ইটভাটা
:::::::::::::::::::
       সৌমেন
:::::::::::::::::::::
ও হারান দা
এসেছে এক শহুরে বাবু
মনে হয় কাগজে কিছু লেখে।
তাই ত মনে হলো পোশাক আশাক
হাব ভাব দেখে।
তুমি একটু খুলে বলো
মোদের নিত্য দিনের  দৈন্য দশার ইতি কথা।
যদি কারো নজর পড়ে
যদি কেউ বোঝে মোদের দৈন্য দশার ব্যাথ্যা।


আসেন বাবু বসেন এই ইটের পরে,
সব কিছু ধুয়ে মুছে গেছে
বেঁচে নেই কিছু আর এই কাঁচা মাটির ঘরে।
হারান বলে তখন বয়স
বোধহয় পনের ষোল হবে।
বাপ ঠাকুরদার হাত ধরে এসে ছিলুম,
এই সোনামুখী নদীর ধারে।
শহর থেকে অনেক দূরে ,
তখন ছিলোনা কোনো ঘর,রাস্তা,
জায়গাটা ছিল শুধু ঘন জঙ্গলে ভরে।
শেয়াল কুকুরেও কখনো কখনো
গেছে কারো কারো প্রাণ।
ডাক্তার বদ্যি  ছিলোনা কিছুই
সে সব কথা একদম ভুলে যান।


আমরা তখন গোটা কতক
পরিবার এই নদীর চরে,
আজ তার হয়েছে
দ্বিগুন নদীর পাড় জুড়ে।
কত বার এই ভাটার নাম হয়েছে বদল ,
বহু মালিকের হাত ধরে।
এই যে নাম টা দেখছেন বাবু,
বছর দুয়েক আগে হয়েছে নতুন করে।


হারান ছল ছল চোখে
বলে কাঁপা কাঁপা গলায়
দিন রাত পরিশ্রমে দেহে
ক্লান্তি ছেয়ে যায়।
ঘর্ম রসে গ্রন্থি ভরে ,
আতঙ্কে দিবস কাটে।
হাসি খুশি বিরতি সব গেছি
ভুলে দিনে ও রাতে।
সারা বছর নদীর জল  
যখন তখন ওঠে ফুলে।
পকেটের কড়ি ফাঁকা,
ভাটা কর্মী সব মোদের কুলে।


"শ"দরে পয়সা দেয় যখন পুরা হয়,
কম হলে টাকা কাটা যাবে,
চোখ রাঙিয়ে বাবু কথা কয়।
পাঁজরে ব্যাথ্যা বাহুতে ব্যাথ্যা,
কব্জিতেও আছে জেগে।
পেটের জ্বালা মানেনা কিছু,
যতই থাক শরীরে ব্যাথ্যা লেগে।


গেল বছর ছেলেটা মোর ,
পড়লো ইটের ফাঁকে।
যেথা রাখা ছিল ইট গাদাগাদি
করে থরে থরে।
প্রাণ দিল ছেলে মোর,
ধসে যাওয়া ইটের চাপে।
সে দুঃখ আর বড় নয় বাবু
ভুলেছি পেটের টানে।
ক দিন আর বেচেঁ আছি
কখনো চোখ যাবে বুজে
কে জানে?


এলো বাড় এলো তুফান
বাড়লো বানের টান।
ধুয়ে গেল মুছে গেল ইট ভাটা
আর রুজি রুটির ওই দালান।
গাদাগাদি থাক,প্রাণ যায় যাক,
তবু এই ইটভাটা
আজও মোদের প্রাণ।


তিরিশ টা বছর ধরে এই
ইটভাটায় খেয়ে পরে
জীবন গেছে বয়ে,
কত চাপান উতর কত আপদ
বিপদ কত ঝড় তুফান গেছি সয়ে।


আজি এ বাড় নিয়ে গেল ধুয়ে,
সব-ইট,মাটি,পাথর
আর যত ছিল কাঁচামাল।
তুফানে সব  উড়ে গেল,
মাথার ছাদ গেল আর নিয়ে গেল
যা ছিল জমানো চাল ডাল।


কত বাবু এলো কত বাবু গেল
শুনলো অনেক দুঃখ কথা,
লিখল অনেক,ছাপলো অনেক!
অজানা মনের মর্ম ব্যাথ্যা।
বাবু তুমিও লিখো তোমার কাগজে
মোদের এই ইটভাটার ইতি কথা।