বিলম্বিত একদিন
////////////////////


একটি ক্ষুদে চার পাঁচ বছরের ছেলে
কালো চোখ দুটো গোলগোল
পেট টা তিকতিকে কলসের
মতো আছে ঝুলে।
ছেঁড়া বস্ত্র গায়ে,নাঙ্গা দুটো ক্ষুদে পায়ে।
পিলপিল করে দৌড়ে বেড়ায়
রাস্তার দুই ধারে।


খাবারের কিছু উচ্ছিসটাংশ
মুখের বাইরে,পেটে গায়ে
পড়ছে ঝরে ঝরে।
কথা বলতে পারে কিনা জানিনা
শুধু বাটি হাতে ইশারা করে  
এক দুটাকা চায়।
তাচ্ছিল্য ভরে কেউ বাটিতে
ছুঁড়ে যায়।
কেউবা বাঁকা ভঙ্গিমায়
দেয় দূরে ঠেলে।
আশা যাওয়ার পথে
প্রতিদিন নজরে আসে
একই দৃশ্য রাস্তার ট্রাফিক
বাতির পাশে।


একদিন দাঁড়িয়ে দেখি ওর
আসে পাশে আর কেউ আছে কি?
আরো চার পাঁচটা পুঁচকে
আছে দলে,
সবাই ব্যস্ত আপন আপন
কলা কৌশলে।
বয়স হবে সবার গড়ে পাঁচ কি ছয়।
এই বয়সে এত পরিশ্রম,এত সংগ্রাম,
ভাবলে মন ব্যাথিত হয়।


একদিন কাছে ডাকি পুঁচকে টারে।
বললাম কেবা আছে তোমার ঘরে?
কি যে কয় কি যে বলে বুঝলাম না কিছু।
বুঝলাম কথা বলতে পারে না বোধয় এই শিশু।
আবেগ তাড়িত হয়ে দিলাম
দশটি টাকা তার বাটিতে।
ফিরলাম ভারাক্রান্ত
মনে নিজ বাটিতে।


নানা কাজে নানা ভারে ওই পথ
থেকে তিন দিন গেছি দূরে,
দৃশ্য আর চোখে পড়ে নাই।
চারিদিন পর যথারীতি
একই দৃশ্য হইল গোচর।
তারই মাঝে দেখি বাটি হাতে
সেই শিশু,অশ্রাব্য ভাষা
ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে।


চরণ তলের ভূমি গেল সরে
মাথার মধ্যে চিন চিন ব্যাথা গেল বেড়ে।
চিনেছি ঠিক না কিছু হচ্ছে ভ্রম মনে ।
হৃদপিন্ডের ধকধক আওয়াজ
কানে এলো ক্ষণে ক্ষণে।


আরো দুদিন পরে ডাকলাম শিশুটারে
বললাম কেবা আছে তোমার ঘরে।
দুচোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে যায় নীরবে।
বলে কেবা মা কেবা বাবা জানিনা আমি।
জানি শুধু এক জন আছে
এই চার পাঁচটা ক্ষুদে দলের পিছনে।


প্রতিদিন সকালে ছেড়ে যায়
এই বাতি স্তম্ভের পাশে।
সারা দিনের যত আয়
সন্ধ্যেয় হিসেব নিতে আসে।
কম যদি হয় আয়,পরের দিন
দুপুরের খাবার যায় কাটা।
তাই মুখ বন্ধ,এমন ভাষা
যা বোঝার কোনো সাধ্য নেই
স্বপ্ন শুধু দিনে রাতে টাকা টাকা।


পুঁচকে টাকে বললাম তুই যাবি
আমার সাথে আমার ঘরে।
তুই স্কুলে যাবি,থাকবি খাবি,
খেলবি পড়বি।
বলে বাবু খুব মজা হবে?
কেউ বকা দেবে না,
আর ভিখ মাগতে হবে না?
আমি বলিলাম না ও সব কিচ্ছু হবে না।
যাবো বাবু তোমার সাথে যাবো,
কিন্তু ওই সর্দার টার কাছে
তোমায় যেতে হবে।


পাঁচ দিন পর আসবো
তোর সর্দারের সাথে কথা বলবো।
নিয়ে যাবো তোকে।


চার  দিন পরে
কোনো এক কাজে যাচ্ছি
ওই রাস্তা ধরে,
বাতি স্তম্ভের পাশে সবাই আছে ভিড় করে।
অনেক ঠেলাঠেলি করে
উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখি
একটা ক্ষুদে আছে পড়ে।


ভালো করে দেখি এ যে সেই ছেলে,
আৎকে উঠি একি!!
দলছুট সে আজ সাথে নেই কেউ আর
দু তিন জনকে সুধাই কি হয়েছে?
হলো কেমন করে?
উত্তর আসে ভেসে কোনো এক
অজানা জ্বরে বিনা চিকিৎসায় গেছে মরে।
অনুশোচনায় আজও কাটে
দিন দিন প্রতিদিন,
কেন করে ছিলাম বিলম্বিত একদিন।