এক.
গোধূলী রঙ মুছে গিয়েছিলো, জোনাকি ছিলো জেগে,
আকাশে ছিলো তারার মিছিল, বাতাস__মৃদু বেগে-
আটসাঁট করে তোমার আঁচলে  বাঁধাছিলো  এই মন,
ঘড়ির কাঁটায় ঘনিয়ে ছিলো___আমার বিদায়-ক্ষন।
ছলছলো চোখে বললে তুমি- ‘চিঠি দিও প্রতিমাসে!’
জীবনের যতো মিনতি তোমার উঠে এলো দীর্ঘশ্বাসে!
দু’বাহু ডোরে বেঁধে লয়ে আমি বলেছি “ভালো থেকো।
খুকুরে আমার যতন করো, দেখে শুনে তারে রেখো!”
হঠাৎ কোথায় হুতুম পেঁচাটি  হু-হু করে ওঠে ডেকে-
তখনো বুঝিনি যাচ্ছি তোমায়  জনমের মতো রেখে!


দুই.
দিন-পনের যেতে  না যেতে  টেলিগ্রাম পাই হাতে-
বাবা লিখেছে'-ওরে খোকা বাড়ি আয় আজ রাতে।
সহসা পিতার এমন আদেশ___শঙ্কিত হয় মন,
কি হলো সেথা, আমায় হঠাৎ কিসের  প্রয়োজন?
রাতের ট্রেনটি ধরার তাগিদে অমনি ছুটি তেড়ে-
ষ্টেশনে পৌছে শুনি___চলে গেছে ট্রেন ছেড়ে।
পরের ট্রেনটি ভোর চারটায়,    সূচী দেখে জানা,
সারা রাত্রি প্লাটফর্মে-ই_জেগে ছিলাম একটানা।


তিন.
বাড়িফিরে দেখি অনেক মানুষ,কারোমুখে নেই কথা,
মৌন সকলে, বুঝতে পারিনা- কেন এই নীরবতা!
আমাকে দেখেই বৃদ্ধ পিতায় ডুকড়ে ওঠেন কেঁদে-
-শত চেষ্টায় জননীরে তো... রাখতে পারিনি বেঁধে’।
খাটিয়ায় রাখা নিথর দেহ, আঙিনাতে দেখি চেয়ে;
কেঁদে শ্রান্ত ধুলোয় লুটায়... আমার সোনার মেয়ে।
সহসা আমার পৃথিবী যেন -ভেংগে হলো খান খান;
ভাবতে পারিনা রেখে গেলে কই এ সংসারের টান?


                           রচনাকাল : ২১/০৩/২০১৫,লালমনিরহাট।


১ম প্রকাশ : স্বর্ণামতি/৭ম সংখ্যা, ফেব্রুয়ারী ২০১৬, লালমনিরহাট।
২য় প্রকাশ : ‘লালমনির কাগজ’ ১৯/০২/২০২৩,লালমনিরহাট।