমি থাকো
অদৃশ্য আলোয়।

(০৪)
গহীনের ভালোবাসা
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে নদী,
যার স্রোতে আমি ভেসে চলেছি,
তুমি সে গহীন ভালোবাসা,
যা কখনো মুছে যায় না, বরং শুধু বিস্তৃত হয়।
তুমি এক অজানা সমুদ্র,
যার তল ঢাকতে পারে না কোনো খুঁটি,
তুমি স্নেহে, তুমি প্রেমে, তুমি অদৃশ্য স্রোত
যে আমার জীবনের মধ্যে লুকিয়ে আছে।
তুমি মা, সেই অগাধ ভালোবাসা,
যা কখনো শেষ হয় না, বরং শাশ্বত হয়।

(০৫)
শীতল তাপ মা
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে তাপ,
যার শীতলতা আমার বুকে সব গ্লানি মুছে দেয়,
তুমি সেই তাপ, যাকে আমি অনুভব করি
কখনো শীতল, কখনো এক জীবন্ত আগুন,
যার উত্তাপে আমি নতুন জীবন খুঁজে পাই।
তুমি শীতল তাপ, যা কখনো ক্ষয় হয় না,
যে তাপের ভেতর মিশে থাকে প্রেম, শান্তি,
তুমি তাপ, মা, তুমি সেই জীবনের
অদৃশ্য শক্তি, যেটি আমাকে পথ দেখায়।

(০৬)
অগাধ সাঁতার
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে নদী,
যার স্রোতে আমি সাঁতার কাটতে কাটতে হারিয়ে যাই,
যার গভীরতা আমি জানি না,
তবে জানি, যতদূর ছুটে চলেছি,
ততই নতুন কিছু শিখি।
তুমি সে স্রোত, মা,
যা আমাকে কখনো থামতে দেয় না,
যতবার হারাই, তুমি আমাকে
নতুন করে ডুবিয়ে নাও।

তুমি, মা, সেই অগাধ নদী,
যার তীরে কখনো পৌঁছাতে পারি না,
যেখানে শেষ নেই,
শুধু চলতে থাকা স্রোত,
যার ভেতর আমি অজানাকে জানি।

(০৭)
নীরব অগ্নি
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে অগ্নি,
যার তাপে আমি ভষ্ম হয়ে যাওয়ার ভয় পাই,
তবে সেই ভয়ও তোমার অগাধ স্নেহে
দ্যুতি পায় এক অনির্বাণ আলো।
তুমি সে অগ্নি, যা নিঃশব্দে জ্বলতে থাকে
তবে কখনো শব্দ করে না,
যে আগুনে আমি না হয় পুড়ে যাই,
তবে সেই পোড়া ভেতর তোমার ভালোবাসা
আমাকে প্রতিনিয়ত নতুন করে গড়ে তোলে।

তুমি, মা, সেই অগ্নি,
যার তাপে পৃথিবী যেমন আলোকিত,
তেমনি আমার অন্ধকারও তুমিতেই উদ্ভাসিত হয়।

(০৮)
নদী ও সন্ন্যাসী
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে নদী,
যার কূল নেই, সীমা নেই,
যার জল নীরব, অথচ ভরা স্রোত,
তুমি সে নদী, মা,
যার তীরে আমি এসে কিছুই পাই না,
তবে তোমার স্রোতের মধ্যে হই আবার পূর্ণ।
তুমি সে নদী,
যার গভীরতা খুঁজে পাই না আমি,
তবে স্নানে ভিজে তাতে আমি
মুক্তি পাই, শান্তি পাই,
যেখানে আমি এক সন্ন্যাসী,
তোমার শান্ত জলে নির্ভয়ে ডুবে যাই।

(০৯)
অশ্রু ও সাদা মেঘ
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে সাদা মেঘ,
যার ভেতর এক পৃথিবী হ্যাঁ, অশ্রু লুকানো।
তুমি সেই মেঘ,
যে যখন চুপ থাকে, তখন আকাশ গাঢ়,
তবে যখন তুমি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ো,
তখন পৃথিবী শোধিত হয়,
তুমি সে মেঘ, মা,
যার প্রতিটি বৃষ্টি যেন অশ্রুর বিকল্প নয়,
তোমার অশ্রু যেমন উথলে ওঠে,
তেমনি পৃথিবী সব কিছু নতুন করে শুরু করে।

তুমি মা, সেই মেঘ,
যার ভেতর আমি নিঃশব্দে ডুবে থাকি,
যেখানে আমার কান্না তুমি ধারণ করো,
আর সেদিন যখন তুমি মিলিয়ে যাও,
আকাশ যেন হয়ে ওঠে সুস্থ,
যেমন আমি তোমার কান্নায় হয়ে উঠি পবিত্র।

(১০)
অন্ধকারে আলো
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে আলো,
যা রাতের অন্ধকারে জ্বলে ওঠে,
যার ভেতর আমি হারিয়ে যাই,
যেখানে আমার ভয় জেগে ওঠে,
তুমি সে আলো,
যার রশ্মিতে আমি সারা রাত
ভীতিহীন হয়ে ঘুমাতে পারি।
তুমি অন্ধকারে সেই একমাত্র
প্রাণবন্ত আলো,
যার কাছে পৃথিবী অদৃশ্য হয়ে যায়,
আর আমি খুঁজে পাই আমার হারানো পথ।

তুমি মা, সেই আলো,
যা অন্ধকারেও পথ দেখায়,
যা কখনো নিভে না, চিরকাল জ্বলতে থাকে।

(১১)
সময়ের ক্ষুধা
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে সময়,
যার কাছে আমি শিখেছি কীভাবে চলতে হয়,
তুমি সে ক্ষুধা,
যে আমাকে প্রতিদিন পূর্ণ করে,
তবে কখনো না বোঝায় যে,
কখনো আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম।
তুমি সে সময়,
যার অমোঘ যাত্রায় আমি পথহীন,
তবে তোমার জন্য আমি
সব সময় খুঁজে পাই এক দিশা,
এক অনুভূতি, যা আমাকে পথ দেখায়।

তুমি মা, সেই সময়,
যার মধ্যে আমি প্রতিটি মুহূর্ত
অনন্ত করে তুলি,
যে সময় কখনো থামে না,
তবে প্রতিটি থামা তোমারই হাতের ছোঁয়া।

(১২)
মায়ের হাতের ছোঁয়া
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে হাত,
যার ছোঁয়া ছড়িয়ে যায় নিঃশব্দে,
যা প্রতিটি ক্ষত, প্রতিটি ক্লান্তি
স্বীকার করে, ভালোবাসার আলিঙ্গনে।
তুমি সে হাত, মা,
যার মধ্যে কোন বিভাজন নেই,
যে হাত একে একে পরিণত হয়
বিশ্বের সমস্ত সাহসে, সমস্ত শক্তিতে।
তুমি সে হাত,
যে অনন্তের সঞ্চালক,
যার ছোঁয়ায় মুছে যায়
আমার সমস্ত ভয়, সমস্ত যন্ত্রণা।

তুমি, মা, সেই হাত,
যার স্নেহে আমি চিরকাল বসবাস করি,
যা আমাকে এক পৃথিবী জীবন দানে ভরে দেয়।

(১৩)
নিঃসঙ্গ নক্ষত্র
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে নক্ষত্র,
যা শূন্য আকাশে একা জ্বলে ওঠে,
তবে যখন তুমি প্রতিফলিত হও
আমার পৃথিবীতে, আমি তখন
বিশ্বের সমস্ত দুঃখ ভুলে যাই।
তুমি সেই নক্ষত্র,
যার আলোর ভেতর আমি কখনো হারাইনি,
যার রহস্য আমি জানি না,
কিন্তু তার উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয়
যে আমি চিরকাল তোমার আলোতে বাঁচি।

তুমি, মা, সে নক্ষত্র,
যার আলো কখনো শেষ হয় না,
যা সারা পৃথিবীকে আলোকিত করে,
যে আলো ছড়িয়ে দেয়, ছড়িয়ে যায়
আমার অন্ধকার রাতে।

(১৪)
স্তব্ধ নদী
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে স্তব্ধ নদী,
যার শান্ত স্রোতে পৃথিবী ভাসে,
যার পানি কোনো শব্দে নয়,
শুধু মনে প্রাণে প্রবাহিত হয়।
তুমি সে নদী,
যার গভীরতা কাউকে জানা হয়নি,
যেখানে আমি অবিরত সাঁতার কাটতে থাকি,
তবে কখনো শেষ হয় না,
শুধু তোমার নীরব স্রোতে ভেসে চলি।

তুমি মা, সে নদী,
যার মধ্যে আমি ডুবে যাই,
যেখানে শব্দহীন শান্তি
মিশে থাকে, এক অদৃশ্য সুরে।

(১৫)
পাতায় পাতায় রূপকথা
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে বর্ণিল পাতা,
যার ভেতর এক অদেখা রূপকথা লুকিয়ে থাকে,
যে পাতা কখনো ভেঙে যায় না,
যার সবুজে আমি কল্পনা করি
এক নতুন জীবনের উৎস।
তুমি সে পাতা, মা,
যার অদৃশ্য ছায়ায়, আমি আশ্রয় খুঁজি,
যেখানে প্রতিটি বায়ু
মনে হয় তোমারই প্রেমের সুরে।

তুমি, মা, সে পাতা,
যার ভেতর আমার আত্মা খুঁজে পায়
শান্তির আড়াল, বেঁচে থাকার কৌশল।

(১৬)
একটুকু চুপচাপ
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে চুপ,
যার মধ্যে সমস্ত কথা লুকানো থাকে,
যে চুপের ভেতর থেকে আমি
মনের একান্ত গল্প শুনি,
তুমি সে চুপ,
যা কোনো শব্দ ছাড়াই আমাকে বলে দেয়
কি আমার প্রয়োজন, কি আমার অঙ্গীকার।
তুমি, মা, সে চুপ,
যা কখনো শুনতে হয়,
তবে কখনো বুঝতে হয় না,
তার রহস্য লুকানো থাকে চিরকাল,
আমার হৃদয়ের গভীরে।

তুমি মা, সে চুপ,
যা কখনো আমি ভাঙি না,
যা আমাকে আমার জীবনের পথে
চুপচাপ পথ দেখায়।

(১৭)
মায়ের হাতের ছোঁয়া
-বিচিত্র কুমার

মা, তোমার হাতের ছোঁয়া,
যেমন পুকুরের শান্ত স্রোত,
যার প্রতিটি তরঙ্গ
আমার শৈশবের অগণিত স্মৃতি নিয়ে আসে।
তুমি সেই হাত,
যার নরম স্পর্শে সমস্ত ক্ষত মুছে যায়,
যা আমার হৃদয়ের গভীরে
একটা অনন্ত সুর রেখে যায়।
মা, তোমার হাত,
একমাত্র সঙ্গী, একমাত্র পথপ্রদর্শক,
যার অভ্যন্তরে আমি বেঁচে থাকি,
যার অদৃশ্য শক্তি আমাকে
সকালে প্রেরণা দেয়, রাতে শান্তি দেয়।

(১৮)
শীতল মায়ার পৃথিবী
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে পৃথিবী,
যার মধ্যে আমি জন্মের পর থেকে
অবিরাম ঘুরে বেড়াই,
তবে কখনো যেন তোমার কোলের বাইরে
আমি হারাই না।
তুমি পৃথিবী,
যার একেক কোণে একেক বিপদ,
কিন্তু সেই বিপদে আমি
তোমার প্রেমে শান্তি খুঁজে পাই।
তুমি মা, সে পৃথিবী,
যার স্নেহে আমি যতটা শক্তিশালী,
ততটাই নরম,
যতটা অন্ধকার, ততটাই আলোকিত।

(১৯)
মায়ের চোখের নদী
-বিচিত্র কুমার

মা, তোমার চোখের জল,
যা কখনো আসে, কখনো চলে যায়,
যেখানে হারিয়ে যাই আমি,
তবে যে স্রোতে ভেসে থাকি,
সে স্রোত কখনো শুকায় না।
তুমি সে নদী,
যার গভীরতা আমি জানি না,
তবে জানি, তোমার জল আমাকে
অতীত এবং ভবিষ্যতের গোপন পথে
অবিরাম বয়ে নিয়ে যায়।
তুমি মা, সে নদী,
যার তীরে আমি আমার সমস্ত কান্না
শান্তি পেয়ে রেখে যাই।

(২০)
অন্ধকারে মায়ের আলো
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে আলো,
যা কখনো দেখা যায় না,
তবে আমার অন্ধকার রাতে
তুমি আমার জন্য জ্বলে ওঠো।
তুমি সেই আলো,
যার ঝলক চুম্বন করে
আমার নিঃসঙ্গ পথকে আলোকিত করে,
যার রশ্মি আমাকে
অন্যথায় ভুল পথে যাওয়ার ভীতি দূর করে দেয়।
তুমি মা, সে আলো,
যার মধ্যে আমার সকল বিভ্রান্তি
এক ঝলকেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

(২১)
মায়ের কাঁধের বিশ্বাস
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে কাঁধ,
যেখানে আমি সবসময় আশ্রয় পেয়ে থাকি,
যার শক্তিতে আমি
নিজেকে খুঁজে পাই।
তুমি সেই কাঁধ,
যার উপর আমি সবকিছু ছেড়ে দিতে পারি,
যেখানে প্রতিটি ঘন অন্ধকারে
আমার বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ থাকে।
তুমি মা, সে কাঁধ,
যার উপর আমি কখনো ক্লান্ত হই না,
যার মধ্যে ভরসা আর প্রেমের
অন্তহীন অগ্রগতি থাকে।

(২২)
সময়ের আচ্ছাদন
-বিচিত্র কুমার

মা, তুমি সে সময়,
যার ভেতর আমাকে তুমি আচ্ছাদিত করো,
যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত তোমার স্পর্শে
অসীম হয়ে ওঠে।
তুমি মা, সে সময়,
যার মধ্যে জন্ম নেয়
সব শুদ্ধতা, সব অভ্যাস,
এবং একে একে আমি
তোমার নীরব সঙ্গীতে বিলীন হয়ে যাই।
তুমি মা, সে সময়,
যে কখনো থামে না,
যার কোন সীমা নেই,
যেখানে আমি চিরকাল তোমার সঙ্গে
আত্মার সাথে মিশে যাই।

দুপচাঁচিয়া,বগুড়া।