চরণ গুরুর পাঠশালা
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
আঁকাবাঁকা মাটিরপথ মিশে গেছে
সুদূরেরএক চারমাথার মোড়ে,
যেথা ছিলশুধু সবুজ মাঠ তিন গ্রামে,
ওইএকটি মাত্র পাঠশালা ঘিরে।
কত কত সুকৃতী ছাত্র বড় হয়েছে
তাল পাতার ছাউনি ভরা,
বাঁশের বাতার আয়না খুপির পাঠশালা পরে।
কত উজ্জল নাম রয়েছে নানা কাজে
দেশ বিদেশে,ঘরে বাইরে ।


চরণ বাবুর পাঠশালাটা আজকে ভীষণ খালি,
পড়ে আছে বাস্তু ভিটে,
খাঁখাঁ জায়গা আশেপাশে।
বেশ কয়েক বছর আগেও
চালা ঘরটা থাকতো ভরে,
পড়ুয়াদের কোলাহলে দিনরাতে।
পাঠশালার ওই চালা ঘরটায়
সকাল বিকেল শিশুপাঠ্য
কানে আসতো ভেসে।
আসেপাশের তিন চারটে গ্রামের
শিশুপাঠ পড়ত এসে।
চক্ষু,কর্ণ,নাসিকা জিহ্বা,শিরা
উপশিরায় শিহরণ থাকত লেগে।


চলতে ফিরতে পথচারীও থমকে
যেত ক্ষণিক সময় দেখে,
পিতা মাতাওখুশি ছিলেন কচিকাঁচাদের
গুরুর আলয়ে রেখে।
সকাল বিকেল কাজের সূচী ছিল    
আলাদা আলাদা শ্রেণী অনুসারে,
ছোট বড় সবাই যুক্ত ছিল
ভিন্ন ভিন্ন কর্ম ভারে।


দিনে দিনে সরু হয়ে খালটা আজও
আছে পাঠশালার ওই পাশে,
পাঠশালটা কবেই উঠে গেছে
খালেএখন কচুরিপানা,
শ্যাওলা জমে আছে।


সকাল বেলায় পাশের খালে গুরু মশাই
মাছ ধরত জাল ফেলে
খাঁচা হাতে গুরুর সাথে মাছ
কুড়িয়ে যেত একটি  শান্ত ছেলে।


পাঠের শেষে দুপুর বেলায়
স্নান,আহারাদি সেরে,
বিকেল বেলায় কেউ যেত কোফি,
লঙ্কা,ঝিঙ্গে, উচ্ছে, তোরই,ক্ষেতে
কেউ বা ব্যায়ামাগারে।


তিরিশ বছর পরে ফিরে এসে
আমার হলো নাভিশ্বাস,
সবকিছুইক্যাকটাসে ঢেকে গেছে,
পাঠশালারওই জায়গাটুকু উপশল্য আজ,


আজ ফিকে লাগে পশ্চিম আকাশে
অস্তমিত সূর্য্যর লাল হলুদ রাঙা
গুরুমশাইয়ের কথা গুলো আজও
কানে বাজে তোরা কেউ রক্ষা করিস
আমার পাঠশালার বাস্তু ডাঙ্গা।


যার হাতে হাতে খড়ি যার শিক্ষার
অহংকারে দেশ বিদেশে দেই পাড়ি,
তার শেষ কথাটার মূল্য ভুলে
আত্ম সুখে জীবন গাড়ী।
নিজের উপর ঘেন্না জমে
আত্মশ্লাঘায় জ্বলে মরি।


নতজানু শিরে গুরুর বাস্তু ভিটার
পানে ক্ষমা চেয়ে বলি,
শিক্ষার ছিলোনা ত্রুটি,মান আর হুসের
বিকাশ হতে হলো দেরি।


গড়ব আবার শুরু করব আবার
চরণ গুরুর পাঠশালা,
থাকবে না আর উপশল্য,
থাকবে না আর
শেওলা ও কচুরিপানা।