দিবাকর ও দুর্গা
##########
বর্ষাকাল আসি আসি
করেও আসছে না,
সবার মাথায় হাত
নামেই বর্ষা কাল।
প্রতিদিন সারা আকাশ জুড়ে
কালো মেঘের ঘনঘটা।
দিবা রাত্রি জেগে আকাশ পানে
তাকিয়ে কেটে যায়।


বীজ ধান বপনের সময়
হচ্ছে পার ধীরে ধীরে।
বৃষ্টির আশায় মাটি ফেটে
আছে হাঁ করে।
বৃষ্টির দেখা নেই সবাই
মরছে মাথা ঠুকে।
পুকুরের জলরাশি কমতে কমতে
তলানিতে ঠেকেছে।
গ্রামের সমস্ত পুকুর শুকিয়ে গেছে।
আসে পাশের পাঁচটা গ্রামের
চোখ ওই প্রতিষ্ঠা পুকুরে
এসে পড়েছে।
গ্রামের এই একটি পুকুরে
কিছু জল এখনও আছে বেঁচে।
সবার বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা পুকুরের
জল যাবে না ফুরিয়ে।


বৃষ্টি হচ্ছে না বৃষ্টির আশায়
সবই আছে মুখিয়ে।
বাদল আসে বাদল বাড়ে,
কোলো হয়ে ঘনিয়ে
ভেসে ভেসে উড়ে যায় ,
কালো মুখ দেখিয়ে।


নিজ হাতে টানে লাঙ্গল দিবাকর
জোয়ালে কাঁধ মেলাল ভাই দিগম্বর।
দুই ভাই মিলে হাল করে মাটি
কোদাল লাঙ্গল ঠেলে ,
বৃষ্টি অভাবে মরছে কত কি
তবু বৃষ্টির দেখা নাহি মিলে।


একে একে সবাই দিশা
বদলের পথে,
যা ছিল সম্বল,থালা বাটি ঘটি,
গাধা,গরু ভেড়া ছাগল,সবই
নিলো সাথে।
একে একে ছেড়ে গেল গ্রাম,
ভুলে গেল বসতির নাম।
পাড়ি দিল দূর দেশে।
জমি জমা ফেলে প্রতিষ্ঠা পুকুর ,
মন্দির গেল ভুলে।


জলের খোঁজে মাইলের পর
মাইল হেঁটে।
পথের ক্লান্তিতে ধুলো রাশি মেখে,
ক্ষুধা ভরা পেটে কারো প্রাণ গেল শেষে।
শুধু দিবাকর রয়ে গেল বাপ ঠাকুরদার
ভিটে ভূমির টানে।
ভাই দিগম্বরও ভরসা হারাল
সেও পা বাড়ালো নতুন দিশার পানে।


গ্রাম খালি হল বসতি শুন্য-
জনহীন খাঁ খাঁ শ্মশান পিতৃভূমি
চাষের মাটি হাঁ করে
সবার জমি পতিত পড়ে।
শুধু বৃষ্টি নেই এক ফোঁটা
বৃষ্টি নেই।


দিবাকর ভাবে বাঁচবো
এবার কেমন করে?
কালো বাদল দিন দিন
যাচ্ছে সরে।
কিছুতেই বৃষ্টি পড়ছে না ঝরে।
হঠাৎ বদলের গম্ভীর গর্জনে
বিজলির দাঁত দেখা দিল
কালো গগনে।
দিবাকর ভাবিল বৃষ্টি আসিবে এখনে।


বীজ ধান নিয়ে ধামা ভরে
ঊর্ধশ্বাসে দিল ছুট জমির পরে।
রাত ভর জেগে জেগে বপন করিল ধান
হাল করা ভূমি পরে।


ভেবে ভেবে সময় যায়
কিছু একটা করতে হবে উপায়,
তিন দিন হলো বৃষ্টির দেখা নেই।
দিবাকর বসে বসে ভাবে
পড়লো মাথায় যেন বাজ।


এত দিনের অভিজ্ঞতা শূন্য হলো
সব কিছু মাটিতে মিশে
যাচ্ছে চোখের সম্মুখে।
বাবুই,চড়ুই,শালিক,ঘুঘু আরো
কত কি জানা অজানা পাখি
বীজ ধান খেয়ে গেল খুঁটে খুঁটে।


এত কিছুর পরেও বৃষ্টি এলোনা।
বিকেলে রামধনু দেখে
আস্বস্ত হল প্রাণ।
এবার বুঝি বইবে জলধারা
আসবে কোনো বান।
চেয়ে চেয়ে চোখের জল
গেল শুকিয়ে।
দিবাকর অঝরে কেঁদে মরে
বুক যায় ফেটে ।


দাওয়ায় বসে বসে দিবাকর ভাবে
কি হবে কি করা যাবে?
পত্নী দুর্গা এসে বলে কুয়া
খুললে জল পাবে।
দুয়ে মিলে তিরিশ মিটার
কুয়া করে খনন।
শুধুই গর্ত খনন সার হল
বিরূপ হল জলদ।
দ্বিতীয় বার আরো গভীর খনন
করলো আরোএক কুয়া,
কলুর বলদের মতো খেটে গেল
বাহির হলো বিষাক্ত ধোঁয়া ।
উঠলো জ্বলে আগুন
কোদাল,বেলচা,সাবলের
খোঁচার ঘায়ে।
কুয়ার ভিতর জ্বলে গেল
দিবাকর ও তার বউ দুর্গা
আগুন লেগে গায়ে।
পেলনা কোনো জলের হদিস
এলোনা জলের ধারা,
জলের আশায় জীবন গেল
দেখল শুধু খরা।


তিন দিন পর বৃষ্টি এলো
ভিজল চাষের মাটি।
দেহ দুটো পচে গেল কুয়োয়
হল সমাধি।
বেঁচে যাওয়া বীজ ধানে
তলাও হলো
জলে ভরলো কুয়ো।
গ্রামের মানুষ,প্রাণীপশু
গ্রাম ছেড়ে গেল
প্রতিষ্ঠা পুকুরে জল পেল।


গ্রামটাই এখন পতিত আছে
দুর্গা দিবাকর মাটিতে মিশে গেছে।