আকিব ভালো আছিস তো?
ছুটছিস কোথায় হয়ে হন্তদন্ত,
দাড়া একটু, বহুদিন পর এলাম
শৈশবের মায়া জমে থাকা আমার গ্রাম।


সবুজের আড়ালে পত্রপল্লব ডানা মেলে
আমায় স্বাগত জানালো পাখিদের মিছিলে,
ফরহাদ, ফারুক,আরফান,পলাশ এদের কি খবর?
কাজের চাপে এতবছর ছিলাম বেখবর।


সাতচারা, মার্বেল, লুকোচুরি খেলা এখনো জমে?
কি বলি এসব! সবগুলো গল্পের খাতায় চিঠির খামে,
আজকালকার কেউ এই নামগুলো জানবেনা
বললেও আর আমাদেরকে সেকালের মতো মানবেনা।


বাড়ি এসে দেখি সেই হারিকেন ধুলোবালিতে ঢাকা
চেরাগটা ছাদের কোণে আগের মতোই পাশেই রাখা,
ভাবছি ওদের ধুয়েমুছে আবার কাজে লাগাবো
সময়টা না থাকুক অন্তত স্মৃতিগুলো খুঁজে পাবো।


পানের বাটায় জং ধরেছে আদর যত্ন না পেয়ে
এখনো দাদী ওপার থেকে উঁকি দিয়ে আছে চেয়ে,
কারুকাজে সজ্জিত দাদার চেয়ারটা ঘরের কোণায়
মনে হয়! উনি বসে বসে মুরিদদের ধর্মের বাণী শোনায়।


হরিতকী গাছটার কথা ভীষণ মনে পড়ে
যার ছায়ায় চেয়ার পেতে বাবা বসতো অবসরে,
রেডিওটা নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগে
ফিতা ক্যাসেট গুলো দেখলে অনেক খারাপ লাগে।


দলবেঁধে যেতাম সবাই দূরের গ্রামের মাহফিলে
বয়ান শুনতাম খুশি হতাম জর্দার প্যাকেট পেলে,
দিনগুলো নেই হারিয়ে গেছে স্মৃতির মনিকোঠায়
ধর্ম বলতেই ব্যবসা এখন স্বার্থের পিছে ছোটায়।


মনে আছে তোর?
একবার সবাই মিলে দূরে যাত্রাগান দেখতে গেছিলাম
শহরের গ্রামের শিল্পীরা রেখেছিল গ্রামের নাম,
আনন্দ আর সবার হাততালিতে কেটে গেছে রাত
বুঝতেই পারিনি ঘুমচোখে আচমকা প্রভাত।


সকালবেলা বাড়ি ফিরে যেই একটু যাবো বিছানায়
মায়ের বেতের আঘাতে পিঠটা জ্বলেপুড়ে যায়,
এই, ছেলেকে মারছ কেন? ভেতর থেকে বাবার চিৎকার
বড় হলে একটু-আধটু স্বভাব থাকে সবার।


ফানুস উৎসব, পূজা দেখায় রাত পেড়িয়ে যেতো
পরিচিত মুখের সাথে হঠাৎ দেখা হতো,
ওসব নাকি ধর্মে নিষেধ? নিজের জাত যায়
লিপটে চড়ে সবাই এখন বেহেশত যেতে চায়।


শুনেছি জেরিন,রিয়া,আখির বিয়ে হয়েছে
এই সেদিনের মেয়েরা অনেক বড় হয়ে গেছে,
তোদের ও নাকি অনেকেই বউ এনেছিস?
টাকার দুনিয়ায় শুধু আমাকেই ভুলে গেছিস।


ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে সবাই বুঝে টাকা
আবেগ বিবেগ সবকিছু জনতা ব্যাংকে রাখা,
মনুষ্যত্ব হীনের ভীড়ে ভালো’র দাম শূন্য
আন্তরিকতা দেখানো মানুষ অতি নগণ্য।


তোরা যাই বলিস আমি যাযাবর হোকনা পরিত্যাজ্য
বেছে নিয়েছি ছন্নছাড়া জীবন এটাই স্বর্গরাজ্য,
তোর সাথে দেখা হলো অনেক বছর পর
ভালো থাকিস, যোগাযোগ রাখিস ভালো-মন্দ খবর ।।