দেবতার জন্ম
**************
তনুদেহে বসন নাম মাত্র
লজ্জা নিবারনের জন্য কিঞ্চিৎ উপযোগী,
এক প্রৌঢ় বসে আছে
উঁচু মাটির বেদী পরে
আধ মরা বট বৃক্ষ তলে।
কৌতূহলী জনতার উৎসুক
টেরা চোখের বাঁকা চাউনি আর
ব্যঙ্গ ব্যাঞ্জনার উপমায়
তকমা পেয়েছে ভণ্ড বাবা।
মাস কয়েক আগেও জায়গাটা
ছিল আগাছায় ভরা,
কেউ ঘুরেও তাকাতো না ভুলে,
তাচ্ছিল্যের থুতু ফেলে যেত
উন্নাসিক নাক মুখ তুলে।


বট গাছটার চারি পাশে
এসেছে জৌলুসের চাকচিক্য,
এতদিন যে বৃক্ষ ছিল অদেখা উপেক্ষিত-
আজ তার ভাগ্যে জুটছে নিত্য নতুন বাক্য।
কেউ বলে "বাবা বৃক্ষ"কেউ বলে "কল্পতরু"
কেউ বলে "ঠাকুর দেউল"
কেউ বলে  "বৃক্ষ মনবাঞ্ছা পুরক"


যত ব্যাথ্যা যত গ্লানি  দূর করে বাবা,
পূর্ণ করে মনস্কাম যতই পড়ুক করাল বদনীর থাবা।
বাবার ভন্ড তকমা মুছে গেছে
সবার অজান্তে অগোচরে,
বাবার খ্যাতি লোকমুখে
দূরদুরান্তে গ্রাম থেকে শহরে।
গাছকে ঘিরে উঠল গড়ে
মনি মুক্ত পাথর দিয়ে সোনার দেবালয়,
আবর্জনার স্তুপ এখন ভরে গেছে রকমারি
রামধনু রঙের আলোয়।
বাবার পায়ে প্রণাম করে মাথা ঠুকে
ধনী গরিব নির্বি শেষে,
চাওয়া পাওয়া স্বপ্ন মতো বুকের মাঝে
চাপা ব্যাথ্যা যত উগরে দিত নত শিরে।


একদিন শীতল রাতে মাঘ মাসে
অন্ধকারে ডুবলো বাবা নাভিশ্বাসে।
ভরাই সুরের ভোরে ভক্ত সমাগমের ভিড়ে
পাড়ি দিলো জাগৎ পিতার ঘরে।
এরই মাঝে ভক্তে ভক্তে ধুন্ধুমার
কার হাতে যাবে গুরুধাম
আর উত্তরাধিকার।
এই নিয়ে কূটকাচালি বারবার উকিল,
সালিশি দরবার সম থেকে শুক্র বার।
বাবার তথ্যপত্র ঘেঁটে ঘেঁটে নথিপত্র পেল শেষে,
উত্তর মুখে তিনশ ক্রোশ দূরে
গয়েশ্বরী দীঘি ঘুরে
এক রাস্তা মিশে গেছে শীতল পুরে


বাবা ছিলেন,
ধনী বনেদী বংশে -
স্ত্রী,এক কন্যা আর তিন পুত্র মিলে।
বছর দুয়েক আগে স্ত্রী গেছে
পরলোকে ইহলোকের মায়া ফেলে।
সাবিত্রীবালা উচ্চ বিদ্যালয় আছে
ভন্ড বাবার স্ত্রীর নামে,
আরো কত সম্পদ দেশে ঘরে।
স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির লোভে তিন পুত্র
এক কন্যা মিলে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলো তারে।
ভবঘুরে দৈন্য দশায়
রুখা সুখা বটের তলায়
দিন কাটত বাবার,
ধীরে ধীরে জন্মনিলো গুরুধাম
মনের ঘরে জায়গা পেলো সবার।
বট গাছটায় এসেছে নতুন নতুন সবুজ পাতা,
চিরহরিৎ এখন তার শুকনো শাখা প্রশাখা।
গুরুর মহিমা থাক বা,না থাক
গুরুধাম স্বমহিমায় আজও বিদ্যমান।


যতই থাক ভক্তে ভক্তে কলহ মতভেদ।
দিনের শেষে ভক্তি ভরে
ভাগ বাঁটোয়ারা যায় ঘরে ঘরে।
দাস দাসী,পাণ্ডা,পুরোহিত
আরো
কত কত কর্তা ব্যাক্তির
বংশ পরম্পরায়ে কাটছে বেশ।