বকুলের ঘরে দুখের আঁধার, এসেছে নেমে তখন
স্বামী তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে, করে ছিলো যখন।


দুটি সন্তন, নিয়ে বকুলের সুখের সংসার ছিলো;
হঠাৎ ঝড়ে, সাজানো ঘর, হলো এলো-মেলো।।


নদীর পার ভেঙ্গে যেমন, জলে আচরে পরে,
এক নিমেষেই বিশ্বাস তাঁর ভাংলো তেমন করে।।


তবুও বকুল সব ভুলে, রইলো চুপ করে
সতিন তাঁর চতুর অতি, স্বামীরে নিলো কেড়ে।।


স্বামী তাঁহার পাষাণ বড়, গেলো বকুলরে ছেড়ে,
মাসের পর মাস কেটে গেলো, এলো না আর ফিরে।।


স্বামীর সংসার করা হলোনা, ভাগ্য বেঁধেছে আড়ি,
সন্তানদের নিয়ে বকুল আসলো বাবার বাড়ি।।


প্রাইভেট একটি স্কুলে দপ্তারির কাজ কোরে-
বাবা তাঁর সাংসার চালায় দুঃখকষ্টভরে।।    


করোনার, ভয়াল গ্রাসে- সরা বিশ্ব  আতঙ্কিত;
চারদিকে মৃত্যুর মিছিল, মানুষ স্তম্ভিত।।


করোনার জন্য স্কুল, কলেজ যখন বন্ধ হলো-
বকুলের বাবা, তখন তাঁহার চাকরিটা হারালো।।


চাকরি হারিয়ে বকুলের বাবা, দিশেহারা হলো,
কি ভাবে তাঁর, সংসার চালাবে ভাবনায় বিভোর রইলো।।


অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, বকুল করতে চাইলো
বকুলের বাবা কোন মতে সন্মতি না দিলো।।


জীবিকার জন্য বাবা তাঁর পথে-ঘাটে ফেরি কোরে
বাদামের ঝুড়ি গলায় ঝুলিয়ে সংসারের হাল ধরে।।


কিছুদিন পরে, বাবা তাঁহার খুব অসুস্থ হলো
করোনা রোগে সে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।।


বাবারে হারিয়ে বকুল হলো বড় অসহায়
বকুলের পৃথিবী হয়ে গেলো অন্ধকারময়।।


ঘরে অর্থ নেই,অন্ন নেই, কিবা করে খাবে,
সন্তানদের আহার সে, কি করে জোগাবে।।


কাজের জন্য বকুল গেলো সকোল দ্বারে দ্বারে
একটি কাজ, চাইলো সবার পায়ে পরে।।


কেঁদে কেঁদে বললো বকুল কাজ দেন দয়া করে
ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে আমার সন্তানরা ঘরে।।


কিন্তুু দয়া কেউ করেনা সবাই দেয় তারিয়ে
বলে সবে... বিপদে পরবো যে, তোরে কাজ দিয়ে।।


তোর বাবা মারা গেলো করোনা রোগের করোণে,
তোরো; করোনা হয়েছে কি না তাহা কেবা জানে।।


সন্তানদের নিয়ে বসে, বাবার কবরের পাশে;
সারাদিন কাঁদলো বকুল ভয়েদুখেত্রাসে।।


চিৎকার করে, বললো কেঁদে, বাবা কেন ছেড়ে গেলে...
আমাদের কেন নিলেনা সাথে রেখে গেলে ফেলে।।


এই ভুবনে আপন বলতে ছিলে শুধু তুমি
বাবা তোমায় ছেড়ে এখন, অসহায় আমি।।


কিবা খাবো কিবা  পরবো, ভেবে পাইনা দিশা
বলো বাবা, কেমন করে কাটবে দুর্দশা।।  


হঠাৎ  বকুলের পরলো মনে বাবার ঝুড়ির কথা
হৃদয় তাঁহার যেন পেলো বেঁচে থাকার বার্তা।।


তখনি বকুল  চোখের অশ্রু আঁচলে মুছে ফেললো
বাদামের ঝুড়ি গলায় ঝুলিয়ে  বকুল পথে বেরলো।।


বকুলের পরিচয়- এখন সে, বাদাম ওয়ালী
চালের অবাবে তাঁর হাড়ী আর থাকেনা খালী।।


ক্ষুধার জ্বালায় সন্তানরা আর কবু কষ্ট পায় না
কাজের জন্য কারো দ্বারে তাঁরে যেতে হয়না।।
কিন্তুু এ সমাজের কিছু মন্দ লোক নানা কৎসা রটায়
বলে ছি ছি ছি...যুবতী  মেয়ে... বাদাম বেঁচে বেড়ায়।।


কিন্তুু বকুল ওদের কথায় কখোনো কান দেয়না
সকল কথা সহ্য করে, কিছুই সে বলেনা।।


বকুল জানে সহ্য করা যায়, কৎসা আর গঞ্জনা;
কিন্তুু  কভু ক্ষুধার জ্বালা, সহ্য করা যায়না।।


========================================
বকুল
কল্যাণ চন্দ্র রায়
🌿


বকুলের কপাল তখনি পোড়ে
যখন তাঁর স্বামী,আবার বিয়ে করে।
বকুলের স্বামী গার্মেন্সসে চাকরি করতো
বকুল ছিলো গৃহীনি।
দুটি সন্তান নিয়ে বকুলের ছিলো-
ছোট্ট সুখের সংসার।


তাঁর স্বামী, দ্বিতীয় বিয়ে করার পর-
বকুলের সন্তানদের কোন খবর নেয়নি ।
তাই বাধ্য হয়ে, বকুল চলে আসে বাবার বাড়ী।


তাঁর বৃদ্ধ বাবা দপ্তারির কাজ করতো
একটি প্রাইভেট স্কুলে।
বকুলের বাবার, সামান্য আয়ে,
কষ্ট করে দিন কাটতো-
বাবা-মেয়ে আর ছোট্ট দুটি শিশুর।


করোনার ভয়াল গ্রাসে,আতঙ্কিত বিশ্ব
চার দিকে মৃত্যুর মিছিল....
স্কুল, কলেজ,সব বন্ধ...।
চাকরি হারিয়ে দিশাহারা হলো
বকুলের দারিদ্র বাবা;
কি ভাবে সংসার চলবে তাঁর।।


বকুল অন্যের বাড়িতে,
ঝিয়ের কাজ করতে চাইলো।
কিন্তুু তাঁর বাবা রাজি হলো না।
বকুলের বাবা ফেরিকরে,
বাদাম বিক্রি করতে শুরু করলো।


এর কিছু দিন পর,
করোনায় আক্রান্ত হয়ে-
মারা গেলেন, বকুলের বাবা।।


বকুলের পৃথিবী একে বারে অন্ধকার হয়ে গেলো।
ঘরে অর্থ নেই, অন্ন নেই
কি করে খাবে সে,
কি খওয়াবে ক্ষুদার্ত সন্তানদের।।


বকুল ঝিয়ের কাজের জন্য
গ্রামের প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে
অনুরোধ করলো...
আমারে কাজ দেন,আমি বাড়ির সব কাজ করে দিমু
ঘরে ক্ষুধার জ্বালায়, কাঁদছে...
আমার অবুঝ দুটি পোলা-মাইয়া
একটু দয়া করেন....


কিন্তুু বকুল কে  সবাই দুর দুর করে তারিয়ে দেয়,
কেউ দয়া করেনা,সবাই বলে...
তোর বাবা করোনায় মারা গেলো;
তোরও করোনা হইছে কি না কে জানে...
তোরে তো কাজে রাখা যাবে না।
দূর.... হ, দূর.....হ।।


বকুল সন্তানদের নিয়ে
তাঁর বাবার কবরের পাশে বসে,
সারাদিন অঝরে কাঁদলো....
বাবা ও বাবা... তুমি কেন ছেড়ে গেলে
আমরে একা রেখে...
আমাদের কেন নিয়ে গেলে না, তোমার সাথে।।


বকুলের হঠাৎ মনে পরলো
তাঁর বাবার রেখে যাওয়া-
শেষ সম্বল, বাদামের ঝাঁকাটার  কথা;
বকুল তখনি চোখের পানি মুছে ফেললো।
বাড়িতে সন্তানদের রেখে,
গলায় বাদামের ঝাঁকা ঝুলিয়ে
বেড়িয়ে পরলো জীবিকার জন্য পথে.....


....এখন বকুল এক জন, বাদাম ওয়ালী
তাঁর সন্তানদের এখন আর খাবারের কষ্ট নেই।


কিন্তুু এ সমাজের কিছু মন্দ লোক
বকুল কে নিয়ে নানা কুৎসা রটায়-
বলে- যুবতী মেয়ে রাত-দুপুরে
রাস্তা ঘাটে বাদাম বেচে, ছি... ছি... ছি...


বকুল ওদের কথায় কান দেয় না
কারণ সে জানে,
মানুষের কুৎসা সহ্য করা যায়
কিন্তুু ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করা যায় না।


রচনাকাল:০৮/০৯/২০২০
চৌহাল, সিরাজগঞ্জ।।