একজন কবির জন্য কয়েক পঙক্তি
এম ইব্রাহীম মিজি


প্রিয় সহযোদ্ধা এখলাসুর রহমান
বাংলার ৬৮ হাজার গ্রামের এক প্রান্ত থেকে
আমি নাম-দামহীন এক অখ্যাত কবির
শত প্রণতি আর অনন্ত শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।


কেমন আছেন জানতে চাওয়া হয়তো আপনার
জীবনে প্রশান্তির সুবাতাস বয়ে আনবেনা জানি,
তবে এই মফঃস্বলের অসংখ্য কবি হৃদয়ে
এখনো কাল বৈশাখীর ক্ষ্যাপা তান্ডব আর
সমুদ্রের বিক্ষুদ্ধ গর্জন বয়ে চলে
প্রতিকারহীন নীরব অন্ধকারে।


যা প্রতিনিয়ত আপনাকে সক্ষুদ্ধ প্রতিবাদে আলোড়িত করে
কালের কসম খেয়ে বলছি, শ্বাপদে শৃঙ্খলিত
এ ধূসর স্বপ্ন, একদিন ঠিকই
প্রভাতের আলোকিত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবেই।


প্রিয় সহযোদ্ধা এখলাসুর রহমান
আপনি কী জানেন? এই মরাকটালের দেশে
অনাগত সুন্দরের প্রত্যাশায়
প্রতিদিনই অগনিত স্বপ্নের জন্ম হয়,
এই শহরের খ্যাতিমান কেষ্টু বিষ্টুদের
সামান্য সহযোগিতা পেলে যারা হতে পারতো
হেলেন, হোমার, দার্ন্তে, অডিসির যোগ্য উত্তরসূরি।
অথচ কি নির্মম নিদারুণ অবহেলায় শিউলি ফুলের মতো
ভোরের সূর্য উঠার আগেই ওরা ঝরে পড়ে!


প্রিয় সহযোদ্ধা এখলাসুর রহমান
ভোগবাদেপুষ্ট উত্তর আধুনিক চতুর শিয়ালের
কবিতার পাঠশালায়, মান্যবর সভাপতির পদ ও পদবি
যারা অলংকৃত করেন তারা কেউই এ মাটি
আর মানুষের কবি নয়।


তারা হাছন আর লালনের কবি নয়
কৃষকের লাঙ্গলের ফলার মতো বুকের পাঁজর ভেঙ্গে
যাওয়া বিরহী গ্রাম্য বঁধুয়ার কবি নয়
হাওর-বাওর, গাঁ-গেরামের বঞ্চিত মানুষের কথা
ঐ সব কবিদের কলমে বিলাসী ব্যঞ্জনায়
সরাবের জলসায় চমৎকার রসনা উপকরণ।


প্রিয় সহযোদ্ধা এখলাসুর রহমান
আপনি কি জানেন?
একজন কবির নামে মর্যাদার আসনটুকু
এই সমাজে চিরকালই নড়বড়ে
শহরের কাক আর কবি একই অভিধায় অভিযুক্ত
কতটা অবহেলিত হলে এ অপবাদের তকমা জোটে
কবি আর কবিতার ললাটে!
আপনি নিশ্চয় তা অবগত আছেন?


আমি সভ্যতার কসম খেয়ে বলছি-
একদিন ঠিকই নষ্টাদের অধিকারে চলে যাবে-
এদেশ, এই সমাজ, আমাদের হাজার বছরের লালিত
ইতিহাস, ঐতিহ্য কৃষ্টি কালচার সব...।


মানবতার এই উঠোন জুড়ে অজানিত অন্ধকারের
প্রেতাত্মারা করবে উদ্ভট উলঙ্গ নৃত্য,
শুধু কালের প্রতীক্ষায় তৃষ্ণাত্ব পাখির মত
আমরণ চেয়ে থাকে-
একজন প্রতিবাদী কবির স্বপ্নদ্রষ্টা একজোড়া চোখ।