ট্রেন চলছে...
মুখোমুখি সিটে বসে আছি। এপাশে দু’জন ওপাশে দু’জন-
নিয়ম থাকলেও আমরা তিন তিন। বসার চেয়ে
দাঁড়ানো যাত্রী সংখ্যা বেশী। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা বলে কথা।
ওপাশে ষাটোর্ধ বেগানা পুরুষের গা ঘেষে ছাব্বিশের যুবতী মা,
তার পাশে জানালায় থুতনী ঠেকিয়ে বসেছে তার ছ’বছরের প্রজাপতি মেয়ে।
ট্রেনে এটাই প্রজাপতির প্রথম ভ্রমণ কিনা কে জানে, ভারি উৎফুল্ল সে...


ট্রেন চলছে...
আমার দৃষ্টি ছিলো ঘুনয়মান সবুজ প্রান্তরে... আর-
মন ছিলো তার থেকে অনেক অনেক দূরে...
যেখানে বর্ষা প্লাবিত নদীর স্রোতে নাচে বাতাসী মাছ,
দুরন্ত মাছরাঙা টুপ করে ধরে নিয়ে চলে যায় অরণ্য-বাথানে...
সদ্য ডিম থেকে বেরুনো ছানাপোনাদের কাছে!
যেখানে শান্ত দীঘির জলে পদ্মে পদ্মে মধু তোলে ক্ষুদে মৌমাছিরা  
রাঙা ঠোঁটে খড়কুটো কুড়োয় খয়েরী শালিক!
আহা! আমার গ্রাম! যেনো মা, আঁচল পেতে রয়েছেন
তাঁর সন্তানেরে কোলে তুলে নেয়ার অপেক্ষায়! কতোদিন পর গ্রামে ফেরা...


ট্রেন চলছে...
যুবতী মায়ের কপালের কাছে একগুচ্ছ চুল, বাতাসে অবাধ্য!
বার বার সেগুলোকে উপরে ঠেলে সরানোর বৃথা চেষ্টায়
এদিক ওদিক মুখ ঘোরানো!
চোখে চোখ! দৃষ্টি যেন ধারালো ছুড়ি! মেয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে
কিছু বললো সে- ওমনি প্রজাপতি তাকালো আমার দিকে। ইতস্ত মা
জানালায় হাত তুলে দূরে কিছু দেখালেন মেয়েকে,
সেটা যে আমার থেকে প্রজাপতিকে ফেরানোর কৌশল...
বুঝতে বাকি রইলো না! প্রজাপতি
মায়ের চোখে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো, সাথে
মায়ের ঠোঁট দুটো ঈদের চাঁদের মতো বাঁকা হয়ে দ্রুত স্বাভবেক হলো।
প্রজাপতি ব্যস্ত হলো দূরে মা যা দেখাতে চাইছেন...দেখতে!
কিন্তু তার চঞ্চল চোখজোড়া সহসা ফিরে এলো আমাতে!



ট্রেন চলছে...
মা-মেয়ে আড়চোখে ঘুরে ফিরে দেখছে আমাকে। হাসছে...
ফিসফিস করে কথাও বলছে নিজেদের মধ্যে। আমি ভীষণ বিব্রত বোধ করছি..
অস্বস্তি যেন মাদুর পেতে বসেছে আমার মাঝে...
বাসা থেকে বের হবার আগে অভ্যেস মতোই নিজেকে
দেখে নিয়েছি আয়নায়। অসংগতির কিছুই ছিলো না তখন
ষ্টেশনে পৌছার আগে পথে কোন বিপত্তি ঘটেনি,
টিকিট তো ন’দিন আগেরই কাটা ছিলো
কোন অনাকাংখিত ভীড় ঠেলতে হয়নি... তবে...!


পাশের যাত্রী আমার কাঁধে মাথা রেখে নাক ডেকে যাচ্ছে অ-বিরত,
না জানি কতো রাত ঘুমোয়নি বেচারা! সেটা
দেখেই কি অমন হাসছে মা-মেয়ে?
লোকটাকে আমার জাগাতে ইচ্ছে করলো না।
প্রজাপতি আবারও আমার দিকে তাকিয়ে ফিক্ করে হেসে ফেললো-
আমি জিজ্ঞেস করলাম-“কি নাম তোমার?”
সে নাম না বলে জিভ দেখালো। মা বললেন-আঙ্কেলকে নাম বলো!
-চৈতি। চৈতালী রয়।
                                    (অসমাপ্ত)